ছবি: পিটিআই।
বিশ্ব জুড়ে কোভিড-১৯-এর প্রতিষেধক তৈরির জন্য যে সব গবেষণা চলছে, তাড়াহুড়োর ফলে তাতে বিপর্যয় ঘটতে পারে বলে ইতিমধ্যেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন গবেষক-বিজ্ঞানীদের একাংশ। প্রতিষেধক তৈরির ক্ষেত্রে সময় যে অন্যতম ‘গুরুত্বপূর্ণ’ বিষয়, এ বার তা স্বীকার করে নিল অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক দলও। প্রতিষেধকের ক্ষেত্রে এই মুহূর্তে প্রধানত অক্সফোর্ডের দিকেই তাকিয়ে বিশ্ব। ওই দলের সদস্যেরা জানাচ্ছেন, এখনও পর্যন্ত কাজের অগ্রগতি যথেষ্ট ভাল।
কোনও ভাইরাস প্রবেশ করলে শরীরের নিজস্ব প্রতিরোধ ক্ষমতা তাকে চিহ্নিত করে ধ্বংস করতে পারে। ‘হোয়াইট ব্লাড সেল’, ‘টি-সেলস’, সেই ভাইরাস-যুক্ত কোষকে ধ্বংস করে। এই গবেষণাই প্রতিষেধক ও সংক্রমণজনিত রোগের ওষুধ তৈরির ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছিল। সেই গবেষণার জন্য ‘ফিজিয়োলজি অর মেডিসিন’-এ নোবেল পেয়েছিলেন পিটার সি ডোয়ার্টি। তিনি আনন্দবাজারকে জানিয়েছেন, এই মুহূর্তে প্রতিষেধক তৈরির যে সব গবেষণা হচ্ছে, সেগুলি রোগ প্রতিরোধে সক্ষম হবে বলেই তাঁর ধারণা। কিন্তু যত ক্ষণ না কিছু মানুষের ক্ষেত্রে ঝুঁকি নেওয়া হচ্ছে, তত ক্ষণ তা জানা সম্ভব নয়। তাঁর কথায়, ‘‘যদি দেখা যায় প্রতিষেধক প্রয়োগের ফলে কোনও সমস্যা বা অন্য গুরুতর রোগ হচ্ছে, তখনই সেই পরীক্ষা দ্রুত বন্ধ করতে হবে এবং বিকল্প প্রতিষেধকের কাজ শুরু করতে হবে।’’
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক দল গত ২৩ এপ্রিল থেকে মানব শরীরে প্রতিষেধকের পরীক্ষা শুরু করেছে। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ের (কমপক্ষে এক বছর) আগে সেই প্রতিষেধকের কার্যকারিতা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে কি না, এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে গবেষক দলের তরফে ‘কমিউনিকেশনস অ্যান্ড পাবলিক এনগেজমেন্ট অফিসার’ জোয়ানা ব্যাগনিউস্কা বলেন, ‘‘সময় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তবে আমাদের পরীক্ষার অগ্রগতি ভালই। এই মুহূর্তে এটুকুই বলা সম্ভব।’’ তবে তাদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ বায়োফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির তরফে জানানো হয়েছে, চলতি বছরের শেষে এই প্রতিষেধক সীমিত সংখ্যায় বাজারে আনার কথা ভাবা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: আমেরিকায় কর্মরত ভারতীয়দের জন্য সুখবর! এইচওয়ান-বি ভিসার মেয়াদ বাড়ানোর আবেদনের সময় বাড়ল ২ মাস
তবে বিজ্ঞানীদের অন্য এক অংশের আশঙ্কা, তাড়াহুড়োয় তৈরি করা প্রতিষেধক জনসংখ্যার বড় অংশ, বিশেষত বয়স্ক ও শিশুদের উপরে কাজ না-ও করতে পারে। কিন্তু সে সম্পর্কে অনেকেই ওয়াকিবহাল না থেকে নিশ্চিন্ত বোধ করতে পারেন। তার বিপজ্জনক দিক হল, প্রতিষেধক নেওয়ার এই ‘ফলস সিকিওরিটি’ বা ‘ভ্রান্ত নিরাপত্তাবোধ’ সংক্রমণের হারকে বহু গুণ বাড়িয়ে দিতে পারে। দেশের কোভিড-১৯ গবেষণার অন্যতম কেন্দ্র, কেন্দ্রীয় সরকারের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রকের বায়োটেকনোলজি বিভাগের অধীনস্থ ‘ট্রানস্লেশনাল হেলথ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ইনস্টিটিউট’-এর ইমিউনোলজির অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর অমিত অবস্থি বলেন, ‘‘যতই পরীক্ষা হোক, কোভিড-১৯-এর প্রতিষেধক তৈরি ও কার্যকারিতা সম্পর্কে জানতে কমপক্ষে দু’বছর লাগার কথা। তা না হলে যেটা হতে পারে, তা হল, প্রতিষেধক তৈরি করে নির্দিষ্ট জনসংখ্যার মধ্যে প্রয়োগ করা হল। তখন সংশ্লিষ্ট শ্রেণি মনে করবে যে, প্রতিষেধক নিয়েছে বলে তারা অবাধেই ঘুরে বেড়াতে পারে। এতে সংক্রমণের হার আরও বাড়বে।’’
আরও পড়ুন: করোনা রোগীদের চিকিৎসায় রেমডেসিভির ব্যবহারের অনুমতি হোয়াইট হাউসের
নিউ ইয়র্কের কর্নেল ইউনিভার্সিটির ‘মাইক্রোবায়োলজি ও ইমিউনোলজি’ বিভাগের অধ্যাপক আভেরি অগস্ট আবার জানাচ্ছেন, সাধারণ সময়ে প্রতিষেধক তৈরির বিষয়টি সময়সাপেক্ষ। বেশ কিছু বছর সময় লাগে। কিন্তু মহামারির সময়ে প্রয়োজনমতো প্রতিষেধক পরীক্ষার যে ধাপগুলি রয়েছে (ক্লিনিক্যাল ফেজ ওয়ান, টু, থ্রি), সেগুলি আলাদা-আলাদা ভাবে না করে একত্রে করা যেতে পারে। এমনকি, সংশ্লিষ্ট প্রতিষেধক ভাল সাড়া দিলে উৎপাদনও শুরু করা যেতে পারে। কিন্তু আভেরির কথায়, ‘‘সে ক্ষেত্রেও ‘হায়েস্ট সেফটি স্ট্যান্ডার্ড’ অনুসরণ করা প্রয়োজন। না হলে তাড়াহুড়োয় তৈরি করা প্রতিষেধক সার্বিক জনসংখ্যার ক্ষেত্রে (বিশেষত বয়স্ক বা শিশুদের ক্ষেত্রে) কোনও রকম কাজই করবে না।’’
‘অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সেস’-এর বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগের প্রাক্তন প্রধান এল এম শ্রীবাস্তব বলেন, ‘‘ক্লিনিক্যাল ফেজ ওয়ান, টু ও থ্রি-র পর্বে লিভার, কিডনি-সহ সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের উপরে প্রতিষেধকের প্রভাব দেখে নেওয়া হয়। যদি ধরেও নেওয়া হয় যে, পরীক্ষা পর্বের সব ধাপই সফল হয়েছে, তার পরেও কমপক্ষে আট মাস সময় লাগবেই। তার আগে প্রতিষেধক তৈরি কার্যত কখনওই সম্ভব নয়।’’
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)