ছবি- শাটারস্টক।
জুনে এর আগে পৃথিবীর গায়ের ‘জ্বর’ এতটা বাড়েনি। এতটা তেতেপুড়ে ওঠেনি ধরিত্রী। যে জুলাইয়ে এ কথা বলছি, সেই মাসটাও এতটা গরম হয়ে ওঠেনি এর আগে কোনও দিন। গত ৬৮ বছরের তথ্যাদির ভিত্তিতে সোমবার এ কথা জানিয়েছে নাসা।
কলকাতাতেও এ বার জুলাইয়ে গা পুড়ে যাচ্ছে আমাদের। গত দশ বছরে জুলাইয়ে সবচেয়ে বেশি গরম পড়েছিল গত ১৫ জুলাইয়ে, যে দিনে চন্দ্রযান-২-এর উৎক্ষেপণ হওয়ার কথা ছিল। ওই দিন কলকাতার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৭.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত ১ জুলাই থেকে আজ, বুধবার (১৭ জুলাই) পর্যন্ত কলকাতায় বৃষ্টিপাতের ঘাটতি হয়েছে প্রায় ৬৩ শতাংশ। বুধবারও কলকাতার তাপমাত্রা স্বাভাবিকের থেকে ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি রয়েছে। এ দিন কলকাতার তাপমাত্রা ৩৭.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
নাসা বলছে, গা পোড়ানো জুনের জন্য দায়ী ইউরোপে নজির গড়ে ফেলা তাপপ্রবাহ, গোটা সুমেরু ও ইউরেশিয়ার তাপমাত্রা বৃদ্ধি আর পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি। এর আগে প্রায় একই কথা জানিয়েছিল ইউরোপের ‘কোপারনিকাস ক্লাইমেট চেঞ্জ সার্ভিস’।
জুনের তাপমাত্রা ছিল অভূতপূর্ব, অস্বাভাবিকও, বলছে নাসা
১৯৫১ থেকে ’৮০, পৃথিবীর তিন দশকের তাপমাত্রাকে ‘বেসলাইন’ ধরে নাসা দেখেছে, জুনে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা যা থাকা উচিত, সদ্য ফেলে আসা জুনের গড় তাপমাত্রা ছিল তার চেয়ে ১.৭ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা ০.৯৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস উপরে। অভিজ্ঞতার নিরিখে যা এক কথায়, অস্বাভাবিক। অভূতপূর্ব।
গা পোড়ানো জুন এর আগেও এক বার দেখেছিলাম আমরা। তিন বছর আগে, ২০১৬-য়। কিন্তু সে বার জুনের গড় তাপমাত্রা ছিল ‘বেসলাইনে’র গড় তাপমাত্রার ১.৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা ০.৮২ ডিগ্রি সেলসিয়াস উপরে। এ বছরের জুনের তাপমাত্রা সেই রেকর্ডও ভেঙে দিল।
যেখানে খেলা ছেড়েছে জুন, সেখানেই খেলাটা ধরেছে জুলাই!
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উত্তরোত্তর পারদ চড়ানোর খেলাটা যেখানে ছেড়েছে জুন, সেখান থেকেই খেলাটা ধরেছে জুলাই। ‘স্ট্রাইক রেট’ একই রকম রেখে। ফলে, এই জুলাই মাসটা যতটা গা ঝলসানো হবে, এই মাসে ততটা গরম এর আগে কখনও দেখা যায়নি।
পেনসিলভানিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির জলবায়ু বিশেষজ্ঞ মাইকেল ম্যান তাঁর টুইটে লিখেছেন, ‘‘এই জুলাই যদি আমাদের হিসাবে থাকা বছরগুলির মধ্যে উষ্ণতম জুলাই হয়ে ওঠে (যা হওয়ার সম্ভাবনা যথেষ্টই), তা হলে তা হবে এখনও পর্যন্ত আমাদের রেকর্ডে থাকা পৃথিবীর উষ্ণতম মাস।’’
কেন হঠাৎই গা এতটা গরম হল এ বছরের জুনের?
তার কয়েকটি কারণও দেখিয়েছে নাসা। জানিয়েছে, জুনের শেষ সপ্তাহে পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলিতে যে ভয়াবহ তাপপ্রবাহের ঘটনা ঘটেছে, গত কয়েক শতকের মধ্যে ওই সময় পৃথিবীতে যা হয়নি। ফ্রান্স তার ইতিহাসে যে তাপমাত্রায় কোনও দিন পৌঁছতে পারেনি, গত জুনের শেষ সপ্তাহের তাপপ্রবাহে ফরাসি বিপ্লবের দেশের ১৩টি জায়গার উষ্ণতা তা ছাপিয়ে গিয়েছে। ওই সময় ফ্রান্সে সবচেয়ে বেশি তাপমাত্রা ছিল গালার্গ লো মোঁত্যোর। ১১৪.৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা ৪৫.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ২০০৩-এর জুলাইয়েও ভয়ঙ্কর তাপপ্রবাহ হয়েছিল ফ্রান্সের গালার্গ লো মোঁত্যোয়। তবে এ বার তাপমাত্রা ছিল তার চেয়েও ৩.২ ডিগ্রি ফারেনহাইট উপরে।