চাঁদের মাটিতে কি সত্যিই জল আছে? অথবা জল থাকার মতো পরিবেশ বা খনিজ? মূলত সেই প্রশ্নেরই উত্তর খুঁজবে ভারতের মুন মিশন-২। নাম চন্দ্রযান-২। সোমবার উৎক্ষেপণের আগে থেকেই তুঙ্গে উৎকণ্ঠা আর উত্তেজনার পারদ। চন্দ্রযান-২ কত দিন পর চাঁদে নামবে? চাঁদের মাটিতেই বা কত দিন থাকবে চন্দ্রযানের অংশ?
এখনও পর্যন্ত এটাই ইসরোর সবচেয়ে বড় মিশন। উৎক্ষেপণ হবে জিওসাইক্রোনাস স্যাটেলাইট লঞ্চ ভেহিক্যাল অর্থাৎ জিএসএলভি এমকে-৩ থেকে, যা ইসরোর সবচেয়ে বড় এবং অত্যাধুনিক লঞ্চ প্যাড। অভিযান সফল হলে ভারত বিশ্বের মধ্যে চতুর্থ দেশ হিসাবে চাঁদে ‘পা’ রাখবে। আমেরিকা, রাশিয়া এবং চিন একাধিক বার একই ধরনের অভিযান করেছে।
শ্রীহরিকোটায় সতীশ ধওয়ন স্পেস রিসার্চ সেন্টার থেকে সোমবার সকালে উৎক্ষেপণ হবে চন্দ্রযান-২। কাউন্টডাউন শুরু হয়ে গিয়েছে রবিবার সন্ধ্যা ৬টা ৪৩ মিনিটে, শেষ হবে সোমবার দুপুর ২টো ৪৩ মিনিটে।
চন্দ্রযানের তিনটি ভাগ। অরবিটার, অর্থাৎ স্যাটেলাইট বা কৃত্রিম উপগ্রহ, যা চাঁদের কক্ষপথে ঘুরবে। ল্যান্ডার, অর্থাৎ যা চন্দ্রযানকে চাঁদের মাটিতে নামবে এবং নামাবে। এবং রোভার, অর্থাৎ মূল অনুসন্ধানকারী যান, যা চাঁদের মাটিতে জল ও অন্যান্য খনিজ পদার্থের সন্ধান চালাবে।
এই তিনটি অংশের প্রায় পুরোটাই ভারতে তৈরি। সেই কারণেই খরচ হয়েছে খুবই কম। এই তিনটি অংশ এবং মূল মহাকাশযানের মিলিত ওজন প্রায় ৩৮৫০ কেজি। চন্দ্রযান-২ তৈরিতে খরচ হয়েছে প্রায় ৯৭৮ কোটি টাকা, যা সবচেয়ে কম খরচে হওয়া চন্দ্রাভিযানগুলির মধ্যে অন্যতম।
চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে এখনও পর্যন্ত কোনও দেশের পা পড়েনি। ভারত সেটাই করবে। অর্থাৎ দক্ষিণ মেরুতে ভারতই প্রথম কোনও চন্দ্রযান পাঠাচ্ছে।
বলা বাহুল্য, উৎক্ষেপণ হওয়ার পর থেকে সব কিছুই স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তিতে কাজ করবে। উৎক্ষেপণের পর গতি বাড়িয়ে পৃথিবীর কক্ষপথ থেকে বেরিয়ে চাঁদের দিকে এগিয়ে যাবে চন্দ্রযান-২। চাঁদের কক্ষপথে পৌঁছতে চন্দ্রযান-২ কে পাড়ি দিতে হবে প্রায় ৩.৮৪ লক্ষ কিলোমিটার। সময় লাগবে পাঁচ দিন।
কক্ষপথে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর কক্ষপথে ঘুরতে থাকবে কৃত্রিম উপগ্রহ। তার পর ল্যান্ডার স্যাটেলাইট থেকে আলাদা হয়ে চাঁদের মাটিতে নামার প্রক্রিয়া শুরু করবে। ইসরোর হিসেবে চন্দ্রযান-২ চাঁদের মাটিতে নামবে ৬ সেপ্টেম্বর।
চাঁদের মাটিতে নামার চার ঘণ্টা পর খুলে যাবে রোভার। এটি একটি ৬ চাকার যন্ত্রযান। চাঁদের পুরো এক দিন অর্থাৎ পৃথিবীর ১৪ দিন ধরে ৫০০ মিটার এলাকা ঘুরবে ওই যন্ত্রযান। ছবি তোলা, মাটির পরীক্ষা, খনিজ পদার্থের বিশ্লেষণ করবে এই যন্ত্রযান। এ ছাড়া চাঁদের মাটিতে জলের সন্ধানও চালাবে এই চন্দ্রযান-২।
ল্যান্ডার এবং উপগ্রহটির মাধ্যমে সেই সব তথ্য পৃথিবীতে পাঠাবে চন্দ্রযান-২। বেঙ্গালুরুতে বায়ালালুতে ডিপ স্পেস নেটওয়ার্কও এই তথ্য গ্রহণে সাহায্য করবে।
এর পরই রোভারটি নষ্ট হয়ে যাবে। তবে কৃত্রিম উপগ্রহটি তার পরও কাজ করতে থাকবে। চাঁদের মাটি থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরে ঘুরতে থাকা স্যাটেলাইটটি ক্রমাগত চাঁদের পৃষ্ঠের ছবি তুলে পাঠাতে থাকবে।
চন্দ্রযান-২-এর গোটা অভিযানের মেয়াদ এক বছর। চন্দ্রযান-১ এর ক্ষেত্রে যেটা ছিল এক বছর ৪ মাস। চন্দ্রযান-২ ভারতের চন্দ্রাভিযানের দ্বিতীয় পর্ব। চন্দ্রযান-১ এই দক্ষিণ মেরুতে যাওয়ার পথেই ধ্বংস হয়ে যায়। তবে তার আগে তা চাঁদের মাটিতে জলের কণার উপস্থিতির প্রমাণ পৃথিবীতে পাঠিয়েছিল বলে দাবি বিজ্ঞানীদের।
সৌরজগতের ইতিহাসও বোঝার চেষ্টা করবে চন্দ্রযান-২। ইসরোর বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, দক্ষিণ মেরুতে এখনও ছোঁয়া লাগেনি এমন কিছু জীবাশ্ম থাকতে পারে, যা থেকে এই ইতিহাস বোঝা যেতে পারে। মসৃণ এবং অক্ষত অবস্থায় চন্দ্রযানকে চাঁদের মাটিতে নামানোই বিজ্ঞানীদের কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। তাই চন্দ্রযানের অবতরণকে ইসরো বলছে ‘ভয়ঙ্কর ১৫ মিনিট’।
চন্দ্রযান-১ এর মতোই সফল হোক ভারতের চন্দ্রযান-২। এই কামনাই করছে দেশবাসী। উৎক্ষেপণের আগে থেকেই চড়ছে উৎকণ্ঠার পারদ। (ছবি: ইসরোর সৌজন্যে)