-ফাইল ছবি।
এখনও কোভিড টিকা নেননি? যাই যাই করেও টিকাকরণ কেন্দ্রে যাওয়া হয়ে ওঠেনি তো? দ্বিতীয় পর্বের টিকা যথা সময়ে নিয়েছেন, নাকি একটি পর্বের পরেই ভেবে নিয়েছেন আপনি ‘ফুল প্রুফ’? ভেবেছেন, করোনাভাইরাস আর ধারে কাছেই ঘেঁষতে পারবে না? খুব ভুল করছেন কিন্তু। পারলে এখনই গিয়ে কোভিড টিকা নিয়ে নিন। কোভ্যাক্সিন, কোভিশিল্ড হাতের কাছে যা পান সেটাই নিন। যাঁরা দ্বিতীয় পর্বের টিকা নেওয়ার ব্যাপারে ‘আজ যাব কাল যাব’ করছেন, তাঁরাও আর সময় নষ্ট করবেন না। কারণ দেরি করলেই বিপদ বাড়বে। এমনটাই দাবি করল আমেরিকার ‘সেন্টার্স ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি)’।
টিকা না নিলে মৃত্যুর শঙ্কা বেশি ১১ গুণ
মাথায় রাখবেন, যাঁরা কোভিড টিকা একেবারেই নেননি, ডেল্টা-সহ করোনা ভাইরাসের বিভিন্ন রূপ (‘ভেরিয়্যান্ট’)-এ সংক্রমিত হয়ে তাঁদের মৃত্যুর আশঙ্কা ১১ গুণ বেশি তাঁদের চেয়ে, যাঁরা টিকা পুরোপুরি নিয়েছেন।
টিকা একেবারেই না নেওয়া থাকলে সংক্রমিত হওয়া ও হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার ঘটনাও কিন্তু অনেক গুণ বেড়ে যাচ্ছে। যাঁরা টিকা পুরোপুরি নিয়েছেন তাঁদের চেয়ে।
টিকা একেবারেই না নেওয়া থাকলে সংক্রমণের আশঙ্কা বাড়ছে সাড়ে ৪ গুণ। আর রীতিমতো অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার আশঙ্কা বাড়ছে ১০ গুণ।
এই তথ্য দিয়েছে আমেরিকার ‘সেন্টার্স ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশান (সিডিসি)’। শুক্রবার। তাদের ‘মর্বিডিটি অ্যান্ড মর্টালিটি উইক্লি রিপোর্ট’-এ। ভারত, আমেরিকা-সহ গোটা বিশ্বেই এখন ডেল্টা রূপের দাপট। আমেরিকার অন্তত ১১টি প্রদেশে তা রীতিমতো উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ডেল্টা প্রতিরোধে অনেক বেশি কার্যকর দু’টি মেসেঞ্জার আরএনএ (এমআরএনএ) কোভিড টিকা এবং জনসন অ্যান্ড জনসনের টিকা ভারতের চেয়ে অনেক বেশি মানুষকে দেওয়ার পরেও।
টিকাকরণে পশ্চিমবঙ্গের ছবি উদ্বেগজনক
গত ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আমেরিকায় মোট জনসংখ্যার ৫৪.২ শতাংশকে কোভিড টিকা পুরোপুরি দেওয়া হয়েছে। যে টিকা একটি পর্বের, সেই টিকা একটি। আর যে টিকা দু’টি পর্বের, সেই টিকা দু’টি।
মাথায় রাখবেন এই টিকাকরণের দৌড়ে কিন্তু আমেরিকার চেয়ে অনেক পিছিয়ে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। ১০ কোটি জনসংখ্যার এই রাজ্যে টিকা দেওয়ার কথা ৭ কোটি মানুষকে।
অথচ, রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের পরিসংখ্যান জানাচ্ছে, ১ এপ্রিল থেকে এখনও পর্যন্ত সাড়ে ৫ মাসে পশ্চিমবঙ্গে কোভিডের দু’টি টিকা পেয়েছেন মাত্র ১ কোটি ৩৪ লক্ষ ২৩ হাজার ৫৩৮ জন। এর অর্থ, রাজ্যের যত জন নাগরিকের টিকা পাওয়ার কথা, তাঁদের মধ্যে এখনও পর্যন্ত মাত্র ১৯.১ শতাংশকে দু’টি কোভিড টিকাই দেওয়া হয়েছে। আর একটি পর্বের টিকা দেওয়া হয়েছে ৩ কোটি ৩৭ লক্ষ ৫২ হাজার ৭৪৬ জনকে। অর্থাৎ, যাঁদের টিকা পাওয়ার কথা তাঁদের ৪৮.১ শতাংশ।
গ্রাফিক- সনৎ সিংহ।
একটি টিকা যথেষ্ট নয় ডেল্টা প্রতিরোধে
শুক্রবার প্রকাশিত সিডিসি-র রিপোর্ট কিন্তু জানাচ্ছে, একটি পর্বের টিকা ( যেগুলি দু’টি পর্বের, যেমন কোভিশিল্ড ও কোভ্যাক্সিন) কোভিড সংক্রমণ, তার ফলে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ও মৃত্যুর আশঙ্কা ততটা কমাতে পারছে না। সেটা তখনই কমছে, যখন দু’টি টিকা পুরোপুরি নেওয়া হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের একাংশের বক্তব্য, কলকাতা-সহ গোটা পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে এই ছবিটা উদ্বেগজনক। কারণ, ডেল্টা রুখতে অনেক বেশি পারদর্শী এমআরএনএ কোভিড টিকা (মডার্না ও ফাইজারের) এখনও রাজ্যে দেওয়া শুরু হয়নি। রাজ্যে মূলত যে দু’টি টিকা দেওয়া হচ্ছে, তাদের দু’টি পর্বের টিকাকরণের হারও উদ্বেগ বাড়াচ্ছে বই কমাচ্ছে না।
ডেল্টা প্রতিরোধে টিকার কার্যকারিতা কমছে
আমেরিকার ১৩টি প্রদেশে ৬ লক্ষেরও বেশি মানুষের উপর গত এপ্রিল থেকে অগস্ট পর্যন্ত চালানো এই সমীক্ষায় সিডিসি এ-ও দেখেছে, আমেরিকায় যে কোভিড টিকাগুলি এখন দেওয়া হচ্ছে, ডেল্টা প্রতিরোধে সেগুলির কার্যকারিতা গত এপ্রিল থেকে অগস্টে অনেকটাই কমে গিয়েছে। এপ্রিলে টিকাগুলির কার্যকারিতা ছিল ৯১ শতাংশ। আর সেটা অগস্টে কমে গিয়ে হয়েছে ৭৮ শতাংশ।
ডেল্টা প্রতিরোধে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কোভিড টিকার কার্যকারিতা কমে যাওয়ার ফলে ফের সংক্রমিত হয়ে (‘ব্রেকথ্রু ইনফেকশন’) হাসপাতালে ভর্তি হতে হচ্ছে টিকা নেওয়ার পরেও। এমনকি, তাঁদের একাংশের মৃত্যুও হচ্ছে।
-ফাইল ছবি।
সিডিসি-র সমীক্ষায় ধরা পড়েছে, গত এপ্রিল থেকে অগস্টে টিকার কার্যকারিতা কমে আসার ফলে যাঁরা টিকা নিয়েছেন, তাঁদের ১৪ শতাংশকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হচ্ছে। তাঁদের মধ্যে ১৬ শতাংশের মৃত্যুও হচ্ছে কোভিডে।
বিশেষজ্ঞদের একাংশের বক্তব্য, এই পরিসংখ্যান এ রাজ্যের মানুষের কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বাড়িয়ে তুলেছে। টিকা নেওয়ার পরেও। আশঙ্কা আরও বাড়ছে কারণ, রাজ্যের মাত্র ১৯.১ শতাংশ মানুষকে এখনও পর্যন্ত দু’টি পর্বের টিকা দেওয়া সম্ভব হয়েছে।