-প্রতীকী ছবি।
ক্যানসারের চিকিৎসা করাতে গিয়ে আমি, আপনি পেতেই পারি ঘন অন্ধকার ফোঁড়ার তীব্র দৃষ্টিশক্তি! যাকে চিকিৎসাশাস্ত্রের পরিভাষায় বলা হয়— ‘নাইট ভিশন’।
এই অবাক করা খবরটি দিয়েছে একটি গবেষণা। সেই গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান গবেষণা পত্রিকা ‘জার্নাল অব ফিজিক্যাল কেমিস্ট্রি লেটার্স’-এ।
কী ভাবে পাওয়া সম্ভব হয় এই নাইট ভিশন?
গবেষকরা দেখেছেন, চোখের ক্যানসারের নানা ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতির অন্যতম ‘ফোটোডায়নামিক থেরাপি’ এ ব্যাপারে বড় ভূমিকা নেয়। এই পদ্ধতিতে আলো দিয়ে চোখের ক্যানসারে আক্রান্ত কোষগুলিকে পুড়িয়ে ফেলা হয়। আর তারই পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া হিসাবে রোগী পান নাইট ভিশন-এর ক্ষমতা।
গবেষণাপত্রটি জানিয়েছে, আমাদের চোখের রেটিনায় থাকে ‘রোডপ্সিন’ নামে একটি প্রোটিন। যে প্রোটিন আলো পড়লেই সক্রিয় হয়ে ওঠে। ক্যানসারের ফোটোডায়নামিক থেরাপিতে ব্যবহার করা হয় আলো সংবেদী বিশেষ একটি রাসায়নিক যৌগ। তার নাম— ‘ক্লোরিন ই৬’।
গবেষকরা দেখেছেন, চোখের রেটিনায় থাকা রোডপ্সিন বিক্রিয়া করে ক্লোরিন ই৬-এর সঙ্গে। তাতেই নাইট ভিশনের ক্ষমতা পায় চোখ।
আগের বিভিন্ন গবেষণায় জানা গিয়েছে, চোখের রেটিনায় থাকে আরও একটি জৈব যৌগ। যার নাম— ‘রেটিনাল’। এই যৌগটি কিন্তু আলোক বর্ণালীর একাংশে থাকা অবলোহিত রশ্মি এসে পড়লে সক্রিয় হয়ে ওঠে না। রেটিনাল সক্রিয় হয় শুধুই দৃশ্যমান আলো এসে পড়লে। তখনই রেটিনাল আলাদা হয়ে যায় রোডপ্সিন থেকে। তার ফলে তৈরি হয় বৈদ্যুতিক সঙ্কেত। যা আমাদের মস্তিষ্কে পৌঁছয়। আর তখনই আমরা কিছু দেখতে পাই। রাতে দৃশ্যমান আলোর অভাবে রেটিনাল আর এই কাজটি করে না। ফলে, আমরাও দিনের আলোয় যতটা দেখতে পারি, রাতের অন্ধকারে আমাদের দৃষ্টিশক্তি ততদূর পৌঁছয় না।
কিন্তু সেই রেটিনালই যখন অবলোহিত আলোয় ক্যানসারের একটি চিকিৎসা পদ্ধতিতে ব্যবহৃত যৌগ ক্লোরিন ই৬-এর সংস্পর্শে আসে, তখন সেটি দৃশ্যমান আলোর ক্ষেত্রে যেমন আচরণ করে তেমনটাই করে। অর্থাৎ, সে ক্ষেত্রেও রেটিনাল আলাদা হয়ে যায় রোডপ্সিন থেকে। জন্ম হয় বৈদ্যুতিক সঙ্কেতের। তা মস্তিষ্কে পৌঁছয়। আমরা দেখতে পাই। এ ক্ষেত্রে চোখের কোষগুলিতে থাকা অক্সিজেনও বড় ভূমিকা নেয়।