Special Breakthrough Prize

Breakthrough Prizes in Science 2021: বিজ্ঞানের ‘অস্কার’ পেলেন চেন্নাইয়ের শঙ্কর, সহজে ডিএনএ বোঝার উপায় দেখিয়ে সাফল্য

রুশ বিজ্ঞানী ও ধনকুবের ইউরি মিলনার, সের্গেই ব্রিন ও মার্ক জাকারবার্গের সংস্থার দেওয়া এই পুরস্কার অর্থমূল্যে নোবেল পুরস্কারের চেয়েও দামি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১৭:৩৯
Share:

কেম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক 'স্যর' শঙ্কর বালসুব্রহ্মণ্যম। -ফাইল ছবি।

বিজ্ঞানের ‘অস্কার’ উঠল ফের এক ভারতীয় বংশোদ্ভূতের হাতে।
চেন্নাইয়ের সন্তান অধুনা ব্রিটিশ নাগরিক স্যর শঙ্কর বালসুব্রহ্মণ্যমকে এ বছর দেওয়া হল ৩০ লক্ষ ডলার মূল্যের ‘ব্রেকথ্রু পুরস্কার’।প্রাণের ‘বীজ’ ডিএনএ-র সুজটিল রহস্য অত্যন্ত দ্রুত গতিতে ভেদ করার উপায় বাতলানোর জন্য রসায়নবিদ শঙ্কর পেলেন বিজ্ঞানের গবেষণায় শীর্ষস্তরের স্বীকৃতি।

Advertisement

রুশ বিজ্ঞানী ও ধনকুবের ইউরি মিলনার, সের্গেই ব্রিন ও ফেসবুক প্রধান মার্ক জুকেরবার্গের সংস্থার দেওয়া ব্রেকথ্রু পুরস্কার অর্থমূল্যে নোবেল পুরস্কারের চেয়েও দামি। তাই একে বিজ্ঞানের ‘অস্কার’ বলা হয়। বৃহস্পতিবার এই পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে।

শঙ্কর-সহ ৮ জনের হাতে এ বার বিজ্ঞানের ‘অস্কার’

Advertisement

গণিত ও জীববিজ্ঞানে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিতে এই পুরস্কার দেওয়া হয়েছে আরও ৫ জনকে। শঙ্করই তাঁদের মধ্যে একমাত্র ভারতীয় বংশোদ্ভূত। পদার্থবিজ্ঞানে অবদানের জন্য ২০১২-য় প্রথম ভারতীয় হিসাবে এই ব্রেকথ্রু পুরস্কার পেয়েছিলেন অধ্যাপক অশোক সেন।

অত্যন্ত দ্রুত গতিতে ডিএনএ-র রহস্যভেদের জন্য এ বছর শঙ্কর পুরস্কার ভাগাভাগি করে নিয়েছেন আর এক ব্রিটিশ রসায়নবিদ স্যর ডেভিড ক্লেনারম্যানের সঙ্গে। দু’জনেই কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। পুরস্কারের বাকি অংশ পেয়েছেন ফরাসি সংস্থা ‘আলফানোসোস’-এর কর্ণধার পাসকাল মায়ার। কত দ্রুত গতিতে জিনোমের সিকোয়েন্স করা যায় তার উপায় বাতলানোর জন্য। যা হয়ে উঠবে আগামী প্রজন্মে মানুষের জিনোম সিকোয়েন্সিং-এর প্রধান প্রযুক্তি।

চেন্নাই থেকে নাইটহুড-এর পথে

শঙ্করের জন্ম ১৯৬৬ সালে। চেন্নাইয়ে। জন্মের দু’বছরের মাথায় শঙ্করকে নিয়ে তাঁর বাবা, মা চলে যান ব্রিটেনে। ১৯৬৭-তে। শৈশব কাটে চেশায়ারের একটি গ্রামাঞ্চলে। রানকম থেকে কিছুটা দূরে। ভর্তি হন ডারেসবারি প্রাইমারি স্কুলে। পরে পড়তে যান অ্যাপ্‌লটন হাই স্কুলে। পরে যা নাম বদলিয়ে হয়েছে ব্রিজওয়াটার হাই স্কুল। শঙ্কর তার পর যান কেমব্রিজের ফিট্‌জউইলিয়াম কলেজে ন্যাচারাল সায়েন্সে ট্রাইপস করতে। মাস্টার্সের পর সেখানেই শঙ্কর পিএইচ ডি করেন বিশিষ্ট অধ্যাপক বিজ্ঞানী ক্রিস অ্যাবেলের তত্ত্বাবধানে।

গবেষণা শেষ করে শঙ্কর ন্যাটো অন্তর্ভুক্ত দেশের রিসার্চ ফেলো হিসাবে যান আমেরিকায়। ১৯৯১ সালের শেষের দিকে। ফের গবেষণা করেন পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে। তার পরেই ব্রিটেনে ফিরে যোগ দেন কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে লেকচারার পদে। ধাপে ধাপে হন অধ্যাপক। হন রয়্যাল সোসাইটির সদস্য। ২০০৮ সালে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিনাল কেমিস্ট্রি বিভাগের অত্যন্ত সম্মাননীয় হার্শেল স্মিথ চেয়ার প্রফেসর হন শঙ্কর। রানির কাছ থেকে ২০১৭-য় পান ‘নাইটহুড’ খেতাবও। ২০১৮-য় পান রয়্যাল মেডেল।

এখন কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের গবেষণাগারগুলির তিনি অধিকর্তা। অধিকর্তা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যানসার গবেষণা বিভাগেরও।

শঙ্কর সম্পর্কে রয়্যাল সোসাইটির মূল্যায়ন

২০১২ সালে সদস্যপদ দেওয়ার সময় শঙ্কর সম্পর্কে রয়্যাল সোসাইটি বলেছিল, “নিউক্লিক অ্যাসিড নিয়ে গবেষণায় শঙ্কর একজন পথপ্রদর্শক এই সময় ও পরবর্তী প্রজন্মের গবেষকদের কাছে।”

ব্রেকথ্রু পুরস্কার কমিটি বৃহস্পতিবার তার ঘোষণায় বলেছে, “শঙ্কর ও তাঁর সহযোগী পুরস্কারপ্রাপকদের কাজ, তাঁদের উদ্ভাবিত প্রযুক্তি মানুষের গোটা জিনোমকে বুঝে ফেলার গতি অন্তত ১০ লক্ষ গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। যে কাজটা করতে আগে লাগত এক দশকেরও বেশি সময়, তা এখন এক ঘণ্টায় করে ফেলা সম্ভব হচ্ছে মাত্র ১ হাজার ডলার খরচ করে।”

জয়ী ৮ জনের অন্যতম আরও তিন। অধ্যাপক 'স্যর' ডেভিড ক্লেনারম্যান (বাঁ দিক থেকে), অধ্যাপক ক্যাটলিন কারিকো ও অধ্যাপক হিদেতোশি ইয়াতোরি।

যাঁদের জন্য মডার্না, ফাইজারের টিকা, তাঁরাও জয়ী

জীববিজ্ঞানে বিশিষ্ট অবদানের জন্য এ বছর যে তিন জনকে ব্রেকথ্রু পুরস্কার দেওয়া হয়েছে ,তাঁদের মধ্যে অন্যতম বায়োএনটেক-এর অধ্যাপক ক্যাটলিন কারিকো। তিনি ও পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশিষ্ট চিকিৎসক ড্রু ওয়াইজম্যানের জন্যই একেবারেই অভিনব মেসেঞ্জার আরএনএ (এমআরএনএ) কোভিড টিকা বানাতে পেরেছে ফাইজার ও মডার্নার মতো ওষুধ সংস্থা। তাই দু’জনকেই দেওয়া হয়েছে ব্রেকথ্রু পুরস্কার। তাঁদের সঙ্গে পুরস্কার ভাগাভাগি করেছেন আমেরিকার স্ক্রিপ্‌স রিসার্চ ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক জেফ্রি কেলি। গবেষণার জন্য কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বনিবনা না হরওয়ায় এক সময় পদাবনতি ও বেতন-হ্রাসের ধকল সইতে হয়েছিল ক্যাটলিনকে।

১ হাজার ৫০০ কোটি বছরের সময় নিখুঁত মাপার ঘড়ি

অন্য দিকে, ‘হলোমোনিক ডি-মডিউল্‌স’ উদ্ভাবনের জন্য গণিতে এ বছরের ব্রেকথ্রু পুরস্কার দেওয়া হয়েছে টোকিয়ো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হিদেতোশি ইয়াতোরি ও জাপানের রাইকেন রিসার্চ ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক জুন ইয়ে-কে। তাঁরা এমন একটি ঘড়ি (অপটিক্যাল ল্যাটিস ক্লক) বানিয়েছেন, যার ১ হাজার ৫০০ কোটি বছরেরও বেশি (ব্রহ্মাণ্ডের জন্মেরও আগে) সময় মাপতে গিয়ে এক সেকেন্ডেরও কম সময়ে ভুলচুক হয়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement