প্রচণ্ড শক্ত চামড়া, বিশালাকার মজবুত দাঁত, লম্বা লেজ, ঠিক যেন কুমির। তবে আকারে কুমিরের থেকে খানিকটা বড়। পাগুলোও আরও একটু বেশি লম্বা এবং মজবুত।
২৩ কোটি বছর আগে রাজত্ব করত কুমিরের এই আত্মীয়। যাদের দেখে ভয়ে কাঁপত ডাইনোসরেরাও!
সম্প্রতি এমনই প্রাণীর জীবাশ্মের খোঁজ পেলেন বিজ্ঞানীরা। দক্ষিণ ব্রাজিলের আগুডোয় মাটি খুঁড়ে এই প্রাণীর জীবাশ্ম পেয়েছেন তাঁরা। অ্যাকটা প্যালিওনটোলজিক্যাল পোলোনিকা নামে জার্নালে তা প্রকাশিত হয়েছে।
জার্নালে দাবি করা হয়েছে, এই প্রাণীর শক্ত, ধারালো দাঁত ডাইনোসরদের হাড়ও গুঁড়িয়ে ফেলার ক্ষমতা রাখত।
আজকে যেমন কুমির দেখতে আমরা অভ্যস্ত, অনেকটা সে রকমই দেখতে এগুলি। চারপেয়ে এই প্রাণী পিছনের পা দুটো মূলত জোরে দৌড়নোর জন্য কাজে লাগাতো। এদের নাম ডি কলিসেনসিস।
দৈর্ঘ্যে সাত ফুট পর্যন্ত লম্বা হত এরা। মুখটাও কুমিরের মতো লম্বাটে। আর সেই লম্বাটে মুখের ভিতর শক্ত চোয়ালে উঁকি দিত ব্লেডের মতো দাঁতের সারি।
এর আগে ১৯ শতকে স্কটল্যান্ডে একটা এবং ৫০ বছর আগে আর্জেন্টিনায় কলিসেনসিসের দুটো জীবাশ্ম মিলেছে। আর সম্প্রতি মিলল ব্রাজিলে। অর্থাত্ এই নিয়ে সারা বিশ্বে মাত্র চারটি জীবাশ্ম মিলল।
ব্রাজিলে এই ধরনের প্রাণীর জীবাশ্ম পাওয়ায় উচ্ছ্বসিত বিজ্ঞানীরা। সে সময়ে এই প্রাণী এই অঞ্চলের ইকোসিস্টেমে কী ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে, তা জানার চেষ্টা করছেন বিজ্ঞানীরা।
তা ছাড়া, যে জীবাশ্মটি উদ্ধার হয়েছে, তার শরীরের হাড়, মাথার খুলি প্রায় একইরকম রয়েছে, খুব একটা ক্ষয় হয়নি। এগুলো থেকে গবেষণার মাধ্যমে সে সময়ের অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মেলার আশা করছেন বিজ্ঞানীরা।
কলিসেনসিসের খুলি এবং দাঁত পরীক্ষা করে বিজ্ঞানীরা প্রাথমিক ভাবে জানতে পেরেছেন, ভয়ঙ্কর এই প্রাণী কিন্তু তুলনামূলক শান্ত স্বভাবের ছিল। সাধারণত মৃত প্রাণীদেরই হাড়-মাংস খেত এরা। তবে প্রয়োজনে তার আকারের চেয়ে বড় প্রাণীকেও নিমেষে মেরে ফেলতে পারত কলিসেনসিস।
আর সে কারণেই বাস্তুতন্ত্রের ফুড চেনে তাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। কারণ তাদের মুখে থাকা উত্সেচক মৃত প্রাণীগুলোর প্রোটিন-শর্করা সহজ উপাদানে ভেঙে ফেলত।
সেই উপাদানগুলো মাটিতে মিশে মাটি উর্বর করে তুলত। মাটি থেকে পুষ্টিগুণ নিয়ে গাছ বড় হত, সেই গাছ খেয়ে বেঁচে থাকত শাকাহারী প্রাণীরা। এইভাবেই এগিয়ে চলত ফুড চেন।