অধ্যাপক প্রীতম দেব ছবি সংগৃহীত।
প্লাস্টিক ও প্লাস্টিকের ব্যাগ-মোড়কের যথেচ্ছ ব্যবহারে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত নানান ঝুঁকির কথা আকছার শোনা যায়। তার উপরে রয়েছে বর্জ্য প্লাস্টিকের বিপদও। প্লাস্টিক বর্জনের আন্দোলন, প্লাস্টিকের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক স্তরে অভিযানও চলে মাঝেমধ্যেই। এই অবস্থায় প্লাস্টিক মোড়কে বদল আনার কথা বলছেন এক বাঙালি বিজ্ঞানী।
তেজপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক প্রীতম দেব তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, পলিমার থেকে তৈরি মোড়ক পরিবেশের পক্ষে উপযোগী। মোড়ক হিসেবে তা প্লাস্টিকের থেকেও উপযোগী। সর্বোপরি তার ব্যবহারে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যা দেখা দেওয়ার আশঙ্কা নেই। এই আবিষ্কারের পেটেন্ট ইতিমধ্যেই পেয়ে গিয়েছেন প্রীতমবাবু। এবং এই আবিষ্কারের স্বীকৃতি হিসেবে খোদ রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে পুরস্কারও পাওয়ার কথা তাঁর।
কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলির বিভিন্ন বিভাগের গবেষণা ও উৎকর্ষের নিরিখে প্রতি বছর রাষ্ট্রপতির তরফে ভিজ়িটর্স অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়। এ বার দেশের মধ্যে প্রযুক্তি ক্ষেত্রে সেরা আবিষ্কারের জন্য তিনি এই পুরস্কার পাচ্ছেন বলে জানান প্রীতমবাবু।
আদতে কলকাতার বিজয়গড়ের বাসিন্দা প্রীতমবাবু কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর পাশ করেন। পিএইচ ডি করেছেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। তার পরে বিদেশে পোস্ট-ডক্টরেট সেরে তেজপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতায় যোগ দেন। তাঁর গবেষণার মূল বিষয় ন্যানো-টেকনোলজি। তিনি জানান, এই গবেষণার সুবাদেই তিনি প্লাস্টিকের বিকল্প মোড়ক আবিষ্কারে ব্রতী হন। প্রীতমবাবুর মতে, পলিমারবেসড টুডি ন্যানোকম্পোনেন্ট থেকে তৈরি এই মোড়ক জৈব উপায়ে বায়ো-ডিগ্রেডেবল বা পচনশীল। ফলে সেগুলো সহজেই মাটিতে মিশে যেতে পারে। তবে এই প্রশ্ন উঠতেই পারে যে, পলিমারের তৈরি মোড়কের ভিতরে নানা ধরনের খাদ্যসামগ্রী কি বেশি দিন তরতাজা থাকবে?
প্রীতমবাবু জানান, আবিষ্কারের পরে তেজপুরের স্থানীয় একটি কনফেকশনারি দ্রব্য প্রস্তুতকারী সংস্থায় বিষয়টি পরীক্ষা করা হয়েছিল। তাতে দেখা গিয়েছে, প্রায় তিন সপ্তাহ পরেও ওই মোড়কের ভিতরে খাদ্য দ্রব্য তরতাজা থাকছে। কারণ, খাবার নষ্টকারী জীবাণুকে ধ্বংস করার ক্ষমতা রয়েছে পলিমারের। তাঁর দাবি, এই আবিষ্কার বাণিজ্যকরণ করবে ন্যাশনাল রিসার্চ ডেভেলপমেন্টাল কাউন্সিল। এ ছাড়াও, কেন্দ্রীয় ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প মন্ত্রকের প্রতিনিধিরাও তাঁর ল্যাবরেটরিতে হাজির হয়ে বিষয়টি সরেজমিনে দেখে গিয়েছেন।