নানা ধরনের পুষ্টিকর খাদ্য উপাদানের দ্রবণ স্প্রে করে ঢুকিয়ে দেওয়া হয় বিভিন্ন ধরনের শস্য, আনাজপাতির গাছের মূলে। ছবি- ডিএলআর-এর সৌজন্যে।
ধনধান্যে পুষ্পে ভরা আন্টার্কটিকা! হাজারও ফসলের রঙে যেন সবুজই হয়ে উঠেছে বরফের মহাসাম্রাজ্য!
পুরু বরফের চাদরে মোড়া আন্টার্কটিকায় বরফের সেই মহাসাম্রাজ্যে উপচে পড়ছে নানা ধরনের আনাজপাতি। লঙ্কা, টম্যাটো, বিট, শসা, ব্রকোলি, ফুলকপি, এক ধরনের বাঁধাকপি। নানা রকমের লেটুস পাতা, মশলাপাতি।
যেন ফসলের বন্যা বয়ে গিয়েছে দক্ষিণ মেরুতে বরফের মহা সাম্রাজ্য আন্টার্কটিকায়।
কোনও কল্পবিজ্ঞানের কাহিনী নয়। নয় কোনও হলিউডের সায়েন্স ফিকশন ফিল্ম। এই সব ফসল ফলানো হয়েছে আন্টার্কটিকায়, ফসলের একটি কৃত্রিম ক্ষেতে। যে ক্ষেত বা ‘গ্রিনহাউস’টি বানিয়েছে জার্মান এরোস্পেস সেন্টার (সংক্ষেপে যার নাম—‘ডিএলআর’)। বরফের মহাসাম্রাজ্যে বানানো ফসলের এই কৃত্রিম ক্ষেতের নাম— ‘ইডেন আইএসএস’।
ফসলের এই কৃত্রিম ক্ষেতটি বানানো হয়েছে পূর্ব আন্টার্কটিকার পুরু বরফের চাঙর ‘এক্সট্রম আইস শেল্ফ’-এর উপরে জার্মানির গবেষণা শিবিরের নওমেয়্যার থ্রি স্টেশনের অদূরেই।
পূর্ব আন্টার্কটিকায় ফসলের এই কৃত্রিম ক্ষেতে সূর্যালোকের প্রবেশ একেবারেই নিষিদ্ধ। এমনিতেই আন্টার্কটিকায় সূর্য ওঠে না টানা ৬ মাস। তার পর যখন ওঠে তখনও যাতে সূর্যালোক সেখানে ঢুকতে না পারে তার জন্য ফসলের এই কৃত্রিম ক্ষেতে নেওয়া হয়েছে সব রকম ব্যবস্থা। সেই অবাক করে দেওয়া ক্ষেতে নানা ধরনের ফসল ফলানোর জন্যে ব্যবহার করা হয় লাল, নীল, সবুজ নানা রঙের কৃত্রিম আলো। যে ফসলের জন্য যে রঙের প্রয়োজন।
পূর্ব আন্টার্কটিকার এই কৃত্রিম ক্ষেতে ফসল ফলানোর জন্য লাগে না মাটিও! বরফের মহা সাম্রাজ্যে মাটি মিলবে কী ভাবে? মহাকাশেও, তা সে চাঁদই হোক বা ‘লাল গ্রহ’ মঙ্গলে অথবা পৃথিবীর অনেক উপরের কক্ষপথে প্রদক্ষিণ করা আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন, ফসল ফলাতে গেলে তো সেই মুলুকেও পাওয়া যাবে না মাটি। তার পরেও যাতে সেই ভিনমুলুকে ফসল ফলানো যায় মহাকাশচারীদের খেয়ে-পরে বাঁচার জন্য, যাতে নিজেদের প্রয়োজন মতো ফসল তাঁরা সেই মুলুকেই ফলিয়ে নিতে পারেন অনায়াসে, তারই পরীক্ষানিরীক্ষা করতে আন্টার্কটিকায় ফসলের এই কৃত্রিম ক্ষেত বানিয়েছে ডিএলআর।
তাই এই কৃত্রিম ক্ষেতে ফসল ফলানো হয় একটি অভিনব পদ্ধতিতে। বিজ্ঞানের পরিভাষায় যার নাম— ‘এরোপোনিক্স’। যে পদ্ধতিতে নানা ধরনের পুষ্টিকর খাদ্য উপাদানের (‘নিউট্রিয়েন্টস্’) দ্রবণ স্প্রে করে ঢুকিয়ে দেওয়া হয় বিভিন্ন ধরনের শস্য, আনাজপাতির গাছের মূলে। যে গাছগুলি সেই কৃত্রিম ক্ষেতে ঝুলছে উপর থেকে।
ফসলের এই ধরনের কৃত্রিম ক্ষেত ইতিমধ্যেই দু’-দু’টি বানিয়ে ফেলা হয়েছে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে। একটির নাম— ‘ভেজি’। অন্যটি— ‘অ্যাডভান্সড প্ল্যান্ট হ্যাবিটাট’।
ইডেন আইএসএস প্রকল্পের প্রধান ড্যানিয়েল শ্যুবার্ট জার্মান এরোস্পেস সেন্টারের দেওয়া বিবৃতিতে বলেছেন, ‘‘আন্টার্কটিকার এই কৃত্রিম ক্ষেতে এর আগে এত রকমের ফসল এত পরিমাণে ফলানো সম্ভব হয়নি। আগামী দিনে চাঁদে বা মঙ্গলে মহাকাশচারীরা যে এই সব প্রয়োজনীয় ফসল অনায়াসেই ফলাতে পারবেন সে ব্যাপারে আমাদের অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী করে তুলল আন্টার্কটিকার কৃত্রিম ক্ষেতের এই পরীক্ষানিরীক্ষা।’’