ASTEROIDS

গ্রহাণুদের নাম ভুলে যাওয়া দুই মহিলা জ্যোর্তিবিজ্ঞানীর নামে

১৮৮৬ সালে অ্যানি ও অ্যালিস দু’জনেই কেমব্রিজের গার্টন কলেজে অঙ্ক নিয়ে পড়তে গিয়েছিলেন। এই খবরে স্বাভাবিক ভাবে খুবই খুশি গার্টন কলেজ কর্তৃপক্ষ।

Advertisement

শ্রাবণী বসু

লন্ডন শেষ আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৮:৩৯
Share:

অ্যালিস এভারেট (চিহ্নিত মাঝখানে) ও অ্যানি রাসেল মন্ডার (চিহ্নিত ডান দিকে)। কেমব্রিজের গার্টন কলেজে ১৮৮৬ সালে তোলা ছবি। —ফাইল চিত্র।

সে প্রায় দেড়শো বছর আগের কথা। ব্রিটিশ জ্যোর্তিবিজ্ঞান চর্চাকেন্দ্র গ্রিনিচ রয়্যাল অবজ়ারভেটরির কোনও এক নিস্তব্ধ কক্ষে বসে এক মনে কাজ করে চলেছেন সদ্য নিযুক্ত ‘লেডি কম্পিউটার’ অ্যানি রাসেল। প্রথম বার একটি মেয়েকে ওই চেয়ারে দেখে অবাক হয়ে যাচ্ছেন পুরুষ সহকর্মীরা। বিয়ের পরে অবশ্য অ্যানি মন্ডার নামেই পরিচিত ও খ্যাত হন তিনি।

Advertisement

ঊনবিংশ ও বিংশ শতকের সন্ধিক্ষণ। একে রক্ষণশীল ব্রিটিশ ভিক্টোরিয়ান সমাজ। তার উপরে সেলাই-ফোঁড়াই নয়, রান্নাবান্না নয়, একেবারে পুরুষশাসিত অঙ্ক, পদার্থবিদ্যা, জ্যোর্তিবিজ্ঞানের দুনিয়ায় মহিলার পদচারণা খুব একটা ভাল চোখে দেখেননি কেউই। তবে প্রতিভাকে দমিয়ে রাখা যায় না। নামমাত্র বেতন কিংবা কাজের লক্ষ্মণরেখা বেঁধে দিয়েও না।

ঊনবিংশ শতকের এমনই দুই মহিলা জ্যোর্তিবিজ্ঞানী অ্যানি মন্ডার এবং অ্যালিস এভারেটকে স্বীকৃতি দিতে এবং সম্মান জানাতে তাঁদের নামে দুই গ্রহাণুর নামকরণ করল ব্রিটিশ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (বিএএ)। বেঁচে থাকতে যাঁরা কাজের স্বীকৃতি সে ভাবে পাননি, মহাকাশে তাঁদের নাম অমর করে রাখতেই বিএএ-এর এই উদ্যোগ। এই কাজে তাদের সঙ্গী ক্যাটালিনা স্কাই সার্ভে।

Advertisement

১৮৮৬ সালে অ্যানি ও অ্যালিস দু’জনেই কেমব্রিজের গার্টন কলেজে অঙ্ক নিয়ে পড়তে গিয়েছিলেন। এই খবরে স্বাভাবিক ভাবে খুবই খুশি গার্টন কলেজ কর্তৃপক্ষ। তাঁরা একটি বিবৃতিতে জানিয়েছেন, ‘‘অ্যানিমন্ডার এবং অ্যালিসএভারেট নামে ওই দুই গ্রহাণু এর পর থেকে কৃতী দুই নারীর অবদানের কথা মনে করাবে।’’

১৮৬৮ সালে উত্তর আয়ারল্যান্ডে জন্ম অ্যানির। বাড়িতেই প্রথম জীবনের পড়াশোনা। পরে বৃত্তি পেয়ে গার্টনে পড়তে আসা। অল্প কিছু দিন শিক্ষকতার পর গ্রিনিচের রয়্যাল অবজ়ারভেটরিতে ‘লেডি কম্পিউটার’ হিসেবে যোগ দেন। সেখানে সূর্য ও সৌরজগত বিভাগে কাজ পান তিনি। গাণিতিক পদ্ধতিতে নানা পর্যবেক্ষণ থেকে তথ্য সংগ্রহ করতেন। যা পরবর্তী কালে নতুন নতুন আবিষ্কারের দিগন্ত খুলে দিয়েছিল।
তবে কলেজের পরীক্ষায় সেরা ফলাফল সত্ত্বেও ১৯৪৮ সালের আগের কেমব্রিজের নিয়ম অনুযায়ী অন্য মহিলাদের মতো ওই জুটিও ডিগ্রি পাননি। ‘লেডি কম্পিউটার’ হিসেবে তাঁরা রয়্যাল অবজ়ারভেটরিতে যোগ দেন। নিয়োগকারী সংগঠনটিও বুঝেছিল, খুব কম বেতনে প্রতিভাবান মহিলা গণিতজ্ঞদের চাকরিতে রাখা গেলে লাভ তাদেরই। গার্টনের গণিত বিভাগের সর্বোচ্চ নম্বরপ্রাপ্ত অ্যানি নামমাত্র বেতনে দীর্ঘদিন চাকরি করে গিয়েছেন। বেতন বাড়ানোর কাতর আর্জি জানিয়ে কর্তৃপক্ষকে এক বার চিঠিও লেখেন, ‘কেমব্রিজে গণিত বিভাগের সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়া পড়ুয়ার কি কোনও মূল্য নেই?’

১৮৯৫ সালে বিয়ে করেন কর্মক্ষেত্রের বিভাগীয় প্রধান এডওয়ার্ড ওয়ালটার মন্ডারকে। তাঁর থেকে ১৭ বছরের বড় ও পাঁচ সন্তানের বাবা এডওয়ার্ডকে বিয়ে করার পরে ওই চাকরি ছাড়তে হয় অ্যানিকে। তবে কাজ থামাননি। এডওয়ার্ডের ছায়াসঙ্গী হিসেবে, কখনও তাঁর নামের আড়ালে, গবেষণা চালিয়ে যান। ১৮৯৮ সালে ভারতে আসেন গবেষণামূলক একটি কাজে। বিখ্যাত ‘বাটারফ্লাই ডায়াগ্রাম’ তৈরি করে মন্ডার দম্পতি। প্রকাশিত হয় তাঁর একাধিক গবেষণাপত্র।

১৮৬৫ সালে গ্লাসগোয় জন্ম অ্যালিসের। পরে গার্টনে অঙ্ক নিয়ে পড়াশোনা। পড়াশোনা শেষ করে অ্যানির মতো ‘লেডি কম্পিউটার’ হিসেবে কাজ শুরু করেন। ১৯২৭ সালে ব্রিটেনের টেলিভিশন সোসাইটির প্রথম যুগের সদস্য হন। টেলিভিশন প্রযুক্তিতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে তাঁর।

২০ বছর ধরে প্রত্যাখ্যান করে আসার পরে শেষে ১৯১৬ সালে অ্যানি আর অ্যালিসকে প্রথম মহিলা জ্যোর্তিবিজ্ঞানীর স্বীকৃতি দেয় রয়্যাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটি। সম্প্রতি তাঁদের অবদান নিয়ে নতুন করে নাড়াচাড়া শুরু হয়েছ। বহু দেরি হলেও স্বীকৃতি পাচ্ছেন এই দুই পথিকৃত।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement