অ্যাবেল-জয়ী। হাঙ্গেরির গণিতজ্ঞ লাজলো লোভাজ (বাঁ দিকে) ও ইজরায়েলের কম্পিউটার বিজ্ঞানী অভি উইগডারসন। ছবি সৌজন্যে- নরওয়ের অ্যাকাডেমি অব সায়েন্স অ্যান্ড লেটার্স।
একেবারেই অকল্পনীয় এমন একটি বিশাল সংখ্যাকে কী ভাবে খুব সহজে ধরাছোঁয়ার মধ্যে থাকা সময়ে কোনও কম্পিউটার বিভাজন করতে পারে তারই পথ দেখিয়ে এ বছর ‘গণিতের নোবেল’ অ্যাবেল পুরস্কার পেলেন দু’জন। এক জন হাঙ্গেরির গণিতজ্ঞ লাজলো লোভাজ। অন্য জন ইজরায়েলের কম্পিউটার বিজ্ঞানী অভি উইগডারসন।
নরওয়ের ‘অ্যাকাডেমি অব সায়েন্স অ্যান্ড লেটার্স’ বুধবার পুরস্কারপ্রাপকদের নাম ঘোষণা করেছে। জানিয়েছে, নরওয়ের মুদ্রায় ৭৫ লক্ষ ক্রোনার (আমেরিকার মুদ্রায় ৮ লক্ষ ৮৬ হাজার ডলার) মূল্যের পুরস্কার এ বছর ভাগ করে নিচ্ছেন লোভাজ ও উইগডারসন।
নরওয়ের ‘অ্যাকাডেমি অব সায়েন্স অ্যান্ড লেটার্স’-এর পুরস্কার কমিটির তরফে একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘গণিতের একটি বিশেষ শাখা (‘ডিসক্রিট ম্যাথমেটিক্স’) ও তাত্ত্বিক কম্পিউটার বিজ্ঞানে মৌলিক অবদানের স্বীকৃতি হিসাবেই এই পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। দু’জনই গণিতের ওই বিশেষ শাখা ও তাত্ত্বিক কম্পিউটার বিজ্ঞানকে আধুনিক গণিতশাস্ত্রের প্রধান ক্ষেত্র করে তুলতে পেরেছেন।’’
ডিসক্রিট ম্যাথমেটিক্স হল এমন এক ধরনের গাণিতিক কাঠামো যার মধ্যে ধারাবাহিকতা থাকে না। বরং সেই কাঠামো কিছুটা অগোছালো। ১ সংখ্যার পর ২ না বসে ৬ বসতে পারে। ২ গিয়ে বসতে পারে ৫-এর পাশে।
অন্য দিকে তাত্ত্বিক কম্পিউটার বিজ্ঞান যেন কিছুটা ‘তোতাপাখি’! গণিতের ধরা-বাঁধা গত ছেড়ে যেন সে বেরিয়েই আসতে চায় না! ফলে অকল্পনীয় ভাবে বিশাল একটি সংখ্যাকে ছোট সংখ্যায় খুব সহজে অল্প সময়ে ভেঙে ফেলাটা তার পক্ষে কিছুটা কঠিনই হয়ে পড়ে। যার জন্য এমন অনেক সমস্যা রয়েছে যার সমাধান পেতে গেলে বিজ্ঞানী, গণিতজ্ঞদের হয়তো কোটি কোটি বছর লেগে যাবে।
সেই মুশকিল আসানের জন্যই খুব ‘নিয়মতান্ত্রিক’ তাত্ত্বিক কম্পিউটার বিজ্ঞানের হাতে লোভাজ ও উইগডারসন হাত মিলিয়ে দিতে পেরেছেন কাঠামোয় কিছুটা অগোছালো ডিসক্রিট ম্যাথমেটিক্সের। যার ফলে, বিশাল সংখ্যাকে ধরা-ছোঁয়ার সময়ের মধ্যে তুলনায় অনেক সহজে ধাপে ধাপে ছোট সংখ্যায় ভেঙে ১৪০০ কোটি বছর বয়সি ব্রহ্মাণ্ডের অনেক সমস্যারই সমাধানের পথ খুঁজে পাওয়াটা সহজতর হবে।
হাত মেলানোর জন্য লোভাজকে গণিতশাস্ত্র থেকে ঝুঁকে পড়তে হয়েছে তাত্ত্বিক কম্পিউটার বিজ্ঞানের দিকে। আর উইগডারসনকে তাত্ত্বিক কম্পিউটার বিজ্ঞানের ‘মোহ’ কিছুটা কাটিয়ে শ্রদ্ধাশীল হয়ে পড়তে হয়েছে কিছুটা অগোছালো কাঠামোর ডিসক্রিট ম্যাথমেটিক্সের উপর। সেই পথে যেতে তিনি বহু দিন ধরেই বুঁদ হয়ে পড়েছিলেন কম্পিউটার বিজ্ঞানের একটি অভিনব চরিত্র ‘র্যান্ডমনেস’-এ।
লোভাজের জন্ম হাঙ্গেরির বুদাপেস্টে। ১৯৪৮-এ। তিনি ২০০৭ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত ছিলেন ‘ইন্টারন্যাশনাল ম্যাথমেটিক্যাল ইউনিয়ন’-এর প্রেসিডেন্ট। আর ২০১৪ থেকে ২০২০ পর্যন্ত তিনিই নেতৃত্ব দিয়েছেন ‘হাঙ্গেরিয়ান অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেস’-এর।
আর উইগডারসনের জন্ম ইজরায়েলের হাইফায়। ১৯৫৬-য়। ইজরায়েল ও আমেরিকায় পড়াশোনা শেষ করে যিনি বিভিন্ন নামজাদা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিলেন সম্মানজনক পদে।