বাতাসে আরও বিষ ঢালতে আর্থিক উৎসাহ বিশ্বে! -ফাইল ছবি।
অন্ধকার থেকে আলোয় ফেরা গেল না তবে? ডুব দিতে হল অন্ধকারেই!
অন্ধকারের গ্রাস থেকে বার করে আনতে গিয়ে আরও অতল অন্ধকারের গর্ভে সভ্যতার আরও দ্রুত তলিয়ে যাওয়ার পথ পরিষ্কার করা হয়েছে! বিপুল অর্থবরাদ্দ করে।
আর সেই অর্থবরাদ্দ করেছে আমেরিকা-সহ বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত শক্তিশালী দেশগুলির জোট ‘জি-৭’। একই কাজ করেছে ভারত, চিনও। যা পরোক্ষে বাতাসে গ্রিনহাউস গ্যাসের নির্গমনের মাত্রা বাড়িয়ে দেবে আরও উদ্বেগজনক পরিমাণে। আরও দ্রুত। তার ফলে, উষ্ণায়নের রথের রশির লাগাম টেনে ধরা আরও মুশকিল হয়ে পড়বে। জলবায়ুর আরও পরিবর্তন ঘটবে। বাড়বে তাপপ্রবাহ, শৈত্যপ্রবাহ, খরা, দাবানল, অতিবৃষ্টি, ভয়াল বন্যার ঘটনা ও তাদের তীব্রতা। যার জেরে জল ও স্থলের সার্বিক বাস্তুতন্ত্রের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হবে। বিলুপ্ত হয়ে যাবে বহু প্রজাতির প্রাণী ও উদ্ভিদ। ষষ্ঠ গণবিলুপ্তির সময় আরও এগিয়ে আসবে।
অতিমারির ফলে বিশ্ব যে অর্থনৈতিক অন্ধকারের গ্রাসে চলে গিয়েছিল তার থেকে দেশগুলিকে বার করে আনতে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে গত এক বছরে ১৪ লক্ষ কোটি ডলার অর্থবরাদ্দ করেছে আমেরিকা-সহ জি-৭ জোটের দেশগুলি। সাম্প্রতিক গবেষণা জানিয়েছে, সেই অর্থবরাদ্দের ৯৪ শতাংশই করা হয়েছে এমন সব ক্ষেত্রে যা বাতাসে আরও বিষ ঢেলে দেবে। আরও দ্রুত হারে বাড়িয়ে দেবে কার্বন ডাই-অক্সাইড, সালফার ডাই-অক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইড-সহ গ্রিনহাউস গ্যাসগুলির পরিমাণ। যা প্যারিস চুক্তির নির্দেশিকার ঠিক বিপরীত। যে চুক্তিতে বলা হয়েছে, আগামী তিন-চার বছরের মধ্যে সবক’টি দেশ তাদের গ্রিনহাউস গ্যাসের নির্গমনের মাত্রা উল্লেখযোগ্য হারে না কমাতে পারলে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা-বৃদ্ধি দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ধরে রাখা সম্ভব হবে না। যার জেরে এই শতাব্দীর শেষাশেষি সেই তাপমাত্রা-বৃদ্ধি ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তারও বেশি হতে পারে। যা দুই মেরুর বরফের বড় অংশটিই গলিয়ে দেবে বলে সাগর, মহাসাগরগুলির জল-স্তর অন্তত সাত থেকে ১০ ফুট উপরে উঠে আসবে। তাতে অতল জলের তলায় হারিয়ে যাবে বহু দেশ, দ্বীপরাষ্ট্র, বহু দেশের বহু গুরুত্বপূর্ণ এলাকা, সমুদ্রবন্দর।
গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান গবেষণা পত্রিকা ‘নেচার’-এ। বুধবার।
রাষ্ট্রপুঞ্জের ‘ইন্টারগভর্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ’ (আইপিসিসি)-র সাম্প্রতিক রিপোর্টে স্পষ্টই হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে, এখন থেকে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের হারে লাগাম টানার চেষ্টা করা হলেও আর দু’দশকে পৃথিবীর গড়া তাপমাত্রা-বৃদ্ধিকে দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে বেঁধে রাখা সম্ভব হবে না। সোমবার সেই রিপোর্ট প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব আন্তোনিও গুয়াতেরেস।
অন্যতম প্রধান গবেষক আমেরিকার জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জোনাস নাম বলেছেন, ‘‘অতিমারির অন্ধকার থেকে দেশকে বার করে আনতে ভারত সরকার গত দু’বছরে ১৪০০ কোটি ডলার এমন সব প্রকল্পে বরাদ্দ করেছে যেগুলি বাতাসে গ্রিনহাউস গ্যাসের নির্গমন বাড়াবে আশঙ্কাজনক পরিমাণে। দক্ষিণ আফ্রিকা ১১৪০ কোটি ডলার বরাদ্দ করেছে এমন সব প্রকল্প থেকে বিদ্যুৎশক্তি কিনতে যেগুলির মূল চালিকাশক্তি কয়লা বা প্রাকৃতিক গ্যাস। চিন উদ্বেগজনক বাড়িয়েছে খনি থেকে কয়লা উত্তোলনের পরিমাণ।’’