৪০ হাজার রাসায়নিক অস্ত্র নয়া ওষুধ খুঁজতে গিয়ে! -ফাইল ছবি।
সুর বাঁধতে গিয়ে তৈরি হতে পারে অসুর! হিতের মধ্যেই রয়েছে অ-হিতের বীজ! ‘ভগবান’ খোঁজার সাধনায় উত্তরোত্তর ভিড় বাড়ছে ‘ভূত’-এর!
হ্যাঁ, নতুন ওষুধ খুঁজতে গিয়ে, বাজারে চালু ওষুধগুলিকে কোভিডের মতো নতুন নতুন সংক্রমণ রুখতেও কাজে লাগানো যায় কি না (রিপারপাসিং) তার খোঁজখবর নিতে গিয়ে সভ্যতা মাত্র ছ’ঘণ্টার মধ্যেই ৪০ হাজার ভয়ঙ্কর রাসায়নিক অস্ত্র বানিয়ে ফেলার পথ দেখিয়ে দিয়েছে। যার কৃতিত্ব দাবি করতেই পারে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা ‘আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই)’। আর যার সুযোগ নিতেই পারে যুদ্ধবাজ আর ফন্দিবাজ হ্যাকাররা।
কপালে গভীর ভাঁজ ফেলে দেওয়া এই খবর দিল কিংস কলেজ লন্ডন ও দু’টি ওষুধ সংস্থার সাম্প্রতিক একটি যৌথ গবেষণা। গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক তথ্যপ্রযুক্তি গবেষণা পত্রিকা ‘নেচার মেশিন ইন্টেলিজেন্স’-এ। বৃহস্পতিবার।
বাজারে চালু ওষুধ তৈরির প্রক্রিয়ায় বা ওষুধের উপাদানগুলির পরিমাণে একটু অদলবদল ঘটিয়ে সেগুলিকে কোভিডের মতো নতুন নতুন সংক্রমণে কাজে লাগানো যায় কি না বুঝতে গবেষণাগারে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার আশ্রয় নেন বিজ্ঞানী, গবেষকরা।
এই ধরনের ওষুধকে বলা হয় ‘রিপারপাস্ড ড্রাগস’। এদের ‘রিপজিশন্ড ড্রাগ’, ‘রিপ্রোফাইল্ড’ বা ‘রি-টাস্কিং ড্রাগ’ও বলা হয়। কোভিডের ক্ষেত্রে যেমন গোড়ার দিকে ম্যালেরিয়ার ওষুধ ‘ক্লোরোকুইন’ বা ‘ক্লোরোকুইন ফসফেট’ ব্যবহৃত হয়েছিল রিপারপাস্ড ড্রাগ হিসাবে।
রিপারপাস্ড ড্রাগ তৈরির লক্ষ্যে বিশ্বের সবকটি বড় মাপের ওষুধ সংস্থাই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিশেষ কয়েকটি ‘ফিচার’-এর উপর নির্ভর করে। যাদের অন্যতম— কোন কোন ওষুধ হিত করতে গিয়ে মানুষের বিপদ ডেকে আনতে পারে, মানবশরীরে ছড়িয়ে দিতে পারে নানা ধরনের রাসায়নিক বিষ, সেগুলিকে চিহ্নিত করা। সেগুলিকে নতুন সংক্রমণের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য ব্যবহারের তালিকা থেকে বাতিল করা।
গবেষকদের নজর ছিল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ওই বিশেষ ফিচারটির উপরেই। গবেষকরা দেখতে চেয়েছিলেন ওই ফিচার যুদ্ধবাজ বা ফন্দিবাজ হ্যাকাররা কী ভাবে বিপরীতমুখী করে তুলতে পারে। কতটা বিপরীতমুখী করে তুলতে পারে। তাতে কতটা বিপদ ডেকে আনতে পারে সভ্যতার।
গবেষকরা সেই বদলে দেওয়া ফিচারটির নাম দেন— ‘মেগাসিন’। তাঁরা দেখেন, ওই ফিচার টানা ছ’ঘণ্টা চালু থাকলেই যুদ্ধবাজ বা ফন্দিবাজ হ্যাকাররা ৪০ হাজার রাসায়নিক অস্ত্র বানিয়ে ফেলতে পারে। যে রাসায়নিক অস্ত্রগুলির মধ্যে রয়েছে ‘ভিএক্স’-এর মতো ভয়ঙ্কর নার্ভ এজেন্ট মারণাস্ত্রও।
গবেষকরা দেখেছেন, এই সব রাসায়নিক অস্ত্রের মূল লক্ষ্য মানুষের মাংসপেশি। শ্বাসনালী বা শ্বসনতন্ত্র। কোনও কোনও রাসায়নিক ভিএক্স-এর চেয়েও বিপজ্জনক বলে জানিয়েছেন গবেষকরা।