চিকিৎসায় নোবেল শিরোপা ৩ মার্কিনির

শরীরের দিনরাত্রি বুঝিয়েই বাজিমাত

, and প্রাণিদেহের সেই রহস্যময় ‘আণবিক কার্যকলাপ’ ফাঁস করেই ২০১৭-র চিকিৎসা শাস্ত্রে নোবেল পুরস্কার জিতে নিলেন তিন মার্কিন বিজ্ঞানী। জেফ্রি সি হল, মাইকেল রোসব্যাশ এবং মাইকেল ডব্লিউ ইয়ং।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

স্টকহলম শেষ আপডেট: ০৩ অক্টোবর ২০১৭ ০২:২০
Share:

বিজয়ী: (বাঁ দিক থেকে) জেফ্রি হল, মাইকেল রোসব্যাশ ও মাইকেল ইয়ং। এএফপি

এ কী আজগুবি ব্যাপার রে বাবা! ‘‘রাতের বেলা দুপুর যদি হয়, দুপুর বেলা রাত হবে না কেন?’’ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতায় ছোট্ট খোকার মনে এমনই এক ‘প্রশ্ন’ জেগেছিল। তার না হয় তখন পৃথিবীর আহ্নিক গতি বোঝার মতো বয়স হয়নি। কিন্তু বড়দের মনেও যে একই রকম ধাঁধা— দিনে তো দিব্যি কাজ করি, কিন্তু রাত হলেই ঘুম পায় কেন? কিংবা ওই যে বিমানের ‘জেটল্যাগ’, বিদেশে গিয়ে শরীরের আনচান ভাব! ব্যাপারটা কী?

Advertisement

বিজ্ঞানী-ডাক্তাররা বহুদিন ধরেই ‘বায়োলজিক্যাল ক্লক’-এর কথা বলে আসছেন। আমাদের শরীরেই নাকি ‘ঘড়ি’ বসানো আছে। কিন্তু ঘড়িটা কাজ করে কী ভাবে! প্রাণিদেহের সেই রহস্যময় ‘আণবিক কার্যকলাপ’ ফাঁস করেই ২০১৭-র চিকিৎসা শাস্ত্রে নোবেল পুরস্কার জিতে নিলেন তিন মার্কিন বিজ্ঞানী। জেফ্রি সি হল, মাইকেল রোসব্যাশ এবং মাইকেল ডব্লিউ ইয়ং।

সবই তা হলে জিনের খেলা! আজ পুরস্কার ঘোষণা করতে গিয়ে তেমনটাই জানিয়েছে নোবেল কমিটি। গাছপালা থেকে শুরু করে মানুষ-সহ সমস্ত জীবজগত কী ভাবে আহ্নিক গতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে নিজস্ব জৈবিক ছন্দে অভ্যস্ত হয়ে ওঠে, তারই দিশা দেখিয়েছেন এই ত্রয়ী।

Advertisement

এঁদের গবেষণায় উঠে এসেছে ‘পিরিয়ড’ জিনের কথা। যা সূর্যালোকের অনুপস্থিতিতে শরীরের কোষে বিশেষ প্রোটিন তৈরি করে। দিনের শুরু থেকেই যা ভাঙতে থাকে। এটাই দেহ-ঘড়ির কর্মপদ্ধতি। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়সীমার আগেই যদি পারিপার্শ্ব বদলে যায়! বিজ্ঞানীদের দাবি, টাইম-জোন বদলে যাওয়ায় জেটল্যাগের মতো অসুস্থতা আদতে ওই ঘড়ি বিগড়ে যাওয়ার কারণেই।

নোবেল কমিটির দাবি, ‘‘এই আবিষ্কার নিশ্চিত ভাবেই আমাদের স্বাস্থ্য এবং শারীরিক সুস্থতা যাচাই এবং তা রক্ষায় ব্যাপক প্রভাব ফেলবে।’’ এই আবিষ্কারের মাধ্যমে মানুষের আচরণ, হরমোনের মাত্রা, ঘুম, শরীরের তাপমাত্রা ছাড়াও বিপাক প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা করা যাবে।

আজ পুরস্কার পাওয়ার কথা প্রথমে ফোনে শোনেন রোসব্যাশ। ঘড়িতে ভোর পাঁচটা। তখনও বিছানা ছাড়েননি। গোড়ায় বিশ্বাসই করতে পারেননি খবরটা। নোবেল কমিটির কর্তাকে সটান বলে বসেন, ‘‘আমার সঙ্গে মজা করছেন?’’

এই চমকে যাওয়াটা যে অমূলক নয়, বলছেন জেফ্রি হলের এক প্রাক্তন সহকর্মীও। তাঁর দাবি, অনেক আগেই নোবেল পাওয়া উচিত ছিল এই ত্রয়ীয়। রোসব্যাশ (৭৩) এখনও ম্যাসুচুসেটসের ওয়ালহামে ব্রানডাইস ইউনিভার্সিটিতে পড়ান। হল-ও একটা বড় সময় কাটিয়েছেন এই বিশ্ববিদ্যালয়ে। বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত। এঁদের জুটিটা তৈরি হয়েছিল বাস্কেটবল কোর্টে। দু’জনের ‘ঘড়ি’ নিয়ে নাড়াচাড়ার শুরুটা আশির দশকের গোড়ার দিকে। ইয়ং (৬৮) তখন ‘বায়োলজিক্যাল ক্লক’ নিয়ে আলাদা কাজ করছেন। কিন্তু জৈবিক ছন্দের ব্যাপারটা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ১৯৮৪ সালে একযোগে গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন এঁরা। এক দশক পরে ‘ক্লক জিন’ রহস্য ফাঁস করেন ইয়ং।

প্রাথমিক ভাবে তিন বিজ্ঞানীই ফ্রুট ফ্লাই পোকার উপর পরীক্ষা চালিয়েছিলেন। তার পর ধাপে ধাপে মানবদেহে আনাগোনা। ব্যস, উপুড় হয়ে গেল রহস্যের ঝাঁপি। বোঝা গেল, শরীরের খাঁচায় কী ভাবে দিন-রাত আসে যায়। ঠিক যেন ঘড়ির কাঁটা মিলিয়ে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement