হেমকণা পায়েস। ছবি: সায়ন্তনী মহাপাত্র।
মাকে ভাসাইয়া জলে কি ধন লইয়া যাইব ঘরে। ঘরে গিয়ে মা ডাকিব কারে ...
নবমীর নিশি পেরোলেই বুকের ভিতর কি যেন এক হারাই হারাই বোধ হয় মায়ের। এই বুঝি তাঁর যাওয়ার সময় হল। প্রভাতী শিশির, শরতের সোনা গলানো রোদ, ধানের শিষে ঠিকরে ওঠা আলো— এ কয়েক দিন যা তাঁর আগমনীর সূচনা বয়ে নিয়ে এসেছিল সেখানেই কোথায় যেন বিদায় বেলায় সুর লুকিয়ে বেজে ওঠে। পুজো যেমন ঘরের মানুষের ঘরে ফেরার আনন্দ তেমনই আবার এক বছরের প্রতীক্ষার শুরু।
প্রতিমা নিরঞ্জনের বেলায় তাই তো মায়ের বুক ভেসে যায় চোখের জলে। আবারও বছর খানেকের অপেক্ষা, এক বছরের অদর্শন, সেকি কম বড় কথা! বিদায় তা সে যতই অবশ্যম্ভাবী হোক, মায়ের বুকে সে যে বড় কঠিন সুরে বাজে। বিদায় বেলায় মেয়ের মুখটুকু তুলে ধরে বার বার তাই দেখে নিতে চায় এই চার দিনের আদরে যত্নে মেয়ের চোখের ক্লান্তি দূর হলো তো!
মায়েরা মেয়েকে বিদায় জানানোর আগে তাই এই সব ভেবে ভেবে নারকেল কোরায়, ময়দা মেখে ভেজে তোলে এলোঝেলো, নিমকি, পদ্ম গজা আরো কত কি! ঘরে থাকা চাল, চিনি ময়দার এই সামান্য আয়োজনে পার্থিব বিলাস না থাক, পরতে পরতে মাখানো থাকে পরম ভালবাসার নিঃশর্ত আশ্বাস। মাস ফুরোলেই কার্ত্তিক, হেমন্তের ঝুপ করে আঁধার নামা বিষণ্ণ বিকেলগুলিতে ঘর থেকে দূরে যখন চোখে ঝিকিয়ে উঠবে মনখারাপ তখন হয়তো বা এই নাড়ুর গন্ধ, নিমকির স্বাদ ফিরিয়ে আনবে মায়ের নরম হাতের ছোঁয়া, একসঙ্গে থাকার মধুর স্মৃতি। এই স্বাদটুকুই যে কাছে দূরে, দিনের শেষে আমাদের সব উমাদের ঘরে ফেরার গান।
এই বিচ্ছেদের দিনে সেই আশ্বাসটুকু কি কৌটো ভরে সন্তানকে দেবে না মায়েরা? দশমীর এই বেলায় রইলো দুটি অন্য রকমের মিষ্টি। কৌটোয় ভরে সংরক্ষণ করলে অনেক দিন ধরেই এগুলি খাওয়া যাবে
সিরিঞ্জ পিঠা
উপকরণ:
সেদ্ধ চাল: ১ কাপ
নুন খুব সামান্য
কলাপাতা ছোট ছোট করে কাটা
মাখানোর জন্য সামান্য সাদা তেল
খাবারের রং ব্যবহার করতে চাইলে জেল ফুড কালার অথবা বীট, পালং, অপরাজিতা ফুল ইত্যাদি থেকে প্রাকৃতিক রং বের করে ব্যবহার করতে পারেন।
ইনজেকশন দেওয়ার মোটা সুঁচের নতুন সিরিঞ্জ, যতগুলি রং ব্যবহার করতে চান, ততগুলি। সুঁচ খুলে ফেলে সিরিঞ্জগুলি ধুয়ে শুকিয়ে রাখবেন।
পদ্ধতি:
চাল ধুয়ে ভিজিয়ে রাখুন ৪-৬ ঘন্টা।
খুব সামান্য জল দিয়ে মিহি করে বেটে নিন। বাটার মন্ডটি রুটি বানানোর আটার মতো হতে হবে।
কলাপাতায় সামান্য তেল মাখিয়ে নিন। রং ব্যবহার করতে চাইলে সামান্য করে মন্ড আলাদা করে নিয়ে রং দিয়ে মেখে নিন।
সিরিঞ্জগুলিতে চেপে চেপে মণ্ডটি ভরুন। পিছনের নজ়েলে চাপ দিলে সামনের ফুটো দিয়ে সরু ভাবে এই মণ্ড বেরিয়ে আসবে। হাত ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে পাতার উপর নকশা তুলুন। দু’-তিনটি রঙের মণ্ড একটু উপরে উপরে করে করলে জিনিসটি দেখতেও সুন্দর হবে আর পরে খুলেও যাবে না।
স্টিমারে জল গরম করে এই নকশাগুলি ২-৩ মিনিট ভাপিয়ে নিয়ে আস্তে করে তুলে একটি থালায় সাজিয়ে শুকিয়ে নিন। রোদে শুকিয়ে নিলে এটি বহু দিন রাখা যাবে।
খাওয়ার আগে গরম তেলে ভেজে উপর থেকে গুড়ের রস ছড়িয়ে পরিবেশন করুন।
সিরিঞ্জ পিঠা। ছবি: সায়ন্তনী মহাপাত্র।
হেমকণা পায়েস (প্রজ্ঞাসুন্দরী দেবীর রেসিপি )
উপকরণ :
খোয়াা ক্ষীর বা মেওয়া: ৬০ গ্রাম
কাঠবাদাম আর কাজুবাদাম: ১৫ গ্রাম
চালের গুঁড়ো: ৩০ গ্রাম
জাফরান: এক চিমটি
দুধ: ১.৫ লিটার
চিনি: ১২৫ গ্রাম
পেস্তা পরিবেশনের জন্য
পদ্ধতি:
বাদাম ভিজিয়ে রেখে খোসা ছাড়িয়ে মিহি করে বেটে নিন। খোয়া ক্ষীর কুরিয়ে নিয়ে বাদাম বাটার সঙ্গে মাখুন। চিনি মেশান, একটু করে চালের গুঁড়ো মিশিয়ে মিশিয়ে ময়দা মাখার মতো করে মণ্ড তৈরি করুন। ঢাকা দিয়ে রাখুন ১৫ মিনিট। তার পর মটরশুঁটির দানার মাপে ছোট ছোট দানা কেটে মসৃণ করে গুলি পাকান।
তলা ভারী পাত্রে দুধ ফুটিয়ে ঘন করুন। তাতে জাফরান মেশান। ২০-২৫ মিনিট পরে দুধ বেশ ঘন হলে আঁচ বন্ধ করে চিনি মেশান। চিনি গলে গেলে হেমকণার দানাগুলি মেশান। এই পর্যায় বেশি নাড়বেন না।
সাধারণ তাপমাত্রায় এনে, পেস্তার টুকরো ছড়িয়ে পরিবেশন করুন।