Makar Sankranti Recipes

শুধু বাঙালির পিঠে-পার্বণ নয়, পৌষ সংক্রান্তিতে ভাল খাওয়ার চল নানা প্রদেশে, রইল ৩ রেসিপি

পশ্চিমবঙ্গে পৌষ সংক্রান্তিতে জমিয়ে পিঠে খাওয়া হয়। তা বলে পৌষ সংক্রান্তির পার্বন শুধু বাংলায় পালিত হয় না। পৌষ সংক্রান্তি বা মকর সংক্রান্তির উদ্‌যাপন হয় ভারতের নানা প্রান্তে। সেই সব অঞ্চলের তিন পার্বণী রেসিপি খুঁজে আনল আনন্দবাজার অনলাইন।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০২৫ ১২:১২
Share:

(বাঁ দিক থেকে) কোঝি পোঙ্গল, পোকো মিঠোই এবং পিন্ডি ছোলে। ছবি : সংগৃহীত।

পৌষ সংক্রান্তি বা মকর সংক্রান্তিতে জমিয়ে পিঠে খাওয়া হয় বাংলায়। তা বলে সংক্রান্তির পার্বণ একা বাংলার নয়। পৌষের চলে যাওয়া এবং মাঘের আগমণের সন্ধিক্ষণকে উৎসবের মতো পালন করেন ভারতের নানা প্রান্তের মানুষ। কেউ সেই উৎসবের নাম দেন পোঙ্গল। কেউ ডাকেন মাঘ বিহু, কেউ বা লোহরি পালন করেন মকর সংক্রান্তিতে। সেই সব অঞ্চলের তিন পার্বণী রেসিপি খুঁজে আনল আনন্দবাজার অনলাইন।

Advertisement

কোলি পোঙ্গল বা কোঝি পোঙ্গল (চিলি অয়েল সহযোগে)

দাক্ষিণাত্যের রাজ্যে সংক্রান্তির উৎসবের নাম পোঙ্গল। পোঙ্গল আসলে একটি খাবারের নাম। বাঙালির পিঠে-পার্বণের মতো পোঙ্গল উৎসবও তার নাম পেয়েছে খাবারের নাম থেকেই। অনেকেই মনে করেন দাক্ষিণাত্যের উৎসব মানে শুধুই নিরামিষ ভোজন। ব্যাপারটা মোটেই তা নয়। দক্ষিণের রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে পোঙ্গলে আমিষ ভোজনও হয়। তেমনই এক রেসিপি কোঝি পোঙ্গল।

Advertisement

উপকরণ:

পোঙ্গলের জন্য—

১/৪ কাপ মুগের ডাল

১/২ কাপ চাল

১ চা চামচ গোটা জিরে

২ চা চামচ গোটা গোলমরিচ

১০টি কারিপাতা

১৫ টি আধভাঙা কাজু

২ কাপ জল

১ গাট আদা কুচি

৩ টেবিল চামচ ঘি

১৫০ গ্রাম মুরগির মাংস (হাড় ছাড়া, ছোট ছোট টুকরোয় কাটা)

১ চিমটে হিং

স্বাদ মতো নুন

চিলি অয়েলের জন্য—

৫টি শুকনো লঙ্কা

১ টেবিল চামচ রসুন কুচি

১ টেবিল চামচ আদা কুচি

১/২ টেবিল চামচ তিল

১/২ চা চামচ চিনি

১/৪ কাপ পেয়াঁজ শাক কুচি

১/৪ কাপ গরম করা তেল

১/৪ চা চামচ নুন

প্রণালী:

ডাল শুকনো খোলায় ভেজে সুগন্ধ বেরোলে নামিয়ে নিন, ডালের রং যেন না বদলায়। এ বার চাল, ডাল ভাল করে ধুয়ে নিয়ে জলে ভিজিয়ে রাখুন ১০-২০ মিনিট। ভেজানো চাল-ডাল জল ঝরিয়ে প্রেসার কুকারে সিদ্ধ হতে দিন ২ কাপ জল এবং স্বাদ মতো নুন দিয়ে। ৪ টি সিটি হয়ে গেলে নামিয়ে নিলেও তবে ঢাকনা খুলবেন না। বাষ্প নিজে থেকেই পুরোপুরি বেরিয়ে যেতে দিন।

কড়া বা প্যান গরম করে তাতে গোটা গোলমরিচ এবং গোটা জিরে দিয়ে কিছু ক্ষণ নারাচাড়া করে সুগন্ধ বেরোলে তুলে নিয়ে গুঁড়িয়ে নিন। খুব বেশি মিহি করে গুঁড়োবেন না।

এ বার গরম প্যানে শুকনো লঙ্কাও কিছুটা নেড়ে চে়ড়ে নিয়ে তুলে নিন। কালচে ভাব ধরতে দেবেন না। একটি বাটিতে শুকনো লঙ্কাগুলি রেখে হাতে করে বা চামচে করে গুঁড়িয়ে নিন। এ বার ওই পাত্রেই চিলি অয়েলের বাকি উপকরণ দিয়ে ভাল করে মিশিয়ে নিন।

প্যানে ২ টেবিল চামচ ঘি, কুচোনো আদা, কারিপাতা, হিং, কাজু বাদাম দিয়ে ভাল করে নেড়েচেড়ে কাজুতে সোনালি রং ধরলে তার মধ্যে মাংসের টুকরোগুলো দিয়ে তাতে নুন দিয়ে মিনিট পাঁচেক রান্না করুন। পাঁচ মিনিট পরে তাতে জিরে-মরিচের গুঁড়ো দিয়ে ভাল করে মিশিয়ে নিন।

প্রেসার কুকারে থাকা চাল এবং ডাল ভাল করে ঘেঁটে নিন। ওই মিশ্রণটি দিয়ে দিন রান্না করা মাংসের উপর। ১ টেবিল চামচ ঘি ছড়িয়ে রান্না হতে দিন। চাল-ডালের মিশ্রণটি ভাজা হয়ে এলে নামিয়ে একটি কলাপাতার উপর চিলি অয়েল ছড়িয়ে পরিবেশন করুন।

পিন্ডি ছোলে

পঞ্জাবের লোরি উৎসব পালন হয় রাতে। আগুন জেলে তার চারপাশে জড়ো হন স্থানীয় মানুষ। নাচে-গানে-উৎসবে আবাহন করেন মাঘ মাসকে, যা আদতে ফসলের মাস। পঞ্জাব যে হেতু ভারতের শস্যভান্ডার, তাই মাঘ মাস তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। পঞ্জাবিরা লোরির দিন নতুন জামা পরেন। খাওয়াদাওয়াও হয় বিস্তর। তার মধ্যে চেনা সর্ষো দা সাগ যেমন থাকে, তেমনই থাকে পঞ্জাবের প্রিয় পিন্ডি ছোলে।

উপকরণ:

২৫০ গ্রাম কাবলি ছোলা (৩ কাপ জলে সারা রাত ভিজিয়ে রাখা)

ছোলা সিদ্ধ করার জন্য—

৩টি লবঙ্গ

৩ গাঁট লম্বা দারচিনি

২টি বড় এলাচ

২টি ছোট এলাচ

২টি তেজপাতা

১টি টি ব্যাগ

১ চা চামচ বিটনুন

৩ কাপ জল

পিন্ডি ছোলা রান্নার জন্য—

২ টেবিল চামচ তেল

৩ চা চামচ আদা-রসুন বাটা

১/২ চা চামচ লঙ্কা গুঁড়ো

২ চা চামচ ধনে গুঁড়ো

১ চা চামচ গরমমশলা

২-৩ চা চামচ চানামশলা

১ চা চামচ আমচুর

১ চা চামচ লেবুর রস

স্বাদ মতো নুন

প্রণালী:

ভেজানো ছোলা কুকারে দিন। তার মধ্যে গোটা মশলাগুলোকে একটা মসলিন বা পাতলা কাপড়ে বেঁধে দিয়ে দিন। এর পরে বিট নুন, জল এবং টি-ব্যাগ দিয়ে প্রেসার কুকারে ১০ থেকে ১৫ মিনিট সিদ্ধ করুন। ছোলা পুরোপুরি সেদ্ধ হতে হবে। সেদ্ধ হলে টি-ব্যাগ এবং মশলা বাঁধা কাপড় সরিয়ে নিন।

এ বার একটি প্যানে তেল গরম করে আদা-রসুন বাটা দিয়ে ভেজে কাঁচা গন্ধ চলে গেলে আঁচ কমিয়ে লঙ্কাগুঁড়ো, ধনেগুঁড়ো, আমচুর, গরম মশলার গুঁড়ো এবং চানা মশলা দিয়ে এক মিনিট ভেজে নিয়ে তাতে সিদ্ধ করা করা ছোলা দিন।

সামান্য নাড়াচাড়া করে স্বাদ মতো নুন দিন, অতিরিক্ত মশলার দরকার হলেও এই সময়ে দিতে পারেন। ৫-৭ মিনিট অল্প আঁচে রান্না করুন। মাঝে মাঝে নাড়াচাড়া করতে ভুলবেন না। ভাল করে কষানো হয়ে গেলে লেবুর রস ছড়িয়ে নামিয়ে নিন।

নান, বাটুরা কিংবা পরোটার সঙ্গে পরিবেশন করুন। সাজানোর জন্য উপরে পেঁয়াজ এবং কাঁচালঙ্কা ভেজে ছড়িয়ে দিতে পারেন।

পোকো মিঠোই

অসমের ‘মাঘ বিহু’ বাংলার মতোই পিঠে -পায়েসের উৎসব। চালই সেখানে সংক্রান্তির পার্বণী খাওয়াদাওয়ার মূল উপকরণ। মূলত চালের গুঁড়ো দিয়ে নানা রকম মিষ্টি খাবারই বানানো হয়। তাতে থাকে বাংলার মতো নারকেলের পুরও। তেমনই একটি চালের গুঁড়ো দিয়ে তৈরি মিষ্টি পোকো মিঠোই। এর বিশেষত্ব হল, মিষ্টি স্বাদের পাশাপাশি সামান্য ঝাল মশলার স্বাদও থাকে এতে।

উপকরণ:

আড়াই কাপ চালের গুঁড়ো

১ কাপ পাটালি গুড়

১ চা চামচ গোলমরিচ

১/২ চা চাম মৌরি

১/২ চা চামচ জোয়ান

১/২ কাপ জল

প্রণালী:

প্রথমে মরিচ, মৌরি এবং জোয়ান শুকনো খোলায় নেড়ে হালকা হাতে গুঁড়িয়ে নিন। খুব মিহি গুঁড়ো হবে না।

এ বার কড়ায় মাঝারি আঁচে চালের গুঁড়ো দিয়ে নাড়তে থাকুন। ১০ মিনিট মতো সমানে নেড়ে যেতে হবে। যাতে চাল পুড়ে না যায়। সুগন্ধ বেরোলে একটি বাটিতে ঢেলে রেখে দিন।

প্যানে গুড় এবং জল দিয়ে মাঝারি আঁচে রান্না করুন। আঠালো হলে (হাতে একটা চিটের সুতো তৈরি হলে) নামিয়ে নিন।

এ বার গুড়ে মশলা মিশিয়ে কিছু ক্ষণ নাড়াচাড়া করে তার মধ্যে অল্প অল্প করে চালের গুঁড়ো দিতে থাকুন। সব একসঙ্গে মিশে ময়দার তালের মতো তৈরি হলে আঁচ বন্ধ করে নামান। দ্রুত হাতে ১২-১৩টি বল বানিয়ে নিন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement