আইবুড়ো ভাতের পর্ব এ বার রেস্তরাঁতেই? ছবি: কলকাতা রাজবাড়ি।
হালফিলে বিয়ের আগে আইবুড়ো ভাত অনুষ্ঠানটির জাঁকজমক বেড়েছে। একটা সময় ছিল যখন হবু বর-কনের বাড়িতেই ছোট করে পালন করা হত আইবুড়ো ভাত অনুষ্ঠানটির।
সাধারণত বর বা কনের মা বিয়ের আগে শেষ বারের মতো পরিপাটি করে আইবুড়ো জীবনের রান্না খাওয়াতেন আদরের সন্তানকে। অনুষ্ঠানের পরতে পরতে তাই জড়িয়ে থাকত অপত্য স্নেহ ও ভালবাসার ছোঁয়া। মেয়েদের বিয়ে হয়ে গেলে আপেক্ষিক ভাবে সে অন্য পরিবারের সদস্য হয়ে ওঠে। তাই যে বাড়িতে তার বেড়ে ওঠা, বিয়ের আগে সেখানে তার আনুষ্ঠানিক ভাবে শেষ খাওয়াদাওয়ারই আনুষ্ঠানিক নাম আইবুড়োভাত। মা ছাড়াও মাসি-পিসি-কাকিমারাও বাড়িতে ডেকে সুন্দর করে খাওয়াদাওয়ার আয়োজন করতেন। আশীর্বাদের পর্বশেষে চলত জমিয়ে ভূরিভোজ। সেই রেওয়াজ অবশ্য এখনও আছে। তবে এর সঙ্গে যোগ হয়েছে বন্ধুবান্ধবদের মাঝে আইবুড়ো ভাত খাওয়াদাওয়ার চল।
প্রিয় বন্ধুটির বিয়ের আগে আর পাঁচজন বন্ধুবান্ধব মিলে তাঁর জন্য খাওয়াদাওয়ার আয়োজন করা। হাসি-ঠাট্টা, হইহুল্লোড়ের মধ্যে দিয়ে বিশেষ বন্ধুকে একটা বিশেষ উপহার দেওয়ার এই নতুন চল তরুণ প্রজন্মের কাছে বেশ জনপ্রিয় হচ্ছে। সামনেই কি আপনার প্রিয় বন্ধুটিও বিয়ের পিড়িতে বসতে চলেছে? তাঁর হবু বৌয়ের সঙ্গেও আপনার বেশ ভালই ভাব জমেছে? তাঁদের জন্য কোথায় আইবুড়ো ভাতের আয়োজন করবেন ভাবছেন? রইল শহরের এমন ৩ টি রেস্তরাঁর হদিস যেখানে, আপনি প্রিয় বন্ধুটির জন্য বিশেষ দিনের আয়োজন সারতে পারবেন।
কলকাতা রাজবাড়িতে হবু বর-কনেদের আইবুড়ো ভাতের জন্য বিশেষ থালির আয়োজন করা হয়েছে। ছবি: কলকাতা রাজবাড়ি।
১। কলকাতা রাজবাড়ি
দক্ষিণ কলকাতার এই রেস্তরাঁয় আপনি চাইলেই প্রিয় বন্ধুটির জন্য আইবুড়ো ভাতের আয়োজন করতেই পারেন। রেস্তরাঁয় শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত রয়েছে বাঙালিয়ানার আমেজ। প্রবেশদ্বারেই রয়েছে বরণের ব্যবস্থা। জলচৌকিতে পাত পেড়ে খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থাও রয়েছে এই রেস্তরাঁয়। হবু বরকনের জন্য থাকবে টোপর ও মালার ব্যবস্থা। সামনে বরণডালা, প্রদীপ আর গাছকৌটের মেলবন্ধনে ছবি তোলার জন্য সে যেন এক আদর্শ আমেজ! খাওয়াদাওয়াতেও থাকবে এলাহি ব্যবস্থা। রেস্তরাঁয় হবু বর-কনেদের আইবুড়ো ভাতের জন্য বিশেষ থালির আয়োজন করা হয়েছে। পাঁচ রকম ভাজা, কলকাতা ভেটকি ফ্রাই, গন্ধরাজ চিকেন, পোলাও, কাতলা, চিংড়ি, মটন থালিতে পাবেন প্রায় তেরো রকম পদ। শেষ পাতে ভাপা সন্দেশ, রসমালাই আরও কত কী! থালির দাম পড়বে ১০৪৯ টাকা। এ ছাড়াও রয়েছে ইলিশ থালি, ডাব চিংড়়ি থালি— বর-কনের পছন্দ অনুযায়ী বেছে নিতে পারেন সেগুলিও। ৪৯৯ টাকা থেকে ১৪৯৯ টাকার থালি পেতে আপনার গন্তব্য হতেই পারে কলকাতা রাজবাড়ি।
বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে ঘুরে আসতে পারেন ভূতের রাজা দিল বর রেস্তরাঁ থেকে। ছবি: ভূতের রাজা দিল বর।
২। ভূতের রাজা দিল বর
বাঙালির আবেগ সত্যজিৎ রায়ের সৃষ্টি করা চরিত্র গুপী-বাঘা। এই দুই চরিত্রকে কেন্দ করেই ভূতের রাজা দিল বর রেস্তরাঁটি। শহরবাসীর পছন্দের বাঙালি খানাপিনার ঠেক হিসাবে এই রেস্তরাঁটি বেশ পরিচিতি লাভ করছে। প্রিয় বন্ধুর আইবুড়ো ভাত দেওয়ার জন্য এই রেস্তরাঁটিও রাখতে পারেন পছন্দের তালিকায়। এখানেও হবু বর-কনেকে সুন্দর করে টোপরে সাজিয়ে তাঁদের সামনে পরিবেশন করা হয় মহাভোজ থালি। সেই থালিতে পেয়ে যাবেন চিংড়ি, ভেটকি, পাঁঠার মাংস, হরেক রকম মিষ্টি আরও কত কী! থালির দাম পড়বে ১১০০ টাকা। শেষপাতে থাকবে পানও। বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে এই ঠেকে এক বার ঢুঁ মারতেই পারেন। কলকাতার যাদবপুর ও সল্টলেকে এই রেস্তরাঁটি রয়েছে। এ ছাড়া চন্দননগর, শিলিগুড়ি, সোদপুর, কল্যাণীতেও পেয়ে যাবেন এই রেস্তরাঁ।
বাঙালিয়ানায় বন্ধুর আইবুড়ো ভাতের আয়জন করতে চাইলে ঢুঁ মারতেই পারেন সপ্তপদীতে। ছবি: সপ্তপদী।
৩। সপ্তপদী
প্রিয়জনের আইবুড়ো ভাত দেওয়ার জন্য বেছে নিতে পারেন সপ্তপদীও। এই রেস্তরাঁর আইবুড়ো ভাত উপলক্ষে ‘সেলিব্রেশন থালি’-এর আয়োজন করেছে। বর-কনের জন্য থাকবে বিশেষ আশীর্বাদ পর্ব। বরণডালায় বরণ করে নিতে পারবেন গুরুজনেরা। থাকবে ধানদুব্বো সবই। মিষ্টিমুখ করারও ব্যবস্থা থাকবে। থালিতে থাকবে ইলিশ, চিংড়ি, ভেটকি ফ্রাই, পোলাও, লুচি, লিচু-লঙ্কার পায়েস। দাম পড়বে ১২০০ টাকা। আগে থেকে বুকিং করার প্রয়োজন নেই। বাঙালিয়ানায় বন্ধুর আইবুড়ো ভাতের আয়জন করতে চাইলে ঢুঁ মারতেই পারেন এই ঠিকানায়।
সপ্তপদীর সেলিব্রেশন থালি। ছবি: সপ্তপদী।
এ ছাড়াও আহেলি, সিক্স বালিগঞ্জ প্লেস, কষেকষা কিংবা কস্তুরিতেও বেশ ভাল মানের বাঙালি থালি পাওয়া যায়। মন চাইলে সেখানেও সারতে পারেন বন্ধুর আইবুড়ো ভাত। তবে খাওয়া ছাড়া বাড়তি আয়োজনগুলি এই সব রেস্তরাঁয় পাওয়া যাবে না। সেই আয়োজনগুলি কিন্তু করতে হবে নিজেকেই।