জিমন্যাসিয়াম কথাটিই এসেছে প্রাচীন গ্রিসের যে ‘জিমনোস’ শব্দ থেকে, তার অর্থ: নগ্ন। প্রাচীন অলিম্পিকে সচরাচর প্রতিযোগীদের গায়ে সুতোটুকুও থাকত না। বদলে থাকত সুঠাম পৌরুষে মাখোমাখো জলপাই তেলের কসমেটিক মসৃণতা। এই নগ্নতা ছিল উৎসবেরই অঙ্গ, শরীরকেই উদ্যাপন করা। এথেন্সে মহিলাদের নিয়ে কিছু রক্ষণশীলতা থাকলেও, স্পার্টায় পুরুষ ও মহিলা উভয়েই অংশগ্রহণ করতেন নগ্ন হয়ে। নগ্নতা ও যৌনতা সমার্থক না হলেও, তাদের সম্পর্ক নিবিড়। এখনকার অলিম্পিকও সেই সম্পর্ক ধরে রেখেছে সযত্নে। খেলার দুনিয়ার সবচেয়ে বড় এই আসরটি যে একটি ‘সেক্স ফেস্ট’ও— তা নিয়ে নানা কেচ্ছা রটেছে। অলিম্পিক ভিলেজ-এ দুশোটিরও বেশি দেশের অ্যাথলিটরা থাকেন, সকলেরই ভরা যৌবন, সুঠাম শরীর। শারীরিক সক্ষমতার তুঙ্গে থাকা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ অ্যাথলিটরা যখনই এসে জড়ো হয়েছেন একটা ছোট্ট এলাকার মধ্যে, সেখানকার উষ্ণতা বেড়েছে।
একটা আন্দাজ দিয়েছেন পাঁচ বারের সোনাজয়ী মার্কিন সাঁতারু রায়ান লোচে— প্রায় ৭০-৭৫% অ্যাথলিটই নাকি এখানে এসে যৌন কাজকর্মে লিপ্ত হন। ২০১২ সালে লন্ডন অলিম্পিকে এসে তিনি নিজের প্রসঙ্গেও বলেন— ‘গত অলিম্পিকের সময়, আমার এক জন মাত্র প্রেমিকা ছিল। এটা বিরাট ভুল। এ বার আমি একা, সুতরাং লন্ডনের অভিজ্ঞতা সত্যিই দুর্দান্ত হওয়া উচিত। আমি উত্তেজিত।’
পেশাদার দেহব্যবসায়ীদের ভূমিকা কিন্তু এখানে ততটা ব্যাপক নয়। ভিলেজের মধ্যে যাঁরা থাকেন, তাঁদের মধ্যেই সম্পর্ক স্থাপিত হয়। নানা দেশের নানা অ্যাথলিটের জবানি থেকেই উঠে এসেছে বহু ছবি। হয়তো কোনও স্বেচ্ছাসেবী কর্মী কোনও অ্যাথলিটের সঙ্গে গেলেন তাঁর ঘরটি দেখতে, অতঃপর সেখানেই খানিকটা সময় কাটানোর প্রস্তাব দিলেন। কিংবা কোনও অ্যাথলিটের চোট লেগেছে, প্রাথমিক চিকিৎসার সময়েই তাঁর শরীর নিয়ে মুগ্ধতা প্রকাশ করলেন, প্রস্তাব করতে দ্বিধা করলেন না মহিলা ফিজিয়ো-টি। তবে, পার্টনার হিসেবে এখানে একই সঙ্গে সবচেয়ে আকর্ষণীয় ও সহজলভ্য সম্ভবত আর এক জন ক্রীড়াবিদ। তা তিনি নিজ দেশেরই হোন, বা ভিন দেশের। কখনও বিপরীত লিঙ্গের, কখনও সম।
গত লন্ডন অলিম্পিকে বহু অ্যাথলিটই নাকি নিয়মিত কাজে লাগাতেন ‘Grindr’ অ্যাপটি। নির্দিষ্ট এলাকার মধ্যে সমকামী পার্টনার খোঁজার উৎকৃষ্ট হাতিয়ার। হিসেব বলছে, ওই ২০১২ সালে এই অ্যাপ ব্যবহারের তালিকাতেও শীর্ষে রয়েছে লন্ডনের নামই। আবার, ২০১৩-র সোচি উইন্টার অলিম্পিকে অ্যাথলিটরা ইস্তেমাল করতে লাগলেন সব ধরনের সঙ্গী খুঁজতেই ওস্তাদ ‘Tinder’ অ্যাপটি। ঝুলি থেকে বেড়াল উঁকিঝুঁকি মারায় বিস্তর প্রতিবাদ-সমালোচনা হয়েছে, কিন্তু অলিম্পিক কমিটি প্রকারান্তরে এ-সব মেনেই নিয়েছে। বড়জোর ধামাচাপা দিতে চেয়েছে। টিমমেটকে নিয়ে অভিযোগ জানাতে গিয়েও কেউ কেউ ব্যর্থ হয়েছেন।
তবে এইচআইভি-র চোখরাঙানিতে, বাধ্যত ১৯৯২ সালের বার্সেলোনা অলিম্পিক থেকে কমিটিই নিজ উদ্যোগে কন্ডোম বিতরণ করতে থাকে। ২০০০-এর সিডনিতে প্রাথমিক অর্ডার ছিল ৭০ হাজার কন্ডোমের। তাতে না কুলোনোয় মাঝপথে আরও বিশ হাজারের অর্ডার দেওয়া হয়। এর পর থেকেই নাকি অলিম্পিক-প্রতি এক লক্ষ কন্ডোমের আগাম অর্ডার ধার্য করা হয়েছে। যদিও খবর বলছে, গত লন্ডন অলিম্পিকে সব রেকর্ড ভেঙে সংখ্যাটি দেড় লক্ষ ছুঁয়েছে!
আর এগুলি কাজে লাগানোর ক্ষেত্রেও যে চার দেওয়ালের আড়ালটুকুকে সর্বদা বেছে নেওয়া হয়েছে, এমনটাও নয়। দু’বারের সোনাজয়ী মার্কিনি ফুটবলার হোপ সোলো জানিয়েছেন তাঁর চোখে-দেখা অভিজ্ঞতার কথা— যৌনক্রীড়ায় মাতোয়ারা খেলোয়াড়দের তিনি দেখেছেন প্রকাশ্যে, কখনও মাঠের ওপর, কখনও দুটি বাড়ির মাঝখানে। প্রকৃত খেলোয়াড়ের কাছে হয়তো সত্যিই ইনডোর ও আউটডোর গেম-এ কোনও ফারাক থাকে না!