আমার কেদারনাথ

আমি থাকি একটা স্বর্গে, অবারিত সবুজের মধ্যে, আমার ঘুম ভাঙায় আশ্চর্য সব পাখি। এসি সিনেমা হলের কৃত্রিমতা ছেড়ে, চলে আসুন এখানে।আমার পরম সৌভাগ্য, আমি থাকি একটা আশ্চর্য খোলামেলা জায়গায়, অবারিত সবুজের মধ্যে। এখানে আমার পড়শিই বলুন, শত্তুরই বলুন— কোনও মানুষ নয়, বাদামের খোঁজে চরকি-পাক দেওয়া উড়ুক্কু কাঠবেড়ালি, জাঙ্গল ক্রো আর পিগমি পেঁচারা। রাত থাকতেই তারা উঠে পড়ে, আমাকেও জাগিয়েও দেয়। ভোর না হতেই থ্রাশ আর ব্ল্যাকবার্ডরা ঝালাপালার কম্পিটিশন শুরু করে দেয়, আর আমি কানে বালিশ চেপ্পে পাশ ফিরে শুই।

Advertisement

ভিক্টর বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২১ জুন ২০১৫ ০০:০৩
Share:

আমার পরম সৌভাগ্য, আমি থাকি একটা আশ্চর্য খোলামেলা জায়গায়, অবারিত সবুজের মধ্যে। এখানে আমার পড়শিই বলুন, শত্তুরই বলুন— কোনও মানুষ নয়, বাদামের খোঁজে চরকি-পাক দেওয়া উড়ুক্কু কাঠবেড়ালি, জাঙ্গল ক্রো আর পিগমি পেঁচারা। রাত থাকতেই তারা উঠে পড়ে, আমাকেও জাগিয়েও দেয়। ভোর না হতেই থ্রাশ আর ব্ল্যাকবার্ডরা ঝালাপালার কম্পিটিশন শুরু করে দেয়, আর আমি কানে বালিশ চেপ্পে পাশ ফিরে শুই। দূরে একটা হিমালয়ান বারবেট তুমুল চেঁচামেচি করে, আর একটা ব্রেন-ফিভার কোকিলের একটানা একঘেয়ে ডাকাডাকিকে ভেঙে খানখান করতে থাকে। আকাশে, অনেক ওপরে একটা বেয়ার্ডেড ভালচার পাক খেতে থাকে। ব্ল্যাক ঈগলরা সজাগ সতর্ক, পাহাড়ের কোনও খাঁজে এলিয়ে পড়ল কি, মুমূর্ষু কোনও মানুষ? জানি, আপনারা হিংসে করছেন আমার এই জীবনটাকে।

Advertisement

তা, হিংসের দরকারটা কী? চলে এলেই হয় আমার এই আশ্চর্য পৃথিবীটাতে। সত্যি কথা বলব? আসলে আমি চাই, এই লেখাটা পড়েই আমার বাঙালি বন্ধুকুল ব্যাগপত্তর প্যাক করে বেরিয়ে পড়ু়ন উত্তরাখণ্ডের উদ্দেশে। যেখানে আছে গঢ়বাল আর কুমায়ুনের মতো বিস্ময়কর জায়গা, যার অন্দরে-কন্দরে আমাদের পূর্বপুরুষেরা ঘুরে বেড়িয়েছেন, ‘মুক্তি’র খোঁজে। যেখানে ফি-বছর উত্তরাখণ্ডের ২৫০০০ সিনিয়র সিটিজেন-কে সম্পূর্ণ সরকারি খরচায় ‘চারধাম যাত্রা’র সব বন্দোবস্ত করে দেওয়া হয়! হোটেল-লজ-চটিতে তাঁদের থাকা, প্রতি দিন জলখাবার আর লাঞ্চ-ডিনার, যাতায়াত আর রাহা-খরচা— সব কিছুর ব্যবস্থা করে এই রাজ্য। দু’বছর আগে যে ভয়ানক বিপর্যয় হয়েছিল, তার পরেই একটা ডিক্রি জারি করে, মুখ্যমন্ত্রী হরিশ রাওয়াত ‘মেরে বুজুর্গ মেরে তীর্‌থ্‌’ নামে প্রকল্প চালু করেছেন, তারই অঙ্গ এই সুযোগ-সুবিধেগুলো। যদি এমন দম্পতি তীর্থযাত্রায় আসেন, যেখানে স্বামীটির বয়স ৬৫-র বেশি, তা হলে তিনি তো যাবতীয় তীর্থ-পরিষেবা ফ্রি-তে পাবেনই, আর তাঁর স্ত্রীও, সিনিয়র সিটিজেন না হলেও, একই পরিষেবা পাবেন পুরো নিখরচায়। আর স্বামী-স্ত্রী দুজনেই যদি হন সত্তরোর্ধ্ব, তবে তাঁদের মিলবে এক জন সঙ্গী (এসকর্ট) রাখবার অনুমতি, এমনিতে যা খরচা তার ৫০% ডিসকাউন্টে!

ও-দিকে বাংলায় কী হচ্ছে? ভোটের বাজারে মারপিট-রক্তারক্তি। যে-ভোটে এক জমানার স্বৈরাচারকে হটিয়ে আসছে পরের জমানার অরাজকতা। সবাই দোকানপাট বন্ধ করে রাস্তায় নামছে, লড়ছে কোন অধিকারের জন্য? না, যে ক’টা ইন্ডাস্ট্রি টিমটিম জ্বলছিল, তাদের শাটার যাতে ডাউন করা যায়। রাস্তায় মিছিল, রাজপথে ট্র্যাফিক জ্যাম, তাতে আটকে অ্যাম্বুল্যান্স, আর তার ভেতর আমাদেরই মা-বাবা-মেয়ে-শিশুরা চিকিৎসাহীন মরে যাচ্ছে। আর এ-দিকে? উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী ৬০খানা হেলিপ্যাড তৈরি করাচ্ছেন, যাতে রাজ্যের প্রত্যন্ত জায়গাগুলো থেকে অসুস্থ, মুমূর্ষুদের উড়িয়ে নিয়ে আসা যায় রাজধানীতে।

Advertisement

ভ্রমণ ও তীর্থযাত্রার জন্য উত্তরাখণ্ডের পাহাড়ের মতো বন্ধু-পাহাড় আর দ্বিতীয়টি নেই। যাত্রাপথে অসীম মমতায় সাহায্য করছেন কর্মীরা। কেদারনাথে রাত কাটাতে চাইলেই, আশ্রয় মিলছে তাঁবুতে, বিনামূল্যে দেওয়া হচ্ছে মজবুত স্লিপিং ব্যাগ, আর একটা ‘মিল’, চল্লিশ টাকায়। হেলিকপ্টারগুলোয় দুশোরও বেশি তীর্থযাত্রী রোজ কেদারনাথ আসতে পারেন বা ফিরতে পারেন কেদারনাথ থেকে। মাথাপিছু একটা রাউন্ড ট্রিপ-এর ভাড়া পড়ে ৫০০০-৭০০০ টাকা, চাহিদামত ওঠানামা করে দর। কেদারনাথ-দর্শন শেষে একই দিনে আপনার রিটার্ন ফ্লাইট, হয়তো মিস করে গেলেন। কুছ পরোয়া নেহি, বিনা পয়সায় কেদারনাথে থাকতে পারবেন সে রাতটা, আর আপনার ওই টিকিটটা দেখিয়েই ধরতে পারবেন পরের দিনের কপ্টার।

এটা মানতেই হবে, আমাদের দেশের রাজনীতিবিদদের মানসিকতায়— তা সে যে রাজ্যের যে দলের যে রঙেরই হোন না কেন— ইদানীং একটা ভাল রকমের পরিবর্তন এসেছে। তার সু-প্রভাব পড়ছে প্রশাসনে, নীতিতেও। এ দেশের কৃষক ও গ্রামবাসীদের সঙ্গে মেলামেশার অবিশ্বাস্য সব ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকেই এ কথা বলছি। তাঁরা এত দিন ছিলেন নিতান্ত অনাদৃত, অনাকাঙ্ক্ষিত। পয়সাওয়ালা মানুষরা এঁদের কেবল সমাজের বোঝা বলে মনে করতেন। কিন্তু আজ গরিব লোকের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট আছে, জীবন বিমা, দুর্ঘটনা বিমা আছে, বুড়ো বয়সে খেয়ে-পরে বাঁচবার জন্য নানান প্রকল্পের ব্যবস্থা আছে। সব কিছুর ওপরে আছে ‘আমরাও মানুষ’, এই বোধ।

তবে, আমার সন্দেহ আছে, গরিব মানুষের কাছে যে ‘অচ্ছে দিন’ এসেছে, আমাদের দেশের প্রাকৃতিক সম্পদের কাছে সেই সুদিন পৌঁছেছে কি? আমাদের জীবজন্তু, গাছপালা, নিস্তব্ধ প্রান্তর, উপত্যকা, নদী, হিমালয়ের অরণ্য— এরা কি এখনও অবহেলিত নয়? ঠিকই, গঙ্গা আর যমুনাকে দূষণমুক্ত বা পরিষ্কার করে তোলা হচ্ছে। পর্যটক বা পিকনিক-করিয়েরা হয়তো এ বার নদীবক্ষে বজরা বা নৌকোয় চেপে নির্মল নদীশোভা উপভোগ করবেন। কিন্তু তার পাশাপাশি, ভাগীরথী সহ সব হিমালয়জাত নদীগুলোতে বাঁধ দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। হাজার হাজার দরিদ্র ও অবহেলিত মানুষ, যাঁরা এই নদীগুলোর পাড়ে বা কাছে থাকেন, তাঁদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠছে এতে। সামান্য ক্ষতিপূরণ হাতে ধরিয়ে দিয়ে তাঁদের ভিটেমাটিচ্যুত করা হচ্ছে। ভিন-জায়গায় গিয়ে, অবর্ণনীয় কষ্টে থাকছেন তাঁরা, মরছেন লোকচক্ষুর আড়ালে। এ ভাবে চললে, নদী তো বটেই, আরও যে ছোট ছোট জলের উৎস— আস্তে আস্তে উবে যাবে। নানান প্রজাতিও পৃথিবী থেকে মুছে যাবে অলক্ষে।

ভোরের আগে, কখনও রাতেও, গঙ্গার বুকে বা দেবপ্রয়াগ-হৃষীকেশের দিকটায় শিবালিক রেঞ্জের ছোট্ট নদীগুলোর ওপর দিয়ে ভেসে আসত রিভার ল্যাপউইং-এর তীক্ষ্ণ শিস। অদূর ভবিষ্যতেই হয়তো তা আর শুনতে পাওয়া যাবে না। যে ম্যাগপাই-রা থাকত হিমালয়ের ওপরের দিকের রেঞ্জে, জলবায়ুর পরিবর্তনে তারাই নেমে আসছে নীচে, দুন উপত্যকায়। গত বছর মুসৌরিতে গ্রসবিক-এর দেখা মেলেনি। ফি-গরমে অ্যাগলার নদী-উপত্যকার ওপর দিয়ে উড়ে যায় যে লেডিবার্ডরা, গত বছর তাদেরও দেখেছি যৎসামান্য।

দিল্লি থেকে ডেভেলপাররা এসে জাঁকিয়ে বসেছে এই উপত্যকায়। মুসৌরি থেকে ধনৌলটি গেছে যে রাস্তাটা, তার দু’ধারে ইঞ্চিখানেক জমিও বোধহয় আর ফাঁকা নেই। সব কিনে নিয়েছে। বন কেটে বসত হবে। যা ছিল ঘন সবুজ অরণ্য, তার জায়গায় মাথা উঁচোবে জঘন্য সব হোটেল, আর হঠাৎ-পয়সাওলাদের বাহারি কটেজ। সাত সমুদ্দুর পারেও একই হাল। উনিশ শতকের যে বিখ্যাত গোষ্ঠীপতির নামে সিয়াট্‌ল শহরের নামকরণ হয়েছে, যাঁর দলের দুয়ামিশ (Duwamish) জনজাতির মানুষ কোন গহন অতীত থেকে (১০০০০ থেকে ৮০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের মধ্যে) ওয়াশিংটন রাজ্যে বসত করে এসেছেন, সেই লোকটিকে প্রায় কেউ চেনেনই না, আর সেই মানুষরাও আজ আমেরিকার স্বীকৃত জনজাতিগুলির তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন। এক দিন যে জায়গা ছিল তাঁদের বাসভূমি, আজ সেখানে আধুনিক শিল্প-দুনিয়ার দুই বিস্ময়— মাইক্রোসফ্ট আর বোয়িং-এর হেডকোয়ার্টার্স। নীল গ্রহটার গায়ে যেন দুটো কালশিটে।

ওই ভয়ংকর দুর্যোগেও কেদারনাথের মন্দিরের ভেঙে না পড়াটা যে একটা মির‌্যাক্‌ল, এটা বিশ্বাস করতে ঈশ্বরবিশ্বাসী হতে হবে না। মির‌্যাক্‌ল ওটা বটেই। ঠিক তেমনই, এটা বোঝাও কঠিন কিছু নয় যে চপারের নিরন্তর ওড়াউড়ি, প্রপেলারের গর্জন আর তা থেকে উৎপন্ন শব্দ-কম্পনের ফলে ওই বিশাল পাহাড়চুড়োর আইস-ক্যাপ’গুলো নড়েচড়ে, ভেঙে গেছে, দেবভূমির হাজার বছরের ইতিহাসে আছড়ে পড়েছে ভয়ংকরতম হিমবাহ। আমার স্থির বিশ্বাস, এই দুর্যোগের কারণ প্রকৃতি নয়, মানুষ।

এটা বললে কুসংস্কার মনে হতে পারে, বা নিছক কো-ইনসিডেন্স— কিন্তু, কেদারনাথে যে হাজার হাজার মানুষ ভূমিধসে মারা গেছেন, তাঁদের অধিকাংশই তখন ছিলেন হোটেলের মধ্যে। আর বেঁচে গেছেন তাঁরাই, যাঁরা আশ্রয় নিয়েছিলেন আদ্যিকালের ‘চটি’গুলোর মধ্যে! অর্থাৎ, ধুরন্ধর ব্যবসায়ী, দুর্নীতিগ্রস্ত নগরকর্তা, আর পর্যটন-বিভাগের দূরদৃষ্টিহীন কর্মীদের বানানো বাড়ি-লজ-হোটেলগুলোই ছিল দুর্বল, পলকা। আর, কমদামি ও কম-আরামওয়ালা চটিগুলোই ছিল নিরাপদ! ভুললে চলবে না, আমাদের প্রকৃতিবন্ধু, প্রকৃতি-পূজক পূর্বপুরুষরা হাজার হাজার বছর ধরে এখানে বাস করেছেন, প্রকৃতিকে খুব কাছ থেকে দেখেছেন, তার পর বানিয়েছেন ওই পরিবেশবান্ধব চটিগুলো।

প্রাণিহিংসা রোখার, পরিবেশ বাঁচানোর সদিচ্ছা কিছু মানুষের মধ্যে যে নেই তা নয়, কিন্তু লোভ মানুষকে সব ছাপিয়ে এক ভয়ংকর পরিণতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে। যে হেলিকপ্টারগুলো কেদারের দুর্যোগের পর মৃতদেহ বয়ে এনেছিল, বা বেঁচে-যাওয়া মানুষগুলোকে নিরাপদ জায়গায় উড়িয়ে এনেছিল— সেগুলোর অংশত মালিক নাকি আমাদের রাজনীতির কিছু কেষ্টবিষ্টু, যাঁরা এই কাজের বিনিময়ে উত্তরাখণ্ডের কংগ্রেসি সরকারের কাছ থেকে বিশাল টাকা কামিয়েছেন! খুঁটিনাটিতে যাচ্ছি না, কেননা এ কথা সত্যি প্রমাণিত হলে, বিপন্ন মানুষের চরম সংকটকে ব্যবহার করে ফায়দা লোটার এমন কলঙ্ক বেরিয়ে পড়বে, ভাবতেও লজ্জা হয়।

হরিয়ানা, দিল্লি, উত্তরপ্রদেশের প্রভাবশালী কুখ্যাত জমি-মাফিয়া আর তাদের দোসর প্রপার্টি-ডেভেলপারদের অবশ্য এ-সবে কিছু যায়-আসে না। তারা বনের মধ্যে এলিফ্যান্ট করিডরটুকুকেও ছাড়বে না, সেখানেও বাড়ি তুলবে। বুজিয়ে দেবে বিশাল জলাভূমিগুলো, যেখানে প্রতি বছর শীতে হাজার হাজার পরিযায়ী পাখি এসে নামে। দুঃখের বিষয়, কয়েক দশক ধরে আমাদের প্রাকৃতিক বনাঞ্চলগুলো কেটে ফেলে তার জায়গায় বনায়নের নামে লাগানো হয়েছে শুধু জল শুষে-নেওয়া ইউক্যালিপ্টাসের সারি, আর সেই সব গাছ— যাদের কাঠ বিক্রি হয় কাঁড়ি কাঁড়ি টাকায়। এই গাছগুলোয় ফল ধরে না, তাই পাখি এসে বসে না। আসে না রিসাস বাঁদর আর লাঙ্গুরের দল। বনের এই সব প্রাণীদের বেঁচে থাকতে নির্ভর করতে হয় সেই সব টুরিস্টদের ওপর, ঘুরতে এসে বাসের জানলা দিয়ে যারা অখাদ্য-কুখাদ্য ছুড়ে দেয় ওদের দিকে তাক করে।

প্রসঙ্গে ফেরা যাক। আসলে যে-কথাটা এই লেখার শুরু থেকে বলতে চাইছি: দু’বছর আগের সেই ভয়ংকর ট্র্যাজেডি সামলে উত্তরাখণ্ড আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হচ্ছে। আর এই কামব্যাকের যাত্রায় পাশে চাই সেই সব বাঙালি টুরিস্টদের, শত শত বছর ধরে এখানে বেড়াতে এসে যাঁরা এই অঞ্চলের রুটি-রুজির ব্যবস্থা করে আসছেন। শুধু তীর্থপথে নয়, দুর্দান্ত সব ট্রেকিং-রুটেও।

মোদ্দা কথা হল, উত্তরাখণ্ড দারুণ রোমাঞ্চকর একটা জায়গা। তীর্থযাত্রা বা বেড়ানোর জন্যও সম্পূর্ণ নিরাপদ। বাঙালিরা ফের সাহসে ভর দিয়ে এলে দেখবেন, এ-মুলুকে শুধু তাঁরাই পর্যটক। ভারতের আর সব জায়গার টুরিস্টরা নিতান্তই দুর্বলচিত্ত, কুখ্যাত ‘টেক্‌টনিক দুন ফল্ট’-এ পা রাখতে তাদের পিলে কাঁপে। তার ওপর আবার ক’দিন আগে নেপালে ভূমিকম্প হয়ে এ সব ভয়টয় আরও বেড়ে গেছে।

তাই আবারও আসুন, ঘুরে যান। এসে দেখুন, এখানকার নদী আর উপত্যকারা কেমন ফিরে গেছে ঠিক সেই পুরনো-কালের অবাধ, অপার সৌন্দর্যে! খুলে গেছে হেমকুণ্ডও। পেট ভরে লঙ্গরে খান, তার পর ফুলে-ভরা উপত্যকায়, এক-পাহাড় সুগন্ধের মধ্যে ডুবে গিয়ে ঘুমোন। ছন্দে ফিরছে বার্ডওয়াচিং-ও। ভারতীয় উপমহাদেশে যে ১২০০ প্রজাতির পাখি দেখতে পাওয়া যায়, তাদের ৬৫০ রকমই থাকে এই উত্তরাখণ্ডে।

শেষ করি সিয়াট্‌ল-এর এক মোড়লের কথা দিয়ে। জন্মসূত্রে তিনি নেটিভ আমেরিকান, কিন্তু অধিকাংশ ভারতবাসীর মতোই, সব কিছুর মধ্যে ঈশ্বরকে খুঁজে পেতেন (যদিও তেমন ভারতীয়ের সংখ্যা ক্রমশ কমে আসছে)। এক দল মিথ্যেবাদী ঠগ মাটি-কেড়েরা তাঁকে উচ্ছেদ করেছিল তাঁর নিজের মাটি, নিজের দেশ থেকে। তিনি বলেছিলেন, ‘এই টাকা দিয়ে আমাদের মাটি কেড়ে কী লাভ হবে তোমাদের, যদি সবুজ পাহাড় ভরে যায় টেলিফোনের তারে, নেকড়ের ডাক শোনা যায় না আর?’

এখনও উত্তরাখণ্ড শেষ হয়ে যায়নি। আপনারা আসুন। উত্তুঙ্গ হিমালয় অপেক্ষা করছে, দু’হাত বাড়িয়ে বুকে টেনে নিতে, আপনার সব স্বপ্ন পূরণ করতে।
ঈশাবাস্যমিদম্ সর্বং।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement