হিটলারের গোপিনী

ফরাসি মহিলা। স্বামী বাঙালি। থাকতেন দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের কলকাতায়। তাঁর বিশ্বাস, হিটলার স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণের অবতার। পাশাপাশি হিন্দু মহাসভা এবং গোলওয়ালকরের পরম ভক্ত। শ্রাবণী বসুস্বাধীনতার দশ বছর আগের কলকাতা। ব্রিটিশ-বিরোধী হাওয়া তখন জোরদার। কলকাতায় হিন্দু মিশন-এর সভাপতি স্বামী সত্যানন্দের কাছে এসে হাজির একটি মেয়ে। বিদেশিনী, কিন্তু ভারতীয় সাজ। নাম সাবিত্রী দেবী।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০১৭ ০০:০০
Share:

স্বাধীনতার দশ বছর আগের কলকাতা। ব্রিটিশ-বিরোধী হাওয়া তখন জোরদার। কলকাতায় হিন্দু মিশন-এর সভাপতি স্বামী সত্যানন্দের কাছে এসে হাজির একটি মেয়ে। বিদেশিনী, কিন্তু ভারতীয় সাজ। নাম সাবিত্রী দেবী। ‘আমি কি আপনাদের কোনও কাজে আসতে পারি?’ কী কাজ! মেয়েটি নিজের পরিচয় দিল ‘বিধর্মী আর্য’ হিসেবে, খুব দুঃখও করল গোটা ইউরোপ ধর্মান্তরিত হয়ে খ্রিস্টান হয়ে গেছে বলে। সে অ্যাডল্‌ফ হিটলারের বড় ভক্ত, আর কে না জানে, মহামান্য ফুয়েরার যে আর্য জাতির জয়পতাকা ওড়াতে চাইছেন গোটা বিশ্বে, সেই আর্যদেরই বাস এই ভারতে! হিন্দু ধর্ম তার বড় প্রিয়, গত পাঁচ বছর ধরে একটু একটু করে ভারতকে সে তার ‘নিজের দেশ’ করে নিয়েছে। তার দৃঢ় বিশ্বাস, আর্য জাতি যে পৃথিবীশ্রেষ্ঠ, সারা বিশ্বকে তা শেখাতে পারে একমাত্র ভারতই। সেই লক্ষ্যেই কাজ করতে চায় সে। সত্যানন্দও নিজে বিশ্বাস করতেন, হিটলার স্বয়ং বিষ্ণুর অবতার। তেজিয়ান মেয়েটিকে তাঁর পছন্দ হল। কাজ দিলেন, নানা জায়গায় ঘুরে ঘুরে ক্লাস নিতে হবে, পড়াতে হবে।

Advertisement

আসল নাম ম্যাক্সিমিয়ানি পোর্টাস সেই কবেই হারিয়ে গেছে! ফ্রান্সের লিয়ঁ শহরে বড় হওয়া মেয়ে, মা ইংরেজ, বাবা আধা-গ্রিক আর আধা-ইতালীয়। সেই মেয়েই সাতাশ বছর বয়সে মার্সেই বন্দর থেকে ভারতমুখো জাহাজে চেপে পড়ল। সাহেবসুবো, মিশনারি, শিক্ষক, বেনিয়ার ভিড়ে একা একটি মেয়ে। স্বপ্ন, এত দিন পড়াশোনা করে জানা ছিল, এ বার হাতে-কলমে জানতে হবে হিন্দুদের বর্ণব্যবস্থা সম্পর্কে।

ছোটবেলা থেকেই ম্যাক্সিমিয়ানির জার্মানি প্রীতি। প্রথম মহাযুদ্ধের শেষে ১৯১৯-এর ভার্সেই চুক্তিতে যে ভাবে জার্মানি অপদস্থ হল, খুব গায়ে বেজেছিল তার। ১৯২৩-এ গ্রিসে গিয়ে আথেন্স আর অ্যাগোরায় প্রাচীন ধ্বংসস্তূপ দেখা হল, ওঠা হল অ্যাক্রোপলিসেও। ১৯২৯-এ তীর্থযাত্রায় দেখা হল ‘পবিত্র ভূমি’ হাইফা, বেথেলহেম, নাজারেথ, জেরুজালেম সহ খ্রিস্টজন্মের স্মারক স্থানগুলো। তখন পূর্ব ইউরোপের ইহুদিরা এই অঞ্চলকে তাঁদের ‘দেশ’ বলে দাবি করছেন। চওড়া কানাওয়ালা হ্যাট আর লম্বা কালো কোট পরা ইহুদিরা ‘শোক প্রাচীর’-এর সামনে প্রার্থনা করছে দেখে মেয়েটার জঘন্য লাগত। তার ইহুদি-বিদ্বেষেরও সম্ভবত সেই শুরু।

Advertisement

হিটলারের ইহুদি-বিরোধী অভিযান দেখে নতুন ভাবনা এল ম্যাক্সিমিয়ানির মাথায়, জার্মানি গিয়ে নাত্‌সি আন্দোলনে যোগ দিলে কেমন হয়! হিটলারের লেখৈ ‘মাইন কাম্ফ্’ পড়ে আর্যদের শ্রেষ্ঠতা সম্পর্কে জানা হয়ে গিয়েছে তত দিনে। জার্মান প্রত্নতাত্ত্বিক হাইনরিখ শ্লাইমান-এর কাজও খুব প্রভাব ফেলল। ট্রয়ে আর জার্মানির কিছু জায়গার প্রত্নতাত্ত্বিক নমুনায় তিনি স্বস্তিকাচিহ্ন আবিষ্কার করেছিলেন। তাঁর অনুমান, স্বস্তিকাচিহ্নই জার্মানির টিউটনদের সঙ্গে হোমারের সময়কার গ্রিস আর বৈদিক ভারতের যোগসূত্র। শ্লাইমান-এর তত্ত্ব খুব প্রচার পেয়েছিল, স্বস্তিকাও হয়ে উঠেছিল ইউরোপে আর্যদের প্রতীক। সেই ইউরোপীয় আর্যদের ভারতীয় ভাই-বেরাদরদের দেখার আশা নিয়েই ম্যাক্সিমিয়ানির সমুদ্রপাড়ি।

আরও পড়ুন: কে সভ্য, কে বর্বর বলে গেছেন রামনাথ বিশ্বাস

শ্রীলঙ্কায় পৌঁছে নৌকোয় করে সোজা দক্ষিণ ভারতের রামেশ্বরম। শহরে তখন রামের পুজো চলছে। ম্যাক্সিমিয়ানি রামায়ণে পড়েছে, রাম কী করে লঙ্কা বিজয় করে, এই পথেই ফিরেছিলেন। হিন্দু পৌরাণিক জলহাওয়ায় শ্বাস নিতে পেরে সে আপ্লুত। রামের লঙ্কাবিজয় মানে তো আর্যের হাতে দ্রাবিড়দের পরাজয়! আর্যজাতির শ্রেষ্ঠত্বে নতুন করে বিশ্বাস জমল তার।

ম্যাক্সিমিয়ানির বিশ্বাস, ভারতের বর্ণব্যবস্থা আসলে আর্য নীতিরই আর এক রূপ। যে নীতি ফরসা, উচ্চবর্ণের আর্যদের রক্ষা করতে চায়, অন্য জাতির মানুষকে ‘তুমি আলাদা’ বলে সরিয়ে রাখতে চায়। মেয়েটি ঠিক করল, ভারতই হবে তার কর্মভূমি। এখানে থেকেই হিন্দুধর্ম রক্ষার লড়াই চালিয়ে যেতে হবে।

১৯৩৫-এর জুলাই থেকে ডিসেম্বর কাটল রবীন্দ্রনাথের শান্তিনিকেতনে। গুরুদেবের জায়গা দিব্যি লাগল, একটা জিনিস ছাড়া। ইহুদিগুলো বিশ্বভারতীতেও এসে হাজির! শান্তিনিকেতনে থাকার সময়েই শেখা হল বাংলা আর হিন্দি। তার পরই কৃষ্ণস্থান মথুরায় তীর্থ করতে গিয়ে নিজের নাম বদল। ‘ম্যাক্সিমিয়ানি পোর্টাস’ হয়ে উঠলেন সাবিত্রী দেবী।

অসিতকৃষ্ণ মুখোপাধ্যায়

১৯৩৬ সাল থেকে সাবিত্রী কলকাতায় থাকতেন। বাঙালির পাণ্ডিত্যে মুগ্ধ তিনি। দেখলেন, এই শহরে নুন আনতে পান্তা ফুরোনো বাড়িগুলোতেও একটা বইয়ের তাক আছে, আর তাতে রাখা সংস্কৃত রামায়ণের পুরনো সংস্করণ। সাবিত্রীর দৃঢ় সংকল্প ছিল, হিন্দুধর্মকে রক্ষা করতেই হবে, কারণ বিশ্বে এই একমাত্র স্থান যেখানে আর্য ঐতিহ্য জ্বলজ্বল করছে! আর সেই সময়েই হিন্দু মহাসভা, রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ-র হাত ধরে হিন্দু জাতীয়তাবাদ বেড়ে উঠছে।

২২০ লোয়ার সার্কুলার রোড হল সাবিত্রীর ঠিকানা। ‘গণেশ ম্যানসন’ নামের একটা বাড়ি থেকে রোজ আধ ঘণ্টা হেঁটে কাজে আসতেন কালীঘাটে হিন্দু মিশন অফিসে। এই কাজের সূত্রেই আরএসএস ও হিন্দু মহাসভার সঙ্গে যোগাযোগ। হিন্দু মহাসভার প্রধান বিনায়ক দামোদর সাভারকরের দ্বারা ভীষণ প্রভাবিত হলেন। সাভারকরের মত— একমাত্র হিন্দু জাতীয়তাবাদী চেতনাই হল প্রকৃত দেশপ্রেম— হয়ে উঠল তাঁরও মত। ১৯৩৭ সালে দেখা হল সুভাষচন্দ্র বসুর সঙ্গেও। তাঁর জাতীয়তাবাদী ভাবনারও অনুরক্ত ছিলেন সাবিত্রী। কিন্তু অচিরেই বুঝতে পারলেন, ‘থার্ড রাইখ’-এ সুভাষের আগ্রহ মতাদর্শগত নয়, নিতান্ত প্রয়োজনবোধে।

১৯৩৮ সালে সাবিত্রীর পরিচয় হল অসিতকৃষ্ণ মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে। তিনি কট্টর জার্মানিপন্থী, কলকাতার তৎকালীন জার্মান দূতাবাসের সহযোগিতায় ‘দ্য নিউ মার্কারি’ নামে একটি ন্যাশনাল সোশালিস্ট পত্রিকা বেরোত, তার প্রকাশক-সম্পাদক। সারা ভারতের একমাত্র নাত্‌সি পত্রিকা সেটা। ব্রাহ্মণসন্তান অসিতকৃষ্ণকে দেখে ভাল লাগল সাবিত্রীর। অসিতকৃষ্ণও মনেপ্রাণে চাইতেন, ভারতে আর কিছু না, শুধুমাত্র আর্য ঐতিহ্যের পুনরুজ্জীবন হোক। ল্যান্সডাউন রোডের জার্মান কনসুলেটে অসিতকৃষ্ণ প্রায়ই আসতেন। হিটলার ও থার্ড রাইখ বিষয়ে লেখা নানান খবর সেখান থেকেই পেতেন, পত্রিকায় ছাপাতেন।

সাবিত্রী দেবীও লেখালিখি নিয়েই ছিলেন। হিন্দু মিশন থেকে তাঁর বই ‘আ ওয়ার্নিং টু দ্য হিন্দুজ’ বেরোল ১৯৩৯-এ। সেখানে লিখলেন, হিন্দু সংস্কৃতির বদলে ভারতের অনেক প্রদেশে বেড়ে চলেছে বিধর্মী প্রবণতা। লিখলেন, মাইলকে মাইল হেঁটেও এক জনও হিন্দু দেখতে পাবেন না, এমন অনেক গ্রাম আছে এই বাংলাতেই! এমনও মন্তব্য করলেন, এক ময়মনসিংহেই যত মুসলমান বাস করে, মাথা গুনলে আরবের অর্ধেকের বেশি জনসংখ্যা ছাপিয়ে যাবে!

১৯৩৯-এ শুরু হল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। সাবিত্রী ও অসিতকৃষ্ণের জীবনও বদলে গেল। ব্রিটিশ সরকার ‘দ্য নিউ মার্কারি’ বন্ধ করে দিয়েছিল। ১৯৪০-এর শুরুতে অসিতকৃষ্ণ বিয়ের প্রস্তাব দিলেন। সাবিত্রীর একটা গ্রিক পাসপোর্ট ছিল। অসিত ভাবলেন, ভালই হল, ব্রিটিশ প্রজার বিবাহিত স্ত্রী হিসেবে সাবিত্রীর ইউরোপ ভ্রমণে কোনও বাধা থাকবে না। ৯ জুন ১৯৪০ সাবিত্রী বিয়ে করলেন অসিতকে, কলকাতাতেই। একেবারে বাঙালি মেয়ের সাজে। তার পর দিনই, মিত্রশক্তির বিরুদ্ধে ইতালি বিশ্বযুদ্ধে যোগ দিল। চুরমার হয়ে গেল সাবিত্রীর জার্মানি যাওয়ার স্বপ্নও। বিশ্বযুদ্ধের পুরো সময়টাই সাবিত্রী ভারতেই ছিলেন।

ওয়েলেসলি স্ট্রিটে তাঁদের ফ্ল্যাটটাই ছিল কলকাতায় অক্ষশক্তির কাজকর্মের গোপন ঘাঁটি। অসিত আর একটা পত্রিকা প্রকাশ শুরু করলেন— কলকাতার এসপ্ল্যানেড ম্যানসনে জাপানি প্রতিনিধিদের সাহায্যে। ১৯৩৭-’৪০, এই সময়ে কলকাতার জাপানি কনসাল জেনারেলদের সঙ্গেও তাঁর যোগাযোগ ছিল। সাবিত্রী পরে বলেছিলেন, সুভাষচন্দ্রের সঙ্গে জাপানিদের যোগাযোগ করিয়ে দেওয়ায় অসিতের হাত ছিল। ১৯৩৮ সালে অসিত মুখোপাধ্যায়ের সহায়তায় সুভাষচন্দ্রের সঙ্গে দেখা হয় কলকাতায় জাপানি বিদেশমন্ত্রকের অফিসার ওহিসা-র। অসিতের যোগাযোগ সূত্রেই ১৯৪০ সালে সুভাষচন্দ্র রাসবিহারী বসু ও জাপানিদের সঙ্গে দেখা করতে এক দূতকে জাপানে পাঠান।

বিশ্বযুদ্ধে জাপানের যোগদানে, যুদ্ধের আঁচ লাগল ভারতের গায়েও। কলকাতার বাতাসে তখন মাঝেমধ্যেই এয়ার-রেড’এর সাইরেন। ১৯৪১-এর শেষ দিকে কলকাতায় ব্রিটিশ ও মার্কিন সেনা নিযুক্ত হয়। সাবিত্রী-অসিতকৃষ্ণ এই সময় চরবৃত্তির কাজ করতেন। চৌরঙ্গি টেরেস-এর ইস্ট অ্যান্ড ওয়েস্ট ক্লাব-এ আসা মিত্রশক্তির অফিসারদের সাবিত্রী নিজেদের বাড়িতে ডাকতেন, স্বামীর সঙ্গে সাক্ষাতের অছিলায়। বোতল বোতল হুইস্কি উড়ত, জমত আড্ডা। বন্ধুবৎসল দম্পতি ভান করতেন যেন তাঁরা প্রবল জার্মান-বিরোধী। অসিতকৃষ্ণ ইচ্ছে করে গোয়েরিং আর হিটলারের নামে বাজে কথা বলতেন। কলকাতার উচ্চবর্ণের এক ব্রাহ্মণ যে আসলে নাত্‌সি ভক্ত, মার্কিন অফিসাররা কল্পনাও করতে পারেননি। এক মার্কিন ইহুদি তো যাবতীয় স্ট্র্যাটেজি গড়গড়িয়ে বলে যেতেন। সেই সব তথ্য অসিত জানাতেন অন্য চরদের, যারা নিয়মিত সীমান্ত পেরিয়ে বর্মায় জাপানি অফিসারদের কাছে পাচার করতেন সব। এরই ফলস্বরূপ বর্মায় মিত্রশক্তির বেশ কয়েকটা ‘টপ সিক্রেট’ অ্যারোড্রোম বোমায় উড়ে যায়, অনেক সেনা ধরা পড়ে। ১৯৪২-এর বসন্তে বর্মা দখল করে জাপানি সেনা।

পূজারিনি: ১৯৮২ সালে ইংল্যান্ডে মারা গেলেন সাবিত্রী দেবী। তাঁর চিতাভস্ম পাঠানো হল আমেরিকায় নাত্‌সি পার্টির দফতরে। সেখানে তাঁর ছবিতে এ ভাবেই রেখে দেওয়া হল হিটলারের নিজস্ব সামরিক উত্তরীয়।

সাবিত্রী-অসিতের বিশ্বাস ছিল, জার্মান মিলিটারি সোভিয়েত ইউনিয়ন, ইরান আর আফগানিস্তান উজাড় করে ভারতে ঢুকে পড়বে। স্বপ্ন দেখতেন, জার্মান ও জাপানি সেনা ভারতে ব্রিটিশদের হারিয়ে দিয়েছে, দিল্লির লালকেল্লায় হিটলারকে বরণ করে নেওয়া হচ্ছে তুমুল উৎসাহে। কিন্তু, হল উলটো। ১৯৪৪-এর জুনে মিত্রশক্তির সেনা ঢুকল নর্ম্যান্ডিতে। পুব দিকে ব্রিটিশ সেনাও বর্মায় ক্রমশ এগোচ্ছিল। অক্ষশক্তির এই পরাজয় সাবিত্রীর সহ্য হল না। তিনি নিজেকে গুটিয়ে নিলেন, চলে গেলেন দক্ষিণ ভারতে। সেখানেই এক দিন খবর এল, জার্মানি আত্মসমর্পণ করেছে।

পরের বছর অক্টোবরে কলকাতায় ফিরলেন। সিদ্ধান্তও নিলেন একটা, ইউরোপ ফিরে যাওয়া দরকার। ১৯৪৫-এর নভেম্বরে স্বামীকে বিদায় জানিয়ে পাড়ি দিলেন ইউরোপ। ইচ্ছে, সেখানেই জীবন কাটাবেন, নব্য-নাত্‌সি হিসেবে।

১৯৭১-এ সাবিত্রী ফিরে এলেন কলকাতায়। অসিতকৃষ্ণ তখন দিল্লিতে থাকেন। সাবিত্রী যোগ দিলেন তাঁর সঙ্গে। আবার লেখালিখি শুরু করলেন। দিল্লিতে একটা ছোট্ট ফ্ল্যাটে থাকতেন দুজনে, সংসার চলত সাবিত্রীর সামান্য ফরাসি পেনশনে। ১৯৭৭-এর ২১ মার্চ অসিতকৃষ্ণ মারা যান। চোখে ছানি, সাবিত্রীর দৃষ্টিশক্তি তখন ক্ষীণ। সে অবস্থাতেই ইউরোপ-আমেরিকার নব্য-নাত্‌সিদের সঙ্গে একযোগে কাজ করে যাচ্ছিলেন। ভক্তদের ‘কাল্ট’ও তৈরি হয়েছিল তাঁকে ঘিরে।

১৯৮১-র অক্টোবরে অনুরাগীরা চিকিৎসার জন্য তাঁকে জার্মানি যেতে বললেন। এরই মধ্যে বক্তৃতার ডাক এল আমেরিকা থেকে। ঠিক করলেন, যাত্রাপথে ইংল্যান্ডের এসেক্সে এক বন্ধুকে দেখে যাবেন। কনকনে ঠান্ডাতেও পরনে স্রেফ সাদা শাড়ি। বন্ধুর বাড়িতেই ১৯৮২ সালের ৭ ডিসেম্বর মারা গেলেন। তাঁর ভস্মাবশেষ সারা পৃথিবী ঘুরে, শেষে এল আর্লিংটনের নাত্‌সি হল অব অনার-এ। ম্যাক্সিমিয়ানি পোর্টাস নয়— সাবিত্রী দেবী, ‘হিটলারের আর্য ভারতীয় সন্ন্যাসিনী’ পরিচয়ে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement