সময়টা ১৯১০ খ্রিস্টাব্দ। সদ্য পিতৃবিয়োগের চিহ্ন বহনকারী ছেলেটিকে দেখে কিছুটা অবাকই হয়েছিলেন কলিকাতা রিপন (অধুনা সুরেন্দ্রনাথ) কলেজের অধ্যক্ষ। আরও আশ্চর্য হলেন ছেলেটি যখন ইংরেজি ভাষায় অনার্স পড়ার আবেদন জানাল। ছেলেটির রেজ়াল্টও তেমন কিছু আহামরি নয়, সদ্য পিতৃবিয়োগ ও আনুষঙ্গিক চাপে পড়াশোনাও তেমন করে উঠতে পারেনি। কিন্তু ছেলেটির আত্মপ্রত্যয় বিস্ময়ের উদ্রেক করে—“আপনি যদি সুযোগ দেন, কথা দিচ্ছি বি এ পরীক্ষায় আমি প্রথম হব।”
কিছুটা করুণা আর কিছুটা চ্যালেঞ্জ করার মানসিকতা বশত ছেলেটিকে প্রথম বর্ষের ইংরেজি অনার্সের ক্লাসে ভর্তি করে নেওয়া হল। বি এ পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়ে ‘অবিনাশচন্দ্র স্বর্ণপদক’ লাভ করেন সেই ছেলেটি। তাঁর নাম পঞ্চানন মিত্র। এর পর প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দে এম এ পাশ করে বঙ্গবাসী কলেজের ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপনা দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন (১৯১৫-১৯১৮)। অধ্যাপনার সঙ্গেই চলেছিল নিরবচ্ছিন্ন অধ্যয়ন ও গবেষণা। ভারতের প্রাগৈতিহাসিক শিল্প ও কারিগরি বিষয়ে গবেষণাপত্রের জন্য ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে ‘প্রেমচাঁদ-রায়চাঁদ বৃত্তি’ পান পঞ্চানন। যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকারী প্রথম ভারতীয় ছাত্র হিসেবে ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে তিনি অ্যানথ্রোপলজিতে পিএইচ ডি করেন। ড. পঞ্চানন মিত্রের হাত ধরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তথা ভারতবর্ষের মাটিতে নৃতত্ত্ববিভাগের গোড়া পত্তন হয়।
বেলেঘাটা মেন রোড থেকে রাজা রাজেন্দ্রলাল মিত্র রোড ধরে ফুলবাগানের দিকে যেতে গেলে রাজা পীতাম্বর মিত্রের প্রতিষ্ঠিত বলাই পুকুর, বলদেব-রেবতী রাণীর ঠাকুরবাড়িকে কেন্দ্র করে পর পর কিছু বিচ্ছিন্ন বাড়ি, মাঠ, রাসমঞ্চ মিলিয়ে মিত্রদের প্রায় আড়াইশো বছরের প্রাচীন ভদ্রাসন। এ সব ছাড়িয়ে ফুলবাগানের দিকে আরও কিছুটা এগিয়ে গেলে বাঁ দিকের চওড়া রাস্তাটার নাম ড. পঞ্চানন মিত্র লেন। মিত্রবাড়ির গৃহদেবতা বলদেব-রেবতী রাণীর রাস উৎসব ও মেলা প্রায় আড়াইশো বছর ধরে চলে আসছে যা থেকে জায়গাটার নাম ‘রাসবাগান’, কিন্তু এই জায়গার উন্নয়নের পিছনে যে সব প্রবাদপুরুষের অবদান রয়ে গিয়েছে তাঁদের কথা মনে রাখেনি কেউ। তাঁরা চলে গিয়েছেন সাধারণ মানুষের বিস্মৃতির আড়ালে। এমনই এক বিরল ব্যক্তিত্ব ড. পঞ্চানন মিত্র।
ঠাকুরবাড়ির প্রতিষ্ঠাতা রাজা পীতাম্বর মিত্রের নাম স্মৃতির অতলে তলিয়ে গেলেও বেলেঘাটার দু’টি প্রধান রাস্তা ‘রাজা রাজেন্দ্র লাল মিত্র রোড' ও ‘ড.পঞ্চানন মিত্র লেন' পরবর্তী কয়েক প্রজন্ম পর পর একই বংশধারার দু’টি জ্যোতিষ্ককে আজও বহন করে রেখেছে। বংশসূত্রে মিত্রদের আদিপুরুষ অযোধ্যারাম ছিলেন মুর্শিদাবাদ নবাবের দেওয়ান। পলাশি বিপর্যয়ের সময় তিনি সপরিবার বাংলা ছেড়ে অযোধ্যায় বসবাস শুরু করেন। অযোধ্যারামের পৌত্র রাজা পীতাম্বর মিত্র নিজস্ব বিদ্যা ও বুদ্ধিবলে ‘রাজাবাহাদুর’ খেতাব লাভ করে দিল্লি বাদশাহের দরবারে উচ্চ পদে আসীন হন ও পরবর্তী কালে বৈষ্ণব শাস্ত্রের চর্চা শুরু করে পৈতৃক বসতবাড়ি অখণ্ড বাংলাদেশের শুঁড়ায়ফিরে এসে গৃহদেবতা বলদেবের ঠাকুরবাড়ি ও বলাই পুকুর প্রতিষ্ঠা করেন। সে সময় বেলেঘাটার নাম ছিল ‘শুঁড়া’।
ঐতিহ্যবাহী মিত্রবাড়িতে সেই আদিপুরুষ থেকে বিদ্যাচর্চার ধারা প্রবহমান। রাজা পীতাম্বর মিত্র ও তাঁর পৌত্র জন্মেজয় মিত্র উর্দু ও ব্রজবুলি ভাষায় কবিতা রচনা করতেন। মিত্র পরিবারকে খ্যাতির শীর্ষে নিয়ে গিয়েছিলেন জন্মেজয়ের তৃতীয় পুত্র রাজেন্দ্রলাল মিত্র। বাংলার নবজাগরণের অন্যতম পথিকৃৎ এবং কলকাতা এশিয়াটিক সোসাইটির প্রথম ভারতীয় সভাপতি রাজেন্দ্রলাল ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী। একাধারে ভাষাবিদ ও প্রত্নতত্ত্ববিদ রাজেন্দ্রলাল পাণ্ডিত্যের জন্য আলাদা করে ‘রাজা’ খেতাব পান।
রাজেন্দ্রলালের পরের ভাই, অর্থাৎ জন্মেজয়ের চতুর্থ পুত্রের পুত্র উদয়েন্দ্রলালের প্রথম সন্তান ড. পঞ্চানন মিত্র। তাঁর জন্ম ১৮৯২ সালের ২৫ মে তারিখে। বঙ্গবাসী কলেজের ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপক থাকাকালীন সুবক্তা ও ক্রীড়ানুরাগী অধ্যাপক হিসেবে ছাত্রমহলে প্রভূত জনপ্রিয়তা অর্জন করেন পঞ্চানন মিত্র। তার পর ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে তিনি কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাচীন ইতিহাস ও সংস্কৃতির অধ্যাপক পদে নিযুক্ত হন। একই সময়ে ভারতীয় জাদুঘরের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অবৈতনিক সহকারী কিউরেটর হিসেবেও তিনি যোগদান করেন। সম্ভবত জন্মসূত্রে একটি ঐতিহ্যপূর্ণ পরিবারের মূল্যবোধ ও বিদ্যানুরাগের সমান্তরালে পিতামহ প্রত্নতত্ত্ববিদ রাজেন্দ্রলাল মিত্রের কর্মপ্রেরণা তাঁকে ভারতবর্ষের পুরাতত্ত্ব ও সংস্কৃতির বিষয়ে অনুসন্ধিৎসু করে তুলেছিল!
প্রাচীন ভারতীয় ইতিহাস ও সংস্কৃতির প্রভাষক হিসেবে এই সময়ে মহেঞ্জোদারো প্রমুখ বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থান পরিদর্শন করে প্রাগৈতিহাসিক ভারতের শিল্প ও কারিগরি বিষয়ে গবেষণা শুরু করেন পঞ্চানন মিত্র। ‘প্রিহিস্টোরিক ইন্ডিয়া’ বা ‘প্রাগৈতিহাসিক ভারত (১৯২৩)’ শিরোনামে তাঁর গবেষণাপত্রটি ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে ‘প্রেমচাঁদ-রায়চাঁদ বৃত্তি’র জন্য মনোনীত হয়। প্রায় পাঁচ হাজার বছরের প্রাচীন একটি সভ্যতার গোড়াপত্তন ও মানুষের অগ্রগতির প্রতিটি সোপান আরোহণ প্রক্রিয়া, প্রাগৈতিহাসিক সময় থেকে কী ভাবে জাতি ও সংস্কৃতিকে গড়ে তুলেছিল, তারই অনুসন্ধান করেছেন পঞ্চানন মিত্র।
১৯২২ থেকে ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তিনি কলকাতার অনারারি ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন। অসহযোগ আন্দোলনের আহ্বানে সেই পদ ত্যাগ করেন ওপরে ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে স্বরাজ দলের পক্ষ থেকে কলিকাতা পুরসভার কাউন্সিলার নিযুক্ত হন। প্রসঙ্গত এই সময়ে কলকাতার মেয়র ছিলেন দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ।
উদারচেতা বিদ্যানুরাগী মানুষটির প্রখর নজর ছিল জনসাধারণের সার্বিক উন্নয়নের প্রতি। প্রতিটি মানুষের প্রাথমিক শিক্ষা ছাড়া সমাজের প্রকৃত এবং সদর্থক উন্নতি যে সম্ভব নয়, তা তিনি অনুভব করতে পেরেছিলেন। এই উদ্দেশ্য নিয়ে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের সহায়তায় পুরসভার পক্ষ থেকে প্রাথমিক স্তরে অবৈতনিক শিক্ষাব্যবস্থা প্রচলনের প্রয়াস নেন। বেলেঘাটা এলাকার প্রভূত উন্নতির পাশাপাশি নিজের পরিবারের ও এলাকার নারীশিক্ষা প্রসারের জন্য ভিত্তি স্থাপন করেন ‘শুঁড়াকন্যা বিদ্যালয়’-এর।
প্রেমচাঁদ রায়চাঁদ বৃত্তিধারী তরুণ অধ্যাপক পঞ্চানন মিত্র ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দে বিশপ মিউজিয়াম ফেলোশিপ নিয়ে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রান্তে ভ্রমণ করে দেশ ও বিদেশের বেশ কয়েকটি নৃতাত্ত্বিক অভিযানের নেতৃত্ব প্রদান করেন। ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে ফ্রান্সের ‘আমেরিকান স্কুল অব আর্কিয়োলজি’-র সদস্য পদ নিয়ে তিনি ফ্রান্স ও স্পেনের বিভিন্ন অঞ্চল পরিভ্রমণ করে লন্ডনের মধ্য দিয়ে ভারতবর্ষে ফিরে আসেন। সময়টা ছিল ১৯৩০ সালের অগস্ট মাস।
ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ভারতীয় ছাত্র হিসাবে ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে আমেরিকার নৃতাত্ত্বিক ড. ক্লার্ক উইসলার-এর তত্ত্বাবধানে পিএইচ ডি ডিগ্রি লাভ করেন ও ‘হিস্ট্রি অব আমেরিকান অ্যানথ্রোপোলজি (১৯৩০)’ শিরোনামে তাঁর গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়।
‘পলিনেশিয়ার সভ্যতা ও সংস্কৃতির উপর ভারতীয় প্রভাব’ (ইন্ডিয়ান এলিমেন্টস ইন পলিনেশিয়ান কালচার) এর ভিত্তির সন্ধানে পলিনেশিয়ার বিভিন্ন প্রান্তে ভ্রমণ করে তথ্য সংগ্রহ করেন। সে সব নথিবদ্ধ করে পরবর্তী কালে ‘ইন্দো-পলিনেসিয়ান মেমোরিজ় (১৯৩৩)’ নামে গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়।
১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দে তিনি ভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেস সংস্থার নৃবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি হন এবং ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে লখনউ-এ অনুষ্ঠিত ইন্ডিয়ান পপুলেশন কংগ্রেসের নৃতাত্ত্বিক অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন। মাত্র ৪৪ বছরের জীবদ্দশায় স্বদেশ ও বিদেশে তিনি নানা ভাবে সম্মানিত হয়েছেন, যারমধ্যে উল্লেখযোগ্য গ্রেট ব্রিটেন ও আয়ারল্যান্ডের রয়্যাল অ্যানথ্রোপলজিক্যাল সোসাইটির ফেলোশিপ ও আমেরিকান মিউজ়িয়াম অব ন্যাচারাল হিস্ট্রি-র সহযোগী সদস্যপদ। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক জার্নালে তাঁর গবেষণালব্ধ ফলাফলগুলি প্রকাশ পেয়েছে, যার মধ্যে অন্যতম ‘এনসাইক্লোপিডিয়া ইটালিয়ানা’।
নৃতত্ত্ববিজ্ঞানের পাশাপাশি তিনি অনুসন্ধান করেছেন প্রাচীন হিন্দুধর্ম ও দর্শনের বিভিন্ন শাখা প্রশাখা। অবিভক্ত বাংলাদেশের পাবনা জেলার হিমায়েতপুরের প্রকাশনা কেন্দ্র থেকে সত্যাশ্রয়ী শ্রীকৃষ্ণচন্দ্র সিংহের সহযোগিতায় প্রাচীন হিন্দুধর্ম ও দর্শনের উপর বেশ কিছু নিবন্ধ লিপিবদ্ধ করে গিয়েছেন তিনি। তাঁর বিশিষ্ট গবেষণাপত্রগুলি আজও নৃতত্ত্বের ছাত্রছাত্রী ও পেশাদার নৃতত্ত্ববিদদের কাছে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।
দেশে-বিদেশে বিভিন্ন নৃতাত্ত্বিক অভিযানে সক্রিয় অংশগ্রহণ ও পরিচালনার দায়িত্বভারের সমান্তরালে এড়ানো যায়নি শারীরিক অনিয়ম অত্যাচার। ফলে ভিতরে ভিতরে কর্মব্যস্ত উদাসীন মানুষটির জীবনীশক্তি ক্রমশ ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে চলেছিল। আজীবন জ্ঞানপিপাসু ও অধ্যয়নমগ্ন এই ব্যক্তিত্ব নিজের শরীর স্বাস্থ্য সম্বন্ধে খুব সতর্কও ছিলেন না। ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দের ২৫ জুলাই সামান্য কয়েক দিনের জ্বরে মাত্র চুয়াল্লিশ বছর বয়সে পঞ্চানন মিত্র শেষ নিঃশ্বাসত্যাগ করেন।
এই অসামান্য মানুষটির স্মৃতিরক্ষার্থে কলকাতার এশিয়াটিক সোসাইটি প্রতি বছর ‘পঞ্চানন মিত্র মেমোরিয়াল লেকচারশিপ’ আহ্বান করে নৃতত্ত্ববিজ্ঞানে বিশিষ্ট অবদানের জন্য একটি বার্ষিক পুরস্কার প্রদান করে।
এখন থেকে ছিয়াশি বছর আগে পঞ্চানন মিত্র পৃথিবীর মায়া কাটিয়েছিলেন। ভারতের নৃবিজ্ঞানের চর্চা আজ বিশ্বায়নের সীমা অতিক্রম করেছে। বিস্মিত হতে হয় বিংশ শতাব্দীর প্রাঙ্গণে দণ্ডায়মান সেই মানুষটির দূরদৃষ্টিতে। এক প্রাচীন ঐতিহ্যপূর্ণবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেও আজীবন অনুসন্ধান করেছেন বিশ্বমানবিকতার সংযোগসূত্র। প্রয়াস নিয়েছেন স্ত্রী স্বাধীনতার। শুকনো প্রগতিশীলতার বাণী আউড়েই সন্তুষ্ট থাকেননি, প্রস্তুত করেছেন নারী বিদ্যালয়ের সোপান।
আজ একবিংশ শতকে দাঁড়িয়ে এই আত্মঘাতী অবক্ষয়ের মুহূর্তে ভারতের সংস্কৃতি যখন হিন্দুত্বের সঙ্কীর্ণতার বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে নিষ্পেষিতপ্রায়, তখনও মহাসমুদ্রে বাতিস্তম্ভের মতোই আমাদের উন্নতির রাস্তা দেখান পঞ্চানন মিত্রের মতো ব্যক্তিত্ব। নিজেদের নিয়ে ব্যাপৃত আমরা তাঁদের দিকে তাকাতে ভুলে যাই।
তথ্যঋণ: ১. বুলেটিন অব ইয়েল ইউনিভার্সিটি সিরিজ় ৩৭, নং ১১, জানুয়ারি ১৯৪১, ২. নেচার জার্নাল অবিচুয়ারি, অগস্ট ১৯৩৬