নোবেলজয়ী: বক্তৃতারত এনরিকো ফের্মি। ছবি: গেটি ইমেজেস
১৯৩৮। ফিজিক্সে নোবেল প্রাইজ পেলেন ইতালির বিজ্ঞানী এনরিকো ফের্মি। সে বড় সুখের সময় নয়। জার্মানিতে একচ্ছত্র ক্ষমতায় অ্যাডল্ফ হিটলার। তাঁর অনুগত নাৎসি মানুষজনের ঘৃণাদৃষ্টি ইহুদি সম্প্রদায়ের উপর। যেন পৃথিবী থেকে ইহুদি সাফ করে দিতে পারলে ভাল হয়। ইতালিতে ক্ষমতায় বেনিতো মুসোলিনি। হিটলারের বন্ধু। মতামতেও তাঁর অনুসারী। ফলে ইতালিতেও শুরু হয়েছে ইহুদিদের বিরুদ্ধে অত্যাচার। এ দিকে ফের্মির স্ত্রী লরা আবার জন্মসূত্রে ইহুদি।
ইতালিতে হঠাৎ করে ইহুদিদের উপর জারি হল নানা রকম নিষেধাজ্ঞা। পাসপোর্ট জমা রাখো। বাইরে যেতে পারবে না। ফের্মির বুঝতে বাকি রইল না, তাঁর স্ত্রী যেহেতু খ্রিস্টান নন, তাই বড় বিজ্ঞানী হলেও বাধানিষেধের জালে আটকা পড়বেন তিনিও। তাঁর মনের বাসনা, চিরতরে পালিয়ে যাবেন ইতালি ছেড়ে। স্ত্রী ইহুদি, তাই সাধ পূর্ণ হবে না।
বুদ্ধিমান ফের্মি আঁটলেন ফন্দি। ক্ষমতাবান আমলা মারফত ব্যবস্থা করলেন পাকা। এক, রাতারাতি স্ত্রী এবং দুই সন্তানকে দীক্ষিত করালেন খ্রিস্টধর্মে। দুই, আমেরিকার কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে যাবেন, কিন্তু তার আগে ইংল্যান্ড ঘোরার ভিসা জোগাড় করলেন। প্রথম পদক্ষেপ স্ত্রী এবং বাচ্চাদের বিদেশযাত্রা সুগম করতে, কিন্তু দ্বিতীয়টা? আসলে ফের্মির ইচ্ছে, স্টকহল্ম শহরে নোবেল প্রাইজ নিয়ে আর ইতালিতে ফিরবেন না। ইংল্যান্ড থেকে জাহাজে যাবেন নিউইয়র্ক। কেন? নোবেল প্রাইজ মানে মেডেল এবং ৪৫০০০ ডলার। সেই অর্থ নিয়ে যদি ইতালিতে ঢোকেন, তবে পরে আমেরিকা গেলে দেশের নিয়মে সঙ্গে নিতে পারবেন মাত্র ২০০ ডলার।
ফের্মি নোবেল প্রাইজের জন্য মনোনীত হওয়ার খবর ইতালির কাগজে ছাপা হল শেষ পৃষ্ঠায়। নোবেল প্রাইজ? সে তো তুচ্ছ সম্মান। বিক্ষুব্ধ জার্মান কার্ল ফন ওসিয়েৎস্কি-কে নোবেল কমিটি নাকি শান্তি পুরস্কার দেওয়ার পর হিটলার ফতোয়া দিয়েছেন, কোনও জার্মান আর নোবেল প্রাইজ নেবে না। ব্যস, ইতালিতেও নোবেল প্রাইজকে তাচ্ছিল্য।
ফের্মি প্রাইজ নিলেন। দিলেন সুইডেনের রাজা। নিন্দার ঝড় বইল ইতালির কাগজে। ফের্মি কেন ইতালির সামরিক পোশাকে নেই? আর, প্রাইজ নেওয়ার পর রাজার সঙ্গে কেন হ্যান্ডশেক? বদলে নাৎসি স্যালুট যোগ্য ছিল না কি?
পুরস্কৃতদের চেয়ারে সে বার মাত্র দুজন। ফিজিক্সে ফের্মি আর সাহিত্যে মার্কিন লেখিকা পার্ল এস বাক। আর কোনও বিষয়ে নোবেল দেওয়া হয়নি সে বার। দারুণ সাজানো চেয়ারে বসা স্বামীর দিকে উদ্বিগ্ন দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন ফের্মির স্ত্রী লরা ফের্মি। কোটের নীচে তাড়াহুড়োয় কেনা শার্ট পরেছেন ফের্মি। মাপে তেমন মেলেনি। যে কোনও মুহূর্তে ছিঁড়বে বুকের বোতাম। বেইজ্জতের একশেষ হবে রাজার সামনে। হল না। ভালয়-ভালয় কাটল অনুষ্ঠান। হাঁপ ছেড়ে বাঁচলেন নোবেল বিজেতার সহধর্মিণী।