Short story

short story: রিজ়নুয়া

পরের দিন তুমুল হট্টগোলে ঘুম ভাঙল দু’জনের। ঘরের দরজা খোলা, তুলু নেই। কোনওক্রমে মুখে চোখে জল দিয়ে বাইরে এল।

Advertisement

অন্বেষা রায়

শেষ আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০২১ ০৯:৩০
Share:

ছবি: দীপঙ্কর ভৌমিক।

মনে মনে তিতিবিরক্ত হলেও বেশি কিছু বলে উঠতে পারল না মলয়, শুধু বলল, “এ সব আবার আনতে গেলি কেন? ফালতু টাকা নষ্ট!”

Advertisement

দেবাশিস বন্ধুর পিঠ চাপড়ে বলল, “দূর! টাকা নষ্ট কেন, তুই বাড়ি নিয়ে যা, সঙ্গীতা দারুণ খুশি হবে।”

মলয়দের পরিবার প্রাচীনপন্থী। বৌরা এখনও সব সময় শাড়ি পরে। সঙ্গে সিঁথি উপচানো সিঁদুর আর দু’হাতে শাঁখা-পলা। বাইরের কাজে মেয়েদের আর রান্নাঘরে ছেলেদের হাত লাগানো নিষিদ্ধ। সপ্তাহে তিন দিন নিরামিষ, মাসে দু’টি ষষ্ঠী, বছরে এক বার সপরিবার জগন্নাথদর্শন।

Advertisement

জগন্নাথদর্শনের ঘেরাটোপেই বিয়ের চার মাসের মাথায় মলয় মধুচন্দ্রিমা সেরেছে। কষটে পড়া সেই হানিমুনে অদ্ভুত জেদ ধরেছিল সঙ্গীতা। ওয়াইন খাবে। রেড ওয়াইন, কাচের পেটমোটা গ্লাসে ঢেলে, কাবাবের সঙ্গে পান করবে সমুদ্রতটে বসে। যে যা ভাবে ভাবুক। মলয় ম্লান হেসেছিল। বড় কষ্ট হয়েছিল সে দিন। আজকালকার দিনে এ ভাবে কেউ হানিমুনে আসে?

বাড়ি থেকে ঠিক করা বিয়ে। অফিস, সংসার সব সামলে ভাল করে মেলামেশার সুযোগই বা কতটুকু। স্ত্রীর ছেলেমানুষি বায়নার সামনে বড় অসহায় লেগেছিল। সঙ্গীতাকে শান্ত করেছিল এই বলে যে, কলকাতায় ফিরেই স্ত্রীর ইচ্ছে পূরণ করবে।

কথা রেখেছিল মলয়। দেবাশিসের বাড়িতেই আয়োজন করা হয়েছিল সুরাপানের। সাবধানে, মেপে ওয়াইন পান করে, সোজা মাথায় বাড়ি ফিরেছে স্বামী স্ত্রী।
পরেও বেশ কয়েক বার দেবাশিসের উৎসাহে যোগ দিয়েছে তারা। ফলে সঙ্গীতা দেবাশিসের বেশ একটা ওয়াইনতুতো প্রীতির সম্পর্কও গড়ে উঠছে।

মলয় গাড়ির সিটে রাখা জিনিসটার দিকে ভয়ে ভয়ে তাকাল। আফ্রিকান যুবতীর মতো হিলহিলে উপস্থিতি। এক বার তাকালে বার বার তাকাতে মন চায়। বিব্রত স্বরে সে জিজ্ঞেস করল, “নেব কী করে?”

“কেন, স্কুটি আনিসনি?”

যেন স্কুটিই একমাত্র সমাধান। স্কুটি থাকলেই ভর সন্ধেবেলা, মদের বোতল হাতে অফিস থেকে বাড়ি ফেরা যায়। এক হাতে ব্যাগ, আর এক হাতে এই বোতল নিয়ে গেট পেরোলেই, ছুটে আসবে তুলু।

“কাকামণি কোল্লিংস? ঠাম্মা, কাকু কোল্লিংস এনেছে।”

নাতনির চেঁচামেচিতে মা বেরিয়ে আসবেন তড়িঘড়ি।

“মলু, কোল্ডড্রিঙ্কস এনেছিস? টিভিতে বলছিল ওসব দিয়ে পায়খানার প্যান পরিষ্কার করে।”

তত ক্ষণে বৌদিও ছেলে কোলে বাইরে। মলয় চৌকাঠে পা রাখার আগেই শুনবে

“ও মা! কোল্ডড্রিঙ্কস কোথায়? এ যে মদ!”

সম্ভাব্য ঘটনাক্রম মানসপটে ভেসে উঠতেই আতঙ্কে চোখ বন্ধ করে ফেলল মলয়। দেবাশিস চিন্তিত গলায় বলল, “কী রে! চোখমুখ অমন সাদাটে কেন? শরীর খারাপ লাগছে?”

চিড়বিড়ে গলায় মলয় বলল, “তুই নাগপুর থেকে আনার আর জিনিস পেলি না? আনতেই হবে এমন মাথার দিব্যি কে দিয়েছিল? মাকে চিনিস না? আমিষ-নিরামিষ ছোঁয়াছুঁয়ি হলে যে বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে চায়, তার সামনে দিয়ে এই বোতল আমি ঘরে
তুলতে পারব?”

ঝাপটে ওঠে মলয়। বন্ধুর তিরস্কার পাত্তা না দিয়ে দেবাশিস চটপট একটা খবরের কাগজ দিয়ে বোতলটা ভাল করে মুড়ে, মলয়ের ব্যাগে ঠুসে দিল। ব্যাগের বিকট ভাবে ফুলে থাকা অংশটায় হাত বুলিয়ে বলল, “ঘাবড়াস না তো।
এনজয় কর।”

ফোলা ভাব আড়াল করতে, মলয় বাড়ি ঢোকার আগে বাজারে গেল। পড়তি বাজারে পটল আর মুলো ছাড়া কিছুই নেই। তাই সই। চার প্যাকেট বোঝাই শুটো মুলো ব্যাগের ওপর চেপে সে বাড়ি ঢুকল।

সঙ্গীতা যে বেজায় খুশি হবে এ তো জানা কথা। রাতে দরজা বন্ধ করে ব্যাগ থেকে জিনিসটা বের করল মলয়। পুরুষ্টু কর্ক-আঁটা বোতলের গায়ে ঘিয়েরঙা খসখসে লেবেল। প্যাঁচানো রাজকীয় হরফে
লেখা ‘রিজ়নুয়া’।

সঙ্গীতা ফিসফিস করে বলল, “কেউ ভাবতেও পারবে না, আমরা ঘরের ভেতর কী করছি।”

যে হেতু দিনটা বৃহস্পতিবার তাই ঠিক হল, আগামী কাল রাতে বোতল খোলা হবে। তার পরের দিন ছুটি, সকালে ওঠার তাড়া নেই। মলয় স্ত্রীকে বলল, “তুমি এক ফাঁকে দুটো কাপ ঘরে এনে রেখো।”

সঙ্গীতা ভুরুতে ভাঁজ ফেলে বলল, “কাপ কেন? নিজেদের ওয়াইন, গ্লাসে খাব। তুমি বরং অফিস থেকে ফেরার পথে দুটো ওয়াইন গ্লাস কিনে নিয়ো।”

রিজ়নুয়ার বোতলটা যত্ন করে বেনারসির ভাঁজে লুকিয়ে রাখল সে। আলমারি বন্ধ করতে করতে বলল, “আচ্ছা, কী দিয়ে খাবে?”

মলয় বলল, “সল্টেড কাজু আর চিপ্‌স নিয়ে আসব।”

“সল্টেড কাজু!” সঙ্গীতার যেন আঁতকে উঠল। চাপা গলায় বলল, “রিজ়নুয়ার বেস্ট পেয়ার হল মাংস। কাজু ছাড়ো, রহিমের দোকান থেকে এক প্লেট কাবাব এনো বরং।”

মলয় স্ত্রীর সপ্রতিভতায় চমৎকৃত হল। এত ক্ষণে অদ্ভুত একটা নিষিদ্ধ সুখ তাকেও বেঁধে ফেলেছে। তিন মাস আগে, পুরীতে যে আফসোস রেখে এসেছিল, এখন আস্তে আস্তে যেন সেটা আবছা হচ্ছে। দেবাশিসের বাড়িতে দুধের স্বাদ ঘোলে মিটেছে মাত্র। বোতলটা ঘরে আসা থেকে মনে যে অদ্ভুত সুখময় উত্তেজনা বুড়বুড়ি কাটছে, তার ছিটেফোঁটাও দেবাশিসের আসরে মেলেনি।

পরের দিন ওয়াইন গ্লাস কিনলেও রহিমের দোকান থেকে সাহস করে কাবাব আনতে পারল না মলয়। রহিমের কাবাব যোজনগন্ধা। লালশাক, মুলোশাক দূরে থাক, গাঁদাল পাতারও সাধ্যি নেই ওই সুবাস চাপা দেয়। তার বদলে কয়েক প্যাকেট সল্টেড কাজু আর রোস্টেড আমন্ড এনে কাঁচুমাচু মুখে স্ত্রীকে দিল। সঙ্গীতা কিছু বলল না, তবে স্বামীর ব্যবহারে হতাশ হয়েছে সেটা বেশ বোঝা গেল।

রাতে সবাই দরজা দিলে, বেনারসির ভাঁজ থেকে বেরিয়ে এলেন রিজ়নুয়া। নতুন কেনা গ্লাস দুটো ভাল করে মুছে, টেবিলের উপর সাজিয়ে, কাজুর প্যাকেট খুলল সঙ্গীতা। কী মনে হওয়াতে ঠোঁটে হাল্কা লিপস্টিকও বুলিয়ে নিল। এ বার পানীয় ঢালার অপেক্ষা। কিন্তু কর্ক খুলতে গিয়ে হল বিপত্তি। তাড়াহুড়োয় কর্ক ওপেনার কেনার কথা খেয়াল হয়নি। কাঁচি গেথে টানলেও বোতলের মুখ ছেড়ে মোটে বাইরে আসতে চায় না সে। সঙ্গীতা ফোনে ইন্টারনেট ঘেঁটে স্বামীকে অভয় দিল, “টেনশন কোরো না। একটা মোম জ্বালিয়ে এক মিনিট ধরে বোতলের গলার কাছে ঘোরালেই কর্ক আলগা হয়ে বেরিয়ে আসবে। নয়তো পেরেক গেঁথে উপর দিকে টেনে নিতে পারো।”

মোমের প্যাকেট রান্নাঘরের তাকে থাকে। দরজা খুলে আনতে গেলে বাকিরা টের পাবে। কী ব্যাপার, মোম কেন দরকার ইত্যাদি হাজারটা প্রশ্ন মশার মতো ঝাঁকে ঝাঁকে ছুটে আসবে হুল বাগিয়ে। তার চেয়ে পেরেক ভাল।

মলয় সবে টুলবক্সটা খুলেছে, দরজায় টোকা পড়ল।

“ছোট, একটু দরজা খোল তো।”

বৌদির গলা। রিজ়নুয়া সমেত কাচের গ্লাস অতি সন্তর্পণে ঘেমোগন্ধময় বাসি জামাকাপড়ের মধ্যে লুকিয়ে, ম্যাক্সির খুঁটে লিপস্টিক মুছে দরজা খুলল সঙ্গীতা। মলয় তত ক্ষণে চাদর মুড়ি দিয়ে ঘুমের ভান করেছে। দৃশ্যটাকে আরও বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে নাকও ডাকছে অল্প
অল্প। ফাটা আড়বাঁশির মতো শব্দটাকে পাত্তা না দিয়ে, প্রতিমা বলল, “তুলুকে একটু তোদের সঙ্গে নিয়ে শো তো। ছোটটা এখনও জেগে। এ দিকে মেয়ের গল্প না শুনলে ঘুম আসে না।”

তার পর তুলুর দিকে কড়া
চোখে তাকিয়ে বলল, “একদম কাকিকে বিরক্ত করবে না। চটপট ঘুমিয়ে পড়ো।”

বিছানায় আড়বাঁশি থেমে গেছে তত ক্ষণে। চোখের কোণ দিয়ে
বাসি জামাকাপড়ের স্তূপটাকে
এক বার দেখে তুলুকে কোলে তুলে নেয় সঙ্গীতা।

মলয় তার স্ত্রীর মতো সুরানুরাগী না হলেও, সমস্ত প্রস্তুতি এই ভাবে ভেস্তে যাওয়ায় সে রেগে গেল। অফিস টয়লেটের নির্জনতায় ফোন করল সঙ্গীতাকে। গত আট দিন ধরে তুলু তাদের সঙ্গে ঘুমোচ্ছে। প্রথম থেকে নয়, দরজা দেওয়ার কিছু ক্ষণ পর টোকা মেরে আবির্ভূত হচ্ছেন তিনি। তার পর বকর বকর করে, কাকু, কাকিকে ঘুম পাড়িয়ে নিদ্রা যাচ্ছেন। শুক্র, শনি ব্যর্থ হওয়ায়, সকালে ওঠার তোয়াক্কা না করে, বাকি ছ’দিনও বোতল খোলার চেষ্টা করেছে ওরা। পারেনি। তুলু এসে পড়েছে মোক্ষম সময়ে।

ফোন ধরেই সরাসরি কাজের কথায় এল মলয়। আজ সে মরিয়া।

“শোনো, আজ শুক্রবার, আজ ওই বোতল আমি খুলবই। দুপুরে তুলুকে ঘুমোতে দেবে না। গল্প বলার নাম করে জাগিয়ে রাখবে। দরকার হলে পার্কে নিয়ে যাবে বিকেলবেলা। একটু খেলাধুলো করলে রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়বে। একটা লোক ভালবেসে উপহার দিল, জিনিসটা কি আলমারিতেই পচবে?”

সঙ্গীতা জবাব না দিয়ে খটাস করে মুখের ওপর কেটে দিল লাইনটা। মলয় দিশেহারা হয়ে পড়ল। সঙ্গীতা কি তার ওপর রেগে গেল না কি? তুলুকে একটু বেশিই ভালবাসে সঙ্গীতা। মলয়ের যাবতীয় না পারাকে ভরিয়ে দেয় ছোট্ট মেয়েটা।

কাজে মন বসাতে না পেরে হাফ ডে নিয়ে বাড়ি ফিরে এল দুপুর দুপুর। দেখল তুলুর সঙ্গে সঙ্গীতা লুডো খেলছে। বিকেলের দিকে ভাইঝি আর স্ত্রীকে নিয়ে পার্কে বেড়াতে গেল মলয়। লুকোচুরি, ধরাধরি আর শেষে দু’দান এক্কাদোক্কা খেলে হাঁপ ধরে গেল মলয়ের। তুলুর দমে ঘাটতি নেই। সন্ধে হলেও বাড়ি ঢুকবে না সে। কতগুলো পুঁচকে নেড়ি সারা দিন পাড়াময় ঘুরে বেড়ায়, তাদের সঙ্গে খেলবে বলে জেদ ধরল। তুলুর খুব ইচ্ছে একটিকে পোষে কিন্তু মা, ঠাম্মার আপত্তিতে পুষতে পারছে
না। বাড়িতে এই নিয়ে নিত্য অশান্তি লেগে আছে।

রাতে, সঙ্গীতাই ঘুমন্ত তুলুকে নিয়ে এল নিজের ঘরে। বলা যায় না, মাঝরাতে পানপর্ব চলাকালীন মায়ের হাত ধরে হাজির হলে বিপদের একশেষ। ঘরে ঘুম ভাঙলে কিছু একটা বুঝিয়ে দেওয়া যাবে।

সারা দিনের পরিশ্রমের জেরে গভীর ঘুমে তলিয়ে গিয়েছে তুলু। এরই মধ্যে টেবিলে গ্লাস রাখা হয়েছে। সাজানো হয়েছে কাজু আর চিপসের প্যাকেট। কর্ক খোলার মোম, পেরেক সবই আগেভাগে মজুত। বাড়ি নিঝুম হতেই শুরু হল যুদ্ধ। জ্বলন্ত মোম বোতলের
গলায় চক্কর কাটতে কাটতে নিঃশেষ হল। নাটকীয় ফটাস শব্দে কর্ক বেরোল না। পেরেক কর্কের বুকে গাঁথল কিন্তু ভিডিয়োর মতো যেমন দেখেছিল, তেমন মসৃণ ভাবে বাইরে এল না। খুবলে খুবলে কর্কটাকে ক্ষতবিক্ষত করল। কিছু
গুঁড়ো কর্ক পড়ল বোতলের ভেতরে আর কিছু ছিটকে গেল বাইরে। শেষমেশ চেপেচুপে ভাঙা কর্কটাকে বোতলের মধ্যেই সেঁধিয়ে দিল মলয়।

গ্লাসে ঢালা লাল মদ থেকে, বেশ খানিক ক্ষণ ধরে সেই সব গুঁড়ো বেছে, বাইরে ফেলল দুজনে। গোটা পর্বটা মিটতে আধ ঘণ্টার বেশি কেটে গেল। তার পর নিঃশব্দে গ্লাসে গ্লাস ঠেকিয়ে তারা পরস্পরকে বলল, “রিজ়নুয়া!”

বিছানায় কাত হয়ে শুয়ে আছে তুলু। ওরা গ্লাসে চুমুক দিল। প্রতি চুমুক রিজ়নুয়ায় প্রতিবাদ আর স্বাধীনতার স্বাদ। ক্রমে দ্বিতীয় গ্লাস। এবং তৃতীয় পাত্রও। প্রতি বার পান শুরুর আগে গ্লাসে গ্লাস নিঃশব্দে ঠেকিয়ে বিছানার দিকে তাকায় তারা। ছোট্ট মানুষটা পাশ ফিরছে, কখনও উসখুস করছে। এই ছকভাঙা উদ্‌যাপনে কত কথা বুড়বুড়ি কাটছে মনের ভিতর। মুখ খোলে না কেউ। পাছে জেগে যায় তুলু। শুধু চোখে চোখ রেখে চাপা গলায় বলে, “রিজ়নুয়া!”

শেষের দিকে যত বার চুমুক, তত বার, “রিজ়নুয়া!”

“রি-ই-ই-ই জ়-জ়-জ় নু-উ-উ-আ...”

কিংবা

“রি-জ়-জ়-জ়...জ়-জ়-জ়-জ়...নু-উ-উ-উ..আ-আ-আ...”

শেষ রাতে টলোমলো পায়ে খালি বোতল, গ্লাস আলমারির পিছনে লুকিয়ে ঘুমোতে গেল দু’জনে। জড়ানো গলায় আবছা ভাবে শোনা গেল একটা নাম, “রিজ়নুয়া।”

পরের দিন তুমুল হট্টগোলে ঘুম ভাঙল দু’জনের। ঘরের দরজা খোলা, তুলু নেই। কোনওক্রমে মুখে চোখে জল দিয়ে বাইরে এল। বসার ঘরে সভা বসেছে তুলুকে ঘিরে। সবার দৃষ্টি তার দিকে।

“বাজে কথা একদম বলবে
না তুলু।” ধমকে ওঠে প্রতিমা।

শঙ্কিত চোখে পরস্পরের দিকে তাকায় ওরা। ব্যাপারটা বুঝতে পারে না। কী বলেছে তুলু? কিছু বুঝতে পেরেছে না কি? সকালে কখন যে উঠে গিয়ে দরজা খুলল, টেরও পায়নি। ‘বাজে কথা’-টাই বা কী?

তীব্র গলায় প্রতিবাদ করে ওঠে তুলু, “আমি ওকে পুষবই।”

এত ক্ষণে খেয়াল হয় ওদের। দরজার কাছে ঝুড়িতে গুটিসুটি শুয়ে আছে একটা নেড়ি কুকুরের ছানা। সবার নজর এড়িয়ে স্বস্তির শ্বাস ফেলে দু’জন। গত রাতের স্বাদ আবছা ফিরে আসে জিভে। তৃপ্তি আর শান্তির আমেজ নিয়ে তুলুর সামনে হাঁটু মুড়ে বসে সঙ্গীতা।

নরম গলায় হাসিমুখে তুলুকে বলে, “ইচ্ছে যখন হয়েছে, নিশ্চয়ই পুষবে কুকুরছানা। আমি আছি সোনা তোমার দলে।”

রাগ সরিয়ে ঝলমলে মুখে হাসে তুলু। কাকিকে জড়িয়ে আদুরে গলায় বলে, “ওকে কুকুরছানা বোলো না কাকিমণি। ওর নাম রিজ়নুয়া।”

(জ্ঞাপনীয়: ফরাসি ভাষায় কালো আঙুরকে Raisin Noir বা ‘রিজ় নুয়া’ বলা হয়। এটি বাজার চলতি কোনও পণ্যের ব্র্যান্ডনেম নয়।)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement