Hrishikesh Mukherjee

এক সময়ের অঙ্কের শিক্ষক হৃষীদার মাথার ধারও ছিল সাংঘাতিক

হৃষীদা গল্পের আউটলাইন বলে দিতেন আর সেই অনুযায়ী কী করতে হবে বুঝিয়ে দিতেন। আমাকে কিন্তু বাংলাতেই বোঝাতেন। ওঁর শরীরটা তখনই খারাপ ছিল, গেঁটেবাতে ভুগতেন, খাওয়ায় বিধিনিষেধ ছিল।

Advertisement

শর্মিলা ঠাকুর

শেষ আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৭:৫১
Share:

ফাইল চিত্র।

মানিকদার পরে, যে পরিচালক আমাকে সেরা সিনেমাগুলো দিয়েছিলেন, তিনি হৃষীদা। ‘অনুপমা’, ‘সত্যকাম’ আর ‘চুপকে চুপকে’। খুব পরিচ্ছন্ন, ভদ্র সিনেমা তৈরি করতেন, সুমধুর গান ও রুচিসম্পন্ন সাহিত্যঘেঁষা গল্পের নান্দনিক মিশেল থাকত। মনেই হত না শুটিং করছি। যেন পিকনিক চলছে। অসাধারণ সেন্স অব হিউমার তাঁর। জোক বলতেন, হাসিয়ে মাতিয়ে রাখতেন। সেটে আসতেন প্রাক্-প্রস্তুতি নিয়ে। খুব চটপট শট নিতেন, সিনেমা তৈরি করে ফেলতেন। ওঁর টিমটাও খুব ভাল ছিল। মনে আছে, গিয়ে দেখতাম উনি এক ধারে বসে দাবা খেলছেন, সহকারীরা লাইটিং ইত্যাদি রেডি করছে। উনি একটা মাইক্রোফোনে বাংলা, হিন্দি মিশিয়ে সহকারী-অনুচরদের নির্দেশগুলি দিতেন। পরে সেন্সর বোর্ডের দায়িত্বও সামলেছেন।

Advertisement

তখন কিন্তু এখনকার মতো চিত্রনাট্যের ব্যবস্থা ছিল না। কিন্তু উনি প্রস্তাব দিলে আমরা কেউই না বলতাম না। হৃষীদা গল্পের আউটলাইন বলে দিতেন আর সেই অনুযায়ী কী করতে হবে বুঝিয়ে দিতেন। আমাকে কিন্তু বাংলাতেই বোঝাতেন। ওঁর শরীরটা তখনই খারাপ ছিল, গেঁটেবাতে ভুগতেন, খাওয়ায় বিধিনিষেধ ছিল। কিন্তু এক সময়ের অঙ্ক শিক্ষকের মাথার ধার ছিল সাংঘাতিক। কোনও মুশকিলে পড়লে তা কী করে সমাধান হবে সেটাও ভেবে রাখতেন। কতখানি আগাম পরিকল্পনা করতেন, একটা উদাহরণ দিই। ‘সত্যকাম’-এর শুটিংয়ে রাঁচির কাছে ঘাটশিলায় গানের শট ছিল। ভিড়ের মধ্যে কেউ কোনও কুকথা বলেছিল। ধর্মেন্দ্র তাকে থাপ্পড় মেরেছিলেন। তারই প্রতিক্রিয়ায় পর দিন আমাদের ঘেরাও করা হল, পাথর ছোড়া হল। কিছু শট বাকি থাকা অবস্থায় প্যাক আপ করতে হল। হৃষীদা বললেন, পর দিন তিনটের পর এসে বাকি শট নেবেন। অথচ, উনি আমাদের নিয়ে এলেন ঠিক সকাল সাতটায়, বেলা বারোটার মধ্যে বাকি কাজ শেষ। যারা বাধা দিচ্ছিল, তারা বেকুব বনে গেল।

অদ্ভুত তৃপ্তি পেয়েছি ওঁর সঙ্গে কাজ করে। আমরা যখন মেকআপ, রিটাচ নিয়ে ব্যস্ত হতাম, একটা কথা বলতেন— “মেক আপ ইয়োর মাইন্ড, ডোন্ট মাইন্ড ইয়োর মেকআপ।”

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement