ধারাবাহিক রহস্য উপন্যাস: পর্ব ২০

স্বাধীনতা তুমি...

রত্নার পরনে হালকা লাল সিল্ক, সঙ্গে ম্যাচ করা লাল রুবি বসানো কানের দুল। হালকা লিপস্টিক, কপালে ছোট্ট একটি অগ্নিশিখার মতো লাল-কালো টিপ। রুচিশীল, সযত্ন প্রসাধনে তার সৌন্দর্য যে নজর কাড়ে, এটা সে রাস্তায় বেরিয়ে যে কোনও পুরুষের চোখের দিকে তাকালেই বুঝতে পারে।

Advertisement

সঞ্জয় দাশগুপ্ত

শেষ আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০১৭ ০০:০০
Share:

ছবি: ওঙ্কারনাথ ভট্টাচার্য

রত্নার পরনে হালকা লাল সিল্ক, সঙ্গে ম্যাচ করা লাল রুবি বসানো কানের দুল। হালকা লিপস্টিক, কপালে ছোট্ট একটি অগ্নিশিখার মতো লাল-কালো টিপ। রুচিশীল, সযত্ন প্রসাধনে তার সৌন্দর্য যে নজর কাড়ে, এটা সে রাস্তায় বেরিয়ে যে কোনও পুরুষের চোখের দিকে তাকালেই বুঝতে পারে। রঘুনন্দনলাল কেদিয়ার মতে, রত্না এতটা রূপসি না হলেই ভাল হত। এই লাইনে নজর এড়িয়ে চলাটাই কাজের। কিছুটা সেই কারণেই, রুবি আর পান্নার কাজ করা হারটা পরতে গিয়েও খুলে এসেছে সে। আজকাল এয়ারলাইন্সে গয়না পরে যাওয়া বেশ হ্যাপা। প্রত্যেক বার মেটাল ডিটেক্টরের মধ্যে দিয়ে যাওয়ার সময় খুলতে হবে, অনেক সময় সিকিয়োরিটি চেকের সময় নিরাপত্তাকর্মীরাও গয়না খুলে পরীক্ষা করতে চান। কোনও ভাবে বাড়তি কোনও চেকিং-এ পড়তে চায় না সে।

Advertisement

কিন্তু আজ সেই নিরাপত্তা তল্লাশিতেই হল বিভ্রাট। কয়েক ঘণ্টা আগের দুবাই বিমানবন্দরের কথা মনে পড়তেই ফের শিউরে উঠল সে। মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়াতে কেমন লাগবে, এই লাইনে কাজ শুরু করার পর থেকেই অনেক বার ভেবেছে সে। কিন্তু মৃত্যুর মুখোমুখি এসে দাঁড়ানো এই প্রথম!

মধ্যপ্রাচ্যের যে কোনও দেশে মাদক নিয়ে ধরা পড়লে মৃত্যুদণ্ড অবধারিত, এ কথাটা রঘুনন্দনলাল কেদিয়ার অফিসের অঘোরনাথ রায় বারেবারেই তাকে বলে দিয়েছেন। আর ধরা পড়লে কেউ তার পাশে দাঁড়াবে না, কোম্পানি তাকে চিনতে পারবে না, এটাও পরিষ্কার বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। দুবাইয়ে আগে সে গিয়েছে মাল সাপ্লাই করতে, কিন্তু দুবাই থেকে কানেক্টিং ফ্লাইট কখনও ধরেনি। তাই দুবাই বিমানবন্দরে প্লেন বদল করতে হলেও যে ফের এক প্রস্থ নিরাপত্তা তল্লাশির মুখে পড়তে হবে, তাকে কেউ বলেনি। রঘুনন্দনলালজির লোকেদের এটা একটা বড় ভুল। ফিরে গিয়ে এটা তাদের বলবে রত্না। অনুপুঙ্খ বর্ণনাই এ লাইনে একমাত্র অস্ত্র। সব কিছু আগে থেকে জেনে রাখা, যে কোনও পরিস্থিতির জন্য তৈরি থাকা— এই প্রস্তুতিটুকু না থাকলে এই লাইনে কাজ করা যায় না!

Advertisement

দুবাই বিমানবন্দরে সেটাই আজ সবচেয়ে বড় সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছিল। আর পাঁচ জনের দেখাদেখি সে যখন বিরাট লম্বা লাইনটার শেষে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়েছে, তখনও রত্না জানে না কী হতে চলেছে! যখন বুঝতে পারল আর এক বার তল্লাশি করা হচ্ছে যাত্রীদের, তখন আর বেরোবার উপায় নেই! লাইন অনেক দূর এগিয়ে গেছে। আর বেরোবেই বা কোথায়? লাইনে দাঁড়িয়েই এদিক-ওদিক দ্রুত তাকিয়ে পরিস্থিতি বুঝে নেওয়ার চেষ্টা করল রত্না। নিরাপত্তা তল্লাশি এড়ানোর কোনও উপায় নেই! ফলত তার ভ্যানিটি ব্যাগের ভিতরে, কাপড়ের লাইনিং-এর একটা ছেঁড়া ফাঁকের খাঁজে যে তিনটি ছোট্ট সাদা পুরিয়ার প্যাকেট আছে, সেটা এক্স-রে স্ক্যানে ধরা পড়ে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা!

এই সময় যেটুকু করণীয়, সেটাই করল রত্না। লাইনে তার সামনে এখনও পনেরো জন লোক। শ্যেনদৃষ্টিতে সে জরিপ করতে শুরু করল নিরাপত্তা তল্লাশির পদক্ষেপগুলি। কোমরের বেল্ট, পকেটের চাবি, হাতের আংটি, কানের দুল, গলার হার— পুরুষ-মহিলা নির্বিশেষে সবাইকে খুলে ফেলতে বলা হচ্ছে। কোনও কোনও ক্ষেত্রে খুলতে বলা হচ্ছে পায়ের জুতোও। বিশেষ করে মেয়েদের হিল তোলা জুতো পরা থাকলে। যে কোনও ধাতব বস্তু গায়ে থাকলেই মেটাল ডিটেক্টর বেজে উঠবে। প্রত্যেক যাত্রীর খুলে রাখা জিনিসগুলি একটি প্ল্যাস্টিকের গামলার মধ্যে রেখে, সেটিকে এক্স-রে মেশিনের মধ্যে দিয়ে পাঠানো হচ্ছে। তার সঙ্গে পাঠানো হচ্ছে মহিলাদের ভ্যানিটি ব্যাগ, পুরুষদের ওয়ালেট এবং হ্যান্ড লাগেজগুলো। এক বয়স্ক শ্বেতাঙ্গ দম্পতি এখন লাইনের সামনে। এ বার তাদের পালা। তার জনা পাঁচেক পরেই রত্না। হাতে সময় আর নেই! এ বার কী তা হলে ধরা পড়ে যেতেই হবে? বৃদ্ধা তাঁর হাতের ব্যাগটি তুলে দিচ্ছেন প্ল্যাস্টিকের ট্রে-তে। এখুনি ট্রে ঢুকে যাবে স্ক্যানার মেশিনের মধ্যে।

হঠাৎ কী যেন মনে পড়ল বৃদ্ধার। ট্রে’টা তত ক্ষণে তাঁর ব্যাগ নিয়ে সামনের দিকে সরতে শুরু করেছে। বৃদ্ধা হাত বাড়িয়ে ট্রে-র উপর থেকে নিজের ব্যাগটা আবার তুলে নিলেন। স্থিরদৃষ্টিতে তাঁকে লক্ষ করছে রত্না। কী করতে চলেছেন বৃদ্ধা? আঁতিপাঁতি করে খুঁজে ব্যাগের মধ্যে থেকে নিজের আর স্বামীর পাসপোর্ট দুটি বার করে হাতে নিলেন। আবার ব্যাগটা ফিরিয়ে দিলেন ট্রে-তে। আর রত্না একটা অদ্ভুত জিনিস লক্ষ করল। দুবাই বিমানবন্দরে ট্রানজিট প্যাসেঞ্জার যাঁরা, অর্থাৎ যাঁরা সংরক্ষিত এলাকার বাইরে বেরোচ্ছেন না, শুধু প্লেন বদল করছেন, তাঁদের পুঙ্খানপুঙ্খ তল্লাশি করা হয়, কিন্তু তাঁদের পাসপোর্ট কেউ খুলেও দেখে না।

মুহূর্তে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল রত্না। তার ভ্যানিটি ব্যাগ থেকে বেরিয়ে এল পাসপোর্ট। আর একই সঙ্গে, লাইনিং-এর ছেঁড়া জায়গাটার ভিতর থেকে, সে বার করে নিল পুরিয়াগুলো। লাইন এগিয়ে চলেছে। যে যার নিজের জিনিসপত্র নিয়ে ব্যস্ত। রত্না কী করছে, কারও খুঁটিয়ে দেখার সময় নেই। পুরিয়া তিনটি সে চালান করে দিল পাসপোর্টের পাতার ফাঁকে, আর পাসপোর্টটা ডান হাতের মুঠোয় সিনেমা-হলে টিকিট দেখাবার মতো ধরে থাকল।

এ বার তার পালা। একে একে সমস্ত গয়না খুলে ট্রে-তে রাখল রত্না। খুলে ফেলল হাতের ঘড়ি, পায়ের জুতোও। কোনও ভাবেই মেটাল ডিটেক্টর যন্ত্র বেজে উঠুক, তা সে চায় না। তার সরঞ্জাম নিয়ে ট্রে ঢুকে গেল স্ক্যানারের অন্ধকার গহ্বরে। এক পা এক পা করে মেটাল ডিটেক্টর বসানো কাঠের ফ্রেমটার দিকে এগোচ্ছে রত্না। বুকের মধ্যে দামামা! গলা শুকিয়ে একেবারে কাঠ হয়ে আসছে। শিরদাঁড়া বেয়ে ভয়ের বরফস্রোত! মেটাল ডিটেক্টরের মধ্যে পা দিয়ে চোখ বুজে ফেলেছে রত্না! সেই ভাবেই পার হয়ে গিয়েছে চৌকাঠ! তীক্ষ্ণ বাঁশির শব্দ তো নেই! মেটাল ডিটেক্টর শুধু ধাতব বস্তু ধরতে পারে, আর কিছুতে সাড়া দেয় না! চোখ খুলে দেখল, কেউ তার দিকে দৃকপাতও করছে না। সামনে দাঁড়ানো নিরাপত্তাকর্মীটি তখন লাইনে পরের জনকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।

রত্না নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে দেখল। থিরথির করে একটু কাঁপছে ডান হাত। হাতের তালু ঘামছে। পাসপোর্টটা তখনও ডান হাতের মুঠোয়! ট্রে-তে যে জিনিসগুলি খুলে দিয়েছিল, সেগুলি নিয়েও কোনও ঝামেলা নেই। ট্রে বেরিয়ে এসেছে! দ্রুত নিজের জিনিসপত্র গুছিয়ে নিয়ে নিরাপত্তা এলাকা থেকে নিষ্ক্রান্ত হল রত্না।

ওই বৃদ্ধা মহিলাকে পাসপোর্টটা হাতে নিতে না দেখলে, বুদ্ধিটা মাথায় আসত না। বুলাকিদা বলত, ঠান্ডা মাথাই এই লাইনে সব! নিতান্ত শেষ মুহূর্তের একটা সিদ্ধান্ত— বিপদের মুখে, সাত-পাঁচ না ভেবেই নিয়ে নেওয়া! তার জোরেই নিরাপত্তাকর্মীদের চোখের উপর দিয়ে পাসপোর্টের পাতার ফাঁকে মাল বার করে নিল রত্না। একশো শতাংশ পরিশোধিত মাদকের তিনটে পুরিয়া! ঠোঁটে এক চিলতে হাসি খেলে গেল রত্নার।

‘গুড ইভনিং ম্যাম, আর ইউ মিস পল?
রত্না পল?’

নানা কথা ভাবতে ভাবতে একেবারে এয়ারপোর্টের অন্য দিকে চলে এসেছে রত্না। খবরের কাগজ হাতে বসে থাকা সেই মাঝবয়সি লোকটির নজর এড়াতে বেশি বেগ পেতে হয়নি তাকে।

প্রশ্নটা যার থেকে এল, সে ছেলেটির বয়স বেশি নয়। শ্বেতাঙ্গ যুবক। লম্বা, মেদহীন শরীর। সোনালি চুল অবিন্যস্ত ভাবে ঘাড় অবধি এসে পড়েছে। টানা টানা চোখ, টিকালো নাক, দীর্ঘ আঁখিপল্লব মিলিয়ে মুখের চেহারায় মোহময় মেদুরতা। এত সুন্দর পুরুষ জীবনে খুব কম দেখেছে রত্না!

‘মিস পল?’ এ বারে খুব কাছাকাছি চলে এসেছে ছেলেটি।

‘ইয়েস, আয়্যাম রত্না, রত্না পল।’ নিজেকে সামলাল রত্না। এ সব সময়ে অন্যমনস্ক হলে চলে না।

‘আমার নাম ইয়র্গ, ইয়র্গ ব্লখ।’ ছেলেটি হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। করমর্দন করল রত্না।

‘দিন, আপনার ব্যাগ দুটি আমায় দিন!’

একা এক জন মহিলার হাতে দুটি সুটকেস দেখলে এটাই স্বাভাবিক ভদ্রতা যে কোনও পুরুষের পক্ষে। রত্না কিন্তু মুহূর্তে সচকিত হয়ে গেল। এটা প্রথার বাইরে। সচরাচর এই ভাবে মাল দেওয়া-নেওয়া করে না সে। এই পর্বটা সমাধা হওয়ার কথা এয়ারপোর্ট ছাড়িয়ে শহরের পথে। গাড়িতে। তার মানে আজ কোনও একটা সমস্যা হয়েছে কোথাও! কোনও ভাবে কি খবর চলে গেছে ভিয়েনা পুলিশ বা বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে? সেই জন্যই কি তার উপর বাড়তি নজর রাখা হচ্ছিল?

ইয়র্গ ছেলেটির চোখেমুখে কোনও উদ্বেগের চিহ্ন নেই। এখনও সুটকেসের জন্য হাত বাড়িয়ে আছে। মুখে অনাবিল হাসি।

রত্নাকে একটু ইতস্তত করতে দেখেও ছেলেটির মুখে হাসিটি লেগেই রইল। শুধু এক লহমার জন্য বদলে গেল চোখের ভাষা। মুখের অভিব্যক্তির কোনও পরিবর্তন না ঘটিয়ে ছেলেটি নিচু, ঠান্ডা গলায় বলে উঠল, ‘বেশি সময় নেই। আমাদের উপর নজর রাখা হচ্ছে বোধহয়। সুটকেসটা দিয়ে দিন। যে কোনও মুহূর্তে কেউ চলে আসতে পারে।’

পুরো কথাটা এমন ভাবে বলা হল, দূর থেকে দেখলে যে কেউ ভাববে, দুটি তরুণ-তরুণীর মধ্যে স্বাভাবিক সৌজন্য বিনিময় হচ্ছে বুঝি!

রত্নার হাতের দুটি সুটকেসই হুবহু এক রকম। শুধু একটির হাতলের কাছটার এক জায়গায় একটু রং উঠে গেছে। সেই সুটকেসটা নিজের কাছে রেখে অন্যটি ছেলেটির দিকে বাড়িয়ে দিল রত্না।

চাকা লাগানো সুটকেসটি ঠেলতে ঠেলতে ছেলেটি বলল, ‘কাম উইথ মি। লিফ্‌ট ওই দিকে।’

যে কোনও এয়ারপোর্টে উপর-নীচ করার জন্য যে লিফ্‌টগুলি ব্যবহৃত হয়, তার সামনে ছোটখাটো ভিড় লেগেই থাকে। ভিয়েনাও দেখা গেল ব্যতিক্রম নয়। সারি সারি পাঁচটা লিফ্‌ট। প্রত্যেকটির সামনে ওঠানামা করার জন্য ছোটখাটো লাইন। সে আর ইয়র্গ চতুর্থ লিফ্‌টটির সামনে লাইন দিল। খুব বেশি ক্ষণ অপেক্ষা করতে হল না। কিন্তু লিফটের দরজা ঠিক যখন বন্ধ হতে যাচ্ছে, তখন দৌড়ে এসে উঠে পড়লেন এক মহিলা, তাঁর হাতেও চাকা লাগানো লাল রঙের সুটকেস, ঠিক রত্নারই মতন।

এই ব্যাপারগুলো এখন আর রত্নার চোখ এড়ায় না। লিফট তিনতলা থেকে দোতলায় নামলে কিছু লোক নেমে গেল। এক তলায় বাকিরা যখন লিফ্‌ট থেকে বেরোচ্ছে, তখন যে মহিলা লাল সুটকেস নিয়ে দৌড়ে এসে লিফটে ঢুকেছিলেন শেষ মুহূর্তে, তিনিও নেমে গেলেন কোনও দিকে না তাকিয়ে। তবে যে সুটকেসটা তিনি টানতে টানতে নিয়ে ভিড়ের মধ্যে অদৃশ্য হয়ে গেলেন, সেটি তাঁর নয়, ইয়র্গের হাতে রত্নার দেওয়া সুটকেসটি। ইয়র্গ ছেলেটিও কোনও রকম দোলাচল না দেখিয়ে মহিলার রেখে যাওয়া সুটকেসটি নিয়ে অনায়াসে বেরিয়ে এল লিফ্‌ট থেকে। লিফটের মধ্যে লাল দুটি স্যুটকেস পাশাপাশি রাখা ছিল। চাকা লাগানো লাল রঙের একই রকম দুটি সুটকেস যে হাতবদল হয়ে গেল, রত্না ছাড়া অন্য কোনও যাত্রী সেটা খেয়ালও করল না।

সামনেই বড় বড় কাচের দরজা ঘুরছে। এয়ারপোর্টের বাইরে রাস্তা দেখা যাচ্ছে। ইয়র্গের মুখে মোহময় হাসির আভাস। সে বলে উঠল, ‘ওয়েলকাম টু ভিয়েনা।’

রত্না ইয়র্গের সুস্মিত স্বাগতবার্তার কোনও জবাব দেওয়ার আগেই পিছন থেকে আর একটা কণ্ঠস্বর শুনতে পেল। ‘গুড ইভনিং, ম্যাম। স্যরি টু বদার ইউ। আপনাকে বিরক্ত করার জন্য দুঃখিত। একটু এ দিকে আসবেন, প্লিজ?’

চার জন পুলিশ। দুজন মহিলা, দুজন পুরুষ। সকলেই বিশালাকায়। ও দিক থেকে আরও চার জন এসে ইয়র্গের পিছনে দাঁড়িয়েছে। তাদের সাথে একটি বিরাট জার্মান শেপার্ড কুকুর।

রত্না আর ইয়র্গকে যে ঘরটিতে নিয়ে যাওয়া হল, সেখানে তাদের আটকে থাকতে হল ঘণ্টা তিনেক। তাদের সুটকেস, রত্নার ব্যাগ, তন্নতন্ন করে, উলটে-পালটে দেখা হল— জামাকাপড়, প্রসাধনের সরঞ্জাম, পারফিউমের বোতল। আলাদা ঘরে নিয়ে গিয়ে দুজনের শরীরেই চালানো হল তল্লাশি।

পুরো সময়টা ইয়র্গের আচরণে কোনও রকম উত্তেজনা নেই। মুখের অভিব্যক্তিতে কোনও সংশয়, সংকটের লেশমাত্র আভাস নেই। শান্ত, সংযত জার্মান ভাষায় সে সমস্ত প্রশ্নের জবাব দিয়ে গেল। রত্না অবশ্য সে সবের এক বর্ণও বুঝল না। তার সঙ্গে পুলিশের এক মহিলা কথোপকথন চালালেন ইংরিজিতে। সে যে ইয়র্গের কথা বুঝতে পারছে না, তা সত্ত্বেও প্রশ্নের জবাবে ইয়র্গ যা বলছে তার সঙ্গে মিলে যাচ্ছে রত্নার উত্তরও, এটা পরিষ্কার হয়ে যাওয়ার পর তাদের ছেড়ে দেওয়া হল। কিন্তু তার আগে, রত্নার কোন হোটেলে বুকিং আছে সেটা জেনে নিল পুলিশ।

ক্রমশ

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement