ধারাবাহিক উপন্যাস, পর্ব ৯
Novel Series

হাওয়ার আড়ালে

মেহুলি! পাশে একটা ম্যাজেন্টা কালারের গাড়ি, যার দরজা খুলে এইমাত্র নেমে আসছেন এক জন মাঝবয়সি ভদ্রলোক। মেহুলি উপর দিকে তাকিয়ে এক বার হাসার চেষ্টা করল।

Advertisement

অজিতেশ নাগ

শেষ আপডেট: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৭:৫৯
Share:

ছবি: পিয়ালী বালা

পূর্বানুবৃত্তি: স্বর্ণেন্দু মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে অনেক কথা হয় মেহুলির। তার মনের ভারও কিছুটা হালকা হয়। এক অসমবয়সি বন্ধুত্বের সম্পর্ক তৈরি হয় তাদের মধ্যে। অন্য দিকে স্থানীয় থানার ইনস্পেক্টর ওমর শেখ বাড়িতে এসে কস্তুরীকে নানা প্রশ্ন করেন মেহুলি সম্বন্ধে। তিনি মেহুলির ঘর তল্লাশি করেন। মেহুলি কোথায় যেতে পারে, বহু ভেবেও তার কূলকিনারা পান না কস্তুরী। মেহুলি কি তা হলে কোনও পুরুষের সঙ্গে রাত কাটাচ্ছে? এ ভাবনা মনে আসতেই গা গুলিয়ে ওঠে কস্তুরীর।

Advertisement

দুপুর একটা নাগাদ তিনটে ছেলের সঙ্গে ফিরে এল আকিঞ্চন। দুর্ভাগ্য, কেতকীবালা বাইরের ঘরেই ছিলেন। এমন অসময়ে ছেলের ফেরা নিয়ে কিছু একটা প্রশ্ন করতে যাচ্ছিলেন তিনি, আকিঞ্চন তাকে থামিয়ে দিয়ে দোতলায় উঠে এল। ওপরে এসে আকিঞ্চনকে ধীরে ধীরে সোফায় বসিয়ে দিয়ে ছেলেগুলো চলে গেল।

Advertisement

আকিঞ্চন সোফায় বসে এক গ্লাস জল খেয়ে বললেন, “মেহু কোথায়? কাল নার্সিং হোমে যায়নি কেন? আজ সকালেও তো এক্সপেক্ট করেছিলাম।”

কস্তুরী বুঝল এ বার ব্যাপারটা আকিঞ্চনের থেকে লুকিয়ে রাখা বোকামি হবে। সে বলল, “তোমাকে অনেক কথা বলার আছে। আগে একটু রেস্ট নাও।”

আকিঞ্চন হাত তুলে মাছি তাড়াল, “আমার কথা বাদ দাও, একটু আগে অবধি প্রচুর রেস্ট নিয়েছি। তুমি মেহুকে ডাক।”

কস্তুরী বলল সবটাই। সে ভেবেছিল সব শুনে আকিঞ্চন দারুণ খেপে উঠবে, টেনশন শুরু করে দেবে, তাকে আগে কেন খবর দেওয়া হয়নি এই নিয়ে চিৎকার করে বাড়ি মাথায় তুলবে, যেটা সদ্য নার্সিং হোম ফেরত মানুষটার পক্ষে ঠিক হবে না। কিন্তু বাস্তবে কস্তুরীর মুখে সবটা শুনতে শুনতে সোফায় গা এলিয়ে দিল আকিঞ্চন। বেশ কিছু ক্ষণ ঝিম মেরে পড়ে থাকার পর বলল, “সেই অফিসারের কার্ডটা দাও তো। আর আমার ফোনটা। ঘোষালকে একটা ফোন করতে হবে।”

বাইরে একটা গাড়ি থামার শব্দ। কস্তুরী বারান্দায় গিয়ে নীচে তাকিয়েই থমকে গেল।

মেহুলি! পাশে একটা ম্যাজেন্টা কালারের গাড়ি, যার দরজা খুলে এইমাত্র নেমে আসছেন এক জন মাঝবয়সি ভদ্রলোক। মেহুলি উপর দিকে তাকিয়ে এক বার হাসার চেষ্টা করল। তা হলে কি এই লোকটার সঙ্গেই কাল রাতে মেহুলি... আর ভাবতে পারল না কস্তুরী। ঠোঁটে আঙুল দিয়ে ইশারায় বেল বাজাতে বারণ করে দ্রুত পায়ে নীচে নেমে এল কস্তুরী। কেতকীবালার ঘরের দিকে এক বার তাকিয়ে বুঝল বাবা-মা দু’জনেই ঘুমোচ্ছেন। চন্দন ছেলেটাকে আজ সকালে দেখেনি কস্তুরী। খুব ফাঁকিবাজ হয়েছে আজকাল। আকিঞ্চনকে বলে একটা ব্যবস্থা করতে হবে।

সেই অচেনা ভদ্রলোক আর মেহুলিকে নিয়ে কস্তুরী পা টিপে টিপে দোতলায় উঠে এসে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। আকিঞ্চন মেয়েকে দেখতে পেয়েই উঠতে যাচ্ছিল, পিছনে এক অপরিচিত ভদ্রলোককে দেখতে পেয়ে থমকে গেল। ভদ্রলোক নিজে থেকেই বললেন, “নমস্কার, আমি স্বর্ণেন্দু মুখোপাধ্যায়। আপনার মেয়ে আমার কাছেই ছিল।”

এ বার প্রায় চেঁচিয়ে উঠল কস্তুরী, “আপনার কাছে ছিল মানেটা কী? আপনি কে? আর যদি থাকেও সেটা আপনি একটা ফোন করে জানাতে পারেননি? আপনি...”

“অপেক্ষা, অপেক্ষা। অত ব্যতিব্যস্ত হবেন না।”

দিন চারেক পরে। অরিত্রা মেকআপ রুমে ঢুকেই ঝড়াং করে হাতের হ্যান্ডসেটটা ছুড়ে মারল সোফা তাক করে এবং সেটি সোফার গদিতে একটা ড্রপ খেয়েই শূন্যে উঠে সজোরে আছড়ে পড়ল সিমেন্টের মেঝেতে। মাঝখানে যদিও দেবপ্রিয়া জাম্প করে ধরবার চেষ্টা করেছিল এবং তার আঙুলে টোকা খেয়ে হ্যান্ডসেটটা আরও শূন্যে উঠে ড্রেসিং টেবিলের কোণে লেগে ছিটকে গিয়ে যখন সশব্দে মাটিতে ল্যান্ড করল, তখন ব্যাটারি, সিম কার্ড আর কিছু যন্ত্রাংশ ছড়িয়ে পড়ল যত্রতত্র। অরিত্রা চেঁচিয়ে উঠল, “ফাক, ফাক, ফাক!”

স্নিতি অতি যত্নে আইল্যাশে কিছু বুলোচ্ছিল, চমকে হাত থেকে ব্রাশ ফেলে দিয়ে বলল, “কী করলি! অত দামি ফোন!”

অতি করুণ ভাবে হ্যান্ডসেটের ভগ্নাংশের দিকে চেয়ে দেবপ্রিয়া বলল, “আর দামি ফোন!”

“ব্যাটারি খুলে গেল কী করে? ইমমুভেবল তো!”

ঐন্দ্রিলা একমনে একটা সিনেমা ম্যাগাজ়িন পড়ছিল। অত্যন্ত বিজ্ঞের মতো কমেন্ট করল, “খোলেনি, ভেঙে বেরিয়ে গেছে।”

অরিত্রা হ্যান্ডসেটটা তুলে দেখল সর্বনাশ আরও হয়েছে। স্ক্রিনটা ভেঙে চার টুকরো। অরিত্রা কাঁদো কাঁদো গলায় বলল, “এখনও ইনস্টলমেন্টের পেমেন্ট ডিউ আছে।”

স্নিতি ব্রাশটা তুলে বলল, “তা তুই-ই বা অমন করে ছুড়ে মারতে গেলি কেন? ইডিয়ট।”

দরজা ঠেলে ঘরে ঢুকল মিশুক। কিছু ক্ষণ দাঁড়িয়ে দেখে সবটা বুঝে গেল সে। অরিত্রা মেয়েটা খুব ভাল, ভারি মিশুকে। কিন্তু শর্ট টেম্পার্ড। আগেও এই কাণ্ড করেছে। কোনও ব্যাপার নিয়ে কারও সঙ্গে ঝামেলা হলেই হাতে যা থাকে ছুড়ে মারে। এই করে গত পাঁচ সপ্তাহে চারটে ফাউন্ডেশনের শিশি, দুটো কফির কাপ আর একটা শোপিস ভেঙেছে। তাই বলে ফোনটা! নিজের হলে আত্মহত্যা করত মিশুক। অত দামি বলে ইনস্টলমেন্টে কিনেছিল অরিত্রা। আর কেনার সঙ্গে সঙ্গেই প্রায় সবাই পইপই করে বলে দিয়েছিল, এটার থেকে অন্তত সাবধান থাকিস। কে শোনে কার কথা। মিশুক বলল, “কেসটা কী? অমিতের সঙ্গে ফের বাওয়াল?”

অরিত্রা চুপ। পারিজাত ম্লান মুখে বলল, “পর পর পাঁচটা এন জি দিয়ে দেবদার প্রচণ্ড বকুনি খেয়েছে অরি। এটা তারই আফটারএফেক্ট।”

কিছু করার নেই। মিশুক সোফার হ্যান্ডেলে বসে ফেসবুক খুলল। রোজকার মতো প্রচুর ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট! তার সঙ্গে মেসেঞ্জার উপচে পড়ছে। আজ অবধি আড়াই হাজার রিকোয়েস্ট পেন্ডিং। থাক। উফফ, আর পারা যায় না। কোথা থেকে এরা ফোন নাম্বার জোগাড় করে কে জানে! অধিকাংশ মেসেজই স্তুতিময়। কেউ কেউ আবার সামান্য অসভ্যও। তাদের সঙ্গে সঙ্গে ব্লক করতে হয়। দেবপ্রিয়া বলেছিল সব আনইনস্টল করে দিতে। কিন্তু সেটা অবাস্তব। অনেক জরুরি মেসেজও আসে মেসেঞ্জারে, হোয়াটসঅ্যাপের মেসেজ তো আছেই। টুইটার আর ইনস্টাগ্রাম তো রয়েইছে। ফ্যানদের সঙ্গে রিলেট করাটা তাদের জীবনের অঙ্গ। ফ্যানেরাই সব। সে মাচার প্রোগ্রাম করতে গিয়ে দেখেছিল, তাদের মতো মানুষদের এক বার চোখের সামনে দেখার জন্য কত্ত লোক দাঁড়িয়ে থাকে অত রাতেও। এটা অন্য প্রফেশনে পাওয়া ভার। এক বার পারিজাত বলেছিল, সে আর পারছে না এই হেক্টিক শিডিউল মেনে নিতে। তার সোশ্যাল লাইফ হেল হয়ে যাচ্ছে। ঘুমের সময় নেই, বাড়ি ফেরার সময় নেই, এমনকি প্রেম করারও সময় নেই। শুনে ঐন্দ্রিলা একটা কিং-সাইজ সিগারেট ধরিয়ে ধোঁয়া ছেড়ে উক্তি করেছিল, “বিড়লা কোম্পানির ম্যানেজিং ডিরেক্টর মান্থলি কত স্যালারি ড্র করে জানিস?”

“কত?”

“সে আমিও জানি না। যদি ধরেও নিস মাসে পাঁচ লাখ, তবুও পার্ক স্ট্রিটের মাঝরাস্তা দিয়ে হেঁটে গেলে কেউ চিনবে? ফিরে তাকাবে? রেকগনাইজ় করতে পারবে কেউ? পারবে না। আমাদের পারবে। এটাই ফেম। এটা বোঝ।”

তা বটে! মিশুক সব্যসাচীর মেসেজের জবাব দিয়ে ফেসবুক খুলল। পেন্ডিং ফ্রেন্ড-রিকোয়েস্ট লিস্ট স্ক্রোল করে একটা নামে আটকে গেল। এই সব রিকোয়েস্ট তার কাছে নতুন নয়। দিনে খান কুড়ি করে আসে। সিংহভাগ পুরুষ। সবাই বন্ধু হতে চায়। বন্ধু! হাসি পায় মিশুকের। বন্ধু হওয়া কি এতই সোজা? অনেক বেছে বেছে অ্যাকসেপ্ট করতে হয়। মিশুক পারিজাতের দিকে তাকিয়ে বলল, “অ্যাই শোন, কস্তুরী রায় কে রে? নাম শুনেছিস?”

“কে?”

“কস্তুরী রায়।”

“বলতে পারছি না। আমাদের প্রফেশনের?”

“নোঃ। প্রোফাইল বলছে, হাউসওয়াইফ।”

“বাদ দে, ডিস্টার্ব করিস না আমাকে। স্ক্রিপ্টটা এখনও মুখস্থ হয়নি। এই অবস্থায় সেটে গেলে দেবদার ঝাড় খেয়ে অরিত্রার মতো অবস্থা হবে।”

স্নিতি বলল, “সত্যি রে! মালটা কী ঝাড় ঝাড়ে। সিনিয়র জুনিয়র কিছু মানে না। প্রেস্টিজ-ফ্রেস্টিজ সব ডাস্টবিনে।”

“তবে দেবদার কাজ দারুণ এটা মানতেই হবে। অনিরুদ্ধ পালের সময় টিআরপি পড়ে যাচ্ছিল, দেবদা আসার পর ফের উঠে এসেছে।”

“এখন আমরা সেকেন্ড লিড।”

ঐন্দ্রিলা বলল, “ধ্যাত, স্ক্রিপ্টরাইটারের ক্রেডিটও কম না কি? আগের জনই ঝোলাচ্ছিল, মাঝখান থেকে কেস খেল অনিরুদ্ধ। একশো ছিয়াশির পর টিআরপি উঠছে। ওই একশ ছিয়াশি থেকে এপিসোড কে লিখছে? হুম? বেথুন বেরা। হুঃ। সব ক্রেডিট দেবকুমার বোসকে দিলে হবে বাওয়া?”

মিশুক স্ক্রোল করতে গিয়েও ফের ফিরে এল। এই ভদ্রমহিলার প্রোফাইলটা তাকে টানছে। কেন কে জানে! মাত্র এক জন কমন ফ্রেন্ড। পারিজাত। এই পারিজাত মেয়েটা যার তার রিকোয়েস্ট অ্যাকসেপ্ট করে। এই করতে গিয়ে আজ অবধি তিনটে প্রোফাইল খুলতে হয়েছে তাকে। জিজ্ঞেস করলে বলে, ফ্যান বাড়াচ্ছে। এই কস্তুরী রায়কেও নিশ্চয়ই না জেনেই অ্যাকসেপ্ট করে নিয়েছে। মিশুক ভদ্রমহিলার প্রোফাইল ঘেঁটে দেখতে গিয়ে চমকে গেল। একটা দুটো পার্সোনাল পোস্টের পরেই মিশুক মুখার্জির ছবি অথবা তার ফ্যান পেজের বিজ্ঞাপনের শেয়ার। স্ক্রোল করতে করতে দেখল আর কারও কিছু নেই, খালি তারই ছবি। আরও নীচে দেখল তার আগের সিরিয়ালগুলোর ছবিও আছে। এমনকি মান্ধাতার আমলে করা একটি ডান্স প্রোগ্রামের ইউটিউব ভিডিয়োও দেখতে পেল, যখন মিশুক মুখার্জিকে কেউ চেনে না। মিশুক ভিডিয়োটার লিঙ্ক কপি করে রাখল।

হাসল মিশুক। ভদ্রমহিলার পুরো প্রোফাইল জুড়ে শুধুই সে। একটা ছবি দেখতে পেল, দক্ষিণ কলকাতার কোনও মাল্টিপ্লেক্সে তার একটা সিনেমা লঞ্চ হয়েছিল, ছোট্ট চরিত্র, তারই প্রিমিয়ারে গিয়েছিল, সেই ছবিও আছে। তার মানে ভদ্রমহিলা তখন সেখানেই ছিলেন! আচ্ছা ফ্যান তো! এ দিকে মেকআপ রুমের মেঝে তখন অরিত্রার চোখের জলে ডুবুডুবু। এখনই সব্যকে একটা ফোন করতে হবে এটা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল তার আর প্রোগ্রামার ছোকরা এসে ডেকে যাওয়ায় বেরিয়ে যাচ্ছিল স্নিতি, কী ভেবে অ্যাকসেপ্ট বাটন টিপল মিশুক।

মেহুলি শুয়ে শুয়ে ‘সেক্রেড গেমস’-এর একটা এপিসোড দেখছিল মন দিয়ে। এই সিরিজ়টা তার দারুণ লাগে। একই সঙ্গে আরও চারটে সিরিজ় দেখছে সে। তবে সবচেয়ে পছন্দের এটিই। আর একটা ‘দ্য প্রিন্সেস সুইচ’। এটাও দারুণ। মিনিট খানেক আগেও মোবাইল তুলে দেখেছিল রাত দুটো বেজে পাঁচ। ঘুম আসছে না। অনেক দিন হয়ে গেল রাতে তার ঘুম অনেক দেরিতে আসে। ফলে সকালেও উঠতে দেরি হয়ে যায়। কিন্তু উঠতেই হয়। উপায় থাকে না। নইলে মা-মহারানি ডেকে ডেকে মিষ্টি মিষ্টি স্বপ্নগুলোর বারোটা বাজিয়ে দেবে! ঘুম ভেঙে গেলেও মেহুলি মটকা মেরে থাকে। নেহাত শেষ অবধি বাপি চলে এলে আর না উঠে উপায় থাকে না।

আজ মন দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে, কিন্তু মন বসছে না। বার বার অন্যমনস্ক হয়ে পড়ে কন্টিনিউটি ধরতে পারছে না। শেষে ‘ফাক’ বলে এগজ়িট করল সে। ব্যাগ হাতড়ে সিগারেটের প্যাকেটটা বার করে একটা ধরিয়ে বারান্দায় চলে এল সে। মা বাপি এত ক্ষণ নিশ্চয় নিজের বিছানায়। এক জন পুরুষ আর নারী কী করে এক বিছানায় আলাদা আলাদা ভাবে শুয়ে রাত কাটায় ভেবে পায় না সে। মা-বাপি তো তেমন বুড়ো হয়ে যায়নি এখনও। ব্যাপারটা তার জানার কথা নয়। এক দিন মা কার সঙ্গে কথাবলছিল ফোনে। সে টয়লেটে ছিল, সেখান থেকেই শুনতে পায়।

মেহুলি জানে তার বাপির একটা হিডন রিলেশনশিপ আছে। নামটা সে জেনে নিয়েছে বাপির মোবাইল ঘেঁটে। বাপির প্যাটার্ন লক তার জানা। রাধিয়া শ্রীবাস্তব। হোয়াটসঅ্যাপে গিয়ে প্রোফাইল ফোটোটাও দেখেছে। মুখের জিয়োগ্রাফি ফালতু হলেও চেহারা সেক্সি। ডিপ ক্লিভেজ। বাপির চয়েস আছে। প্রথম যে দিন জানতে পারে, সে দিন অবাক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বেশ খুশিই হয়েছিল সে। বেশ হয়েছে। এ বার মিসেস রায়, তুমি যাবে কোথায়? খুব ভাল হয় যদি বাপি মাকে ডিভোর্স দিয়ে অন্য কাউকে বিয়ে করে। ক’মাস ধরেই মেহুলি আর কস্তুরীকে একেবারেই সহ্য করতে পারছে না। এক দিন না থাকতে পেরে তার প্রাণের বন্ধু আহিরিকে বলেছিল কথাটা। এমন গাড়োল আহিরির বাচ্চা, সব শুনে চোখ কপালে তুলছিল, “আর ইউ ইনসেন মেহুলি? ইউ হেট ইয়োর মাদার! শিট!”

তো? বাপির না হয় একটা ফেউ আছে, সেখানেই খিদে মিটিয়ে নেয়, কিন্তু মা! ওদের মধ্যে তো তেমন ঝগড়াঝাঁটি হয়েছে বলে মনে হয় না। দিব্যি হেসে হেসে কথা বলে। তবু বিছানায় শুয়ে অন্য দিকে মুখ করে ঘুমোয়? দুটো বিপরীত লিঙ্গের মানুষ পাশাপাশি শুয়ে থাকলেও তো পরিবেশ উষ্ণ হয়। কী জানি!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement