ছবি: কুনাল বর্মণ।
অর্কদার পকেটেই সম্ভবত আছে বল্লালবাবুর খোঁজ। তাও তার সঙ্গে কথা বলতে ইচ্ছে হয় না তমার। ভাল লাগে না কিছু জিজ্ঞেস করতে। কেন তা সে জানে না। কোনও কোনও লোককে দেখলে জিভ ছুটে চলে উল্কার বেগে। ভাষা হয়ে ওঠে দ্রুতগামী ঘোড়া। আবার কোনও মুখ দেখলে সেই জিভই অনড় পাথর হয়ে ওঠে। সুবেশ, সুবিনয়, সুদর্শন, অর্ককে দেখলে এ রকমই হয় তার। কিন্তু তার সামনে দিবাকরদাকে দেখে অন্য একটা পরিকল্পনা গজগজ করে ওঠে তার মাথায়। এই যে বই বিক্রেতা দিবাকরদা, তার কাছে তো মিললেও মিলতে পারে বল্লালের খোঁজ। টেলিফোন নম্বর নিয়ে যোগাযোগ করতে চাইছে না সে। নম্বর তো গরিমার কাছেই আছে। সেটা সে চায় না। সে চায় সটান তার সামনে গিয়ে দাঁড়াতে। সে চায়, কোনও মেঘদূত গোপনে এসে দিয়ে যাক তাকে খুঁজে পাওয়ার ঠিকানা। আজ এই মেঘাচ্ছন্ন শহরে কি দিবাকরদাই সেই মেঘদূত হয়ে এল? নতুন বইটা ব্যাগে ফেলে দিল তমা, পড়া তার মাথায় উঠেছে। এখন পাকড়াও করতে হবে দিবাকরদাকে। ব্যাগ গুছিয়ে সে তৈরি হয়ে থাকে। যেন দিবাকরদা তাকে চেনে। যেন দিবাকরদা তাকেও বই দিয়ে আসে। যেন দিবাকরদা এখনই তার কাছে যাবে। তমার মনে হয় না এত সব ‘কিন্তু’ ‘যদি’ বাস্তব হতে পারে, কিন্তু তার ভাবনা, পরিকল্পনা ও কল্পনায় তখন কোনও সংশয়ই থাকে না।
পিঠে ভারী ব্যাগটা নিয়ে খানিক পরেই টিচার্স রুম ছেড়ে বেরোয় দিবাকরদা। তমা এই মুহূর্তটারই অপেক্ষায় ছিল। সেও হেঁটে বেরোয়। হাঁটতে হাঁটতে দিবাকরের পাশে চলে আসে। বলে, “এখান থেকে কোথায় যাবেন দিবাকরদা?”
দিবাকরদা এক বার ঘাড় ঘুরিয়ে তাকে দেখল, তার পর বলল, “এখান থেকে প্রথমে যাব রাজবাড়ির পাশের কলেজে। ওখানে জনা চারেক বই নেন আমার থেকে। সেখান থেকে যাব একটা ব্যাঙ্কে। ব্যাঙ্কের লেনদেন বন্ধ হওয়ার পর দু’-তিন জন বই দেখেন ওখানে। তার পর যাব কয়লাঘাটা। রেলের অফিসে আমার অনেক খদ্দের আছে। এ ছাড়া আরও দু’-তিন বাড়ি যাওয়ার কথা আছে।”
তমা বলল, “চা খাবেন দিবাকরদা? কলেজের বাইরে চায়নাদির দোকানের চা খুব ভাল।”
দিবাকরদা বলল, “ওখানেই তো সাইকেল রেখে আসি। চা তো খাবই। চলুন ম্যাডাম, আজ আপনি আমার অতিথি।”
চা খেতে খেতে তমা বলে, “অর্কদা তো অনেক দিন থেকে আপনার থেকে বই নেয়, না?”
দিবাকরদা চা নিল, তাতে একটা চুমুক দিয়ে বলল, “আসলে কী জানেন ম্যাডাম, আমার ক্রেতা বাড়ে মুখে মুখে। আপনাদের কলেজে আমার প্রথম ক্রেতা ছিলেন অবিনাশবাবু। ইতিহাসের মানুষ। অগাধ পাণ্ডিত্য। ওঁর থেকেই অর্কবাবু, আপনি, গরিমা ম্যাডামরা আমায় চিনেছেন।”
এ বার তমা সরাসরি প্রসঙ্গে আসে, “আচ্ছা দিবাকরদা, বল্লালবাবু আপনার থেকে বই কেনেন না কি?”
দিবাকরদা তেমন না ভেবেই বলল, “এই নাম এই প্রথমবার শুনলাম ম্যাডাম।” একটু হতাশ হয় তমা, বলল, “ও, আপনি চেনেন না? আমি ভাবলাম চেনেন।” দিবাকরদা বলল, “কোথায় থাকেন? অফিস কোথায়?”
তমা বলল, “বাড়ি কোথায় জানি না, পড়ান দেরাদুনে। পাথর, মাটি নিয়ে গবেষণা করেন ওখানে। শুনেছি এখানেও অনেক দিন থেকে যান।”
শুনে দিবাকর বলল, “দেরাদুনের এক জন বই নেয় আমার থেকে, কিন্তু তার নাম তো অন্য।”
তমা অধীর কৌতূহলে জিজ্ঞেস করে, “কী নাম তাঁর?”
দিবাকরদা বলল, “ওঁর নাম তো লালু। আমি ডাকি পাগলা লালু নামে। খুব সহজ সরল মানুষ। আমায় ও বলে পাগলা দাশু। আমি বলি পাগলা লালু। হঠাৎ হঠাৎ এসে উদয় হয়। আবার কোথায় ডুব দেয় ও-ই জানে। এই তো গতকালই ফোনে বলল একটা বইয়ের জন্য। আমার কাছে আছেও জানেন বইটা। তবে আজ আর সময় হবে না ওই ভূতের আড্ডায় যাওয়ার।”
“ভূতের আড্ডা?”
“আর কী বলি বলুন তো ম্যাডাম, গঙ্গার ধারে নিমতলা শ্মশানের কাছে একটা বাঁধানো ঘাটের সামনে রক মতো করা আছে। মাথার ওপর সাদা আলোর স্ট্যান্ড। সন্ধে থেকে সাদা আলোয় ভেসে যায় জায়গাটা। অনেক লোক ওখানে বসে আড্ডা দেয়। পাগলাবাবু ওখানেই আমার সঙ্গে দেখা করেন। কলকাতায় ওঁর কোনও ঠিকানা নেই। বন্ধুবান্ধবদের মেসে পালা করে থাকেন। একেবারে বাউন্ডুলে। উনিও দেরাদুনের দিকেই কোথাও একটা পড়ান। আপনি কি ওঁর কথা বলছেন?”
দিবাকরদার কথার কোনও উত্তর দিতে পারে না তমা। এক বার মনে হয় এতটা পাগলাটে তো প্রথম দর্শনে মনে হয়নি! অবশ্য তার ভেতরের পাগলামিটাই বা বাইরে থেকে দেখে বুঝবে কে? দু’বছর দেখেও বিপ্লব বুঝেছে কি? কে জানে, হয়তো বুঝেছে, মানতে পারে না। হয়তো সবাই তার নিজের খাপে আনতে চায় তার প্রিয়জনকে। মানিয়ে নিতে পারলে গোবেচারা সাংসারিক জীবন, না পারলে উকিলের অ্যাপয়েন্টমেন্ট। আর যাদের খাপের সঙ্গে মিলে থাকা খাপের মতো চরিত্র? তারা জোড় বাঁধতে পারে? পারলে সুখী হয়? তমা অন্যমনস্ক হতে হতে শুনতে পায়, “আপনার কাছে ওঁর ছবি নেই?” প্রশ্ন করছে দিবাকরদা। তমা দু’দিকে মাথা নাড়ে।
“দাঁড়ান, আমার কাছে আছে,” বলে ফোন থেকে তার হোয়াটসঅ্যাপের ছবি বের করে দেখায়। তমা একবুক ধুকপুক নিয়ে ফোনের পর্দার দিকে তাকিয়ে চমকে ওঠে। ছবিতে শ্রীমান বল্লাল! পিছনে হিমালয়। হয়তো পঞ্চচুল্লির একটাই! দিবাকরদার কাছে উচ্ছ্বাস গোপন না করে লাফিয়ে ওঠে তমা। এই তো! উত্তর মিলে যাওয়া অঙ্কের পাশে টিকচিহ্ন দেওয়ার মতো তৃপ্তিতে দিবাকরদা হাসতে হাসতে চায়ের দাম মেটায়। তার পর চলে যাওয়ার উদ্যোগ করে।
তমা ককিয়ে উঠে বলে, “চলে গেলে হবে না দিবাকরদা। আমায় ওই ঠিকানাটা দিন। আর বলছিলেন না একটা বই দেওয়ার আছে, সেটা আমায় দিন। আরও একটা কথা। এই বইয়ের দাম আমি আপনাকে এখনই দিয়ে ওঁকে উপহার দেব, আপনি না বলতে পারবেন না।”
দিবাকরদা কেন কে জানে হেসেই যায়! লোকটার মুখে কদাচিৎ সে হাসি দেখেছে। হাসতে হাসতে লোকটা বলে, “না বলব কেন? আমারই তো সুবিধে, আপনি বইটা পৌঁছে দিচ্ছেন।”
তমার হাতে বইটা তুলে দিল দিবাকর। দাম জিজ্ঞেস করে পার্স খুলে দাম মিটিয়ে দিল তমা। তার পর ভদ্রতা দেখিয়ে বলল, “আপনার অনেকটা সময় আজ নষ্ট করে দিলাম।”
দিবাকরদা ধীরেসুস্থে ভারী ব্যাগ তার সাইকেলের দু’দিকের হ্যান্ডেলে ঝুলিয়ে বলল, “সময় বাড়লে বিক্রি বাড়ে, অমন ব্যবসা তো আমি করি না ম্যাডাম।”
তমা কোনও দিন এত কথা বলেনি এই ভদ্রলোকের সঙ্গে। আজ পরিস্থিতি এমন হল যে কথা যেন চলে আসছে ঠেলে ঠেলে। সে তাদের বাধা দিল না। সে বলল, “আপনি কি আদৌ ব্যবসায়ী হতে পেরেছেন, দিবাকরদা? পারলে অন্য ব্যবসা করতেন, বই বিক্রি করতেন না।”
তার কথা শুনে ফের অনাবিল হাসে দিবাকর। সাইকেলে উঠে মাটিতে এক পা রেখে চলে যাওয়ার উপক্রম করে সে। যাওয়ার আগে বলে, “পাগলে পাগল চেনে, বুঝলেন ম্যাডাম! এখানে ওখানে কত না খেপা বসে আছে। আমি তাদের ছুঁয়ে ছুঁয়ে যাই!”
মন ভাল করে দিয়ে চলে গেল দিবাকরদা। তার আগেই সে বুঝিয়ে দিয়েছিল নিমতলার রাস্তা। ঠিক যেখানে একটা কাঁঠাল গাছ উবু হয়ে বসার মতো হেলে আছে, ঠিক যেখানে রং উঠে যাওয়া ঠাকুরের মূর্তি দাঁড়িয়ে আছে রাস্তার পাশে, ঠিক যেখানে গাছের পাতা আলো-আঁধারি তৈরি করে দিনের আলোয়, ঠিক সেখানেই গতকালের মতো আজও অধিষ্ঠান করবেন লাল দেব। তমা কব্জি উল্টে দেখল, পাঁচটা বাজে। সামনে তাকিয়ে দেখল, রাস্তায় ক্রমশ দূরতম বিন্দুতে পরিণত হচ্ছে দিবাকরদা। ভ্রাম্যমাণ পুস্তক ব্যবসায়ী। যে নিজেও জানে, আসলে সে ব্যবসা করছে না, আসলে সে খেপা, মহাখেপা, বিশ্বখেপাদের ছুঁয়ে বেড়াচ্ছে। কী নির্মল স্বীকারোক্তি! কী নির্দোষ আত্মপক্ষ সমর্থন! সেই বার্তা তো সমান সত্য তার জন্য, পাগলা লালুর জন্যও। সেই মুহূর্তে দিবাকরদার সাইকেলের মতো আরও একটা বিন্দু যাত্রা শুরু করল। তার নাম তমা। সে খেপাতমা। সে ভুলে গেল তার জমে থাকা গবেষণা কাজের তাগাদা। সে ভুলে গেল দীর্ঘ ক্ষণ না খেয়ে থাকার খিদে। তার মনে হল না একা একা অচেনা জায়গায় যাওয়া উচিত কি না। তার যাত্রাপথে এল শহরের ব্যস্ততম রাস্তা, এল লোহা পাতা ট্রামলাইন, এল ‘বিপজ্জনক বাড়ি’ সাইনবোর্ড-ওয়ালা প্রায় ভেঙে পড়া পুরনো বাড়ির ঝুলবারান্দা। তাকে পেরিয়ে গেল যত রাজ্যের বাস, ট্রাম, অটোরিকশা। বেহায়ার মতো রেষারেষি করতে করতে পেরিয়ে গেল দুটো মিনিবাস। আচ্ছা, এই যান দু’টিও কি পরস্পরের জোড়? লক্ষ করতে গিয়ে তমার চোখে পড়ল, তাদের একটার পিছনে লেখা রয়েছে ‘ঢুলব দুজনে’। প্রথমে হাসি পেল তার। কারা ঢুলবে? কে মাথা রাখবে কার কাঁধে? কারা এ সব লিখে দেয় বাসের পিছনে? এর পিছনেও কি কোনও ইঙ্গিত আছে? জানে না সে। সে আবার তার হাঁটায় ডুবে যায়। মাঝখানে কত বার বেজে বেজে থেমে গেল তার ফোন। এ রাস্তা টপকে, ও রাস্তা ধরে, এ গলি সে গলি হেঁটে অবশেষে সে পৌঁছল গঙ্গার তীরের সেই চিহ্নিত জায়গায়। গঙ্গার কাছে পৌঁছতেই মন ভরে গেল তার। নীলাভ মেঘ স্তরে স্তরে জমে রয়েছে নদীর মুকুট হয়ে। বৃষ্টি নেই, রোদও নেই। বিদায়ী সূর্যের আলো নীল আভা হয়ে ছড়িয়ে পড়ছে আকাশে। এখানে গঙ্গার ধারের রাস্তাটা বহু পুরনো সব গাছের ছায়ায় ভরে থাকে সর্বক্ষণ। সিঁড়ির ধাপগুলি পরিত্যক্ত এরিনার মতো সাজানো। হয়ত রাতবিরেতে অশরীরীরা এখানে নাটক করে, হয়তো খেপারাও এখানে এসে নাটক করে। সেই নাট্যমঞ্চের অভিনেত্রী হিসেবেই যেন সে পা রাখল এখানে। উবু হয়ে বসার মতো বহু পুরনো কাঁঠালগুঁড়ি, ভাঙা, গলিত, অর্ধগলিত দেবমূর্তি দেখে বুঝল, মঞ্চ এটাই। একটা একতলা, একখানা ঘরের দালানের গায়ে লেখা পুলিশ ফাঁড়ি। তার পাশে, রাস্তা আর নদীর ঘাটের মাঝখানে বাঁধানো জায়গায় সার সার বসার জায়গা। তমার মনে হল, এ তার কাছে একটা আবিষ্কার।
তমার মতো একা চাকরি করা মেয়ে বা ছেলেরা যারা বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকে, তারা কেউ রান্না ভালবাসে, কেউ বাগান, কেউ অবসরের সবটা উপুড় করে দেয় গবেষণার কাজে, কেউ বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে আড্ডায়। তমা এর কোনও দলেই পড়ে না। তার দীর্ঘ অবসর বই পড়ে, গরিমার সঙ্গে আড্ডায় কাটে বটে, কিন্তু এর কোনওটাই তাকে টেনে বেঁধে রাখে না। আজ এখানে আসতে সে তাই দু’বার ভাবেনি। এটাই তার জন্য অনিবার্য। যথাস্থানে পৌঁছে অজানা উত্তেজনায় তার বুক ঢিপঢিপ করতে লাগল। মনে হল, এখানে তার সঙ্গে বল্লালের দেখা না হওয়াই ভাল। দেখা হলে কথা বলা বড় কঠিন হবে। তার চেয়ে দেখা না হওয়ার দুঃখ বুকে চেপে চলে যাওয়া ঢের সোজা। রাস্তা থেকেই এক ঝলক তাকিয়ে বল্লালকে দেখতে পেল না তমা। বসার সারিতে হেলান দিয়ে নানা বয়সের লোকজনকে দেখতে পেল সে। দেখতে পেল শুভ্রকেশ বয়স্ক ব্যক্তিকে এক তরুণের সঙ্গে কথা বলতে, দেখতে পেল তার ছাত্রীদের মতো কলেজ-পড়ুয়া মেয়েদের হাতে সিগারেট নিয়ে লোকদেখানো ভঙ্গিতে টান দিতে, দেখতে পেল কাঁধে হাত, কাঁধে কাঁধ, হাতে হাত রাখা কলেজ-পড়ুয়াদের গল্পে মশগুল থাকতে। তমার কিন্তু মনটা খারাপই হয়ে গেল। এই তার মনে হচ্ছিল বল্লাল না থাকলেই ভাল, কিন্তু দেখতে না পেয়ে একটু মুষড়েই পড়ল সে। এ দিক-ও দিক দেখে সিমেন্টের ফাঁকা একটা বেঞ্চে বসে পড়ল। তার পর চুপ করে বসে থাকল কিছু ক্ষণ।
হঠাৎ মনে হল, ফোনটা দেখা দরকার। ব্যাগ থেকে ফোন বার করে দেখল, মায়ের তিনটে, বিপ্লবের দুটো আর গরিমার একটা মিস্ড কল। সে ব্যস্ত হয়ে আগে মাকে ফোন করল। রোজ তিনি দু’বার ফোন করে প্রবাসী কন্যার খোঁজ নেন। মা-র সঙ্গে কথা সেরে গরিমাকে ফোন করতে গিয়েও কেটে দিল সে, পরে কথা বলবে ভেবে। বিপ্লবকে তার পর ফোন করল।
“হ্যাঁ তমা, রাস্তায় নেই তো তুমি?”
“রাস্তাতেই আছি, কেন?”
“না, আগে রাস্তার ধারে কোথাও একটা দাঁড়াও তার পর কথা বলব। যে ভাবে গাড়ি চলে রাস্তায়!”
“আমি তো রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে নেই বিপ্লব যে, গাড়ি ধাক্কা মেরে চলে যাবে। তুমি বলো, কেন ফোন করেছ।”
“বলছি, তুমি যাবে বাড়িটা দেখতে?”
“কোন বাড়ি? ও, তুমি যেটা কিনবে? না, না, আমি যাব না। জমি, বাড়ি আমি বিশেষ বুঝি না।”
এই রকম ঘুরিয়ে কথাগুলোই সহ্য করতে পারে না তমা। সে গত কয়েক মাসে বার বার বিপ্লবকে বোঝানোর চেষ্টা করোছে যে, তাদের মাঝখানে এখন একটা বড়সড় পাঁচিল তৈরি হয়েছে। কিন্তু বিপ্লব সেটা দেখেও দেখছে না, মেনেও মানতে পারছে না। বরং ‘সব কিছু আগের মতোই আছে’ এই রকম একটা আচরণ করে চলেছে। সে এখনও ভাবছে, সে আর তমা এক ছাদের তলায় বাসা বাঁধবে। কিন্তু তমা-নদীর খাত যে আগেই তার পাড়া থেকে সরে এসেছে, তা সে বুঝবে কবে? এই রকম কথাগুলোর উত্তরে তমা না পারে রূঢ় হতে, না হতে পারে প্রগল্ভ। সে কোনও ক্রমে গলায় মিষ্টত্ব রেখে বলে, “দেখো বিপ্লব, তুমি নিজের উপার্জনে একটা বাড়ি কিনতে চলেছ, এটাই তো আনন্দের কথা, না? তুমি তোমার বাবা-মাকে দেখাও, সেটাই ভাল হবে। আর কোনও অভিজ্ঞ লোককে, ভাল উকিলকে দেখিয়ে নিয়ো, সেটাই ঠিক হবে, তাই না?”
বিপ্লব ফোন রাখে। উকিলের কথায় মনে পড়ে, গরিমারও উকিলের কাছে যাওয়ার কথা। সেই জন্যই ফোন করেছিল কি? সে দ্রুত ডায়াল করল।
ক্রমশ