Durga Puja 2023

সে দিন তোমায় দেখেছিলাম ভোরবেলায়

এই ভোর চিরকালীন স্মৃতিবাহী। পুজো মানেই ফিরে আসা। যে সময় চলে গিয়েছে, তার। যে মানুষ আর নেই, তাঁরও। শরৎ মানেই নরম আলো, মহিষাসুরমর্দিনীর সুর, নৈঃশব্দ্য আর মনখারাপের কাটাকুটি। এখনকার আর প্রত্যেকের মতোই দশভুজাও কি আসলে একা?

Advertisement

ঈশানী দত্ত রায়

শেষ আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০২৩ ০৮:২৮
Share:

পুজোর সঙ্গে পিসিমণি জড়িয়ে আছে। অবিবাহিত, সীমান্তের কাছে একটি জনপদের স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা ছিল।
একাই থাকত। গ্রামে একা থাকতে ভয়ডর করত কি না, নিঃসঙ্গতা কেমন ছিল, জিজ্ঞেস করা হয়ে ওঠেনি। গরম, পুজো, শীতের ছুটিতে পিসিমণি বাড়ি আসত। পুজোর সময়ে বাড়ির পুজোর ভার থাকত তার উপর। বিজয়ার মিষ্টি বানাত, সারা দুপুর ধরে, আমরা খাটের উপর উপুড় হয়ে শুয়ে সেই অমৃত-স্বাদের ইচামুড়া, নাড়ুর পাকের ঘ্রাণ নিতাম এবং ‘দাও দাও’ বলে ঘ্যানঘ্যান করতাম। প্রতিপদের পর দিন সকালে বাগান থেকে শিশির, আখের টুকরো ইত্যাদি দিয়েও একটি সুমধুর জিনিস খাওয়াত। তার একটি ব্যক্তিগত দুঃখের ও বঞ্চনার দিক ছিল।

Advertisement

পিসিমণি বসন্তমালতী মাখত এবং বসন্তমালতী মাখলেই বলতাম, কোথায় যাচ্ছ? পিসিমণি বলতেন, বিলাত। এই কথোপকথন বছরের পর বছর ধরে চলত। পিসিমণি একটি বোগেনভিলিয়া গাছ লাগিয়েছিল, সেটি ফুলে ফুলে ভরে আর বেড়ে গিয়ে পাড়ায় নতুন ‘সেলফি স্পট’ হয়ে উঠেছিল। সম্প্রতি সেটি কাটা পড়েছে।

পিসিমণি সাধারণত সাদা খোলের শাড়ি পরত, পরার কোনও কারণ ছিল না বাহ্যত।

Advertisement

পুজোর সঙ্গে পিসিমণির একটি মিল পাই। মিল ঠিক বলব না, ওই দুর্গার মতো, আবার নয়ও। বছরের নির্দিষ্ট সময় আসবে, চলে যাবে, আবার আসবে, কিন্তু দুর্গাকে ঘিরে যেমন ধুমধাম হয়, তেমনটি হবে না। পিসিমণির খাট, পিসিমণির ঘর, পিসিমণির গাছ থাকবে, কিন্তু পিসিমণি থাকবে না, অকালে চলে যাবে।

অকালে না গেলে হয়তো পিসিমণির গল্পটাই হত না। পুজো এলে মনে হয়, শিশির পড়লে এবং না পড়লেও মনে হয়, হাতে ব্যাগ নিয়ে পিসিমণি গলিটা দিয়ে আসছে দুপুরের ট্রেনে। এসে ভাত খাবে।

প্রতি বাড়িতেই পিসিমণিরা থাকে। পিসিমণি না হয়ে মাসিমণিও হতে পারে, যে সম্পর্কের যে নাম।

পাড়ায় একটি বাড়ির বারান্দায় এক সাদা শাড়ি পরা মহিলা দাঁড়িয়ে থাকতেন। সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ। মৃদু গলায় তিনি গাইতেন, জীবনে যারে তুমি দাওনি মালা... গাওয়ার সময়ে তার মুখে যে খুব বেদনা থাকত, তা নয়, কিন্তু কণ্ঠে হয়তো থাকত। পড়তে যাওয়ার সময় রোজই এক গান শুনতাম। কেন যে তিনি রোজই এক গান গাইতেন, তিনিই জানেন। আর কেউ কি জানত! হয়তো জানত।

বুদ্ধদেব বসু তাঁর আত্মজীবনীর একটি অংশে লিখেছিলেন পুরনো ঢাকার শাঁখারিপাড়ার কথা। সাজানো সাদা রঙের শাঁখ। তিনি অনেক বার দুপুরে হেঁটেছেন সেই শান্ত নিঝুম পাড়া দিয়ে, কিন্তু কোনও দিন জানতে চাননি মানুষগুলোর কথা। এ-ও তেমন। পরিবার, সমাজে, শিউলিতলার মতো এক-এক জন থাকেন। পুজোর সময় আলো করে থাকবে, বাকি সময় পাতা থাকবে ভরে, কিছু জানা যাবে, পুরোটা নয়। কেউ হয়তো জানার চেষ্টাও করবে না, বা করলেও তল পাবে না। সেই অর্ধেক জানা আর অর্ধেক না-জানার বেদনা নিয়ে বাকিরা থেকে যাবে।

পাড়ার পুজোর চার পাতার সুভেনিরে থাকে— ‘যাদের না হলে চলে না’। পুঁটি, বুল্টি, বাবাই, ভুতো— এমন যুগ যুগ ধরে কিছু নাম, তারা হয়তো ফ্রক, হাফপ্যান্ট ছাড়িয়ে কর্তাব্যক্তি হয়ে গিয়েছে, বা চলেই গিয়েছে পাড়া ছেড়ে, কিন্তু ছাপার সময়ে সেই এক নাম চলছে তো চলছেই। তাদের কেউ শুধু দৌড়ে বেড়াত, কেউ ফল গুছোত, কেউ ফুল গুছোত, কেউ ফুলের পাপড়ি ছিঁড়ে অঞ্জলির ব্যবস্থা করত। কেউ সেজেগুজে দিনরাত ক্যাপ ফাটাত আর দশমীর দুপুরে মাইক টেস্টিং, আর তার পর ‘আমাদের প্রতিমা বিসর্জনের জন্য নামানো হয়েছে, যারা মাকে বরণ করতে ইচ্ছুক’ ইত্যাদি বলে মাথা খেত। এখনও খায়।

পাড়ার পুরনো মস্তানদের কথাও মনে হয়। পরে রাস্তা দিয়ে পুলিশকে যাদের ধরে নিয়ে যেতে দেখেছি, বাড়ির বারান্দায় বসে পড়ে তাদেরই কেউ কেউ পুঁচকিকে বলে যেত, এ বার গান গাইবি কিন্তু। তখন নকশাল আমল।

কারা ছিল তারা? বা এখনকার তারা ঠিক কারা? জেনেছে কেউ কোনও দিন— প্রতি বুল্টু, প্রতি পুঁটির আলাদা আলাদা গল্প? কার কবে বঁটিতে হাত কাটল, কার কবে প্রেম হল, পুজোর অছিলায় কাকে অশালীন আচরণ সহ্য করতে হল, কিন্তু বলতে পারল না কোনও দিন। কে জেনেছে, পাড়ার যে বৌদি-কাকিমারা প্রতিমা বরণ করেন আর ফাংশন করান, তাঁদের গল্প? বৌদি হয়ে যান কাকিমা, কাকিমা থেকে জেঠিমা, তার পর মঞ্চ ছেড়ে চলে যান। কে জেনেছে, তিনি দুপুরে ঠিকমতো খেতেন কি না, প্রতিমা বরণের জন্য আনা থালায় পুঁচকে মিষ্টির বাক্সে কতটা লাঞ্ছনা ভরা ছিল! কে খবর রেখেছে, পাড়ার কোন জেঠিমা হাসিমুখে ঠাকুরের সব বাসন রোজ মেজে দিয়ে যান, বিনিময়ে সামান্য কিছু টাকা পাবেন বলে!

এ অনেকটা পাড়ার কদমগাছটার মতো। গাছ যেমন জন্মায়, তেমন জন্মাল, বড় হল। পাখিরা এসে ডালে বসল, আশপাশের আগাছা বড় হল, বেশি বড় হলে লোকে কেটে দিয়ে গেল। গাছ বড় হল, শক্ত হল, ফুল হল না কেন, তা নিয়ে পাড়ায় আলোচনা হল। তার পর ফুল হল। নিয়মিত ফুল হত, তার পর এক দিন কেটে দিয়ে গেল, জমি বিক্রি হয়ে গিয়েছে। এখন সেখানে বহুতল, কোথায় যে ঠিক গাছটা ছিল, তলার মাটি ছাড়া কেউ জানে না। গাছেরা শিকড়ে শিকড়ে কথা বলে, কে জানে কোন শিকড়ে তার শিকড় জড়িয়েমড়িয়ে আছে। ফিসফিস করে বলছে সে অকালে মরে গেল কেন। আর প্রাণপণ চেষ্টা করছে উঠে দাঁড়ানোর, অন্য কোনও জায়গায় শহর ফাটিয়ে। স্মৃতি ফাটিয়ে। যখন ছিল, মনে হত না তার গল্প শুনি। যখন থাকল না, মনে হল আরও কেন শুনলাম না!

কেউ কেউ আবার ফিরেও আসে। এই পুজোয়। সরস্বতী পুজোর একটি পাড়ার অনুষ্ঠানে শুনছিলাম, এক জন গান গাওয়ার আগে বলছেন, ‘আমি এই পাড়ারই মেয়ে, এই স্কুলে পড়েছি, অনুষ্ঠানে গান গেয়েছি। বিয়ে হয়ে অন্য জায়গায় চলে গিয়েছিলাম। এত বছর পরে আবার পাড়ায় গান গাইতে পেরে খুব ভাল লাগছে। আর মজা হল, এই যে আজকের সঞ্চালিকা, ও আমার বন্ধু, কত বছর পরে দু’জনে আবার এক সঙ্গে স্টেজে রয়েছি।’ দর্শক-শ্রোতা সব পাড়ারই মানুষ, তাঁরা হাততালি দিলেন।

এত সব টুকরো টুকরো কথা মনে হল একটা লেখা পড়ে। আমেরিকার একটি বিখ্যাত পত্রিকায় জেন ব্রক্স লিখেছিলেন নীরবতা আর রেডিয়োর কথা। প্রবাসে মায়ের বান্ধবী বলেছিলেন, ‘ফ্ল্যাটে ঢুকে টিভিটা আগে চালিয়ে দিস কেন? মনে হয় কেউ আছে?’ ভেবে দেখিনি, হয়তো তাই। ঠাকুমা একটা পিঁড়ি পেতে বসতেন, বিকেল সাড়ে ছ’টা থেকে আটটায় খবর শেষ হওয়া পর্যন্ত সব শুনতেন, জপের মালা হাতে নিয়ে। নিজের মনেই মন্তব্য করতেন। আমরাও করি। আমরা সকলে করি, নিজের মনে করি, পরস্পরের সঙ্গে করি। এখন যাঁরা সিরিয়াল দেখেন, মুগ্ধ হয়ে দেখেন, অন্যরা বুঝেই পান না কী করে দিনের দিনের দিন, ঘণ্টার পর ঘণ্টা এমন কিছু দেখা যায়। কিন্তু ওটাও একটা নিত্যদিনের সন্ধ্যাপুজো। যাকে চিনি না জানি না কিন্তু চিনে নিয়েছি খুব তাড়াতাড়ি, আমার পাশে থাকা লোকটার থেকেও সে আপন, কারণ সে আমার একাকিত্ব, আমার নিঃসঙ্গতা ভেঙে দিয়েছে। সে আমার সঙ্গী। যেমন বই, যেমন রেডিয়ো, যেমন কানের হেডফোন, তেমন, এক-এক জনের এক-এক রকম সঙ্গী।

তেমনই এই পুজোটা, ধরা যাক, আকাশে নীল মেঘ এল, কাশেরা দুলল, চাঁদ আলো করে দিল, কিন্তু কেউ ক্যাপ ফাটাল না, কেমন লাগবে? কেমন লাগবে যদি ভোরে ঢাকটা না বাজে? যদি গাঁকগাঁক করে কেউ না বলে, আমাদের অঞ্জলি শুরু হয়ে গিয়েছে? আবার দুপুর একটু বাড়তেই থেমে যাবে মাইকটা, নিস্তব্ধ হয়ে যাবে দুপুর, ঠিক সেই মুহূর্তটায় হয়তো কিছুটা বিষণ্ণ লাগবে, পুজোর রোদটা আস্তে আস্তে মরে আসবে, তেমনই ঠিক রাতেও আকাশভরা তারা থাকবে, কানকে আরাম দিয়ে থেমে যাবে মাইক, পর দিন সকালেই বেজে উঠবে বলে। উড়ে আসবে পেঁচা, ঠিক লক্ষ্মীপুজোর দিন। শাঁখ বাজবে। ছোট লুচি আর সুজি দেবে বড়পিসিমা। মা পেঁচা আঁকবে বারান্দা জুড়ে আর জ্যোৎস্নাটা ঠিক সেইখানে এসে পড়বে রাতে। নিস্তব্ধতা, শব্দ, একাকিত্বের বন্ধুত্বের কাটাকুটি খেলাটা চলবে সারা পুজোটা জুড়ে। আর তার শুরু করে দেবে মহালয়ার ভোর। যে যেখানেই থাকুক, রেডিয়ো, ইউটিউবে ভেসে উঠবে ‘আজ প্রভাতে যে সুর শুনে...’ সকলের একা থাকা, দ্বীপের মতো একা থাকাটা জুড়ে দেওয়ার একটা শেষ চেষ্টা করে যাবে বছরের পর বছর জুড়ে। কাউকে কাউকে বিষণ্ণতায় টানবেন টি এস এলিয়ট— ‘উই আর দ্য হলো মেন/ উই আর দ্য স্টাফ্ড মেন/ লিনিং টুগেদার/ হেডপিস ফিল্‌ড উইথ স্ট্র। অ্যালাস!/ আওয়ার ড্রায়েড ভয়েসেস, হোয়েন/ উই হুইস্পার টুগেদার/ আর কোয়ায়েট অ্যান্ড মিনিংলেস...’ আর ঠিক সেই সময় মহিষাসুরমর্দিনী-র মতো মানুষের তৈরি গান আমাদের টেনে নেবে ভোরের নরম আলোয়।

মফস্সলের প্যান্ডেলে অনিবার্য ভাবে হেমন্ত গাইবেন, ‘সে দিন তোমায় দেখেছিলাম ভোরবেলায়, তুমি ভোরের বেলা হয়ে দাঁড়িয়েছিলে কৃষ্ণচূড়ার ওই ফুলভরা গাছটার নীচে...’ কী অদ্ভুত! পুজোয় শোনা এই গানটার মতোই পিসিমণিরা, বৌদিরা, কাকিমারা, মায়েরা। আর যাদের না হলে চলে না তারাও। পিতৃপুরুষের তর্পণের মতো দেবীপক্ষে বছরের পর বছর যাঁরা না জেনেই মনে করিয়ে দেন আগের প্রজন্মকে, যাকে আমরা ভারী ভাষায় ‘ঐতিহ্য’ বলে থাকি।

এই যে ভোরের বেলা হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলে, চন্দন ঘষলে, ফুলের মালা গাঁথলে, ফুলের পাপড়ি ছিঁড়ে ঝুড়ি ভরলে, নিলে বেলপাতা, তোমার পিঠ ব্যথা করল, কেউ দেখল না। তুমি নাড়ু বানালে, কেউ তোমাকে খেতে বলল না। তুমি আকুল হয়ে নিজেকে সঁপে দিলে একটা মাটির প্রতিমার বুকে, যার দশ হাতে অস্ত্র, সে সকলের সামনে তোমাকে জড়িয়ে ধরতে পারল না ঠিকই, কিন্তু তুমি জানলে সে কাঁদছে, তোমার জন্য কাঁদছে, তুমি হয়ে কাঁদছে। লোকে ভাবল সে চলে যাচ্ছে বলে কাঁদছ, আসলে তুমি কাঁদছ তোমার নিজের জন্য। যে জীবনটা, হয়তো বাকি বছরটা তোমাকে বাঁচাবে তোমার নিজের মতো করেই, অথবা অন্য কারও ইচ্ছেয়, কিন্তু সেই মুহূর্তে তোমার খুব কাঁদতে ইচ্ছে হল, গভীর সুখে অথবা দুঃখে, কারণ তুমি জানতে একটা মাটির মূর্তি, একটা মাটির প্রতিমা, একমাত্র সেই তোমাকে অঙ্গবিহীন জড়িয়ে ধরতে পারে। কিছু না চেয়ে। সে-ও তো একা। কারণ, একা রাখতে নেই জেনেও আজকাল লোকে প্রতিমাকে একা রাখে, কারও সময় নেই সঙ্গে থাকার, দিনভর মোচ্ছবের পর। সে বুঝবে না? তুমি কত একা, সকলের মধ্যে থেকেও!

পিসিমণি, শিউলিগাছ, পুজোয় একটাই জামা পাওয়া ফুটপাতের বালিকা, পুজোর বাসন মাজতে মাজতে ক্লান্ত জেঠিমা, ঝলমলে বৌদি, ফুলঝুরি জ্বালাতে জ্বালাতে হঠাৎ বুঝতে পারা পুজোর আনন্দ পাওয়া কিশোরী, মাথার উপর পড়া হিম নিয়ে, ঘুমে ঢুলে আসা চোখ নিয়ে কাঁসি বাজানো বালক, বিচ্ছেদ অনিবার্য জেনেও যে খেলতে গিয়েছিল সিঁদুর, পুজোয় যাদের না হলে চলে না, সেই নামী-অনামী তোমরা— তোমাদের সকলের জন্য সুপ্রীতি ঘোষ গাইছেন, ‘আজ প্রভাতে যে সুর শুনে খুলে দিনু মন।’ আকাশপ্রদীপ শুধুই পূর্ব-পুরুষের জন্য জ্বলে না। মানুষীর জন্য জ্বলে। মানুষী তাকে জ্বালিয়ে রাখে। প্রতিমা চলে যায়, একা দীপ জ্বলে, দেখোনি?

তোমরাই তো জানো, যে চার সন্তানের জননী, তার মতো সমপ্রেমী কে আছে আর?

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement