John Keats

আমি ভয় পাই তাকে চিঠি লিখতে, তার চিঠি পেতেও

বন্ধুকে লিখেছিলেন কবি কিট্স। কারণ চিঠির খামে বাগদত্তার নাম লেখা আছে দেখলে কষ্ট হত তাঁর। প্রেমিকা ফ্যানি ব্রনের না-খোলা চিঠি নিয়েই তাঁর শেষ যাত্রা। মৃত্যুর ৫৭ বছর পর বই হয়ে বেরোয় প্রেমিকাকে লেখা তাঁর চিঠিগুলি। এই অক্টোবরেই কবির ২২৫তম জন্মদিন।ফ্যানিকে লেখা কিট্‌সের প্রেমপত্রগুলি তাঁর মৃত্যুর ৫৭ বছর পর, ১৮৭৮ সালে বই আকারে প্রকাশিত হয়। তত দিনে কিট্স কবি হিসেবে বিখ্যাত।

Advertisement

সত্যরঞ্জন দাস

শেষ আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০২০ ০০:২৬
Share:

স্মৃতিচিত্র: হ্যাম্পস্টেডে ‘কিট্‌স হাউস’-এ জন কিট্‌সের চিত্র। পাশের ছবিতে ফ্যানি ব্রন। ছবি: গেটি ইমেজেস

হেমন্তের কোনও এক দিন। সালটা ১৮১৯। ঘটনাস্থল, লন্ডনের হ্যাম্পস্টেড। ঘটনা, এক তরুণ কবির সঙ্গে তাAর অষ্টাদশী প্রেমিকার বাগ্‌দান। কবির নাম তখন কেউ জানে না। সে অতি দরিদ্র। মোটে কয়েক মাসের প্রেম, কিন্তু বাগ্‌দানের এই কাহিনি আনন্দ আর বেদনার সেলোফেনে মোড়া। সে দিন কবি জন কিট্স আর ফ্যানি ব্রনের প্রেমের কথা ঘনিষ্ঠ ক’জন বন্ধু জানলেও বাগ্‌দানের বিষয়টি প্রায় কেউই জানতেন না। এমনকি জোসেফ সেভার্ন, যিনি কবির রোমযাত্রায় সঙ্গী হয়েছিলেন, সঙ্গে ছিলেন তাঁর শেষ দিনগুলির একমাত্র সহচর হয়ে, তিনিও এই বাগ্‌দানের ব্যাপারে ছিলেন অন্ধকারে। প্রেমকে একান্ত গোপন রাখতে চেয়েছিলেন যিনি, তাঁর বাগ্‌দানও এমন নিভৃতে হবে, এটাই স্বাভাবিক।

Advertisement

ফ্যানিকে লেখা কিট্‌সের প্রেমপত্রগুলি তাঁর মৃত্যুর ৫৭ বছর পর, ১৮৭৮ সালে বই আকারে প্রকাশিত হয়। তত দিনে কিট্স কবি হিসেবে বিখ্যাত। বই প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে হইহই পড়ে যায় ইংল্যান্ড ও আমেরিকায়। অকালপ্রয়াত কবির অজানা প্রেমকাহিনি নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠল! ভিক্টোরীয় রুচির বিচারে এই বই কি প্রকাশযোগ্য! কবির একান্ত ব্যক্তিগত আবেগ-অনুভূতি জনসমক্ষে এনে ফেলার জন্য নিদারুণ আক্রমণের মুখোমুখি হতে হয় এই বইকে। ফ্যানি ১৮৬৫-তে মারা গিয়েছিলেন। ছাড় পেলেন না তিনিও। সমালোচনা হল, তিনি কিট্‌সের যোগ্য ছিলেন না। অনেকে কিট্‌সের রুচি সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করেন।

১৮৮৫ সালে বিখ্যাত সংস্থা সদবি-র নিলামে উঠল চিঠিগুলো। দাম উঠল ৫৪৩ পাউন্ড। ক্ষুব্ধ অস্কার ওয়াইল্ড তাঁর এক কবিতায় এই নিলামকে এক কবির অন্তরের স্ফটিকপাত্র ভেঙে ফেলার সঙ্গে তুলনা করেছিলেন। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে গবেষকদের কাছে চিঠিগুলো আলাদা গুরুত্ব পায়। কিট্‌সের চিঠিগুলোর মধ্যে ব্যক্তিগত মালিকানায় থেকে যাওয়া শেষ চিঠিটি ২০১১ সালে লন্ডন পৌরনিগম কিনে নেয় ৯৬,০০০ পাউন্ড দিয়ে।

Advertisement

কিট্‌সের জন্ম ৩১ অক্টোবর, ১৭৯৫। ফ্যানির সঙ্গে কিট্‌সের প্রথম আলাপ যখন, তখন যক্ষ্মায় আক্রান্ত ছোটভাই টম-কে নিয়ে তাঁর গভীর দুশ্চিন্তা। আট বছর আগে এই রোগ কেড়ে নিয়েছিল তাঁর মায়ের জীবন, তখন কিট্স আর তাঁর দু’ভাই স্কুলে। ক’মাস পর এই ঘাতক রোগ টমকেও সরিয়ে দিল পৃথিবী থেকে। তখন যক্ষ্মার ওষুধ ছিল না। ভাইকে হারানোর বেদনা কিট্সকে পাথর করে দিল। ১৮১৮-র ১ ডিসেম্বর, নিঃসঙ্গ শোকাতুর জনকে বন্ধু ব্রাউন প্রস্তাব দিলেন তাঁর বাড়িতে এসে থাকার। দুঃখ ভুলতে বন্ধুর ভাড়াটে হিসেবেই থাকতে এলেন তিনি। কবি হিসেবে শুরু করলেন নতুন জীবন। এর আগে প্রকাশিত ‘এন্ডাইমিয়ন’-এর ওপর রক্ষণশীল সমালোচকদের কুৎসিত আক্রমণের স্মৃতি ঝেড়ে ফেলে আবার লিখতে শুরু করলেন।

মাসচারেক পর ওখানকারই এক প্রতিবেশীর বাড়িতে ভাড়াটে হিসেবে উঠে এলেন বিধবা মা, ভাই আর বোনের সঙ্গে— ফ্যানি। আলাপচারিতা গড়াল প্রেমে। উচ্ছল মধুবসন্তে কিট্‌সের হৃদয়ের দু’কূল উজাড় করে এল প্রেম আর কবিতা। কিট্স লিখলেন তাঁর কালজয়ী কবিতাগুলি, বিখ্যাত ‘ওড’গুলিও। ১৮১৯-এর এই সৃষ্টিসম্ভার পরবর্তী সময়ে তাঁকে ইংরেজিতে সর্বকালের শ্রেষ্ঠ রোম্যান্টিক কবিদের অন্যতম হিসেবে স্থান দিয়েছে।

কিন্তু প্রেমের গোলাপে কাঁটাও ছিল। সন্দেহের, ঈর্ষার কাঁটা। অনুরাগীর অভাব ছিল না ফ্যানির। তাদের প্রতি চঞ্চল ফ্যানির মনোযোগ, স্থানীয় মিলিটারি ব্যারাকে নাচের অনুষ্ঠানে তার নিয়মিত যোগদান কিট্‌সের চোখে না পড়ে যায় কোথায়! মনের আকাশে মাঝে মাঝেই ঘনিয়ে আসে কালো মেঘ। প্রেমের টানাপড়েন যাতে কাব্যচর্চার পথে অন্তরায় না হয়, তাই কিট্স লন্ডন ছাড়লেন। গেলেন পোর্টসমাউথ, উইনচেস্টার ও আরও কয়েকটি জায়গায়। কবিতার সঞ্চয় বাড়ল। তবে দূরে থেকেও প্রিয়ার উদ্দেশে চিঠি লেখা চলেছিল নিয়মিত।

এই সময় থেকেই ফ্যানিকে লেখা কিট্‌সের চিঠিগুলো পাওয়া যায়। বন্ধুদের লেখা কিট্‌সের চিঠিগুলো অমর হয়ে গেছে সেগুলোয় মণিমুক্তোর মতো ছড়িয়ে থাকা কবিতা সম্পর্কে তাঁর মতামতের জন্য। আর ফ্যানিকে লেখা চিঠিগুলো অমর হয়েছে তাঁর অনুভূতির তীব্রতার জন্য, যা তাঁর কবিতারও বৈশিষ্ট্য। একটি চিঠিতে কিট্স লিখছেন, ‘‘আমরা যদি প্রজাপতি হতাম আর শুধু তিনটে গ্রীষ্মের দিন বেঁচে থাকতাম! তোমার সঙ্গে তিনটে তেমন দিন ভরিয়ে ফেলতাম এমন আনন্দে, পঞ্চাশটা সাধারণ বছরেও যে আনন্দ মিলত না।’’ আর-একটি চিঠির ভাষা আরও আবেগকম্পিত: ‘আমি তোমাকে ছাড়া বেঁচে থাকতে পারব না।... মানুষ ধর্মের জন্য মরতে পারে ভেবে আমি অবাক হয়ে গেছি... কেঁপে উঠেছি। এখন আমি আর কেঁপে উঠি না। আমিও মরতে পারি আমার ধর্মের জন্য। প্রেম আমার ধর্ম, আমি তার জন্য মরতে পারি। আমি তোমার জন্য মরতে পারি। এই ভালবাসার বিহনে আমি শ্বাস নিতেও পারি না।’

অবশ্য ১৮২০-তে যক্ষ্মার লক্ষণ দেখা দেওয়ার পরে তার চিঠিতে স্পষ্ট হয়ে ওঠে সন্দেহকাতর প্রেমিকের অস্থিরতা— ‘‘যে দিন থেকে তোমার সঙ্গে পরিচয়, সে দিন থেকে একটা আশঙ্কা আমার সবচেয়ে বড় যন্ত্রণার কারণ— তুমি যদি ক্রেসিডার মতো হও!’’ শেক্সপিয়রের বিশেষ অনুরাগী ছিলেন কিটস। ট্রয়ের যুদ্ধের পর লেখা শেক্সপিয়রের কবিতা ‘ট্রয়লাস অ্যান্ড ক্রেসিডা’ থেকে বিশ্বাসভঙ্গকারী ক্রেসিডার উদাহরণ দিয়েছিলেন তিনি। ফ্যানিকে লেখা তাঁর শেষ চিঠিতে নিজেকে তিনি হ্যামলেটের সঙ্গে তুলনা করেন। হ্যামলেট এক সময় তার প্রেমিকা ওফেলিয়া তথা সমগ্র নারীজাতির প্রতি সন্দেহপরায়ণ হয়ে বিষোদ্গার করেছিল। ১৮২০-র ৮ অগস্ট সেই চিঠিতে কিট্স লিখেছিলেন, ‘‘হ্যামলেট যখন ওফেলিয়াকে বলেছিল ‘মঠে চলে যাও’, তার হৃদয় আমারই মতো বেদনায় দীর্ণ হয়েছিল।’’

কিট্স হ্যাম্পস্টেডে ফিরে এলেন অক্টোবরে। দীর্ঘ অদর্শনের পর আবার যখন ফিরে এলেন ফ্যানির কাছাকাছি, প্রেমের আকর্ষণ হল তীব্রতর। প্রেয়সীকে একান্ত আপন করে পাওয়ার কামনায় ছটফট করে উঠল মন। কিন্তু অর্থের সমস্যা যে মারাত্মক! বিয়ের স্বপ্ন পূরণ হবে কী করে? ফ্যানির মা প্রথমে এ রকম সঙ্গতিহীন পাত্র পছন্দ করতে পারেননি। কিন্তু দুটি হৃদয়ের আকর্ষণ পরাস্ত করেছে তাঁর আপত্তিকে। হেমন্তের এক ধূসর দিন উজ্জ্বল হয়েছে প্রেমের অঙ্গীকারে।

ক্রমে অর্থসমস্যার চেয়েও ভয়ানক হয়ে দেখা দিল স্বাস্থ্যসঙ্কট। বাগ্‌দানের ক’মাস পরেই অশুভ সঙ্কেত। আগের বছর সন্দেহ দেখা দিয়েছিল, এ বার নিরন্তর কাশির দমকে উঠতে শুরু করল ভলকে ভলকে রক্ত। চার-পাঁচ বছর ধরে এক চিকিৎসকের কাছে শিক্ষানবিশির পর প্রায় এক বছর হাসপাতালে চিকিৎসকের প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন কিট্স। রক্তের রং চিনতে ভুল করলেন না। বলে উঠলেন, ‘এই রক্ত আমার মৃত্যুর পরোয়ানা।’ সরে যেতে চাইলেন প্রেমিকার জীবন থেকে। আবেগতাড়িত ফ্যানি রাজি হলেন না। কিট্স ফ্যানিকে চিঠিতে লিখেছিলেন: ‘‘কী আঘাতই না আমি পেতাম যদি তুমি আমার (দূরে সরে যাওয়ার) প্রস্তাবে সায় দিতে, যদিও সেটাই হত যুক্তিসঙ্গত।’’ অদ্ভুত পরিস্থিতি! প্রেমের সুধাপাত্র নাগালেই, অথচ তাকে ছোঁয়া যাবে না। এই অপূর্ণ প্রেমকাহিনি যেন গ্রিক পুরাণের ট্যান্টালাসের সঙ্কটের পুনরাবৃত্তি।

প্রেমে সন্দেহের কাঁটা আর ঈর্ষার বিষ ছিলই। কিন্তু বাগ্‌দানের ক’দিন পরেই নিশ্চিত মৃত্যুর ছায়া যখন এসে পড়ল তাঁর মাথায়, অপূর্ণ প্রেমের বেদনা মনে তীব্র অস্থিরতা সৃষ্টি করল। শারীরিক অসুস্থতা হয়ে উঠল আরও অসহনীয়। সংক্রামক ব্যাধি, তাই ডাক্তার এবং বন্ধুবান্ধবরা পরামর্শ দিলেন ফ্যানির সঙ্গে যথাসম্ভব কম দেখা করতে। কিন্তু হৃদয়ের আকুতি নিষেধ মানবে কেন? মা ও ব্রাউনের আপত্তি সত্ত্বেও ফ্যানি প্রতিদিন পাশের বাড়িতে মুহূর্তের জন্য হলেও এক বার দেখা দেবেই। হাতে দু’-একটি কথা লেখা ছোট্ট চিরকুট। উল্টো দিক থেকেও পৌঁছত চিরকুট। কিট্সকে লেখা ফ্যানির চিঠিগুলো হারিয়ে গেছে। অকালে শেষ হয়ে যাওয়া কবির জীবনের মতো।

এক সময় খরচ কমাতে ব্রাউনের বাড়ি ছেড়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলে ঘর ভাড়া নিয়ে চলে যেতে হল কিট্সকে। মাঝে মাঝে ফ্যানিকে দেখার সুযোগটুকুও আর রইল না। এক দিন মানসিক যন্ত্রণার এক চূড়ান্ত মুহূর্তে ইতিউতি ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎ হাজির হলেন ফ্যানিদের বাড়ির সামনে। অসুস্থ ক্লান্ত কিট্সকে দেখে ফ্যানির মা থাকতে না পেরে ডেকে নিলেন ভিতরে। মা ও মেয়ের অক্লান্ত সেবা ও আন্তরিকতায় কেটে গেল মাসদেড়েক। এই সময়টিকে কিট্স তাঁর জীবনের সেরা সুখের সময় বলেছেন।

তখন গ্রীষ্মের শেষ। শীতের দুঃসহ আবহাওয়া এড়ানোর জন্য ডাক্তার পরামর্শ দিলেন রোমে যাওয়ার। স্বাস্থ্যোন্নতির আশায় কিট্স মেনে নিলেন সে পরামর্শ। বুক ভেঙে গেল ফ্যানির কাছে বিদায় নিতে। ১৮২০ -র ১৩ সেপ্টেম্বর ফ্যানিকে ছেড়ে যাওয়ার সময় ফ্যানির কাছ থেকে উপহার পেলেন ভিতরে সিল্কের আবরণ দেওয়া একটি টুপি, একটি ডায়েরি, চিঠি লেখার জন্য কিছু কাগজ আর জ্বরে তপ্ত হাত ঠান্ডা করার একটি মার্বেল, যেটি ফ্যানির সেলাইয়ের সময় হাত ঠান্ডা করতে কাজে লাগত। জাহাজে চাপলেন কিট্স। বুকে বিচ্ছেদের দুঃসহ বেদনা। আসন্ন দিনগুলো কী নিয়ে আসবে তাঁর জন্য ভাবলেই বুক কেঁপে ওঠে। নেপল্‌স থেকে ব্রাউনকে চিঠিতে লিখলেন, ‘‘আমি ভয় পাই তাকে চিঠি লিখতে, তার চিঠি পেতেও। তার হাতের অক্ষর দেখলে, তার কথা কোনও ভাবে শুনলেও আমার বুক ভেঙে যাবে। তার নাম লেখা আছে দেখলেও আমি সহ্য করতে পারব না।’’ ব্রাউনকে একই চিঠিতে লিখলেন, ‘‘আমার কল্পনায় সে অত্যন্ত জীবন্ত। আমি তাকে দেখতে পাই, তার কথা শুনতে পাই। দুনিয়ায় তেমন আগ্রহের আর কিছু নেই যে তার কাছ থেকে এক মুহূর্ত আমাকে সরিয়ে রাখবে।’’

প্রিয়তমার থেকে বহু দূরে কবির শেষ প্রহরগুলি কেটেছিল গভীরতম বিষাদে। ফ্যানির চিঠি খোলার সাহস হত না। হাতে ধরা থাকত তার দেওয়া মার্বেলটি। পোস্টমর্টেমে দেখা গিয়েছিল যক্ষ্মায় ফুসফুসগুলো একদম ঝাঁঝরা— হৃদয়েরও কিছু অবশিষ্ট ছিল কি? ফ্যানির পাঠানো শেষ চিঠি খোলেননি কিট্স, ওটা তার এক গোছা চুলের সঙ্গে তাঁর সমাধিতে রেখে দিতে বলে গিয়েছিলেন। যেমন বলেছিলেন লিখে দিতে: ‘‘এখানে শায়িত এমনই এক জন, জলে লেখা হয়েছিল যার নাম।’’ কবি হিসেবে সমালোচকদের কাছে বরাবর নিদারুণ অবজ্ঞার শিকার হয়েছিলেন কিট্স, তাঁর বেদনা প্রকাশের আর কী ভাষা থাকতে পারে!

আর ফ্যানি? ১৮২১-এর ২৩ ফেব্রুয়ারি সব শেষ হয়ে যাওয়ার বাইশ দিন পর খবর পৌঁছল তাঁর কাছে। তখন কিট্‌সের ফেরার আশা শেষ। শোক সামলে উঠে সে খবর দিতে চিঠি লিখলেন কিট্‌সের বোনকে। আশ্চর্য শান্ত ফ্যানি কবির বোনকে লিখলেন, ‘‘দুঃখ শুধু একটাই, কাছে ছিলাম না আমি।’’ শেষ সময়ে কাছে থাকতে না পারার বেদনায় যে-ডাক্তাররা কবিকে বিদেশ যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন, তাঁদের নির্বোধ আর হৃদয়হীন বললেন। কিট্সকে হারানোর তিন মাস পর ফ্যানি কবির বোনকে লিখেছিলেন: ‘‘আমি এটা ভুলতে পারছি না, সারা জীবন পারবও না।’’ কিট্‌স চিরবিদায় নেওয়ার পর ছ’বছর পর্যন্ত তাঁকে শোকের পোশাক পরতে দেখা যেত।

আরও চার বছর পর লুই লিন্ডনকে বিয়ে করলেও ১৮১৯ সালে পাওয়া বাগ্‌দানের আংটিটি শেষ দিন পর্যন্ত আঙুলে পরে থেকেছেন। এই আংটিটি এখন হ্যামস্টেডে কিট্স হাউসে রাখা আছে। ১৮২৯-এ ব্রাউনকে ফ্যানির লেখা এক চিঠিতে বোঝা যায় কিট্স পৃথিবী থেকে বিদায় নেওয়ার আট বছর পরও প্রেমিকার স্মৃতিতে উজ্জ্বল তাঁর উপস্থিতি।

১৮১৯-এর সেই অষ্টাদশীর আবেগময় অনুভূতির তীব্রতা হয়তো পরবর্তী জীবনে ছিল না। কিন্তু তিনি সারা জীবন সঙ্গে রেখে দিয়েছিলেন তাঁকে লেখা কিট্‌সের ৩৯টি চিঠি। মৃত্যুর পরেও বহু বছর কবিখ্যাতি জোটেনি কিট্‌সের কপালে। সুতরাং কোনও খ্যাতির লোভে ফ্যানি চিঠিগুলো রেখে দেননি। তিনি সম্ভবত এগুলো রেখে দিয়েছিলেন জীবনের পরম সঞ্চয় হিসেবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement