চিত্রশিল্পী সুনয়নী দেবী। তাঁর দুই দাদা অবনীন্দ্রনাথ ও গগনেন্দ্রনাথ। তিনি আঁকায় ধরেছিলেন লোকশিল্প ও পৌরাণিক বৈশিষ্ট্য।
painting

Sunayani Devi: দাদাদের প্রভাব এড়িয়েই গড়ে তোলেন স্বকীয়তা

যখন মেয়েরা ছবিই আঁকত না, তিনি আত্মপ্রতিকৃতি এঁকে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন তাঁর লক্ষ্য।

Advertisement

রিম্পি

শেষ আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৮:৩১
Share:

শিল্পসাধিকা: সুনয়নী দেবী।

রবি ঠাকুরের ‘যোগাযোগ’ উপন্যাসের কুমুর কথা মনে আছে? দাদা বিপ্রদাসের কাছে কত কিছু শিখেছিল সে। ঘোড়ায় চাপা, বন্দুক চালানো, এস্রাজ বাজানো, দাবা খেলা, ছবি তোলা। ভাই-বোন নয়, দুই ভাইয়ের মতো যেন তাদের বড় হয়ে ওঠা। এত করেও অবশ্য বিপ্রদাস কুমুর মনের সবটুকু পিছুটান, মেয়ে-হওয়ার অন্ধ-সংস্কার দূর করতে পারেনি। কাজটা কঠিন, তবে বিশ শতকে কোনও কোনও বাঙালিনি স্বাধীন ভাবনা ও কাজ নিয়ে আত্মপ্রকাশ করছিলেন। উনিশ শতকে নারীদের অধিকার নিয়ে নানা আন্দোলন হয়েছিল বলেই বিশ শতকের মেয়েরা তুলনায় মুক্ত। আর এই মুক্তি ঠাকুরবাড়ির মেয়েদের জীবনে সেই উনিশ শতক থেকেই ধরা দিয়েছিল নানা ভাবে। বঙ্গদেশের এই বাড়িটি সব দিক থেকেই অন্য রকম। কুমুর মতো পিছুটানের শিকার সেখানে সবাই হন না। যেমন প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুরের পৌত্র গুণেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও সৌদামিনী দেবীর কন্যা, সুনয়নী। রাজা রামমোহন রায়ের দৌহিত্র রজনীমোহন চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে খুব অল্প বয়সে বিয়ে হওয়ার পরে জোড়াসাঁকোর পাঁচ নম্বর বাড়িতে শুরু হয়েছিল তাঁর সংসার। দীর্ঘ দিন ছিলেন এই বাড়িতেই। ফলে খুব কাছ থেকে দেখতে পেতেন নিজের দুই দাদা, অবনীন্দ্রনাথ ও গগনেন্দ্রনাথের ছবির জগৎ। শুধু কি আঁকা? গানে, লেখায়, অভিনয়ে তিনি যেন সরস্বতী।

Advertisement

রবীন্দ্রনাথ তখন কলকাতায়। ‘বিচিত্রা’ হলে বর্ষামঙ্গল অনুষ্ঠানের জন্যই তাঁর আসা। সুনয়নী দেবী সে খবর পেয়ে নিজে গিয়ে নিয়ে এলেন রবীন্দ্রনাথকে। বেনেপুকুরে তাঁর নিজের বাড়ি। সেখানেই দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের ‘বিরহ’ বইটির অভিনয়ের আয়োজন করা হয়েছিল। রবীন্দ্রনাথ আসায় খুশি হল সকলে। সুনয়নী দেবীর চার ছেলে-বৌ ছাড়া আরও অনেকে মিলে সে দিন অভিনয় করলেন। দেখে রবীন্দ্রনাথ ভীষণ আনন্দিত। প্রশংসাও করলেন সকলের। এ রকম নাটকের আয়োজন অবশ্য এই প্রথম নয়। জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির পাঁচ নম্বর বাড়িতে যখন থাকতেন সুনয়নী দেবী, তখনও তিনি বাড়ির ছোটদের নিয়ে এ ভাবেই নাটক করাতেন, গান শেখাতেন। ঠাকুরবাড়ির লোকারণ্য থেকে কখনও আবার নিজেকে সরিয়ে আনতেন তাঁর আপন জগতে। সে জগৎ লেখায়, আঁকায়, গানে ভরা। প্রতিমা দেবীর স্মৃতিকথায়, তাঁর মাসি সুনয়নী দেবীর এই আপন জগতের খোঁজ পাওয়া যায়— ‘মাঝে মাঝে আমরা শুনতে পেতুম সেতারের ঝংকার। লোকারণ্য বাড়ি থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়ে আপন জগতের মধ্যে সংগীতসাধনায় মগ্ন থাকতেন তিনি। দ্বিপ্রহরের পর বাড়িসুদ্ধ লোকের যখন বিশ্রামের সময়, মাসি তখন আপন মনে ইংরেজি ডিকসনারি নিয়ে পড়াশুনো করতেন।’ এ সুনয়নীর নিজের ঘর, একার ঘর— আত্মপ্রকাশের ঘর। মেয়েদের নিজের একটা ঘর চাই, এই দাবি বিশ শতকে নানা ভাবে উঠতে শুরু করেছিল। রবীন্দ্রনাথের মৃণাল নিজের ঘর পেল না বলেই তাকে কলকাতার গলি ছেড়ে স্বামীর চরণতলাশ্রয় ছিন্ন করে চলে যেতে হয়েছিল। ভার্জিনিয়া উলফ মেয়েদের কলেজে নিজের ঘর নিয়ে যে বক্তৃতা দিয়েছিলেন সে ১৯২৯ সালের কথা, সে বছরই প্রকাশিত হয়েছিল রবীন্দ্রনাথের ‘শেষের কবিতা’ আর ‘যোগাযোগ’। ‘শেষের কবিতা’-র লাবণ্য আর্থিক দিক দিয়ে স্বনির্ভর। অমিতকে, অমিতর সঙ্গে দিনযাপনের স্বপ্নকে প্রত্যাখ্যান করেছিল সে। সুনয়নীর সৌভাগ্য, জীবনে অনুকূল সামাজিক ও পারিবারিক পরিবেশ পেয়েছিলেন তিনি। তবে পরিবেশের আনুকূল্য পেলেই তো সবাই আত্মপ্রকাশ করতে পারেন না, সুনয়নী পেরেছিলেন।

এক দিন অবনীন্দ্রনাথের কাছে শিখতে শুরু করলেন ওয়াশ পদ্ধতিতে ছবি আঁকার কৌশল। সুনয়নী দেবী তখন তিরিশের দোরগোড়ায়। রং-তুলির ভিতর নতুন করে নিজেকে খুঁজে পেলেন। সেতারের বদলে বসলেন রং-তুলি নিয়ে। দাদাদের থেকে ছবি আঁকায় অনুপ্রাণিত হলেও তাঁর ছবি অবনীন্দ্র-গগনেন্দ্রর প্রভাব থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত। অবনীন্দ্রনাথ তখন আর্ট কলেজের উপাধ্যক্ষ। গগনেন্দ্রনাথ, সুনয়নী দেবীর ছবি দেখে মুগ্ধ হয়ে অবনীন্দ্রনাথকে ‘সার্টিফিকেট’ লিখে দেওয়ার অনুরোধ করলেন। কিন্তু তিনি রাজি হননি। বলেছিলেন, ‘ও যে ধারায় ছবি আঁকছে তার জন্যে আমায় আর সার্টিফিকেট লিখে দিতে হবে না। পরে দেশের লোকের কাছ থেকে ও নিজেই সার্টিফিকেট আদায় করে নেবে।’ তেমনটাই হল। এই ভিন্ন ধারার ছবিই সুনয়নী দেবীকে পরবর্তী কালে নিজের পরিচয় গড়তে সাহায্য করল। দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়ল ছবিগুলি। ১৯২৭ সালে লন্ডনের ‘উইমেন্স আর্ট ক্লাব’-এ তাঁর ছবির প্রদর্শনীও হয়। তাঁর পুত্রও বিদেশে নিয়ে গিয়েছিলেন মায়ের আঁকা বেশ কিছু ছবি। সেগুলি সমাদৃত হয়েছিল, কয়েকটি ছবি বিক্রিও হল সেখানে। কিন্তু বিশ শতকের শুরুতে তো ছবি আঁকার মধ্য দিয়ে মেয়েদের আত্মপ্রকাশ ততটাও প্রচলিত ছিল না। অথচ সেই সময়েই সুনয়নী দেবী আঁকলেন আত্মপ্রতিকৃতি। সালটা ১৯২০। আত্মপ্রকৃতিতে ফুটে উঠল ওয়াশ পদ্ধতিতে আঁকা নিজের স্থিরলক্ষ্য দৃষ্টি। আত্মপ্রতিকৃতিতে নিজেকে যে ভাবে প্রকাশ করলেন তা যেন অন্তরেরই কথা, লক্ষ্য স্থির না হলে কী ভাবে আলাদা হয়ে উঠবেন সবার চেয়ে! পরে অবশ্য ছবি আঁকার জগতে মেয়েদের আত্মপ্রকাশ কিছুটা সহজ হয়েছিল ফোর আর্টস ক্লাবের হাত ধরে। এই ক্লাবের অন্যতম কর্ণধার ছিলেন গোকুলচন্দ্র নাগ। তিনি ছবি আঁকতেন। ছেলেদের পাশাপাশি তাঁদের দলে, ক্লাবের মহিলা চিত্রশিল্পীদের ভূমিকা ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

Advertisement

সুনয়নী দেবীর ছবিতে প্রধানত একাকী মেয়েদের আনাগোনা। শিরোনামহীন একটি ছবির কথা মনে পড়ে। ছাদের ধারে দাঁড়িয়ে আছে মেয়েটি। পরনে নীল শাড়ি। খোঁপায় আর হাতে জড়ানো সাদা ফুলের মালা। বাঁশ গাছের আড়াল থেকে চাঁদ উঁকি দিচ্ছে। সে দিকে তাকিয়েই দাঁড়িয়ে আছে সে। যেন বিভোর হয়ে আছে কোনও কিছু মনে পড়ায়। চোখে তার বিষাদ নেই, শুধু একাকিত্ব যাপন। কার অপেক্ষায় তার এই চেয়ে থাকা? জানে না কেউ। তার নীল শাড়ির গা বেয়ে সাদা ফুলের মালা লুটিয়ে পড়তে দেখে মনে পড়ে যায় বৈষ্ণব পদাবলির নীলাম্বরী রাধার কথা। তার এই একাকিত্বে অপেক্ষা আছে, হয়তো দয়িতের জন্য অপেক্ষমাণ মেয়েটি, কিন্তু বিরহ-বিধুরতা নেই। বিরহে আত্মবিস্মৃত হয়নি— এ যেন নতুন দিনের মেয়ের ছবি। অপেক্ষা ধারণ করতে পারেন তাঁরা।

সুনয়নী দেবীর ছবি ও ছবির নিজস্বতার কথা হয়তো আজ আর তেমন কারও মনে নেই। তবে সত্যজিৎ রায়ের মনে ছিলেন তিনি। ১৯৭৪ সাল তখন। কলকাতায় নিজের বাড়িতে শিল্প নিয়ে পৃথ্বীশ নিয়োগীর সঙ্গে সত্যজিৎ এক দীর্ঘ আলোচনা করেন। সেখানে তিনি সুনয়নী দেবীর ছবির আলো-ছায়ার কাজ, রঙের ব্যবহার নিয়ে কথা বলেছেন। বলেছেন, লাল, নীল, হলুদ, কালো এবং সাদা-ই মূলত ব্যবহার করতেন সুনয়নী। তাঁর ছবির চরিত্রদের চোখ-নাক-মুখে ফুটে উঠেছে বাংলাদেশের ধরন,— ‘তিনি অবনীন্দ্রনাথ-গগনেন্দ্রনাথের পাশাপাশি বসেও একটা অন্য ধরনের কাজ করেছেন। অনেকের জানা নেই, তিনি কিন্তু অনেক ছবি এঁকেছেন-অনেক নষ্ট হয়ে গেছে, বহু ছবি এঁকেছেন ঘর-সংসার করে। গভীর স্নিগ্ধ রঙ। খুব শান্ত গোছের ছবি।’

নিজে এক জন মেয়ে বলেই হয়তো সুনয়নী দেবী মেয়েদের জীবনকে এত সূক্ষ্ম ভাবে তুলে ধরতে পারলেন। ছবির ভিতর প্রকাশ করলেন ভারতীয় মেয়েদের ঘরের কথা, জীবনের কথা। যেন তাঁর নিজের জীবনেরই ছায়া পড়েছে তাঁর আঁকা ছবিগুলিতে। ছবিতে মাঝে মাঝেই দেখা দিয়েছে একাকী নির্জন মনের মেয়েরাও। তাদের এই নির্জনতা দুঃখের নয়। রাণুকে একটি চিঠিতে রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন তাঁর একা একা বসে থাকার কথা। বসে থাকা মানে তো আলস্যযাপন নয়, সৃষ্টিশীলতাকে মনের মধ্যে নির্মাণ করা। রাণুর ভানুদাদার সে যাপন ছিল সুনয়নী দেবীর ভিতরেও। তাই যখন ঠাকুর বাড়ির বারান্দা-লাগোয়া ঘরে তিনি নিজের সৃষ্টিতে মগ্ন থাকতেন, তখন দরজার ও পারের হই-হট্টগোল তাঁকে ছুঁতেও পারত না। প্রতিমা দেবী লিখেছেন, ‘তাঁর ঘরের সামনে ছিল একটি ঢাকা বারান্দা, সেই বারান্দায় আমরা ছেলেমেয়েরা মিলে ছুটোছুটি লুকোচুরি খেলা কত করেছি, কিন্তু মাসির মনকে আমাদের দুরন্তপনা দিয়ে বিক্ষিপ্ত করতে পারিনি।’

এক দিকে সংসারী, আর এক দিকে ‘সংসারবৈরাগী শিল্পসাধিকা’। এই দুই নিয়েই সুনয়নী দেবী। তাঁর এই নিজস্ব যাপন বিশ শতকের স্বাধীনচেতা মেয়েদের কাছে বেশ গর্বের ছিল। সুভাষচন্দ্র বসুর ভ্রাতুষ্পুত্র শিশিরকুমার বসুর স্ত্রী কৃষ্ণা বসু তাঁর স্মৃতিকথায় লিখেছেন, ত্রিশের দশকে পরিবারের বাবা-মা-কাকার মুক্তশিক্ষায় কেমন করে বড় হন তিনি। উত্তর কলকাতা থেকে দক্ষিণের রাসবিহারী অ্যাভিনিউয়ের বাড়িতে এসে বুঝলেন, উত্তরের মতো এ দিকের মেয়েদের আটকে রাখা হয় না। দেশপ্রাণ মিষ্টান্ন ভান্ডারের পাশ দিয়ে হিন্দুস্থান রোড। সেখানে বাস করতেন পরেশলাল সোম, প্রিয়নাথ সেন প্রমুখ উচ্চবিত্ত বাঙালি ভদ্রলোকেরা। সেখানেই ‘উলটোদিকের একটা বাড়িতে থাকেন সুনয়নী দেবী। তিনি ঠাকুরবাড়ির মেয়ে, ছবি আঁকেন’। এ ভাবেই কৃষ্ণা বসুর চোখে, ভদ্রলোকদের মানচিত্রে সুনয়নী দেবী মহিলা হয়েও অনায়াসে ঠাঁই পেয়েছিলেন। কৃষ্ণা বসু পরবর্তী প্রজন্মের নারী, তিনি কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে পেরেছেন, সহশিক্ষার মধ্যে নিজেদের গড়েছেন। সুনয়নীরা আগের প্রজন্মে এসেছিলেন
বলেই তাঁদের পথ খুলে গিয়েছিল। মেয়েবেলায় কৃষ্ণার মনে সুনয়নীর কথা ছাপ ফেলেছিল বলেই বড়বেলার স্মৃতিকথায় উঠে এল সেই
বাড়িটির প্রসঙ্গ।

দায়িত্বশীলা মা হয়েও, বড় সংসারের গৃহিণী হয়েও তিনি ছবি আঁকলেন অজস্র। পাতার দু’দিকে আঁকা ছবিগুলির মধ্যে পেনসিলের দাগ নেই, আছে কেবল রং-তুলির ব্যবহার। এর থেকে বোঝা যায় তাঁর আত্মপ্রত্যয়ী মনটার কথা। এ-ও বোঝা যায়, ছবি কেমন হবে, তা নিয়ে তিনি কখনও চিন্তিত হননি। বিশেষ কোনও লক্ষ্যেও পৌঁছতে চাননি কোনও দিন। তিনি এঁকেছেন আপন খেয়ালে। ভারতের আধুনিক চিত্রকলার জগতে সুনয়নী দেবীই প্রথম মহিলা চিত্রশিল্পী, যিনি লোকশিল্পকে এনেছেন। ছেলেবেলা থেকেই তাঁর পৌরাণিক ছবির প্রতি ভালবাসা ছিল। তাঁর ঘরের দেওয়াল ভরা ছিল পৌরাণিক ছবিতে। খুব পছন্দ করতেন কালীঘাটের পটচিত্র, তাই পটের ধারাকে নিজের ছবিতে বহু যত্নে স্থান দিলেন। পটের ছবিতে নিজের ব্যক্তিত্বের প্রবেশ ঘটিয়েছেন তিনি। তাঁর ছবির বিশেষত্ব এখানেই। ছবিগুলিতে চরিত্রদের আধবোজা, সম্প্রসারিত চোখ ও লম্বা ভুরু, এক অন্য মাত্রা এনে দিল, যা পরবর্তী কালে যামিনী রায়কে ভীষণ ভাবে অনুপ্রাণিত করে।

তাঁর আঁকা একটি চিত্রশিল্প।

ছবি আঁকার প্রথাগত শিক্ষা না থাকা সত্ত্বেও বাস্তব, কখনও বা বাস্তবকে ছাপিয়ে যাওয়া কল্পনার চরিত্ররা একে একে ভিড় করেছে তাঁর আঁকার খাতায়। তাঁর ওয়াশ পদ্ধতিতে আঁকা ছবিগুলি দেখলে বোঝা যায়, রং-তুলির সংস্পর্শে এসে মুক্তির স্বাদ পেয়েছেন তিনি। পেয়েছেন মন খোলার জায়গাও। তবে সুনয়নী দেবীর জীবনে ছবি আঁকা স্থায়ী হয়েছিল মাত্র দেড় দশক। স্বামীর মৃত্যুর পর রং-তুলির জগৎ থেকে তিনি সম্পূর্ণ সরে আসেন। নিজের মতো বাঁচতে চাওয়া মানুষদের এই সরে আসার স্বাধীনতা আছে। সুনয়নী দেবীরও ছিল। এক দিন তাই সেতার ছেড়ে যেমন ছবি আঁকার মধ্যে গিয়ে পড়েছিলেন, তেমনই আঁকার খাতা ছেড়ে নির্জন জীবনকেই শেষ পর্যন্ত বেছে নিলেন। তবে এই পনেরো বছরের সৃষ্টির ভিতর আঁকা রইল তাঁর নিজস্ব ইচ্ছে-অনিচ্ছের রং ও রেখা। এখন এই সমাজের মেয়েদেরও আত্মপ্রকাশের পথ দেখাতে পারে সুনয়নীর জীবন-কথা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement