ছবি: সুমিত্র বসাক।
আজীবন ফুঁ দেবেন
সকাল ন’টার ডাউন তারকেশ্বর হাওড়া লোকাল। টেরিফিক ভিড়। যে সব ডেলি প্যাসেঞ্জাররা বসার সিট পাননি, তাঁরা ফুলদানিতে গোঁজা রজনীগন্ধার স্টিকের মতো স্রেফ মাথাটা উঁচু রেখে কোনও মতে শ্বাস নিচ্ছেন, আচমকাই ওই ভিড়ে কুকুর ছানার কেঁউ-কেঁউউউ! সকলেই যে সেই ট্রেনের ডেলি প্যাসেঞ্জার, তা নয়। যাঁরা নতুন, বেজায় ভড়কে গেলেন। এই ভিড়ে কুকুর উঠল কী করে! নির্ঘাত কেউ মাড়িয়ে দিয়েছে, তাই অমন চেঁচাচ্ছে। নতুনরা সাবধান হতে গেলেন, তার আগেই পুরনোরা আঙুল তুলে বলে উঠলেন ওই আবার এসে গেছে।
দেখা গেল, ম্যাক্সিমাম পাঁচ ফুট হাইটের একমাথা ঝাঁকড়া চুলের এক জন। ময়লা শার্ট-প্যান্ট। গুটখা-খাওয়া ছোপদাঁত। দাদা লাগবে? মাত্র দু’টাকা। ছেলে-মেয়েরা আনন্দ পাবে। বলেই আবার কেঁউ-কেঁউ। অবিকল কুকুরের বাচ্চাকে মারলে কিংবা লেজে পা দিলে যেমন আওয়াজ তোলে।
শ্যাম তুই আর সময় পাস না? একটু বেলার দিকে কাজ করতে পারিস তো।
‘কী করব দাদা, সকাল থেকেই খিদে পেয়ে যায়। সোজাসাপটা কথা। লাগবে না কি একটা?’ বলে খুব ছোট একটা প্যাকেট এগিয়ে দেয় প্যাসেঞ্জারদের দিকে। প্যাকেটের ভিতর কড়ে-আঙুল সাইজের এক টুকরো কলাপাতা বিশেষ স্টাইলে কাটা। জিভের তলায় রেখে ফঁু দিলে একেবারে কুকুরছানার মতো আওয়াজ হয়। যে কেউ প্রথমে শুনলে চমকে যাবে, সেটাই ইউএসপি।
শ্যাম সাহার বাড়ি বাগনান। সাত বছর ধরে ট্রেনে হকারি। অনেক কিছু বিক্রি করে ফেল মেরে এখন বছর দুয়েক ধরে এই আইটেম। পুরনোরা কেউ কেনে না দাদা, নতুন কাস্টমাররা কেনে। মাত্র দু’টাকা। কিনলে বাজানো শিখিয়ে দিই। কেউ যদি বলে, এইটুকুন কলাপাতার টুকরো দু’টাকা! সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দাদা, পাতাটাই দেখলেন, সিল্পোটা দেখলেন না? বাজানো শিখেও কিন্তু বাড়ি গিয়ে আজীবন ফঁু দিলেও আর বাজে না। পুরনোদের মন্তব্য: ওই শ্যামের বাঁশি শ্যামের মুখেই বাজে। ‘সিল্পো’ কি সকলের দ্বারা হয়? শ্যাম পরের কম্পার্টমেন্টে চলে যায়।
কোথা রবে গাড়ি আর কোথা রবে নারী
এঁকে আবার পাওয়া যাবে সন্ধের পর। হাওড়া আপ লোকালে। বর্ধমান কিংবা সিঙ্গুর, ব্যান্ডেল কিংবা তারকেশ্বর কোনও ঠিক নেই। বয়েস পঞ্চাশের ওপর। কিন্তু তার পর কত বোঝা দায়। কাঠির মতো চেহারা। মাথায় কয়েক গাছি চুল। সবই খাড়া। ফরসা রং, তোবড়ানো গাল। আর চোখ দুটো সব সময় পাকানো। যেন পৃথিবীর সব্বাইকে ভীষণ রেগে গিয়ে বকছেন। কাঁধে ঝোলা, কোলে ঘষাটে কাচের বয়াম।
শুরুটা হয় এই ভাবে। প্রথমে চোখ পাকিয়ে সব প্যাসেঞ্জারদের দিকে তাকাবেন, তার পর বলে উঠবেন হুঁঃ, কোথা রবে গাড়ি আর কোথা রবে নারী, সব ফেলে চলে যেতে হবে। বাঙালি কা বাচ্চা আবার অফিসার হয়েছে... কোট-টাই পরে আবার অফিস যাচ্ছে। কপাল, কপাল! কেউ দেখতে ভালবাসে আর কেউ খেতে ভালবাসে। যাঁর ইচ্ছে হয় খাবেন আর বাকিরা দেখবেন। কপালে থাকলে এক টাকাতেও পাওয়া যায়, আর না থাকলে দশ হাজার দিলেও এ জিনিস পাবে না। তার পর একটু থেমে... জেলি লজেন্স খাবেন?
আমি যত বার দেখেছি, একটাও বিক্রি হয়নি। খুব স্বাভাবিক। কাস্টমারকে প্রথমেই যদি বিক্রেতা এমন ধমক লাগান, হেয় করেন, কে কিনবে? অথচ উনি ঠিক এটাই করে আসছেন বহু বছর ধরে। সন্দেহ হয়, বয়ামের লাল লজেন্সগুলো কত দিনের পুরনো?
দু-এক জন প্যাসেঞ্জার আপত্তি তোলেন আপনি এই ভাবে কথা বললে কেউ কিনবে আপনার মাল?
চোখ পাকানোই থাকে। শুধু উত্তর আসে এক টাকার লজেন্স কিনলে বাবুদের জাত যায় তো, পঞ্চাশ টাকার ক্যাডবেরি কিনে নিয়ে গেলে তবে না ছেলেমেয়েরা বাপির গালে হামি দেবে।
বোঝো! কীসের জন্য এত রাগ সকলের ওপর? জানার চেষ্টা করেছিলাম, পারিনি। কোনও উত্তর দেননি তিনি। কেন, জানি না। মনে হয়, বিক্রিটা প্রধান নয়, শুধু ভিড় ট্রেনে উঠে সকলকে ধমকানো, রাগ দেখানোই ওর একমাত্র উদ্দেশ্য। এক জন প্যাসেঞ্জার বলেছিলেন, এত তেতো আপনার মুখ, নিজের একটা লজেন্স মুখে রাখতে পারেন তো! অন্য জনের ফুট: ও মাল মুখে দিলে আর দেখতে হবে না। নাইন্টিন ফর্টির চিজ।
তিনি উত্তর না দিয়ে কম্পার্টমেন্ট থেকে নেমে পরেরটায় ওঠার আগে বিষ-নজরে তাকিয়ে খিস্তি করে উঠলেন।
মাসকাবারি বাদাম
আগে দুই ছিল, তার পর তিন হল, এখন পাঁচ। প্যাকেটের সাইজ অবশ্য একটু বেড়েছে। লোকাল ট্রেনে সবচেয়ে বেশি ওঠে বাদামওয়ালা। মিষ্টি, সল্টেড, মশলা দেওয়া। সঙ্গে আরও আইটেম থাকে। যেমন ডালমুট, চিড়েভাজা, কড়াইশুঁটি। তবে বাদামের বিক্রি বেশি।
প্রথম বার চমকে গেছিলাম, যখন দেখেছিলাম গৌরকে। দাদা বাছাই করা মসালা দেওয়া বাদাম চাই, ইত্যাদি কথাগুলো বলতে বলতে ‘বউদি কেমন আছে গো?’ জিজ্ঞেস করেছিল তাসে মশগুল এক জন ভদ্রলোককে। শুধু তাই নয়, কিছু জিজ্ঞেস না করেই বিড়বিড় করে নিজে কয়েকটা মাথা গুনে পটাপট পাঁচটা বাদামের প্যাকেট কেটে এগিয়ে দিল সে দিকে।
হ্যাঁ, আজ একটু ভাল, উত্তর দিয়েছিল লোকটা। আর বাদামের প্যাকেটগুলো ডিস্ট্রিবিউট হয়ে গেল ওর আশপাশের পাঁচ জনের মধ্যে।
দাঁড়া, আজ হিসেব নিয়ে যাবি, বলেছিল সেই প্যাসেঞ্জার।
আজ না, কাল নেব।
না না, আজই নিয়ে যা। কত হয়েছে বল? জিজ্ঞেস করে পার্সে হাত।
ছেলেটা পকেট থেকে এই ছোট একটা ডায়েরি বার করে পাতা উলটে বলল, ১৬ দিনে ৬৮ প্যাকেট।
তুই শালা আমাদের বাদাম খাইয়ে আলসার করে মারবি, বলে ৫০০ টাকার নোট বাড়াল লোকটা।
পরে ফেরত দেব, বলে টাকাটা প্যান্টের পকেটে গুঁজে অন্য দিকে চলে গেল সে।
কৌতূহলটা থেকে গেছিল। পরে এক দিন সুযোগ পেয়ে জিজ্ঞেস করে জেনেছিলাম, ছেলেটির নাম নিতাই সামন্ত। মানকুন্ডুতে বাড়ি। ছ’জনের ফ্যামিলি। রোজগার এই বাদাম বিক্রি করেই। এই রকম মাসকাবারি বেশ কয়েকটা রয়েছে। না, কেউ আজ পর্যন্ত এক টাকাও মারেনি ওর। উলটে বিপদে-আপদে হেল্প করে, এমনকী বাড়িতে স্পেশাল অকেশন থাকলে নেমন্তন্নও করে কেউ কেউ।
নিতাইয়ের পাশাপাশি আর এক জনকে দেখেছি, তাঁর নাম-ধাম কিছু জানতে পারিনি। মাসে এক বার কি দু’বার তাঁকে দেখতে পাই। মাঝবয়সি। শুকনো চেহারা, গালে খোঁচা-খোঁচা দাড়ি। হাতে সর্বসাকুল্যে দশ-বারোটা বাদামের প্যাকেট থাকে। কর্ম্পাটমেন্টে উঠে প্রথমে মিনিট কয়েক চুপ থাকেন, তারপর খুব নিচু গলায় বলে ওঠেন বাদাম... (কয়েক সেকেন্ড বিরতি নিয়ে) খাবেন?
এমন কনফিউজ্ড হকার আমি কখনও দেখিনি। বিক্রি করতেও এত হেজিটেশন তাঁর এত বছরেও কাটেনি। বিক্রি প্রায় হয়ও না। অথচ, পাঁচ বছর আগেও যে ভাবে দেখেছি, আজও সেই একই স্টাইল। যে ভাবে এক এক জন মানুষ আজীবন কনফিউজ্ড হয়ে কাটান আর কী!
দাদা চুলকোবেন ও অন্যান্য
মোটা চেহারা, মোটা গোঁফ। ভয়ংকর কালো গায়ের রং। বগিতে উঠেই ভারী গলায় ঘোষণা দাদা, কেউ চুলকোতে চাইলে বলবেন। চুলকোতে না পারার যে কী জ্বালা, আমি বুঝি। আপনি চাইছেন, কিন্তু পারছেন না। হাত পৌঁছচ্ছে না, আমি আছি, দশ টাকা দাম। বলে প্লাস্টিকের একটি এক ফুট সাইজের হাত তুলে ধরেন তিনি। পিঠের যে কোনও প্রান্তে আরামে চুলকান, কারও হেল্প লাগবে না। নিজের জায়গা নিজে চুলকান। কাঁধের ঝোলায় বিভিন্ন রঙের হাত। যার যে রং পছন্দ। বিক্রির স্টাইলটা একটু ইঙ্গিতবাহী। ক্লান্ত প্যাসেঞ্জাররা মজা পান।
তবে তাঁরাই আবার খুব বিরক্ত হন শ্রীধর উঠলে। শ্রীধর সাঁপুই-এর আইটেম একদম আলাদা। তার সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় হয়েছিল এই ভাবে। রাত সাতটা পঞ্চান্নর আপ বর্ধমান লোকালে উঠেছি। কম্পার্টমেন্টে বেশ ভিড়। শুধু একটা সিটে কেউ বসেনি। ভাবলাম, নির্ঘাত বমি কেস। আলগোছে তাকিয়ে দেখি তার থেকেও ভয়ংকর। সিটের ওপর কে যেন একগাদা নামিয়ে রেখে গেছে। ডেলি প্যাসেঞ্জাররা সর্বংসহা। সেই সিট বাদ দিয়ে তার উলটো দিকেই উদাস হয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে বসে রয়েছেন, আর বেখেয়ালে অন্য কেউ বসতে গেলেই তাকে সাবধান করছেন আ-হা-হা, বসবেন না, পায়খানা রয়েছে। এমন সময় তিন-চার জনের একটা টিম উঠল। উঠেই ফাঁকা সিটে তাকিয়ে বলল, ‘দ্যাখ শালা, শ্রীধরের গু। ওই হারামজাদা, তোর গু এ বার এক দিন তোকে খাওয়াব বলে রাখছি’, বলে এক জন অনায়াসে সেই দলা সিটের উপর থেকে তুলে নিলেন। আর উলটো দিকে বসে থাকা বছর কুড়ির একটি ছেলে একগাল হেসে উঠে এসে বলল, ‘রেখেছিলেম বলেই তো বসতে পেলে?’ বলে বস্তুটা হাতের তালুতে নিয়ে চিল্লে উঠল, ‘দাদা দেখুন। অবিকল আসলের মতো দেখতে। কিন্তু খাঁটি রবারের। পাঁচ টাকা দাম, পাঁচ টাকা দাম।’ ভাল করে তাকিয়ে দেখেছিলাম, সত্যি, একেবারে হুবহু মিল। বলে না দিলে কে বলবে ফল্স! হ্যাঁ, এই জিনিসও বিক্রি হয়। খদ্দের ফচকে ছেলেরা।
এ ছাড়াও হরেক কিসিমের গায়ক রয়েছে, ম্যাজিশিয়ান রয়েছে, জিমনাস্টিক রয়েছে, ফ্রি-তে হজমিগুলি রয়েছে, আর রয়েছে লেডিজ কম্পার্টমেন্টের হকার।
এদের ব্যাপারটা আবার আলাদা। কেউ কেউ আছেন শুধু লেডিজ কম্পার্টমেন্টেই তাঁদের প্রোডাক্ট বেচেন, জেনারেলে ওঠেন না। যেমন মিঠুনের মা। বেলা দশটা থেকে দুটোর মধ্যে হাওড়া মেন লাইনে যে সব মহিলা ডেলি প্যাসেঞ্জারি করেন, তাঁদের প্রায় সকলেই চেনেন এঁকে। কিছুটা খ্যাপাটে, বেঁটেখাটো চেহারা, রুক্ষ লালচে চুলে লাল ফিতে। শত কোঁচকানো মুখ আর তেমনই পরনের শাড়ি। রংচঙে সিল্কের শাড়িটা কত দিনের পুরনো তা কেউ জানে না। ঘটি-হাতা ব্লাউজ। এঁর আইটেমও লজেন্স। তবে বিক্রির স্টাইল সম্পূর্ণ আলাদা। বগিতে উঠেই বলবেন এসে গেছি, আমি মিঠুনের মা। আমার বর ধর্মেন্দ্র, বাবা অমিতাভ বচ্চন। ওরা দুজনেই এই লজেন খেয়ে এত বড় হিরো হয়েছে। আর আমার ছেলে হল মিঠুন। ও-ও এই লজেন খায়। কী রে, নিবি? খা একটা, খেয়ে দ্যাখ। দু’টাকায় পাঁচটা। পুরনোরা সকলেই প্রায় চেনেন এঁকে। কথা বাড়ান না কেউ। তবে লজেন্স কেনেন অনেকেই। সেই লজেন্স হয়তো খাওয়া হয় না। ব্যাগেই রয়ে যায়, কিন্তু দুটো টাকা তো দেওয়া যায় মিঠুনের মা’কে। সেটাই শান্তি। মিঠুনের মা উঠলে কর্ম্পাটমেন্টে কারও গম্ভীর হয়ে বসে থাকার জো নেই, তা হলেই কাছে এসে জিজ্ঞেস করবেন ‘কী রে, মুখ হাঁড়ি করে বসে আছিস কেন? বরের সঙ্গে ঝগড়া করেছিস নাকি?’ কিংবা, অবিবাহিত কাউকে অমন চুপ থাকতে দেখলে বলবে ‘অমন চুপ কেন, বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে ঝামেলা করেছিস নিশ্চয়ই। দেখ গে, অন্য মেয়ের সঙ্গে লটরপটর করছে।’
এমন উক্তিতে অনেকেই বিরক্ত হন। আপত্তিও জানান। সঙ্গে সঙ্গে ঝাঁঝালো উত্তর মিঠুনের মায়ের। ‘ব্যাটাছেলেদের একদম বিশ্বাস করবি না। সব ক’টা বেইমান।’ বলে মেঝেতে থুতু ফেলেন তিনি, তার পর পা দিয়ে ঘষটে দেন।
ওঁর ব্যাপারটা জানতে পেরেছিলাম আমার স্ত্রীর মাধ্যমে। ভাল ঘরের মহিলা ছিলেন এক সময়। একটি ছেলের সঙ্গে পালিয়ে বিয়ে করেন। বিয়ে বেশি দিন টেকেনি। ছেলেটি তাঁকে অন্তঃসত্ত্বা করে ছেড়ে পালিয়ে আবার নতুন সংসার বাঁধে। তার পর থেকেই পৃথিবীর যাবতীয় পুরুষের প্রতি বিদ্বেষ। একমাত্র ছেলেকে বহু কষ্টে মানুষ করেছেন। লিলুয়ায় একটি হোমে পড়াশোনাও শিখিয়েছেন, কিন্তু তাও ছেলে হয়েছে অপদার্থ। মায়ের রোজগারের টাকা বেশির ভাগ দিনই কেড়েকুড়ে নিয়ে নেয়। গাঁজা-চোলাইয়ের নেশা করে। ছেলের নাম সত্যিই মিঠুন। সব থেকে আশ্চর্যের বিষয় হল, কম্পার্টমেন্টে কোনও অল্পবয়সি অবিবাহিতা মেয়ে দেখলে তার কাছে গিয়ে গাল টিপে বলেন ‘বাহ্, তোর মুখটা তো বেশ! আমার ছেলের বউ হবি? দুজনে একসঙ্গে থাকব।’ কেউ উত্তর দেয় না। কেউ ঝাঁঝিয়ে ওঠে, বিরক্ত হয়। মিঠুনের মা ছেলের বউ খুঁজেই চলে।
পাগলি আর বাঁশিওয়ালা
ট্রেনের দরজার ধারে কোনও মতে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। পা-দুটো ঠকঠক করে কাঁপে। দেখলে মনে হবে, এই বুঝি পড়ে যাবেন। পরনে ঢোলা পাঞ্জাবি আর ময়লা পাজামা। বয়েস ষাটের ওপর। সাদা এলোমেলো চুল আর মুখময় সাদা দাড়ি। কথা বলতে পারেন না। হয়তো বলতে চান না। কারও কাছ থেকে কোনও দিন একটা পয়সাও চাননি তিনি। নাকের ফুটোয় বাঁশি গুঁজে নিশ্বাসের জোরে বাঁশি বাজান। কী অপূর্ব সুর, শুনলে মন ভাল হয়ে যায়। কোথায় বাড়ি, কী নাম, কেউ জানে না। একের পর এক সুর বাজিয়ে চলেন, যাঁর যা ইচ্ছে হয় ওঁর ঝোলাতে এক টাকা, দু’টাকা দিয়ে নেমে যান নিজের স্টেশনে।
আর আছে এক পাগলি। সে আবার বসে থাকে দরজার সামনে। যখন ইচ্ছে হয় খালি গলায় একের পর এক আশা-লতার হিন্দি গান। শুনলেই বোঝা যায়, এক সময়ের রেওয়াজ করা গলা। কী মিষ্টি যে গলা আর দরদ! কোন পরিবার থেকে আসা মেয়ে, জানা নেই। এরও সব কথা ফুরিয়ে গেছে। শুধু রয়ে গেছে সুরটুকু। কারও কাছে কিছু চাইবার নেই। যার যা ইচ্ছে হয় দিয়ে যায়, মেয়েটি ফিরেও দেখে না সেদিকে। আর কেউ কোনও গানের রিকোয়েস্ট করলেও শোনে না। নিজের ইচ্ছে হলে তবেই...
এই দুজনকে নিয়ে নিত্যযাত্রীদের বড় চিন্তা ছিল। তবে কিছু দিন আগে থেকে সেই বৃদ্ধ আর এই পাগলি নাকি এক সঙ্গেই ট্রেনে উঠছে। এই দৃশ্য বড় নিশ্চিন্ত করেছে অন্য হকার আর ডেলি প্যাসেঞ্জারদের। লাস্ট সিনে মিলন না হলে পোষায়?
binod.ghosal@gmail.com