বিপন্ন: ষোড়শ শতকের লন্ডন। বাড়ি থেকে প্লেগ-আক্রান্তদের মৃতদেহ ছুড়ে ফেলে দেওয়া হত রাস্তায়। আর জায়গা ছিল না শহরের সমাধিক্ষেত্রগুলিতেও। ছবি সৌজন্য: উইকিমিডিয়া কমন্স।
নভেম্বরের শেষ দিক। প্রচণ্ড ঠান্ডা। ইংলন্ডের ড্রুরি লেন-এ দুই ফরাসি ভদ্রলোক হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লেন। প্রচণ্ড জ্বর, তীব্র মাথাব্যথা আর বমি ভাব। গতিক ভাল নয় বুঝে, এই অসুখের কথা চেপে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন বাড়ির লোকজন। কিন্তু প্রতিবেশীদের সচেতনতায় এঁদের কথা জেনে গেল সেক্রেটারিয়েট অব স্টেট। দুই চিকিৎসক এলেন তাঁদের পরীক্ষা করতে। অসুস্থ দু’জনই তত ক্ষণে মৃত। মৃতের শরীরের রোগলক্ষণ দেখে চিকিৎসকরা বুঝলেন রোগটা কী হয়েছিল। মৃতের বিবরণ দিয়ে এলাকাভিত্তিক সাপ্তাহিক বিলে দায়িত্বপ্রাপ্ত কেরানি মৃত্যুর কারণ লিখলেন ‘প্লেগ’। সঙ্গে এও লিখলেন, এঁদের জন্য গোটা এলাকায় সংক্রমণ ছড়িয়েছে। সাঙ্ঘাতিক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ল স্থানীয় মানুষের মধ্যে। এর পর ১২ ফেব্রুয়ারি নাগাদ আরও এক জন মারা গেলেন ওইখানেই। মাঝে কিছু দিন আবার ‘ইয়েলো স্পটেড ফিভার’ ছাড়া আর কোনও রোগে মৃত্যুর সন্ধান পাওয়া গেল না। হাঁপ ছেড়ে বাঁচলেন মানুষ। জীবনযাত্রা স্বাভাবিক ভাবে চলতে লাগল। কিন্তু এলাকা সংলগ্ন সেন্ট জাইলস-এর কবরখানা ভরে উঠতে লাগল মৃতদেহে। একই ঘটনা ঘটল সেন্ট জেমস ক্লার্কেনওয়েল বা হলবোর্নের সমাধিস্থলগুলিতেও। নিঃশব্দে আঘাত হানল প্লেগ। এর পর আর চাপা দিয়ে রাখা গেল না। তত দিনে লন্ডনের আনাচে-কানাচে প্লেগ ছড়িয়ে গিয়েছে অনেকটাই। ড্যানিয়েল ডিফো তাঁর বই ‘জার্নাল অব দ্য প্লেগ ইয়ার’ শুরু করেছেন এই ভাবেই।
১৬৬৫-৬৬ সালের ‘দ্য গ্রেট প্লেগ অব লন্ডন’ যখন একেবারে নাড়িয়ে দিল শহরটাকে, তখনও পর্যন্ত এই রোগ সম্পর্কে তেমন কিছু জানত না মানুষ। জ্ঞানের থেকে বিভ্রান্তি ছিল বেশি। অথচ সেই প্রথম নয়, শহরে আগেও হয়েছে প্লেগ। প্রতি বারই বহু সংখ্যক লোক মারা গিয়েছেন। ‘ব্ল্যাক ডেথ’-এর বিভীষিকার সঙ্গে পরিচিত ছিল ইংল্যান্ড। ১৫৬৪ সালের এপ্রিলে শেক্সপিয়র জন্মগ্রহণ করেন, তার ঠিক পরের মাসেই তাঁর পাড়ায় ছড়িয়ে পড়ে ভয়াবহ প্লেগ। সেখান থেকে অন্যান্য জায়গায়। সে বার লন্ডনের জনসংখ্যার এক ষষ্ঠাংশ মানুষ মারা যান। শেক্সপিয়রের সমস্ত জীবনই কেটেছে প্লেগের বিভীষিকাময় ছায়ায়। এর প্রভাব পড়েছে তাঁর রচনাতেও। ‘রোমিয়ো অ্যান্ড জুলিয়েট’-এর মতো ট্র্যাজেডি থেকে ‘টুয়েলফ্থ নাইট’-এর মতো রোম্যান্টিক কমেডি সর্বত্রই এসেছে প্লেগ— ‘আ প্লেগ আপন ইট হোয়েন থিভস ক্যান নট বি ট্রু টু ওয়ান অ্যানাদার’ কিংবা ‘ইভেন সো কুইকলি ওয়ান ক্যাচ দ্য প্লেগ?’ ‘কিং লিয়র’-এ, লিয়র তাঁর কন্যা গোনেরিলকে প্লেগের মতো ঘৃণ্য অসুখের সঙ্গে তুলনা করেছেন। রোমিয়ো-জুলিয়েটের গল্পেও ছায়া ফেলেছে প্লেগ। অমর এই বিচ্ছেদগাথায় প্লেগ ছিল নিয়তি নির্ধারক। ফ্রায়ার জন এবং ফ্রায়ার লরেন্সের কথোপকথন থেকে বোঝা যায় কী ভাবে সার্চাররা সংক্রমিত সন্দেহে লোককে ঘরে আটকে দিত। মানুষের মধ্যে কতটা ভয় ছিল প্লেগের। ‘ম্যাকবেথ’-এ শেক্সপিয়র এক ভীত সন্ত্রস্ত সময়ের কথা লিখেছেন। যদিও এই সময়টি ছিল এক নিষ্ঠুর অযোগ্য শাসকের আমল। কিন্তু শেক্সপিয়রের জীবনীকারদের মতে লেখক হয়তো ম্যাকবেথের কুশাসনকে তুলনা করেছেন প্লেগের যন্ত্রণার সঙ্গে।
শেক্সপিয়রের সময় পাবলিক হেল্থ অফিসাররা রাস্তায় ঘুরে বেড়াতেন সংক্রমিতদের চিহ্নিত করার জন্য। দিনের পর দিন সব থিয়েটার বন্ধ থাকত। কারণ জমায়েত থেকে যে রোগ ছড়ায়, সেটা অভিজ্ঞতা থেকে বুঝেছিলেন সকলে। এ সব সত্ত্বেও সেই সময় এবং পরবর্তী কালেও ধর্মীয় জমায়েত বন্ধ করা হত না, ফলে রোগও ছড়াত হু হু করে। ১৫৬৩-৬৪, ১৫৯৩, ১৬২৫... বার বার ফিরে এসেছে প্লেগ। প্রতি বার অসংখ্য লোক মারা গিয়েছেন। কিন্তু ১৬৬৫-৬৬ এর প্লেগের চেহারা এমনই ছিল যে, শহরের এক চতুর্থাংশ লোক মারা গেলেন। তখন লন্ডনের জনসংখ্যার ঠিক হিসেব না থাকলেও, তৎকালীন জনতত্ত্ববিদ জন গ্রান্টের মতে, ৩ লাখ ৮৪ হাজার লোক সেই সময়ে শহরে বাস করত। এর মধ্যে সরকারি হিসেবেই ৬৮ হাজার ৫৯৬ জন মারা গিয়েছিলেন প্লেগে। চার্চে মৃতের হিসেব থেকে এই পরিসংখ্যান পাওয়া গেলেও ইহুদি, কোয়াকার বা অ্যানাব্যাপটিস্টদের মতো যাঁরা মৃত্যুর খবর খ্রিস্টান চার্চগুলোকে জানাতেন না, তাঁদের নিয়ে মৃতের সংখ্যা ছিল এক লক্ষের কাছাকাছি।
কোথা থেকে সেই বছর লন্ডনে এমন ভয়াবহ প্লেগ ঢুকল তা নিয়ে মতবিরোধ আছে। তবে বেশির ভাগ ইতিহাসবিদ মনে করেন, ১৬৬৩ সালে শীতে বরফে নদী জমে যাওয়ার ঠিক আগে, আমস্টারডাম থেকে একটা ওলন্দাজ বাণিজ্য জাহাজ তুলোর বান্ডিল নিয়ে এসেছিল শহরের বন্দরে। এরই মধ্যে ছিল প্লেগের জীবাণু। এর কিছু দিন আগেই আমস্টারডাম ছারখার হয়ে গিয়েছে প্লেগে। যদিও বাইরে থেকে ইংল্যান্ডে প্লেগ ঢুকতে পারে এই আশঙ্কা করেই ইউরোপে ১৬৬০ সালে প্লেগ ছড়ানোর পরই ইংলন্ডের প্রিভি কাউন্সিল বাইরে থেকে আসা সমস্ত জাহাজকে কোয়রান্টিনে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। দু’টি নজরদারি জাহাজ ফিট সার্টিফিকেট দিলে তবেই জাহাজগুলো ঢুকতে পারত বন্দরে। তবে এই নিয়ম অনেক ক্ষেত্রেই ভাঙা হত। এই ঘটনা তারই ফল সম্ভবত। এর ফলে প্রথম সংক্রমণ ছড়ায় বন্দর এলাকার সংলগ্ন সেন্ট গিল পেরিস-এ। তবে সেন্ট গিল সেই সময় ছিল শহরের বাইরে। ৪৮০ একরের মূল লন্ডন ঘেরা ছিল বিরাট প্রাচীর দিয়ে। শহরের বাইরেটা ছিল নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর। বিরাট মালবাহী জাহাজে আসত কয়লা-সহ নানা নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস। এখানেই কারখানায় তৈরি হত বিয়ার, সাবান, লোহার জিনিসপত্র আর কাপড়। কয়লার ধোঁয়ায় ভারী হয়ে থাকত বাতাস। সরু রাস্তায় চলত অজস্র গাড়ি। কর্দমাক্ত পথে পথচারীর সংখ্যাও কম ছিল না। ধাক্কাধাক্কি ঘেঁষাঘেঁষি লেগেই থাকত। প্লেগের বাহক ইঁদুর আর কীটের বাড়বাড়ন্ত ছিল এই সব জায়গাতেই। শহরের বাইরের এই জায়গাগুলি থেকেই হু হু করে বাড়তে লাগল রোগ। সেপ্টেম্বর মাসে শুধু একটি সপ্তাহেই লন্ডনে মারা গেলেন ৭১৬৫ জন। শহর ছেড়ে দলে দলে পালাতে লাগল লোক। রাজা দ্বিতীয় চার্লস তাঁর সভাসদদের নিয়ে প্রথমে হ্যাম্পটন কোর্ট, তার পর সেখান থেকে অক্সফোর্ডে পালালেন। পার্লামেন্টের অধিবেশন মুলতুবি করে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হল অক্সফোর্ডে। শহরে রয়ে গেলেন শুধু মেয়র, কয়েক জন উচ্চপদস্থ কর্মচারী, চিকিৎসক এবং শববাহকরা।
রোগ যাতে লন্ডনের বাইরে ছড়াতে না পারে সে জন্য মেয়রের কাছ থেকে সুস্থতার সার্টিফিকেট নিয়ে তবেই শহর ছাড়তে পারতেন সাধারণ মানুষ। ক্ষমতাশালীদের অসুবিধে না হলেও সেই সার্টিফিকেট জোগাড় করা সম্ভব ছিল না সবার পক্ষে। কাজেই অসুস্থ এবং মৃতদের সঙ্গে গরিব আর মধ্যবিত্তরাও রয়ে গেলেন শহরেই। নরক হয়ে উঠল লন্ডন। রোগের প্রাদুর্ভাব আটকাতে কোনও বাড়িতে কেউ অসুস্থ হলে, পুরো বাড়িটিকেই বাইরে থেকে ৪০ দিনের জন্য তালাবন্দি করে দিতেন কর্মচারীরা। ফলে আক্রান্তদের সঙ্গে থেকে বাড়ির বাকিরাও অসুস্থ হতেন দ্রুত। কিছু কিছু ক্ষেত্রে বর্তমান সেফ হোমের মতো পেস্ট-হাউসে প্লেগ রোগীদের সরিয়ে নিয়ে আসা হত। কিন্তু তার সংখ্যা বেশি ছিল না। বাড়ি বাড়ি উজাড় হয়ে যেতে লাগল রোগে। প্রশাসন নিয়োগ করল শবসন্ধানীদের দলকে। এঁদের বলা হত সার্চার। বাড়ি বাড়ি ঘুরে এঁরা দেখতেন কোন বাড়িতে কারা প্লেগে আক্রান্ত হয়েছেন বা মারা গিয়েছেন। এঁদের কাজের প্রতীক হিসেবে হাতে থাকত বিশেষ এক ধরনের সাদা লাঠি। এঁরা যখন রাস্তায় বেরোতেন, তখন সংক্রমণের ভয়ে পথ ছেড়ে দিতেন মানুষ। সার্চাররা বেশির ভাগই ছিলেন দুর্নীতিগ্রস্ত ঘুষখোর। ফলে বহু ক্ষেত্রেই প্লেগ রোগাক্রান্ত বাড়ির লোকেরা বাইরে মেলামেশার ছাড়পত্র পেয়ে যেতেন সহজে। এরই মধ্যে রাজার তরফ থেকে জারি হল নির্দেশিকা। যে সব বাড়িতে আক্রান্তের সন্ধান পাওয়া যেত, সেই বাড়িগুলোয় লাল ক্রস এঁকে লিখে দেওয়া হত ‘ঈশ্বরের করুণা আমাদের ওপর বর্ষিত হোক’। ৪০ দিন পর বাড়িতে যদি কোনও আক্রান্ত না থাকত তা হলে দরজায় ঝুলিয়ে দেওয়া হত সাদা ক্রস। সেটা রাখা হত ২০ দিনের জন্য। এর পর পুরো বাড়ি ভাল করে পরিষ্কার করে চুনের প্রলেপ দেওয়া হত। বাড়ির কোনও আসবাব, জামাকাপড় যাতে বাড়ির বাইরে না যায়, খেয়াল রাখা হত সে দিকেও।
লোকে প্লেগ থেকে বাঁচার জন্য তামাক খেতে লাগল। সেই সময় রটে গিয়েছিল, তামাক প্লেগ থেকে বাঁচায়। কেউ শুঁকতেন ফুলের গন্ধ, কেউ আবার সব কিছুতে দিতেন ভিনিগার। কিন্তু তাতে কিছুই হল না। তৎকালীন সব প্রামাণ্য তথ্য থেকে একটা জিনিসই উঠে এসেছে বার বার, তা হল চিকিৎসকের অভাব এবং অযোগ্যতা। অধিকাংশেরই প্লেগ সম্পর্কে কোনও ধারণা ছিল না। এঁরা প্লেগ থেকে বাঁচতে বিশেষ পোশাক পরতেন। পা থেকে মাথা পর্যন্ত বিরাট ওভারকোটে ঢাকতেন, পাখির ঠোঁটের মতো মুখোশ পরতেন। এর মধ্যে ঠেসে দেওয়া থাকত নানা ভেষজ আর সুগন্ধী। মনে করা হত ওই সুগন্ধী প্লেগের ‘দূষিত বাতাস’ থেকে তাঁদের রক্ষা করবে। চিকিৎসকের অজ্ঞতার সঙ্গে যোগ হয়েছিল মানুষের অন্ধবিশ্বাস। অধিকাংশই মনে করতেন প্লেগ ইংল্যান্ডবাসীর প্রতি ঈশ্বরের শাস্তি। ডিফো লিখেছেন, প্লেগের আগে শহরের ওপর দিয়ে চলে যাওয়া মুখোমুখি দুটো ধূমকেতু দেখে মানুষের বিশ্বাস হয়েছিল লন্ডনে খুব খারাপ কিছু ঘটতে চলেছে। চিকিৎসার চেয়ে বেশি গুরুত্ব পেয়েছিল তুকতাক আর পুজো-প্রার্থনা। সবাই অসহায় ভাবে ভাগ্যের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলেন। ফলে রোগ বেড়েছিল দ্রুত। ডিফো লিখেছেন, রোগযন্ত্রণা এমন মারাত্মক ছিল যে, মাঝে মাঝে অসুস্থরা অর্ধনগ্ন হয়ে অমানুষিক চিৎকার করতে করতে রাস্তায় বেরিয়ে নদীতে ডুব দেওয়ার জন্য ছুটতেন। প্রতিদিন গভীর রাতে শহরের পাড়ায় পাড়ায় শববাহী গাড়ি ঘুরে বেড়াতে লাগল মৃতদেহ সংগ্রহ করার জন্য। শববাহকরা চিৎকার করে মৃতদেহ চেয়ে বেড়াতেন বাড়ি বাড়ি। মৃতের বাড়ির লোক সদর দরজার সামনের রাস্তায় শব ছুড়ে ফেলে দিয়ে পালাতেন। যে কবরস্থানগুলি মৃতদেহে ভর্তি ছিল, সেখানেও লুকিয়ে দেহ এনে কোনওক্রমে চাপা দিতে লাগল বাড়ির লোকেরা। কখনও কখনও স্রেফ মাটি খুঁড়ে কোনও মতে চাপা দিয়ে দেওয়া হত দেহ। দুর্গন্ধে, দূষণে টেকা দায় হল শহরবাসীর। মৃতের শহরে পরিণত হল লন্ডন। কখনও মৃতের বাড়ির লোক, কখনও বা গির্জার কর্মীরা মৃতদের স্মরণে চার্চের ঘণ্টা বাজাতেন। নিস্তব্ধ শহরে সারা দিন শুধু শোনা যেত চার্চের ঘণ্টাধ্বনি। স্যামুয়েল পেপিস নামে এক রাজকর্মচারী পুরো প্লেগের সময়টা তাঁর ডায়েরিতে ধরে রেখেছেন। তিনি লিখেছিলেন, ‘১৬৬৫ সালের অক্টোবর মাস। কিন্তু হে ঈশ্বর, সমস্ত রাস্তা শূন্য, বিষণ্ণ। যে ক’টা লোক রাস্তায় হাঁটছে তারা দরিদ্র, অসুস্থ। রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে কানে ভেসে আসছে অজস্র বেদনার কাহিনি। মানুষ শুধু মৃত্যুর কথাই বলছে, সবাই স্বজন হারিয়েছে।’ একই রকম বর্ণনা ডিফোও দিয়েছেন তাঁর বইয়ে। তিনি লিখেছেন প্রতি বাড়িতেই হয় কেউ মারা গিয়েছেন অথবা কেউ মৃত্যুপথযাত্রী। অবর্ণনীয় যন্ত্রণায় দিন কাটাচ্ছেন মানুষ। প্রিয়জনকে নিয়ে শোকের অবকাশও পাচ্ছেন না অনেকে। তারই মধ্যে তাঁর নিজের মরার পালা চলে আসছে। আস্তে আস্তে জীবন-মৃত্যু উদাসীন করে দিচ্ছে মানুষকে।
এরই মধ্যে ১৬৬৬ সালের সেপ্টেম্বরে এক রাতে লন্ডনের পুডিং লেনের একটি বেকারিতে আগুন লাগল। ভয়াবহ সেই আগুন গ্রাস করে নিল লন্ডনকে। প্রাণহানি বেশি না হলেও কাঠের বাড়িগুলি ভস্মীভূত হয়ে গেল। লন্ডনের ৮০ শতাংশ সম্পত্তির সঙ্গে পুড়ে ছাই হল আসবাব, জামাকাপড় এবং প্লেগবাহক কালো ইঁদুর। মনে করা হয়, লন্ডন থেকে প্লেগ চলে যাওয়ার জন্য দায়ী এই আগুন। তবে এখন ইতিহাসবিদরা অন্য কথা বলেন। তাঁদের মতে লন্ডনে আগুন লাগার আগেই কমে আসছিল প্লেগের প্রকোপ। কাজেই আগুন আলাদা করে মহামারি দূর করেনি। এই প্লেগ সম্পর্কে এখন আরও একটি মত দেন বিশেষজ্ঞরা। শুধুই বিউবোনিক প্লেগ নয়, এর সঙ্গে ইংল্যান্ডে হয়েছিল নিউমোনিক প্লেগ, যা অনেক বেশি ছোঁয়াচে। তাই রোগ ছড়িয়েছিল দ্রুত। তবে যা-ই হোক, পরে আরও কয়েক বার লন্ডনে খুব ছোট আকারে প্লেগ ফিরে এলেও গত কয়েক শতক ধরে ইউরোপকে জর্জরিত করা প্লেগের ভয়াবহতা লন্ডন ছেড়ে চলে গিয়েছিল সেই শেষ বারের মতো। সে দিক থেকেও এই মারাত্মক প্লেগের ঐতিহাসিক গুরুত্ব কম নয়।