নবরূপে: আলোকোজ্জ্বল কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরে দর্শনার্থীদের ভিড়। কাশী করিডর উদ্বোধন হওয়ার পরবর্তী সময়ে।
মাঘ-মার্লো-মিলটন
কাশীর যে বইমেলা দেখার সুযোগ হয়েছে তা ডিসেম্বর মাসে হয়, দিন আনি দিন খাই কিছু মানুষের ঐকান্তিক আগ্রহে। আসলে বারাণসীর ইতিহাসে অধ্যাত্মচর্চার সঙ্গে বিদ্যাচর্চাও গুরুত্বপূর্ণ। কত দুর্লভ মহাগ্রন্থ যে এই শহরের গলিঘুঁজির আনাচেকানাচে লুকিয়ে আছে, ইয়ত্তা নেই তার। সেই সব বইয়ের ভিতর থেকে বেশ কিছু জোগাড় করে আয়োজিত হয় এই মেলা। মাহমুরগঞ্জে, আকাশবাণীর অফিসের কাছাকাছি একটি বাড়ির দু’টি ঘর জুড়ে সেই মেলা। মহাকবি মাঘ-এর পাশেই মিলটন জেগে আছেন সেখানে। এক হাতেরও কম দূরত্বে হয়তো মার্লো। এত পুঁথির পৃষ্ঠা দিয়ে ঘেরা বলেই হয়তো শয়তান কাশীর আত্মা পর্যন্ত পৌঁছতে পারে না কখনও।
স্পর্শযোগ্য, তবু স্পর্শাতীত
গোধুলিয়ার মোড়ে জায়ান্ট-স্ক্রিনে ভেসে উঠছিল ইতিহাসের চেয়েও প্রাচীন শহরের নব কলেবর। অকস্মাৎ একটি পদযাত্রা থেকে হৃদয়প্লাবী সুরে জেগে উঠল, “প্রভুমীশমণীশমশেষগুণং, গুণহীন মহীশগরাভরণম/ রণনির্জিত দুর্জয়দৈত্যপুরং, প্রণমামি শিবম্ শিবকল্পতরুম্...” আর তখনই স্ক্রিনের ছবির সঙ্গে শোনা গেল ভাষ্য, নতুন করিডর উদ্বোধনের দিনে কাশী বিশ্বনাথ ধামে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবেন আরও অনেক বিগ্রহ; প্রাচীন অক্ষয়বটের নীচে বজরঙ্গবলী, এ ছাড়াও পরিসরের ভিতরেই নতুন করে অভিষেক হবে অন্নপূর্ণা, কালী, ভগবান বদ্রী, কার্তিকেয়, দত্তাত্রেয়, বিষ্ণু, লক্ষ্মী, রাধাকৃষ্ণ, গঙ্গা, দুর্গা প্রমুখের। কাশী বিশ্বনাথধাম শুধু মহাদেবের তো নয়! এই মহামিলনের মন্দিরে ঈশ্বরও সবার রঙে রং মিলিয়েই থাকেন। ঈশ্বরের বহুত্বে স্থির বিশ্বাস আছে বলেই তো মানুষের বহুত্ব খুঁজে ফেরা। বহুরূপে সম্মুখে তোমার, তোমার সম্মুখে বহুরূপে।
‘গলিয়োঁ কি ভুলভুলাইয়া’ কাশীর অনেক নিন্দা শোনা যায়, কিন্তু আমরা ভুলে যাই যে এই গলিগুলো আছে বলেই কাশীর বড় বড় সেলেব্রিটি নিজের বাড়ি থেকে বড় রাস্তা অবধি পায়ে হেঁটে আসতে বাধ্য হন। বাবা বিশ্বনাথ কারও মোড়লি মেনে নেন না বলেই কাশীর গলিতে মানুষ আর ষাঁড়ের সমানাধিকার। তা বলে কি হাসপাতালের সামনের রাস্তা চওড়া হবে না? অবশ্যই হবে। কিন্তু সেটা অ্যাম্বুল্যান্সের জন্যই। বারাণসীতে ‘ডেস্টিনেশন হলিডে’ কাটাতে আসা শ্বেতাঙ্গ পর্যটকদের জন্য যদি কাশীকে চারতারা আর পাঁচতারা হোটেলে মুড়ে দিতে হয়, তা হলে অত টুরিস্টের প্রয়োজনীয় জল আসবে কোত্থেকে? গঙ্গা ভিন্ন গতি নেই তো! পাম্প করে অহরহ গঙ্গার জল নেওয়া হলে নতুন করে চড়া জেগে উঠতে বাধ্য।
‘আমি যেমন, আমাকে সে ভাবে নাও’ যদি আজকের প্রিয় উচ্চারণ হয়, তবে তা শিবতীর্থ কাশীর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য নয় কেন? বরুণা আর অসির সঙ্গমস্থল নিজের একটি হাত মেলে রেখেছে অতীতের দিকে, আর একটি অনাগতর পানে। এখানে উস্তাদ বিসমিল্লা খানের সানাই কিংবা পণ্ডিত রাজন-সাজন মিশ্রর গলায় আকাশ শুদ্ধ তো মাটি কোমল, জল স্পর্শযোগ্য কিন্তু ঢেউ স্পর্শাতীত।
একতারার দোতারা
আমার মাতামহের বাবা একটি বাড়ি করেছিলেন কাশীতে। শুনেছি সেখানে থাকাকালীন আমার দাদু একটি চিঠি লেখেন তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু কাজী নজরুল ইসলামকে। কাশীবাসের বিস্তৃত বিবরণ ছিল সেই চিঠিতে। পরে আমাদের রামপুরহাটের বাড়িতে গৃহদেবী মৌলিক্ষার সামনে বসেই একটি গান শোনান নজরুল। বলেন যে, দাদুর চিঠিটা পেয়ে থেকেই সেটি ঘুরছিল তাঁর মাথায়। মায়ের তখনও জন্ম হয়নি, কিন্তু আমার বড়মাসি বলতেন যে, দাদুর অনুরোধে চিরবিদ্রোহী কবি নাকি যত্ন করে গানটা তুলিয়েও দিয়েছিলেন তাঁকে। কতখানি সত্যি আর কতটুকু কল্পনা বলতে পারব না, তবে কাশীতে গেলেই আমাকে অধিগ্রহণ করে ওই গান, ‘মহাকালের কোলে এসে গৌরী হল মহাকালী’। ওই গানেরই এক জায়গায় পাই, “অন্ন দিয়ে ত্রি-জগতে/ অন্নদা মোর বেড়ায় পথে,/ ভিক্ষু শিবের অনুরাগে ভিক্ষা মাগে রাজদুলালী।” যত শুনি, যত গাই, চোখ তত জলে ভরে যায়, একতারাতে বেজে ওঠে দোতারারই সুর।
মন বলে, কাশী সাধনার চেয়েও অনেক বেশি করে প্রেমের শহর। প্রেম-সাধনার শহর। যারা ভালবেসেছে, যারা হারিয়েছে, তাদেরই মনোভূমি এই বারাণসী। সতীর শব কাঁধে নিয়ে প্রলয়নৃত্যে মেতে উঠেছিলেন সতীর প্রেমিক আর সেই নাচই শব থেকে জন্ম দিয়েছে শব্দের। শব্দের জাদুকর গালিব তাই কি আত্মায় অনুভব করেছিলেন বারাণসীর অনুরণন? বারাণসীর আলোছায়াতেই তো রচিত তাঁর অবিস্মরণীয় ‘চিরাগ-এ-দয়ের’ যার ছত্রে ছত্রে কাশী হয়ে উঠেছে সেই ভাসমান প্রদীপ, যার বুকে শিখার মতো জ্বলছে গালিবের কাব্য। কাশীতে থাকাকালীন কত দিন এমন হয়েছে যে সকালে অসিঘাটে বসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা তুলসীদাসের ‘রামচরিত মানস’ পাঠ শুনেছি আবার বিকেলে, গালিবেরই ভাষায় ‘কৃপণের কবরের চেয়েও বেশি অন্ধকার আর অপরিসর’ কোনও গলির ভিতরের আস্তানায় বাতাসে আতরের মতো অনায়াস মিশে যেতে দেখেছি গালিবের পঙ্ক্তিকে। হিন্দি অনুবাদে শোনা গালিবের সেই বাক্য যেন সন্দেশের গায়ে তবকের মতো আলো ছড়ায়— ‘বনারস কি হাওয়া মুর্দো কে বদন মেঁ রুহ ফুঁক দেতি হ্যায়’!
মন্ত্র থেকে সিদ্ধমন্ত্রে
শ্রীমা সারদাদেবী যখন অন্নপূর্ণা মন্দিরে অবগুণ্ঠনবতী এক স্ত্রীলোককে ঘোমটার ভিতর দিয়েই সিঁদুর পরাতে যান এবং কেন সে আর্তরব করে উঠল দেখতে গিয়ে দেখেন যে, স্ত্রীলোকটির কপালস্থিত তৃতীয় নয়নে লেগেছে তাঁর আঙুল, তখন তিনি বাহ্যজ্ঞান হারান। দেবী হোক বা মানুষী, তৃতীয় নয়ন মেয়েদেরই থাকে শুধু। তাই কাশীশ্বরী অন্নপূর্ণা মন্দিরের প্রসাদস্বরূপ হাতে পাই চাল, যা থেকে অন্ন তখনই তৈরি হতে পারে, যখন বাড়ির কেউ তা ফুটিয়ে দেয় জলে। সাধকেরা বলেন, এ আসলে মন্ত্রের সিদ্ধমন্ত্র হয়ে ওঠার আখ্যান। মন্ত্র দিয়ে হতেই পারে তপ, কিন্তু সিদ্ধমন্ত্র পেলেই সম্ভব জপ। আরও মনে হয়, এই গল্পের মধ্য দিয়ে শ্রীমা, অসংবেদনশীল আমাদের শেখান যে “দেখো... দেখতে শেখো, অন্যের আবরণ সরিয়ে তার কষ্টটুকুর হদিস পেলেই তো তোমার আভরণ ত্যাগ করতে ইচ্ছে হবে।”
জটায় নদী, অঙ্গে সতী
যৌবনে কিছু দিন কাশীতে থেকেছে এমন এক জনকে চিনি। সে মুন্সিঘাটের কাছের একটি ইস্কুলেও পড়িয়েছে কয়েক দিন। যে ক্লাসে সে পড়াত সেই ক্লাসের পাঠ্যক্রমে অস্কার ওয়াইল্ডের ‘হ্যাপি প্রিন্স’ গল্পটা ছিল। বহু দিন ঘুমের ভিতর তার মনে হয়েছে, দেবাদিদেব নিজেও যেন এক হ্যাপি প্রিন্স যিনি পরদুঃখে কাতর বলেই বেলপাতাতেই সন্তুষ্ট।
উত্তরাখণ্ডের প্লাবনে যাঁকে মাথা উঁচু করে ভেসে যেতে দেখা যায়, মণীন্দ্র গুপ্তর কবিতায় যিনি একটু হেলে বসে থাকেন গঙ্গার রূপ প্রত্যক্ষ করার জন্য, তিনি সুপারম্যান হয়ে জটায় নদীকে ধারণ করে, অঙ্গে ধারণ করতে পারেন নারীকে। সতী আর শিবের সম্মিলনই এই অনিত্য ধরিত্রীতে একমাত্র নিত্য। অফিসে-ক্লাবে-দলে-কলেজে-স্কুলে প্রতি মুহূর্তের গলাকাটা প্রতিদ্বন্দ্বিতা কমে যেত যদি গভীর দৃষ্টিতে তাকানো যেত সেই দেবতার দিকে যিনি অমৃত নিয়ে সবাই কাড়াকাড়ি করছে দেখেও সানন্দে পান করতে পারেন বিষ, গলায় জড়াতে পারেন সাপ।
শ্লোকের নির্মাণ, শোকের নির্বাণ
“কাশীর মাটিতে পা রেখে কী আর পাবি, কাশীতে মাটিতে মাথা রাখতে হয়,” বলতেন এক সাধু।
“তাই কি এত লোক মরতে আসে এখানে?” জিজ্ঞেস করত যে শুনত। সে প্রশ্নের উত্তর না দিয়েই চলে যেতেন উনি, পরে কেদারঘাট বা নারদঘাটে দেখা যেত, হাতের উপর হাতের চাপড় দিয়ে গাইছেন, “জয় অম্বে মাইয়া, জয় গৌরী মাইয়া...”
এক দিন দেওয়ালে আঁকা শিবের প্রতিকৃতির নীচে বসে গাইছিলেন, “প্রভু মোর সন্তাপ নাশিতে/ ইথে যদি তব কষ্ট হয়;/ যা হয় আমার হবে, তুমি কেন দুঃখ পাবে/ সুখে থাকো ওগো সুখময়।”
শুনতে শুনতে মণিকর্ণিকা অবধি চলে এসে দেখা গেল, চিতায় ভস্মীভূত হচ্ছে একের পর এক মরদেহ আর উচ্চারিত শ্লোকের ভিতর দিয়ে নির্বাণ ঘটছে শোকের। কী আছে ওই আগুন আর উচ্চারণের ওপারে? “নৈনং সেতুমহোরাত্রে তরতঃ ন জরা ন মৃত্যুর্নশোকো ন সুকৃতং ন দুষ্কৃতং”— আত্মার সেতুর এ পারে নিয়মমাফিক দিন থেকে রাত্রি, রাত্রি থেকে দিন হয়ে চলেছে, ও পারে দিন অথবা রাত্রি, সুকৃতি কিংবা দুষ্কৃতি কিছুই নেই। কিন্তু মণিকর্ণিকা লাগোয়া বহু পরিবার এর ভিতরেই খুঁজে পায় জীবিকা। শ্মশানযাত্রীদের বাসা ভাড়া দেওয়া থেকে শুরু করে চিতার কাঠের বরাত নেওয়া, মায় দাহ সম্পূর্ণ হয়ে গেলে গঙ্গায় অস্থি ভাসিয়ে দেওয়া অবধি প্রত্যেকটা কাজের জন্য ছোট-বড় সিন্ডিকেটের রমরমা অস্তিত্ব। সিন্ডিকেটের মাথারা সামনে আসে না, কিন্তু যারা আসে তারা রীতিমতো পেশাদার। কতটা ঘিয়ের জন্য কত টাকা আর বেলকাঠের বদলে চন্দনকাঠ নিলে অতিরিক্ত কত টাকা দিতে হবে, ক্যালকুলেটর ছাড়াই হিসেব করে দেবে তারা। দাহকার্যের পর মিষ্টিমুখ করানোরও রেট ফিক্সড।
এই কাজের সঙ্গে বহু দিন ধরে যুক্ত অবিনাশ জয়সোয়াল বলছিলেন যে, সাধারণত আশি-নব্বই বছরের কেউ মারা গেলে লোকে মন খুলে খরচ করে কারণ সে ক্ষেত্রে মৃত্যুর ভিতর দিয়েও ফল্গুর মতো একটা মুক্তিবোধ বয়ে যায়। অন্য দিকে যুবক-যুবতী মারা গেলে পয়সা আদায় করা কঠিন হয়, কারণ মৃত্যুটাই মেনে নিতে পারে না কেউ চট করে।
কিন্তু সেই মেনে নিতে না-পারা মৃত্যুর ভিতর থেকেও নতুন নতুন ‘অন্তর্জলী যাত্রা’র জন্ম হয় হরবখত। তেমনই এক গল্প শোনালেন অবিনাশ। নতুন এক রাজস্থানি বৌ সেখানে স্বামীর অকালপ্রয়াণের পর ঘাটের কাছেই একটি অতি ক্ষুদ্র ঘরে সময় কাটাচ্ছিল।
এ বার শ্রাদ্ধশান্তির দিন বিকেলে সেই সদ্যবিধবা অশৌচের ভিতরেই হয়ে যাওয়া প্রেমের উপর ভরসা করে চম্পট দেয় তার প্রেমিকটির সঙ্গে, দেড়শো লাড্ডু ঝোলায় নিয়ে। মৃতের বাবা-মা নাকি কপাল চাপড়ে দুঃখ করেছিলেন, পালানোর সময় অকালপ্রয়াত ছেলের বৌ লাড্ডু সঙ্গে নিয়ে পালাল কেন! শ্রাদ্ধে নিমন্ত্রিতদের কম পড়ে গেল যে!
সম্প্রসারিত কাশী বিশ্বনাথ করিডরের উদ্বোধন উপলক্ষে মোট ষোলো লক্ষ লাড্ডু তৈরি হচ্ছিল, বারোটি জায়গায়। একটির ওয়ার্কশপের ভিতরে ঢুকে সুগন্ধে মাথা বনবন করে ঘুরতে থাকল। কড়া স্বাস্থ্যবিধি মেনে তৈরি হতে থাকা সেই সব লাড্ডুর পাহাড়কে একটু দূর থেকে দেখে মনে হচ্ছিল যেন শিবঠাকুরের গলার গাঁদাফুলের মালা!
তোমার আলোকিত অঙ্কে
দশাশ্বমেধ ঘাটে, মাঝির নৌকোয়, সবজিমন্ডির পশরায়, চৌকাঘাটে মাছের বাজারে, বাঙালিটোলার গামছা-চাদর, কাঁসা-পিতল, ধাতু-পাথরের দোকানে, মদনপুরায় বেনারসির কারখানায়, কাত্যায়নী, সিদ্ধিদাত্রী, সঙ্কটা বা কালকাজির মন্দিরে, কালভৈরবের দরজায় লাড্ডু কিংবা মিষ্টি হাতে যে বাচ্চাটাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলাম, সেই কি নীলকণ্ঠ? সর্বেশ্বর? সেই কি একই সঙ্গে ব্রাহ্মণ-ক্ষত্রিয়-চণ্ডাল, মৃত্যু এবং মৃত্যুঞ্জয়, দুই-ই? হয়তো তা-ই, কিন্তু শুধু সেটুকুই নয়। সে ওষুধে বিষ্ণু, ভোজনে জনার্দন, শয়নে পদ্মনাভ, বিবাহে প্রজাপতি, যুদ্ধে চক্রধর, দেহত্যাগে নারায়ণ, সঙ্গমে শ্রীধর। সঙ্কটে সে মধুসূদন, কাননে নরসিংহ, জলমধ্যে বরাহ, পর্বতে রঘুনন্দন। তার কাছে সবাই সব কিছু চাইতে পারে, কারণ সে নিজেই যে ভিখারি।
কাশী ভিক্ষাকে সেলিব্রেট করে, কারণ ধর্ম এবং প্রেম দু’ক্ষেত্রেই বিজ্ঞাপনের বিরুদ্ধে দাঁড়ায় ভিক্ষা। অন্তরের নিভৃতিকে গ্লোসাইন দিয়ে চেনাতে চায় না সে। আর ভিখারি সেলিব্রেট করে নারীর ক্ষমতায়ন। সংসারী লোকের বৌ এক সপ্তাহের জন্য বাপের বাড়ি গেলে সে হাঁপ ছেড়ে বাঁচে, কিন্তু বাড়িতে কর্ত্রী না থাকলে সন্ন্যাসী-ব্রহ্মচারীর মাথায় হাত পড়ে। পুরুষ ভিক্ষা দিতে পারে না, ভিক্ষা নিতে পারে শুধু— এই বোধ কাশী ছাড়া কোথায় জন্মাত?
রুশ বিপ্লবের সময় রাশিয়া তথা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ব্যালেরিনা মাটিল্ডা শিজ়িনস্কিয়া মস্কোয় তাঁর প্রাসাদোপম বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন। পরবর্তী কালে প্যারিসের বাসিন্দা হিসেবে জীবন কাটালেও বারদুয়েক অন্তত কাশীতে এসেছেন তিনি, এমনটা শোনা যায় কাশীর বৃদ্ধ পাণ্ডাদের এক-আধজনের মুখে। কথাটা শুনে অবাক হইনি একটুও। প্রলয়নাচন নাচতে থাকা নটরাজের জটার বাঁধন কী ভাবে খুলে যায় তা দেখার জন্য ব্যালেরিনা আসবেন না?
আসলে বিশ্বনাথের কাছে দু’হাত পেতে কিছু চাইবে না কে? আর ভিক্ষুকদের বিষয়ে কী অপরূপ সংবেদনশীলতা বারাণসীর! বাঙালিটোলায়, ভেলুপুরে, লঙ্কা কিংবা অন্যত্রও গৃহস্থবাড়ির সামনে ঢাকা দেওয়া মাটির কলসি আর মাটির গেলাস দেখেছি। কেউ যেন তৃষ্ণার্ত না ফিরে যায়।
ক্ষমতা, রাজনীতি আর হিংসার অলাতচক্রে যে ত্র্যহস্পর্শ ক্রমবর্ধমান— শিব, সতী এবং গঙ্গা তার বিপ্রতীপে দাঁড়ানো ত্রিবেণী যেন! জল দিয়ে কান্না, বেলপাতা দিয়ে অতৃপ্তি আর ভস্ম দিয়ে কসমেটিক্স ধুয়েমুছে দেওয়ার সেই মহাযজ্ঞে মরণ আরও বেশি করে জীবনের রূপ দেখায় বলেই বোধহয় সে মোক্ষ।
নগরচিত্র: পুণ্যতোয়া গঙ্গার তটভূমি ধরেই গড়ে উঠেছে বারাণসীর স্থাপত্য
সমকালের মহাকাল
সময়ে যার জন্ম, সময়ই তার মৃত্যু ডেকে আনে। বারাণসী তাই হয়তো সময়ের সম্পাদ্য কষতে কষতেই মহাসময়ে পা রাখে। মহাকাল আর সমকাল এখানে পরস্পরের পরিপূরক। কারও মনে হতে পারে, একটা শহর যেখানে দূরদূরান্ত থেকে মরতে আসে মানুষ, তার ভিত্তিই হয়তো ঋণাত্মক। কিন্তু আসলে তা নয়। মৃত্যুর মহিমা কাশীতে অনেক বেশি, কারণ বারাণসী ‘অ্যানিম্যাল প্ল্যানেট’-এর বিপ্রতীপে এক ‘স্পিরিচুয়াল প্ল্যানেট’কে বাস্তব করে তোলে। এখানে মৃত্যুমুখী মানুষের আদর বেশি, কারণ কাশী যে মৃত্যুঞ্জয়ের শহর। রিচার্ড ফেইনম্যান বলতেন যে, বিজ্ঞানের সমস্ত জ্ঞান যদি ধ্বংস হয়ে যায় আর বেঁচে থাকে কেবল একটিই বাক্য, তা হলে তা হবে এই পারমাণবিক সত্য যে, সব কিছুই পরমাণু দিয়ে তৈরি। বারাণসী বহু বার আক্রান্ত হয়েছে বহু আগ্রাসনে, কিন্তু দেবালয় ধ্বংস হলেও দেবতা কি ধ্বংস হন কখনও? যা চূর্ণ হয়, তা শুধুই বহিরঙ্গ, মাটি বা পাথরের মূর্তি, প্রাণের দেবতা প্রাণেই থেকে যান। তাই আজও নিকষ অন্ধকারে রুপোলি আলোর বিন্দুর মতো জ্বলজ্বল করে একটিই বাক্য, “কাশীকে হর কংকর/ হ্যায় ভোলা শংকর”।
কাশীতে টাকার মূল্যে চাল কিনে নেওয়া যায় না, হাঁড়ি আর হাতা নিয়ে বসে থাকা মা অন্নপূর্ণার কাছে নতজানু হয়ে প্রার্থনা করতে হয় অন্ন। গঙ্গা আর গঙ্গাধরের সংযোগ উপলক্ষে শিব-পার্বতীর মহিমা কীর্তন করতে পথে বেরনো মিছিলে তাই মারোয়াড়ি সমাজ, সিন্ধি সমাজ, বাঙালি সমাজ, তামিল সমাজ-এর প্ল্যাকার্ডের পাশাপাশি চোখে পড়ে ‘ফার্মাসিস্ট সমাজ’-এর প্ল্যাকার্ডও। ফার্মাসিস্টরা কী করছেন এই মিছিলে? তাঁরা তো ফুল-ফল কিংবা সুগন্ধী বিক্রেতা নন! উত্তর আসে, “পথে হাঁটতে হাঁটতে কেউ যদি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে, কে যত্ন নেবে তার?”
ওই একটি কথাতেই স্পষ্ট হয়ে যায় ‘স্পিরিচুয়াল প্ল্যানেট’-এর অস্তিত্ব। তাঁকে চোখে দেখা যায় কি না সেটা বড় কথা নয়, আকাশে কি অক্ষাংশ আর দ্রাঘিমাংশ চক দিয়ে আঁকা থাকে? তবু তারই উপর ভিত্তি করে বিমান ওড়ে। সবার নীচে, সবার পিছে, সবহারাদের মাঝে বিচরণকারী মহাদেবের অঙ্গরাগও ভস্ম। সেই ছাই কত লক্ষ বছর ধরে উড়ছে এই পৃথিবীতে। ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণও আবির্ভাবের পর পর সেই ছাইয়ের গাদায় গড়াগড়ি খেয়েছেন, না হলে কেউ জানবে কী করে যে ‘চাই’ শব্দটার আসল অর্থ ‘ছাই’? ‘চাই’ দিয়ে তৈরি পৃথিবীতে বারাণসী ‘ছাই’য়ের প্রতিভূ!
প্রতিটি শিবরাত্রির আগে শিববরাতের যে বিপুল শোভাযাত্রা বেরোয় সেখানেও দাঁতভাঙা কোনও উচ্চারণ নয়, ভোজপুরি গানের ঝর্না উৎসারিত হতে দেখা যায়। শিববরাতের এই শোভাযাত্রায় আজ কয়েকশো বছর পার্বতী হন কোনও চণ্ডালের কন্যা। কাশীর রাস্তায় আতর আর আগরবাতির ছোট দোকান ছিল আলতাফ সাহেবের। তাঁকে দেখেছি, ওই শোভাযাত্রার পার্বতীকে গোলাপ দিয়ে আসতে। না, তিনি কোনও রোজ় ডে-র নাম জানতেন না। তবে কাশী জানে, উপোস যাদের করতে হয় বছরভর, রোজা যাদের রাখতে হয় রমজান মাস পেরিয়ে গেলেও, ‘রোজ়’ দেওয়ার অধিকারীও তাঁরাই।
ষাঁড়ের অধিকারে
আগে যদি বলে থাকি যে, কাশীতে ষাঁড় আর মানুষের সমানাধিকার তবে তা ফিরিয়ে নিচ্ছি এখনই। কাশীতে ষাঁড়ের অধিকার বোধহয় একটু বেশিই। যে কোনও গলির মধ্যে এমন শরীর এলিয়ে শুয়ে থাকতে পারে সে, যে একটা সাইকেল নিয়েও গলে যাওয়ার উপায় নেই। প্রথম বার কাশী থেকে ফেরার পর ‘বিসর্জন’-এর একটি অংশ আবৃত্তি করেছিলাম, ‘হত্যা’র বদলে ‘ষাঁড়’ বসিয়ে। “ষাঁড় অরণ্যের মাঝে, ষাঁড় লোকালয়ে/ ষাঁড় বিহঙ্গের নীড়ে, কীটের গহ্বরে/ অগাধসাগর জলে, নির্মল আকাশে/ ষাঁড় জীবিকার তরে, ষাঁড় খেলাচ্ছলে/… চলেছে নিখিল বিশ্ব ষাঁড়ের তাড়নে… ” তবে পাশাপাশি এ কথাও বলতেই হবে যে, কাশীর ওই রিকেটি গলি জুড়ে শুয়ে থাকা ধম্মের ষাঁড় কাউকে তেমন গুঁতিয়েছে বলে শোনা যায় না, বরং শুনেছি সন্তানসম্ভবা নারী দেখলে রাস্তা ছেড়ে দেয়! উল্টো দিকে ‘দিব্য কাশী, ভব্য কাশী’ বানাতে গিয়ে যে সমস্ত রাস্তা চওড়া হয়েছে, তাতে আত্মনিয়ন্ত্রণহীন উজবুকদের স্বেচ্ছাচারী বাইকের ঠেলায় গত ছ’মাসে মারা গেছেন জনা পাঁচেক। চৌষট্টিঘাটে বসে ‘নয়ন তোমারে পায় না দেখিতে’ শোনাতে শোনাতে এক সন্ন্যাসী আমায় বুঝিয়েছিলেন, এই গানে আস্থায়ী আর অন্তরা কী ভাবে ফিরে ফিরে আসে— চোখ বন্ধ করে বারাণসীর কথা ভাবলেও মনে হয় এখানে ওই ফিরে আসা যত বড় সত্য, ভিড়ে আসা ততটা নয়।
তবে বন্ধ চোখ হঠাৎ খুলে গেলে যদি দেখা যায় দশাশ্বমেধ ঘাটের কাছে একটি ইডলি-দোসার দোকানে আপনার ঠিক পাশে দাঁড়িয়ে মনের আনন্দে ইডলি চিবোচ্ছে কোনও ষাঁড়, একটু চমকে যেতেই হয়!
দক্ষিণের বারান্দা
পাঁচ হাজার বছর ধরে প্রধানত অড়হর ডাল খেয়ে চলেছে দক্ষিণ ভারতের লোক। আচ্ছা, কোত্থেকে আসছে এত ডাল? কর্নাটকে বেশ খানিকটা উৎপন্ন হয়, কিন্তু তা দিয়ে বিন্ধ্যর ও পারে থাকা সব মুলুকের চাহিদা মেটানো তো সম্ভব নয়। এখানেই লুকিয়ে আছে ভারত-আত্মার অভিন্নতার প্রমাণ। ‘গঙ্গে চ যমুনে চৈব গোদাবরী সরস্বতী/ নর্ম্মদে সিন্ধু কাবেরী জলেঽস্মিন সন্নিধিং কুরু’ রচনা করে প্রাচীন কোনও কবি (তাঁকে শাস্ত্রকার বলতেই পারেন কেউ) ধর্ম কিংবা ভাষা নয়, জলের মালায় গেঁথে দিয়ে গেছেন অখণ্ড ভারতকে। পিঠে ডালের বস্তা নিয়ে সেই বিম্বিসার অশোকের ধূসর জগৎ থেকে, ট্রাকে করে মাল পরিবহণ চালু হওয়ার আগে অবধি, হাজার বছর ধরে যাঁরা পথ হাঁটছেন, আওধ কিংবা বুন্দেলখণ্ডের ডাল পৌঁছে দিয়ে আসছেন বিজয়ওয়াড়া, গোলকুণ্ডা কিংবা মাদুরাইতে, তাঁরাও ডালের সুগন্ধে সংহতির মহাকাব্য রচনা করে এসেছেন।
এই ইডলি-দোসার সঙ্গে বারাণসীর পরিচয় বহু শতবর্ষ আগে। খাওয়ার সময় জ্ঞানের কথা ভাল লাগে না, কিন্তু গুগল সার্চ করে কাশীর খাদ্য পর্যটন দেখতে গেলেই যে দেখায়, কাশী মানেই ফুটন্ত তেল থেকে তুলে আনা কচুরি কিংবা কংক্রিটের মতো শক্ত সন্দেশ— তা-ও নিতান্তই অন্ধের হস্তিদর্শন। শতকের পর শতক কাশী জুড়ে ইডলি-দোসার রমরমা। আজ থেকে দু’শো কিংবা তিনশো বছর আগে ওই নারকেলের চাটনি কী ভাবে থাকত কলাপাতায়? কাশীতে অত নারকেল মিলত কোথায়?
বাঙাল ভাষায় যে বলে ‘ডাইলের মজা তলে’ এখানেও তেমনই ব্যাপার! বাবা বিশ্বনাথের চরণে প্রতিনিয়ত অসংখ্য নারকেল এসে পড়ে। আগেও পড়ত। নারকেল তো আর রাত পোয়ালেই পচে যায় না, তাই বহু দূর থেকে নারকেল নিয়ে হাজির হতেন দর্শন-পিপাসুরা। সেই নারকেলই সিকিভাগ মূল্যে বিক্রি হয়ে যেত ইডলি-দোসা নির্মাতাদের কাছে। না, একে দুর্নীতি বলব না। বরং বলব মানুষ যেমন তার ঘরের মাচায় জন্মানো লাউ বুকে করে দেবতার জন্য নিয়ে আসে, দেবতারও ইচ্ছে করে মানুষের ভোগে লাগুক তাঁর সামগ্রী। বন্ধ নিজের মুক্তি না খুঁজলে, মুক্তি বাঁধনের মাঝে বাসা বাঁধবে কী করে?
কান্দো কেনে মন
‘ও তার অন্ত নাই গো যে আনন্দে গড়া আমার অঙ্গ’— মীরঘাটে এক রোগাপাতলা লোককে গাইতে শুনেছিলাম এক বার। পরে জেনেছিলাম যে বর্ধমানের জৌগ্রাম থেকে কাশী গিয়েছেন তিনি, মিষ্টির কারিগর হিসেবে। কাশীর প্রবীণ পাণ্ডা বিশ্বনাথ তেওয়ারি যখন বললেন, “সীতাভোগ, মিহিদানা ভোগ দেবে, মহাদেব খেতে ভালবাসেন,” তখন সেই ভদ্রলোকের কথা মনে পড়ল। কাশীর কোন গলিতে বসে এখন রসের ভিয়েন ঘন করছেন তিনি?
ভোরে মঙ্গলারতি, বেলায় ভোগারতি, সন্ধ্যায় সপ্তঋষি আরতি বা সন্ধ্যারতি হয়ে যাওয়ার পর রাতে শয়নারতির আগে শৃঙ্গার-আরতি হয় বাবা বিশ্বনাথের। অরুণকুমার সরকার তাঁর কবিতায় লিখেছিলেন, ‘যৌবন যায় যৌবনবেদনা যে যায় না’। বারাণসী যতই প্রাচীন হোক, সর্বদা টলমল করছে যৌবনবেদনায়। গলায় হেমলক নিয়েও সে প্রেম চাইছে। কারণ সে জানে, দক্ষের দুহিতাই পারেন দক্ষযজ্ঞ ধ্বংস করতে।
বারাণসীর সেই প্রসারিত অস্তিত্বই কালনা থেকে কালিকটের কোটি মানুষকে যুগের পর যুগ ধরে বলিয়েছে, ‘আমায় কাশী পাঠিয়ে দে!’ সর্বহারারও বারাণসী আছে বলেই না ট্রেনে উঠে বাউল গায়, ‘যার কিছু নাই তারও আছে কাশী বৃন্দাবন রে/ কান্দো কেনে মন রে!’
শেষ নাহি যে
কাশী নিয়ে কত লেখা, প্রাচীন কাশীখণ্ড থেকে শুরু করে আজ অবধি, ইয়ত্তা নেই তার। দীনবন্ধু মিত্রর কবিতা থেকে বিভূতিভূষণের উপন্যাস, কোথায় নেই কাশী! কত বার গিয়েছি কাশীতে, কত থেকেছি, তবু তার অজস্র গলি-উপগলি, ঘাটের ঠিকানা হারিয়ে ফেলি হামেশাই। মীর তাকি মীরও নাকি হারিয়ে যেতেন কাশীতে, এমনটাই জনশ্রুতি।
হারিয়ে ফিরে পেতেন বলেই হয়তো পুরনোও চিরনতুন হয়ে থাকত। মীর তাই লিখেছিলেন, ‘ইঁউ উঠে হম উস গলি সে/ য্যায়সে কই জঁহা সে উঠতা হ্যায়...’ গলি ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার বেদনা যেখানে পৃথিবী ছেড়ে যাওয়ার সমান্তরাল, সেই পঙ্ক্তি কাশী ছাড়া আর কোথায় বসে লেখা সম্ভব?
ওই গজল গুনগুন করতে করতেই মনখারাপ শুরু হয়। এমন একটি সোমবার, বিশ্বনাথ-দর্শন হবে না আমার, ভিআইপি-রা এসেছেন বলে? শিব তো ভিআইপিদের দেবতা নন! ভাবনাটা মনে আসার ঘণ্টাখানেকের মধ্যে প্রবীণ তেওয়ারিজিই হাত ধরে নিয়ে গিয়ে দর্শন করিয়ে আনলেন, ঝরঝরে বাংলায় কথা বলতে বলতে। কী ভাবে সম্ভব হল, ঈশ্বরই জানেন।
প্রণাম কখনও সারা যায় না, প্রণাম করা যায় শুধু। সর্পিল পথ ধরে যখন বেরিয়ে আসছি হাওয়া কানে কানে বলে গেল, আমিই
যেন হাজারি ঠাকুর আর এই চত্বর, ‘আদর্শ হিন্দু হোটেল’— যেখানে জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে প্রতিটি মানুষের অন্ন মাপা থাকে।
বয়স হচ্ছে বলেই জল আসে চোখে। দশাশ্বমেধ ঘাটে গঙ্গারতি দেখতে এসে আশপাশের প্রতিটি মানুষকে মনে হয় বাবা বিশ্বনাথ কিংবা মা অন্নপূর্ণার প্রতিরূপ। বুকের ভিতর বেজে ওঠে একটিই কলি, ‘…আমায় নইলে ত্রিভুবনেশ্বর,/ তোমার প্রেম হত যে মিছে’।