চলতি বছরের অগস্টের দ্বিতীয়ার্ধে প্রকাশিত হয়েছে ৫৬০ পৃষ্ঠার একটি কোরিয়ান উপন্যাস। ইংরেজিতে যার নাম মোটামুটি ‘দ্য ওয়ার্ল্ড ফ্রম নাউ অন’। বাংলা অনুবাদে হতে পারে: ‘এখন থেকে দুনিয়া যেমন হবে’। উপন্যাসটির লেখকের নাম ‘বিরামপাং’। কোরিয়াতে ‘বিরামপাং’ হল, সৃষ্টির শুরু এবং শেষের প্রবল ঝড়ের নাম। প্রকাশিত হয়েই বইটিও কিন্তু ঝড় তুলেছে দেশে বিদেশে।
উপন্যাসটি পাঁচ জন ব্যক্তির কাহিনি নিয়ে। বিশেষ ভাবে সক্ষম এক শখের অঙ্কবিদ, এক জন অঙ্কের অধ্যাপক এবং উদ্যোগপতি, এক মনোরোগ বিশেষজ্ঞ, এক জ্যোতির্পদার্থবিজ্ঞানী এবং এক বৌদ্ধ সন্ন্যাসী। এঁরা সকলেই ছুটে চলেছেন মানুষের অস্তিত্বের অর্থ সন্ধানের লক্ষ্য নিয়ে।
গল্পটির বুনোট কিংবা তার সাহিত্যরসের জন্য নয়, উপন্যাসটির হইচই ফেলে দেওয়ার মূল কারণ হল— এর লেখক ‘বিরামপাং’ মানুষ নয়, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-সম্পন্ন একটি রোবট। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা তৈরির এক কোম্পানি এবং আর এক ন্যাচারাল ল্যাঙ্গোয়েজ প্রসেসিং কোম্পানি যৌথ উদ্যোগে তৈরি করেছে রোবটটিকে। উপন্যাসটিও ‘তৈরি’ হয়েছে দীর্ঘ সাত বছর ধরে। এ যেন চলচ্চিত্রের রূপায়ণের মতো কর্মযজ্ঞ, যেখানে প্রয়োজন নির্দেশনার, অভিনয়ের, সম্পাদনার। কিম টায়-ইয়ন নামে এক কোরিয়ান গণিতবিদ এবং ঔপন্যাসিক এই দীর্ঘ উপন্যাসটির রূপকার। কিম নিজে এর আগে লিখেছেন পাঁচটি পূর্ণদৈর্ঘ্যের উপন্যাস এবং দু’টি অঙ্কনির্ভর উপন্যাস। এই উপন্যাসটির ক্ষেত্রে অবশ্য কিমের ভূমিকা যেন চলচ্চিত্রের নির্দেশকের। কিম গল্পটা বানিয়েছেন, সাজিয়েছেন তার পটভূমিকা এবং চরিত্রদের। কিন্তু কাহিনির গঠন এবং লেখার কাজটা করেছে ‘বিরামপাং’। এই লেখাকে অবশ্যই উপযুক্ত সম্পাদনা করে নিতে হয়েছে। ঠিক কী প্রযুক্তিতে যে কাজ করেছে ‘বিরামপাং’-এর অভ্যন্তরের সফ্টওয়্যার, সে কথা অবশ্য স্পষ্ট করেননি কিম। তবে ‘বিরামপাং’-এর জ্ঞানের ভান্ডার তৈরি করা হয়েছে ‘ইনপুট’ হিসেবে হাজারখানা বই দিয়ে, যেগুলোর মধ্যে রয়েছে কিমের নিজের লেখা বইও। সেই বিশাল সমুদ্র মন্থন করে কোনও এক অনির্দিষ্ট স্বশিক্ষার পদ্ধতিতেই এই কাজ করে চলেছে ‘বিরামপাং’।
দুনিয়া কি তা হলে এমনই হবে এ বার থেকে? মানুষের সভ্যতার আকাশে এক প্রলয়ঝড় কি সমাচ্ছন্ন? জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রের মতো এই সাহিত্যের দুনিয়ারও কি দখল নেবে যন্ত্র? বাড়তে থাকবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার আধিপত্য? ক্রমশ কি মানুষ-লেখক, কবি, সাহিত্যিকদের প্রতিস্থাপিত করবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-সম্পন্ন রোবট? যেমন, অদূর ভবিষ্যতের কোনও পুজোসংখ্যায় কি ‘বিরামপাং’-এর মতো রোবটরাই লিখবে গল্প, কবিতা, উপন্যাস— যন্ত্রই লিখবে মানুষের জীবনবোধের জলছবি?
২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে ব্রিটিশ সংবাদপত্র ‘দ্য গার্জিয়ান’ একটি উত্তর-সম্পাদকীয় ছাপায় যার শিরোনাম ছিল ‘এক রোবট এই পুরো আর্টিকলটা লিখেছে। মানুষ, তুমি কি ভয় পাচ্ছ?’ সত্যিই লেখাটার লেখক ছিল এক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-সম্পন্ন রোবট, যার নাম জিপিটি-থ্রি। এটি এলন মাস্ক স্থাপিত কোম্পানি ‘ওপেনএআই’-এর তৈরি জিপিটি সিরিজ়ের তৃতীয় সংস্করণ। জিটিপি-থ্রি’কে জোগান দেওয়া হয়েছিল মাত্র কয়েক লাইনের একটা ছোট্ট ভূমিকা, আর বলা হয়েছিল সহজ ভাষায় ৫০০ শব্দের মধ্যে লিখতে— কেন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে মানুষের ভয় পাওয়ার কোনও কারণ নেই। বোঝা-ই যাচ্ছে, প্রবন্ধের বিষয় বাছার ক্ষেত্রেও সংবাদপত্রের সম্পাদকের মনেও মানুষের সেই চিরায়ত ভয়— যন্ত্র কি মানুষকে প্রতিস্থাপিত করবে? যাই হোক, এ বিষয়ে আটখানা ভিন্ন ভিন্ন প্রবন্ধ লিখে দেয় জিপিটি-থ্রি। এর যে কোনওটাই ছাপাতে পারত সংবাদপত্রটি। তা না করে তারা প্রবন্ধগুলির সেরা সেরা অংশ নিয়ে সম্পাদনা করে তৈরি করেছে একটি প্রবন্ধ, ছাপিয়েছে সেটাই। আশ্চর্যজনক ভাবে, তাতে মহাত্মা গাঁধীর উদ্ধৃতিও রয়েছে।
জিপিটি-থ্রি কিন্তু মানুষকে আশ্বস্তই করেছে তার প্রবন্ধে। বলেছে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কাছ থেকে মানুষের অস্তিত্বের সঙ্কট অনুভব করার কোনও কারণ নেই। মনে করিয়ে দিয়েছে যে, তাকে তৈরি করেছে মানুষই, মানুষের নির্দেশ করা প্রোগ্রামের প্রতিটি লাইন মেনেই তার মতো রোবটের কাজ চলে।
মনে পড়ে সত্যজিৎ রায়ের ‘কম্পু’র কথা? প্রথম দিকে কম্পুকে যে প্রশ্ন করা হত, তারই উত্তর দিত সে। এক দিন সে মামুলি শিশুসুলভ এক প্রশ্নের উত্তরে প্রশ্নকর্তাকে বলে বসল, “যা জানো তা জানতে চাওয়াটা মূর্খের কাজ।” আমাদের সংশয় তাই থেকেই যায়।
শুধুমাত্র প্রবন্ধই নয়, ছোটগল্প, গান কিংবা কবিতার মতো সাহিত্যের অন্যান্য রসক্ষেত্রেও জিপিটি-থ্রি’র অবাধ প্রকাশ। জিপিটি-থ্রি’কে প্রস্তুত করতে জোগানো হয়েছে ২০,০০০ কোটি শব্দ, খরচ হয়েছে কোটি কোটি ডলার। সাহিত্যসৃষ্টির ক্ষেত্রে তার বিপুল স্মরণশক্তির ভান্ডারে জমে থাকা জ্ঞানসমুদ্র মন্থন করে কী ভাবে সংশ্লেষ করে সে, জানা নেই সে কথা। তবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ক্ষেত্রে সাধারণত যেমন হয়, এক অবর্ণনীয় স্বশিক্ষার মাধ্যমে অনেক সময়ই বিকশিত হয় তার প্রজ্ঞা। ইন্টারনেটে অন্য কোথাও পাওয়া লেখাকে সংশ্লেষিত করে উপস্থাপন করতে দক্ষ এই জিপিটি-থ্রি। বিখ্যাত লেখকদের স্টাইলের অনুকরণে গল্প লিখতেও জুড়ি নেই জিপিটি-থ্রি’র। তাকে বলা হয়েছিল প্রখ্যাত ব্রিটিশ হাস্যরসাত্মক লেখক জেরোম ক্লাফকা জেরোমের শৈলীর অনুকরণে একটা গল্প লিখতে। দেওয়া হয়েছিল গল্পটার একটা সম্ভাব্য নাম: ‘দি ইম্পর্ট্যান্স অব বিয়িং ইন টুইটার’, আর প্রথম শব্দ: ‘ইট’। অর্থাৎ একটা খেই ধরিয়ে দেওয়া হয়েছিল মাত্র। কিন্তু জেরোম কে জেরোম আর টুইটার! একশো বছর আগে সোশ্যাল মিডিয়া তো কল্পনাতেও ছিল না। তাতে কী? জিপিটি-থ্রি কিন্তু লিখে ফেলল একটা গল্প। না জানা থাকলে লেখার স্টাইল দেখে মনে হতে বাধ্য যে, সেটা স্বয়ং জেরোম কে জেরোম-এরই লেখা! তাই আজকের দিনে দাঁড়িয়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কিন্তু লিখে ফেলতেও পারে শেক্সপিয়রের সনেট কিংবা রবীন্দ্রনাথের কবিতা। মানে, কবিতা পড়ে মনে হতে পারে, সেটা সেই কবির কোনও অপ্রকাশিত কবিতাই। আচ্ছা, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ভুলে আমরা যদি কোনও এক মানুষ-কবির কথা ভাবি, যিনি রবীন্দ্রনাথের সমস্ত কাব্য গুলে খেয়েছেন, কবির সব কবিতা যার আত্মস্থ, তিনি যদি রবীন্দ্রনাথের স্টাইলে একটা কবিতা লিখতে চান, তবে কি তাঁর ভাষা, ছন্দ কিংবা ভাবের মধ্যে রবি-কবির ছাপ খুঁজে পাওয়া যাবে না?
তবে জিপিটি-থ্রি’এর মতো ‘লেখক’ রোবটের দুর্বলতাও প্রচুর। সময়ে সময়ে তার ভাষায় ধরা পড়ে জাতি-বিদ্বেষ, প্রকাশভঙ্গি হয়ে পড়ে অপরিশীলিত। অনেকেই তার লেখায় খুঁজে পেয়েছেন গভীরতার অভাব। লেখাগুলো যেন ‘কাট অ্যান্ড পেস্ট’ করা কিছু টেক্সট। আসলে স্মৃতিভান্ডারে জমা থাকা শব্দ বা বাক্যাংশের মধ্যে মিল খুঁজে-পেতে সেগুলো জোড়া দেওয়াই বোধহয় এর কাজ। রোবট লেখকের সাধারণ বোধবুদ্ধিরও বড্ড অভাব, বাস্তব দুনিয়ার প্রাকৃতিক ঘটনাবলি এবং সামাজিক রকম-সকম সম্বন্ধেও তার জ্ঞান ভীষণ কম। যেমন, জিপিটি-থ্রি’কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, “হাওয়াই থেকে সতেরো-তে
লাফ দিতে কতগুলো রামধনুর প্রয়োজন?” এমন অর্থহীন প্রশ্নেরও কিন্তু স্বাভাবিক উত্তর দেয় জিপিটি-থ্রি: “দু’টি”।
‘দ্য গার্জিয়ান’ সংবাদপত্রে জিপিটি-থ্রি’র লেখা উত্তর-সম্পাদকীয় ছাপা হওয়ার ক’দিন পরে একটি চিঠি ছাপা হয় সেই কাগজেই। পত্রলেখক জনৈক অ্যালবার্ট ফক্স কান লেখেন, জিপিটি-থ্রি আসলে মানুষ-লেখকদের কম্পিউটারের সাহায্য নিয়ে লেখালিখির সর্বশেষ উদাহরণ। এ যেন প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে মানুষ-লেখকদের উৎকর্ষ বাড়ানো। কারণ, ভুললে চলবে না, মানুষের জোগান দেওয়া ‘ইনপুট’ অথবা মানুষের সম্পাদনা ছাড়া এর কোনও প্রয়োগ নেই। মার্কিন লেখিকা এবং প্রোগ্রামার অ্যালিসন পারিশ-ও মনে করেছেন, ‘দ্য গার্জিয়ান’ কাগজে প্রকাশিত নিবন্ধটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার লেখা বলতে হলে মেনে নিতে হয় যে ফ্যারাওরাই নিজের হাতে পিরামিড বানিয়েছেন। কিন্তু পিরামিড তো শ্রমিকরাই বানিয়েছে, ফ্যারাওরা নন।
তবু, এই জিপিটি-থ্রি’ই তো শেষ নয়। আসবে পরের সংস্করণগুলো। যেমন, ২০২২ বা ২০২৩ নাগাদ আসতে চলেছে জিপিটি-ফোর, যার সম্ভাব্য ক্ষমতা বোধহয় জিপিটি-থ্রি’র প্রায় ৫৭ লক্ষ গুণ। যা হয়তো আর শুধুমাত্র ভাষা বিশ্লেষণের যন্ত্র হয়েই থাকবে না, দৃশ্যমান জগৎ সম্পর্কে সচেতন হতে শুরু করবে। সোজা কথা হল, ‘হাওয়াই’ থেকে ‘সতেরো’তে ঝাঁপ দেওয়ার মাধ্যম হিসেবে ‘রামধনু’কে পাকড়ে ধরে দু’বার ডিগবাজি খাওয়ার আগে সে অন্তত দু’বার ভাববে। অবশ্য কতটা বেশি দক্ষ হতে পারে জিপিটি-ফোর তা অনুমান করা এ মুহূর্তে হয়তো কঠিন। কিংবা নিকট ভবিষ্যতে যখন জিপিটি-ফাইভ তৈরি হবে, কী হবে তখন? দুর্বলতাগুলো কাটিয়ে উঠে কতটা পরিশীলিত, আরও কতটা দক্ষ হয়ে উঠবে রোবট-লেখকরা? কতটা নিখুঁত হয়ে উঠতে পারে ‘কিটস-এর অপ্রকাশিত কবিতা’ কিংবা ‘হেমিংওয়ের অপ্রকাশিত উপন্যাস’-এর প্রতিচ্ছবির নব-নির্মাণ? অথবা, তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হল, স্বশিক্ষার মাধ্যমে বিবর্তিত হয়ে কতটা স্বকীয় হয়ে উঠতে পারে যন্ত্র-লেখক?
এ প্রসঙ্গে ভাবা যেতে পারে দাবার মতো খেলার কথা। দাবা কিংবা অন্যান্য বোর্ড গেমের জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা তৈরির চেষ্টা অনেক দিনের। প্রায় পঁচিশ বছর আগেই তো দাবার বিশ্বচ্যাম্পিয়ন গ্যারি কাসপারভকে হারিয়েছে আইবিএম-এর ‘ডিপ ব্লু’ নামের কম্পিউটার। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিকাশ কিন্তু আটকে থাকে না সেখানেই। ২০১৮-তে ‘ডিপমাইন্ড’-এর তৈরি ‘আলফাজ়িরো’ সমস্ত সম্ভাবনার বিশ্লেষণ করে স্ট্র্যাটেজি ঠিক করে নিজেই শিখে চলে। মাত্র ৯ ঘণ্টায় নিজের সঙ্গেই ৪ কোটি ৪০ লক্ষ গেম খেলে ‘আলফাজ়িরো’ হয়ে উঠেছে এ গ্রহের শ্রেষ্ঠ দাবা খেলোয়াড়। সে অর্জন করে ফেলেছে হাজার বছর ধরে মানুষের অর্জিত প্রজ্ঞা, কিংবা তার চেয়েও অনেকটা বেশি কিছু। স্বশিক্ষার মাধ্যমে ‘আলফাজ়িরো’র বিকশিত হওয়াকে বিশেষজ্ঞরা বর্ণনা করেছেন,
যেন ভিনগ্রহের কোনও এক সভ্যতা আবিষ্কার করে চলেছে তার
নিজের গণিত।
রোবট লেখকও কী সে ভাবেই ভবিষ্যতে সৃষ্টি করবে তার স্বকীয় সাহিত্য, এ গ্রহের মানদণ্ডে যা হতে পারে অভাবিত, অনির্বচনীয়? যাকে মনে হতে পারে ভিনগ্রহের কোনও সভ্যতার নিজের সাহিত্য। ভবিষ্যৎ অজানা। যে ভাবে দ্রুত বিবর্তিত হয়ে চলেছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, অদূর ভবিষ্যতে, এক দশক পরেই কি বুকার প্রাইজ বা সাহিত্যে নোবেল পাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-সম্পন্ন কোনও রোবট-লেখক? আরও বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন অত্যাধুনিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাযুক্ত রোবটের দক্ষতা যে আরও বেশি হবে, বলাই বাহুল্য। কিন্তু কোথায় তার সীমারেখা? রোবট লেখককে ‘আরও ভাল’ করে তোলার খরচও তো বেড়ে যাবে অনিয়ন্ত্রিত ভাবে। ‘বিরামপাং’-এর লেখা উপন্যাসটির নামটা স্মরণ করা যাক আর এক বার। আমাদের উদ্বেগ সেখানেই— এ বার থেকে দুনিয়া কেমন হবে? মানুষ-লেখকের কি সত্যিই ভয় পাওয়ার সময় উপস্থিত?
না কি, দাবার মতো বোর্ড গেমের সঙ্গে সাহিত্যের তফাত অনেকটাই? হয়তো মানুষ-লেখকের মানবিক স্পর্শ কোনও দিনই জোগাতে পারবে না যন্ত্র। উল্টে এমনও হতে পারে যে, সাহিত্যের ক্ষেত্রে যন্ত্র হয়ে উঠবে মানুষের সহায়ক। যন্ত্রের সাহায্য নিয়ে মানুষ-লেখকের দক্ষতা, প্রয়োগ এবং লেখার সৌকর্য বেড়ে যাবে অনেকটা। ঠিক যে ভাবে ট্র্যাক্টর বিপ্লব এনেছিল কৃষিতে, পিক্সার যুগ যে ভাবে বদলে দিয়েছে সিনেমাকে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাও হয়ত সম্পূর্ণ বদলে দিতে পারে আগামী দিনের সাহিত্যের রূপরেখা। কী হবে না হবে তার পুরোটাই কিন্তু আগামী দিনের রূপকথা।