ছবি: রৌদ্র মিত্র।
পূর্বানুবৃত্তি: একলব্যের পরিণতি বিষয়ে ক্ষীণ একটি সম্ভাবনা উঁকি দিয়েছে জরাসন্ধের এক গূঢ়পুরুষের অনুসন্ধানে। জানা গিয়েছে, শ্রীকৃষ্ণ স্বয়ং লুকিয়ে রেখেছেন একলব্যকে। তার মৃত্যু হয়নি। এই সংবাদের কার্যকারণ অনুধাবন করতে না পেরে স্পষ্টতই বিভ্রান্ত হন জরাসন্ধ। অন্য দিকে, বাসুদেব কৃষ্ণের বার্তাবহ হয়ে সন্ন্যাসীর ছদ্মবেশে ব্রহ্মর্ষি উপযাজের আশ্রমে আসে জম্বুক। তার মূল বক্তব্য, উপযাজ কর্তৃক দ্রোণ বধার্থ পুত্রেষ্টি যজ্ঞটি আবশ্যক। কারণ বাসুদেবের তেমনই পরিকল্পনা।
৩৯
“বারণাবত সম্পর্কে তুমি কী শুনেছ, প্রিয় যুধিষ্ঠির?”
বিদুরের প্রশ্নের উত্তরে জ্যেষ্ঠ পাণ্ডব বললেন, “আমি ওই জনপদ সম্পর্কে বিশেষ অবহিত ছিলাম না, তাত। সে দিন সহসা মহারাজ আমাদের নিজ মন্ত্রণাকক্ষে আহ্বান করেন, সেখানে কয়েক জন মন্ত্রী স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে আমাদের সামনে বারণাবতের উচ্চ প্রশংসা করলেন। বললেন, সেটি অতি রমণীয় নগর। শান্ত কলস্বনা নদীর সংলগ্ন নিবিড় ছায়াঘন অরণ্য, তার সন্নিহিত এক নিরুপদ্রব জনপদ। সেখানকার জলবায়ুও অতি স্বাস্থ্যকর এবং মনোরম। বিশেষত এই ঋতুতে তদঞ্চলের নম্র সূর্যকর, পুষ্পগন্ধে মদির বাতাস ও চন্দ্রপ্রভ নির্মেঘ নৈশ গগনের শোভা সকলকেই মুগ্ধ করে।”
“আর?”
“আর বললেন, বারণাবত বাণিজ্যসমৃদ্ধ জনপদ, তাই সেখানে নাগরিক স্বাচ্ছন্দ্যেরও অপ্রতুলতা নেই। সেখানকার পণ্যশালাগুলি রীতিমতো দর্শনীয়। লোভনীয় প্রাদেশিক খাদ্য-সামগ্রী অজস্র পরিমাণে মেলে। সুরা-মাধ্বী-মৈরেয় আদি যাবতীয় পানীয়ের মান উৎকৃষ্ট।”
ভীমসেন বলে উঠলেন, “এই অংশটি আমাকে বড় আকৃষ্ট করেছে, স্বীকার করি, পূজ্য! হস্তিনায় ইদানীং খাদ্য-পানীয়ের বৈচিত্র কমে গিয়েছে, প্রাসাদে একই সূপকারের পাক আস্বাদন করতে করতে রসনা ক্লান্ত!”
বিদুর সামান্য হেসে আবার যুধিষ্ঠিরকে জিজ্ঞাসা করলেন, “আর কী বলল মন্ত্রীরা?”
“বললেন, সবচেয়ে বড় আকর্ষণ— এই সময়ে সেখানে পশুপতির উৎসব হয়। এক বিপুল বর্ণাঢ্য আয়োজন, দূরদূরান্ত থেকে প্রজাবৃন্দ সেই উৎসবে অংশ নিতে আসে। বিশাল আকারের মিলন-তীর্থভূমি রচিত হয়, নানা বিচিত্র রঙ্গের সমাবেশ, আমোদ-আহ্লাদ-পুণ্যসঞ্চয় সব মিলে অতীব প্রাণচঞ্চল এক অনুষ্ঠান। সব মিলিয়ে, বারণাবত যে পরম সুখকর এক ভ্রমণযোগ্য স্থান এ বিষয়ে তাঁরা খুবই জোর দিচ্ছিলেন।”
“আমি এই বিষয়টিতে খুব আগ্রহ বোধ করেছি,” অর্জুন বললেন। মাদ্রীতনয়রাও সমর্থন করলেন তাঁকে, তাঁরাও উৎসব-আমোদে উৎসাহী।
বিদুর সম্মতিসূচক শিরসঞ্চালন করলেন। আবার যুধিষ্ঠিরকে বললেন, “তার পরই রাজা তোমাদের সেখানে ভ্রমণ করার পরামর্শ দিলেন?”
“হ্যাঁ। মহারাজ বললেন, এই উৎসবটি উপভোগ করে আমরা সপরিবার যেন কিছু কাল বারণাবতে কাটিয়ে আসি। সেখানকার প্রজা, ব্রাহ্মণ, গায়ক ও অর্থীদের আমরা যেন হস্তিনা-রাজের প্রতিনিধিস্বরূপ ধন দান করি, তার পর ধীরেসুস্থে বিভিন্ন সেখানকার রমণীয় অঞ্চল পরিভ্রমণ করে...”
“তুমি তো সম্মতও হয়েছ, শুনলাম।”
“হ্যাঁ, ওখানে বস্তুত অসম্মতির বিশেষ অবকাশ ছিল না,” যুধিষ্ঠির বিনীত ভাবে বললেন, “আমার ভ্রাতারাও বিবরণ শুনে প্রকট আগ্রহ দেখিয়ে ফেলেছিলেন। তা ব্যতীত, জ্যেষ্ঠতাত তথা কুরুরাজ যেখানে স্বয়ং তাঁর সভাকক্ষে ডেকে পাঠিয়ে মন্ত্রীদের সমক্ষে প্রস্তাব দিচ্ছেন, সেখানে প্রত্যাখানের পথ আছে কি? রাজার ইচ্ছাই আদেশ!”
“অর্থাৎ, যেতে তোমাদের হচ্ছেই! এবং... বৎসরাধিক কাল অবস্থান করতেও হচ্ছে সেখানে, যা শুনলাম...” বিদুর কিছুক্ষণ নীরব থাকলেন। তার পর বললেন, “তুমি কি অন্তর থেকে এই প্রস্তাবে সম্পূর্ণ সম্মত ছিলে না?”
“না, পূজ্যবর! সত্য বলতে কী, আমার যথেষ্ট সন্দেহ-সংশয় আছে এ বিষয়ে। যে ভঙ্গিতে অকস্মাৎ প্রসঙ্গটি উত্থাপিত হল এবং উচ্চনিনাদে বিজ্ঞাপিত হল, তাতে যে কোনও বুদ্ধিমান লোক সন্দেহ করবেই। বিশেষত, জ্যেষ্ঠতাত খুব অভিনয়দক্ষ নন। তিনি যে কারও শিখিয়ে-দেওয়া কথা প্রবল ভাবে উপস্থাপিত করছেন তা আমি স্পষ্ট বুঝতে পারছিলাম। এই ঘটনাটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত নিঃসন্দেহে। কিন্তু উদ্দেশ্যটি আমি বুঝতে পারিনি, তাই আপনার কাছে পরামর্শ চাইছি।”
বিদুর শ্বাস ফেললেন। ধীরে ধীরে বললেন, “সম্প্রতি রাজা আর আমার সঙ্গে রাজকার্য-বিষয়ক মন্ত্রণা বিশেষ করতে চান না। ডাকেনও না তেমন। দুর্যোধন আমাকে বিষদৃষ্টিতে দেখে। তাই আমার অনুপস্থিতিতেই বহু আলোচনা হয়ে যায়। এখন তাঁদের মূল পরামর্শদাতা হয়েছেন অমাত্য কণিক!”
“কণিক যে হঠাৎই মহারাজের প্রিয়পাত্র হয়ে উঠেছেন তা আমিও লক্ষ করেছি,” যুধিষ্ঠির বললেন, “আমার চরেরা সে সংবাদ দিয়েছে আমাকে।”
ম্লান হাসলেন বিদুর, “কিন্তু কণিক ঠিক কী পরামর্শটি দিয়েছেন এই বিষয়ে, তা কি তোমার চরেরা উদ্ধার করতে পেরেছে, বৎস?”
“না, তাত। আমার চরেরা আপনার গূঢ়পুরুষদের মতো অভিজ্ঞ ও পারঙ্গম নয়। তাই তো আপনার কাছেই সম্পূর্ণ চিত্রটি জানতে চাই!”
“ওঁরা ভাবেন, ক্ষত্তাকে মন্ত্রণাসভা থেকে দূরে রাখলেই সব সমস্যা থেকে নিষ্কৃতি,” বিদুর হাসিমুখেই বলেন, “ক্ষত্তার দৃষ্টি ও শ্রবণ সর্বত্রগামী— তা ওঁরা ভেবে দেখেননি!”
রাজমাতা কুন্তী এত ক্ষণ পুত্রদের পাশে বসে নিঃশব্দে সব শুনছিলেন। এটি তাঁরই কক্ষ, আলোচনা চলছে এখানেই। কিন্তু এত ক্ষণ তিনি একটিও বাক্য উচ্চারণ করেননি। এই প্রথম তিনি কথা বলে উঠলেন, “বলুন, আর্য! আপনি অবশ্যই সমস্ত গূঢ় সমাচার সংগ্রহ করেছেন। পাপিষ্ঠ দুর্যোধন কি ধূর্ত কণিকের সঙ্গে মিলে কোনও চক্রান্ত করেছে, আমার পুত্রদের ক্ষতি করবে বলে?”
৪০
দীর্ঘক্ষণ শ্রোতার ভূমিকা পালনের পর ঋষি উপযাজের স্বর নির্গত হতে একটু সময় লাগল। সামান্য কাশলেন, তার পর বললেন, “পরিকল্পনাটিতে অকল্পনীয় ধী, কূটনীতি ও ভবিষ্যৎদৃষ্টি মিলিত হয়েছে, সন্দেহ নেই! কৃষ্ণ বাসুদেব ভিন্ন অন্য কেউ হয়তো এই স্তরে ভাবতেই পারতেন না— এমন জটিল বহুবিস্তারী জাল! ধন্য!”
জম্বুক সস্মিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে মাথা দোলায়। “তা হলে... আপনার যেটুকু ভূমিকা...”
এ বার উপযাজ ঋজু হয়ে বসলেন। চিন্তিত কিন্তু সংযত। বললেন, “কর্মটি সমস্যাসঙ্কুল। বাসুদেবের নির্দেশমতো চলতে হলে, এই প্রকল্পে প্রচুর অভূতপূর্ব ও অশ্রুতপূর্ব ব্যাপার রাখতে হচ্ছে। পুত্রেষ্টি-গোত্রের যাগ-যজ্ঞে এই ধরনের সংঘটন আদৌ হয় না।”
“যেমন?”
“প্রথমত, পুত্রযজ্ঞে সর্বদা রানিদের পবিত্র যজ্ঞোদ্ভূত চরু বা ফলমূলাদি সেবন করানো হয়, তদ্দ্বারা গর্ভাধানের আয়োজন হয়। সন্তান জন্মাবে, বয়ঃপ্রাপ্ত হবে, শিক্ষিত হবে, তবে তো শত্রুনিধন করবে! এখানে অত অপেক্ষার সময় নেই— কৃষ্ণ চাইছেন, এক পূর্ণবয়স্ক পুত্রের আবির্ভাব! যে আবার অস্ত্রশস্ত্রবিদ্যায় ইতিমধ্যেই সুশিক্ষিত! এমন অদ্ভুত ঘটনা পূর্বে কখনও ঘটেনি।”
“মহাত্মন্,” জম্বুক হাসে, “পুত্রেষ্টি যজ্ঞ সম্পর্কে আমরা, যারা গূঢ়পুরুষের ভূমিকায় দেশে-দেশান্তরে ঘুরে বেড়াই— সামান্য গুপ্তজ্ঞান রাখি। এই যজ্ঞের যে অতিলৌকিক আনুষ্ঠানিক আচার ও দুরূহতার আড়ম্বর, তার অন্তরালে মূলত তিন প্রকারের সরল বাস্তব প্রকরণ থাকে— যা সাধারণ জনতা জানতে পায় না। যদি অপরাধ না নেন, সেগুলি আপনার সমক্ষে ব্যক্ত করি। আপনি বিশেষজ্ঞ। শ্রবণ করে বলুন, আমার জ্ঞাত তথ্য ভুল কি না!”
উপযাজ জিজ্ঞাসু চোখে তাকান। জম্বুক আবার বলে, “প্রথম পন্থা হল, পুত্রকামী দম্পতিকে দীর্ঘ কাল ধরে নানা দুর্লভ ভেষজ ও অন্যান্য রসায়ন সেবন করানো চলতে থাকে, মূলত সেগুলি অনুর্বরতা-ব্যাধির গুপ্ত মহৌষধ। দুই, এই চিকিৎসায় পুরুষটির উপকার না হলে, যজ্ঞকারী ব্রাহ্মণদের মধ্যে সমর্থ কেউ এক জন গোপনে রমণীটির গর্ভাধান করেন। মূলত বংশ-বহির্ভূত পুরুষ দ্বারা নিয়োগ-সংক্রান্ত লোকলজ্জাটিকে আবৃত রাখার জন্য এই গূঢ় ব্যবস্থা। এবং, তৃতীয় তথা শেষ বিকল্প— যদি রমণীটিই অনুর্বর থেকে যান— তবে অগত্যা কোনও সদ্যোজাত শিশু ক্রয় বা হরণ করে এনে তাকেই যজ্ঞলব্ধ সন্তান বলে প্রচার করা হয়। এ পর্যন্ত কোনও পুত্রযজ্ঞ এই তিন গুপ্ত-বিকল্পের বাইরে যায়নি, ঋষিবর! গিয়েছে, বলুন?”
উপযাজ সামান্য বিস্ফারিত চোখে শোনেন সবটুকু, তার পর বলেন, “আপনি সাংঘাতিক লোক! এ গূঢ়তত্ত্ব যদি জনসমক্ষে চলে আসে...”
জম্বুক জিহ্বা নির্গত করে, কর্ণে অঙ্গুলি স্পর্শ করে বলে, “ছি ছি। মন্ত্রগুপ্তিই আমাদের ব্যবসায়ের মূল। তা ছাড়া, অলৌকিকত্বের আবরণগুলিই মূঢ় জনতাকে শাসন ও আনত করার পন্থা, এগুলিই সমাজ-ব্যবস্থার ভিত্তি। এগুলি উন্মোচিত হলে রাষ্ট্রবিপর্যয় ঘটে যাবে— সে জানি, ঋষিশ্রেষ্ঠ! আপনি স্বয়ং তত্ত্বজ্ঞ, তাই আপনার সমক্ষে উচ্চারণ করতে সাহস পেলাম।”
“হুম!” গম্ভীর হলেন উপযাজ, “তবে নিশ্চিত বুঝতে পারছেন, সদ্যোজাত শিশু ভিন্ন এই যজ্ঞে কখনও পূর্ণবয়স্ক সন্তান লাভ স্বীকৃত নয়। আজ অকস্মাৎ এই ব্যতিক্রমী ফল হলে লোকে বিশ্বাস করতে চাইবে না!”
“ঋষিরা পূর্বঘোষণা করে দিলেই সবাই বিশ্বাস করবে। প্রচারে কী না হয়! প্রয়োজনে দৈববাণীর ব্যবস্থাও করতে হবে, সে রহস্য আর আপনার সামনে নতুন করে কী বলব,” ইঙ্গিতপূর্ণ চোখে তাকাল কৃষ্ণের বার্তাবহ, “দৈববাণী হল মূঢ় জনতাকে বিশ্বাস করানোর শ্রেষ্ঠ পন্থা।”
“কিন্তু... প্রাপ্তবয়স্ক যোদ্ধা পুত্রের এত দ্রুত প্রয়োজন হচ্ছে কেন?”
জম্বুক বলে, “সে প্রয়োজন প্রভু বাসুদেব জানেন। সে তো আর আমরা বুঝব না। কত সময়-পরিধির মধ্যে তাঁর প্রকল্পকে তিনি রূপায়িত করতে চান, সে তাঁর নিজস্ব গণন! বিশেষত, সাধারণ পুত্রেষ্টি থেকে লব্ধ পুত্র যে মহাবল যোদ্ধা হবেই এমন নিশ্চয়তা আছে কি? এ ক্ষেত্রে সেটি তো অত্যাবশ্যক! দ্রোণের নিধনক্ষম ব্যক্তি...”
“বেশ! বুঝলাম! তবে সেই উপযুক্ত যোদ্ধা যুবা-পুত্রটির সন্ধানও বাসুদেবই দেবেন আশা করি!”
“অবশ্যই! ঠিক তেমনটি তাঁর সন্ধানে আছে, নিশ্চিত। কিন্তু তিনি এও বলেছেন, উপযুক্ত পাত্রকে গোপনে দীর্ঘ পরিমার্জনের মাধ্যমে সর্বাঙ্গীণ প্রশিক্ষণ দিতে হবে। যাতে পাঞ্চালরাজ্যের যুবরাজ হওয়ার মতো বিশ্বাসযোগ্য আচরণ বাক্ভঙ্গি আভিজাত্য শিক্ষাদীক্ষা তার অর্জিত হয়!”
উপযাজকে বেশ বিস্মিত দেখাল। “এমন ক্ষত্রযুবক কোথায় মিলবে? এই সমগ্র ব্যাপারটি নিষ্পন্ন করা তো বেশ দুরূহ কর্ম!”
“যা কেউ ভাবতে পর্যন্ত পারে না তেমন দুরূহ কর্ম চিরকাল অক্লেশে নিষ্পন্ন করেন কেশব,” হাসল জম্বুক, “সে ব্যবস্থা তিনি করছেন। নিজের গুপ্ত কোনও আশ্রয়ে নিজ দায়িত্বে সেই অনামা তরুণকে তিনি প্রশিক্ষিত করে তুলবেন। এবং সে পর্ব সমাধা হলে, গোপনে আপনার কাছে প্রেরিত হবে সেই যুবা। তত দিন পর্যন্ত যজ্ঞ প্রলম্বিত রাখা চাই। এর অধিক বিশদে যাওয়ার প্রয়োজন আমাদের মতো ক্ষুদ্র ব্যক্তিদের নেই, মহাত্মন্!”
“বেশ। দ্রৌপদের ব্যবস্থাটি বুঝলাম। সুকৌশলে কৃষ্ণের নিজস্ব একটি অক্ষ স্থাপিত হবে পাঞ্চালবংশে! কিন্তু, বাসুদেব আবার কুরুকুমার কৌন্তেয় অর্জুনের বিবাহ সম্পর্কেও ভবিষ্যৎ-পরিকল্পনায় যা ভেবে রেখেছেন...”
“হ্যাঁ, সেটিও চাই। সেই দ্বিতীয় দায়িত্বটি কিন্তু স্বয়ং পাঞ্চালরাজকেই নিতে হবে। আপনি নিজে সেই শর্তটি তাঁকে জানাবেন, ব্যাখ্যা করে দেবেন এবং সে আয়োজনটি করতে বাধ্য করবেন। বলবেন, এই ব্যবস্থা করলে তবেই যজ্ঞ হবে!”
“অর্থাৎ, শুধু পুত্র নয়, একটি সুশিক্ষিতা সুন্দরী সুলক্ষণা কন্যাকেও ওই যজ্ঞভূমি থেকেই উত্থিত করতে হবে... অর্জুনের পত্নী হওয়ার জন্য...”
“হ্যাঁ, আপনি রাজাকে জানাবেন— পুত্রটি সংগ্রহের ভার আপনি, হ্যাঁ, ব্রহ্মর্ষি উপযাজ স্বয়ং নিচ্ছেন। যজ্ঞকালে সে উপস্থিত হবে। কোথা থেকে তাকে আনা হবে, কী ভাবে— বিশদ বিবরণের প্রয়োজন নেই। বাসুদেবের প্রসঙ্গ সম্পূর্ণ অনুচ্চারিত থাকবে।... এ বার দ্রুপদ শুধু গোপনে উপযুক্ত বয়ঃপ্রাপ্তা কন্যারত্নটি সংগ্রহ করুন। শুধু সংগ্রহ করলে হবে না, তাকেও ওই একই ভাবে পরিপূর্ণ প্রশিক্ষণ দিতে হবে, চতুঃষষ্টি-কলাপটীয়সী ও বিদুষী করে তুলতে হবে, যেমন ভাবে পুত্রটি প্রশিক্ষিত হচ্ছে। কন্যার বিষয়ে এই সম্পূর্ণ দায়িত্ব রাজার। সে বিষয়ে আমাদের পক্ষ থেকে আপাতত কোনও হস্তক্ষেপ নেই।”