পূর্বানুবৃত্তি: অগ্রজ বলরাম এবং স্নেহভাজন সাত্যকির সঙ্গে বিদর্ভ-রাজকন্যা রুক্মিণীর স্বয়ংবরে উপস্থিত হওয়ার পরিকল্পনা করছিলেন শ্রীকৃষ্ণ, তখনই তাঁর সাক্ষাৎপ্রার্থী হন গুপ্তচর জম্বুক। অন্য দিকে, মগধেশ জরাসন্ধের সঙ্গে দেখা করতে আসে একলব্য। জরাসন্ধের উদ্যোগেই অরণ্যচারী শল্যবিদদের দ্বারা তার কর্তিত অঙ্গুষ্ঠ পুনঃস্থাপিত হয়েছে। জরাসন্ধ জানতে চান, একলব্য তার শরক্ষেপণের ক্ষিপ্রতা ফিরে পেয়েছে কি না...
২৫
“বলো, জম্বুক! এ বার অনেক বিলম্ব হল তোমার...”
অভ্যস্ত অনুচ্চ কণ্ঠে চর বলে, “হ্যাঁ, প্রভু। দীর্ঘ কাল ধরে নানা দেশ পরিভ্রমণ করতে হল। কুরু, মগধ, পৌণ্ড্র, কিরাত— যেখানে-যেখানে ঘটনার সূত্র প্রক্ষিপ্ত আছে, সর্বত্র। আপনি তো আমার পদ্ধতি জানেন যদুনাথ। ধীর কিন্তু গভীর খনন। হঠকারিতা একেবারে নয়। আগে সে অঞ্চলে নিজের শিকড় ছড়াতে হবে, তার পর কারও সংশয় না জাগে এমন ভাবে কার্যসিদ্ধি। কত বিচিত্র পেশা নিতে হয়, কত বার পরিচয় পরিবর্তন, কত ভিন্ন ভিন্ন ছদ্মবেশ...”
“জানি। তার পর, বলো, অনুসন্ধান সফল হল?”
জম্বুক সামান্য মাথা নাড়ল। বলল, “প্রথম অভিপ্রায়টি সিদ্ধ হয়নি। নিষাদ একলব্য যে এখন কোথায় রয়েছে, সেই উদ্দেশটি কিছুতেই মিলল না! এমনকি তার পিতামাতাও জানে না। অঙ্গুলি-কর্তনের পর কাতর অবস্থায় শেষ বার তাকে মগধরাজ জরাসন্ধের কাছে যেতে দেখা গিয়েছিল। তার পর থেকে গতিবিধির সন্ধান নেই।”
“জরাসন্ধ! জরাসন্ধ বড় কূট... তবে সে-ই কি আহত নিষাদকে কোনও গুপ্তস্থানে...” বাসুদেবের ললাটে চিন্তারেখা, “কিন্তু, উদ্দেশ্য? অভিপ্রায়টি কী? কর্তিতাঙ্গুষ্ঠ ধানুকী কোন কাজে লাগবে মগধেশের!”
“অতি গূঢ় কোনও অভিসন্ধি আছেই নির্ঘাত, প্রভু! মনে হয় মগধরাজের আয়োজনেই অতি গুপ্ত কোনও আশ্রয়ে নিষাদ নিজেকে লুকিয়ে রেখেছে। সম্ভবত কোনও অরণ্যের নিবিড়তম অঞ্চলে— যেখানে সভ্য নাগরিকরা কখনও পদার্পণ করে না, এমন কোনও আরণ্য প্রদেশে, হতে পারে কোন গোপনচারী জাতির আশ্রয়ে...”
সংশয়ী কণ্ঠে কৃষ্ণ বললেন, “আত্মগোপন! কিন্তু কেন? কিসের গোপনীয়তা? কোনও গুপ্ত সাধনায় নিয়োজিত হয়েছে আবার?”
“এই অংশটি একেবারে জানা যাচ্ছে না, প্রভু! তার বাপ-মাও সঠিক জানে না, এ বিষয়ে আমি নিশ্চিত হয়েছি। তারা শুধু জানে, তাদের পুত্রের সব অমঙ্গল কেটে যাবে। দেবতার দয়ায় যখন আত্মপ্রকাশ করবে, তখন সে অপরাজেয় হয়ে আসবে, সব কিছুর শোধ নেবে!”
“অপরাজেয়!” ভাবিত দেখায় কৃষ্ণকে, “শোধ! দেবতার দয়ায়! কর্তিত অঙ্গুলি... তাই নিয়েই... অপরাজেয়! আত্মপ্রকাশ! অমঙ্গল কেটে যাবে কী উপায়ে? যে অমঙ্গল ঘটেছে তা তো আর কোনও ভাবেই... সে দুর্ভাগ্য থেকে উদ্ধার করতে পারেন... কোন দেবতা? বিষয়টি রহস্যময়, হে জম্বুক!”
“নিশ্চিত, হে মহাভাগ! কিন্তু এর বেশি সন্ধান আপাতত সম্ভবপর নয়। সব সূত্র সুচারু ভাবে গুপ্ত। ভাবীকালের দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে এখন।”
কিছু ক্ষণ নীরব রইলেন বাসুদেব। তার পর জম্বুকের দিকে তাকালেন, “আর অন্য অনুসন্ধানটি?”
“তা সফল হয়েছে, প্রভু। সে সংক্রান্ত সব তথ্য আমি উদ্ধার করেছি। পশুচর্ম-ব্যবসায়ীর ছদ্মবেশে গিয়েছিলাম নিষাদদের রাজ্যে, উদরপীড়ার অভিনয় করে সপ্তাহকাল আশ্রয় নিয়েছিলাম হিরণ্যধনুরই এক ঘনিষ্ঠ ব্যাধের গৃহে। এই সূত্রেই রাজপরিবারের সঙ্গেও আলাপ গভীর করা গিয়েছিল।”
“বলো, আলাপের ফল কী পেলে?”
“আপনার সন্দেহ সত্য। ও পুত্রটি ওদের নিজের নয়। পালিত। অতি শৈশবেই দত্তক নেওয়া হয়েছিল; এবং গোপনে। বাইরের কেউ জানে না।”
“হিরণ্যধনু নিজে স্বীকার করেছে? বা তার পত্নী... কী যেন নাম?”
“বিশাখা।... না, হিরণ্যধনু কঠিন ঠাঁই। স্ত্রীটিও কিছুই ভাঙে না। তা, এত বৎসর পরে মানবেই বা কেন! অন্য কৌশল নিতে হল। হিরণ্যর বাপ, বৃদ্ধ অনোমদর্শীর সঙ্গে কিঞ্চিৎ জমিয়ে ফেললাম। সে বুড়া, বয়সদোষে একটু বাচাল। এক অসতর্ক মুহূর্তে একাকী বসে-বসে অল্প প্ররোচনাতেই বলে ফেলল অনেক কিছু।”
“আচ্ছা! বালকটিকে কী ভাবে পেয়েছিল ওরা?”
“অতি শৈশবাবস্থায়। অবোধ শিশু, অরণ্যে হারিয়ে গিয়েছিল। অনোমদর্শীই তাকে খুঁজে পায়। কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়েছিল বৃক্ষতলে। হিরণ্য আর বিশাখা নিঃসন্তান, তাদের কাছে নিয়ে যেতে তারা ওকে নিজের পুত্র হিসেবে প্রচার করে। এবং আসল সত্য চিরতরে চাপা পড়ে যায় সেই থেকেই...”
কৃষ্ণ ভ্রুকুঞ্চিত করে দ্রুত শ্বাস ফেললেন, একটু উত্তেজিত। চাপা স্বরে বললেন, “পরিচয়? শিশুর পরিচয় জানার সামান্য চেষ্টাও হয়নি সে সময়?”
“ওরা তো চেষ্টা করেনি, প্রভু। স্বাভাবিক। বালককে তো ওরা অধিকার করে নিয়েছে সঙ্গে সঙ্গে। আর তরঙ্গ তুলবে কেন! বরং শ্যামবর্ণ বালককে তারা একেবারে শুরু থেকে ছাইভুষা মাখিয়ে আর হাড়ের মালা পশুচর্ম পরিয়ে গোষ্ঠীচিহ্ন দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে— যাতে সন্দেহ না হয়!”
“কিন্তু... আমি জেনেছি তার আকার-আকৃতির মধ্যে ক্ষত্রিয়-বৈশিষ্ট্য আছে, অনার্যসুলভ নয়!”
জম্বুক মৃদু হাসে, “নির্ভুল জেনেছেন, প্রভু। ক্ষত্রিয়সন্তানই, সন্দেহ নেই। ওর দাদুও তেমনই স্বীকার করে ফেলল। সেই অসতর্ক সান্ধ্য আলাপচারিতার কালে ঈষৎ নেশা চড়েছিল তার, আমি একটু কৌশল করে, বিপরীত কথা বলে উত্তেজিত করে দিই। আমি বলি, একলব্যকে কিন্তু নিষাদের সন্তান বলেই মনে হয়, তেমনই কৃষ্ণবর্ণ অমার্জিত— বহিরাগত ঠেকে না তো! বুড়া তাতে ক্রুদ্ধ হয়ে বলল, ‘শোনো হে, আমি বাজি রেখে বলছি— যদি একলব্যের গা-মুখ থেকে সমস্ত কালিঝুলি তুলে দাও, ওর গাল সম্পূর্ণ ক্ষৌরি করে দাও, যদি ওর রুখু লাল চুলের জটা-জঙ্গলটিকে তৈলনিষিক্ত করে নগরের ভদ্রসন্তানদের মতো কাটতে পারো আর ছাল-বাকল-হাড়-পালকের বেশভূষার বদলে অলঙ্কার-মুকুট-বর্ম-পট্টবাস পরাও— কোন মূর্খ ও-বালককে ব্যাধের পুত্তুর, অনার্য বলে দেখি! দেখবে তখন তেজিয়ান চেহারাখানা, শয়ে শয়ে রাজপুত্তুর হেরে যাবে ওর পাশে! আমি বলছি, ও-ব্যাটা খাঁটি ক্ষত্রিয়ই... না হলে এত টগবগে বীর হত না!’”
কৃষ্ণকে একটু অন্যমনস্ক দেখায়। অস্ফুটে বলেন, “হুম্ম্! সকলেরই একই সাক্ষ্য! সেই জন্যই তো সন্দেহ, সেই জন্যেই তো বিশদ জানতে পাঠানো!... কিন্তু, তা হলে... কোন পরিবারের শিশু? কোন আর্য-বংশের? কোন ক্ষত্রিয়ের? জম্বুক, তুমি নিজে কিছু অনুসন্ধান করে দেখেছ কি?”
“করেছি, প্রভু!” জম্বুকের ওষ্ঠকোণে আত্মপ্রত্যয়ী হাসিটি লেগেই আছে, “জম্বুক যে কোনও সুড়ঙ্গের শেষ পর্যন্ত যায়, তা সে যত অন্ধকারই হোক। সুড়ঙ্গ মধ্যপথে শেষ হয়ে গেলেও, সে আবার সেটিকে নিজের পদ্ধতিতে খনন করে, আলোর সন্ধান না মেলা পর্যন্ত— তার স্বভাবই এমন!”
“পেয়েছ, আলো?”
“হ্যাঁ, প্রভু। উল্কার আলো নয়, খদ্যোতের। অতি ক্ষীণ। বলতে পারেন, সিংহভাগই অনুমানভিত্তিক। এত কাল পরে তো আর প্রত্যক্ষ প্রমাণ হয় না, কিন্তু সংগৃহীত তথ্য আর যুক্তির ভিত্তিতে আরোহ-সিদ্ধান্তের দিকে যাওয়াই যায়। আপনার কাছেই এ নীতি শেখা, হে যদুপতি!”
কৃষ্ণ সাগ্রহে বলেন, “নিশ্চিত! আগে বলো, পারিপার্শ্বিক তথ্য কী পেয়েছিলে এ বিষয়ে? যে সময় শিশুটি অরণ্যে উদ্ধার হয়েছিল, ঠিক সেই সময়বৃত্তের মধ্যে কোন ক্ষত্রিয়-পরিবারের শিশু হারিয়ে গিয়েছিল— সেই বিষয়ে অনুসন্ধান অবশ্যকর্তব্য। সেই সন্ধান করেছিলে কি?”
জম্বুক এক মুহূর্ত বিলম্ব করে উত্তর দিতে, চেয়ে থাকে বাসুদেবের ধী-প্রোজ্জ্বল চক্ষু দু’টির দিকে। তার পর ধীর ভঙ্গিতে বলে, “মহাত্মন্, একেবারেই ঠিক পথে হেঁটেছি আমি, যা আপনি এইমাত্র বললেন। কিন্তু সেই অনুসন্ধানের ফল যা পেয়েছি, তা আমাকে বিস্মিত করেছে প্রবল ভাবে!”
“তো-মা-কে... বিস্মিত করেছে! বলো কী!” কৃষ্ণ বলেন, “আজ পর্যন্ত তোমাকে আমি বিস্মিত হতে দেখিইনি কখনও। বহু অপ্রত্যাশিত ঘটনাবর্ত, বহু চমকপ্রদ তথ্যসম্ভারের মধ্যে তুমি হংসবৎ নিস্পৃহতায় ভেসে চলে গেছ— কখনও প্রভাবিত হওনি তো! এখানে, এই একলব্য-বৃত্তান্তে কী এমন অভূতপূর্ব রহস্যের সন্ধান পেলে, জম্বুক!”
জম্বুক নম্র কিন্তু অকম্পিত কণ্ঠে বলে, “হে মহাভাগ কেশব! তবে শুনুন। আপনার পিতা বহুমান্য বসুদেবের সম্পর্কিত ভ্রাতা, প্রয়াত দেবশ্রবার নাম আপনি শুনে থাকবেন।”
“হ্যাঁ, অবশ্যই। তিনি আমার খুল্লতাত ছিলেন শুনেছি, যদিও দেখিনি কখনও। তাঁর পরিবারের সঙ্গে আমাদের দীর্ঘকাল কোনও যোগ নেই।”
“শুনুন বৃষ্ণিতিলক!” একটি শ্বাস টেনে নিয়ে জম্বুক বলে, “সেই ক্ষত্রবীর দেবশ্রবার কনিষ্ঠ পুত্র, তখন সে নিতান্ত শিশু— পিতার সঙ্গে ভ্রমণে গিয়েছিল অরণ্যের অভ্যন্তরে। ওই অরণ্যেই, যেখানে নিষাদগোষ্ঠীর বাস। সেখানে দুর্ঘটনাক্রমে সে হারিয়ে যায়। বহু অনুসন্ধানেও আর তাকে পাওয়া যায়নি।”
কৃষ্ণ প্রবল চমকিত হন, চক্ষু বিস্ফারিত করে বলেন, “কী!”
“হ্যাঁ, গিরিধারী, তখন আপনার বৃন্দাবনলীলা। আপনার কানে এ সংবাদ পৌঁছয়নি নিশ্চিত। পরে, ধীরে ধীরে কালের প্রলেপ পড়ে যায়, এ নিয়ে আর কোনও আন্দোলন হয়নি। কিন্তু শিশুটি নিরুদ্দিষ্টই রয়ে যায়...”
বিস্ময়াহত কৃষ্ণ দুই হাত একত্র মুষ্টিবদ্ধ করেন। সহসা স্মরণে উদিত হয় সাত্যকির বিবরণ— ‘প্রবীণ বসুদেবের সঙ্গে মুখাকৃতির সাদৃশ্য...’! দ্রুত শ্বাস নিতে নিতে দেবকীনন্দন বলেন, “তুমি... তুমি বলতে চাও... আমার জ্ঞাতিভ্রাতা...! খুল্লতাত-পুত্র!”
জম্বুক যুক্তপাণি হয়ে বিনীতকণ্ঠে বলে, “সব ক’টি সূত্র একত্রে গ্রথিত করে দেখুন আপনি স্বয়ং! অন্য ব্যাখ্যা মেলে কি? বাস্তব কখনও কখনও কল্পকাহিনির চেয়েও অবিশ্বাস্য হয়, সে তো আপনার অজানা নয় প্রভু!”
কৃষ্ণ একেবারে স্তব্ধ, বাক্রহিত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন। তাঁর সর্বাঙ্গ রোমাঞ্চিত!
২৬
“এখন সুস্থ বোধ হচ্ছে?”
কুন্তী ম্লান হেসে গ্রীবা হেলালেন। বিদুর কয়েক মুহূর্ত তাঁর মুখের দিকে তাকিয়ে রইলেন, তার পর আবার বললেন, “রাজবৈদ্যকে আর এক বার পাঠিয়ে দেব কি? তিনি পরীক্ষা করে দেখতেন...”
কুন্তী ব্যস্ত-বিড়ম্বিত মুখে বললেন, “না না, এখন কোনও অস্বস্তি অবশিষ্ট নেই। সাময়িক দৌর্বল্য থেকে হয়েছিল, খর রৌদ্রে সারা দিন...”
“হ্যাঁ, বৈদ্যও তেমনই বলছিলেন। রানি গান্ধারী অবশ্য খুব উদ্বিগ্ন, তিনি বার বার বলছেন ভগিনী পৃথাকে তো কখনও অসুস্থ হতেই দেখা যায়নি... একেবারে সংজ্ঞাহীনা হয়ে পড়লেন কী ভাবে? নিশ্চয় গুরুতর কিছু...”
কুন্তী আগের মতোই ব্যস্ত ভঙ্গিতে বলে উঠলেন, “না না, রৌদ্রতাপের কারণেই...! সচরাচর অসুস্থ হই না... তবু কালের গ্রাস থেকে অব্যাহতি আছে? বয়স বৃদ্ধি পাচ্ছে...” বলে একটু হাসার চেষ্টা করলেন।
আজ হস্তিনা-নগরীর কেন্দ্রস্থলে রঙ্গভূমিতে দ্রোণশিষ্যদের অস্ত্রবিদ্যা-সমাপনান্ত প্রদর্শনী-উৎসব ছিল। সারা দিন তুমুল উত্তেজনা। বিশেষত, গান্ধারীনন্দন আর কুন্তীপুত্রদের নিয়ে সমগ্র রাজ্যে যে অবদমিত দ্বন্দ্বের আবহ অনেক দিন থেকেই তৈরি হয়ে রয়েছে— আজ তা যেন শুষ্ক অটবীতে দাবাগ্নিসঞ্চারের মতো উচ্চকিত হয়ে উঠেছিল।
বৃকোদর আর দুর্যোধনের গদাশিক্ষা-প্রদর্শনীর মধ্যে প্রথম স্ফুলিঙ্গটি স্পষ্ট হয়। পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছিল, দুই কৈশোরোত্তীর্ণ কুমার এখন পূর্ণ যৌবনের তেজে দৃপ্ত— ক্রীড়ারঙ্গের মানসিকতা নিয়ে নয়, তীব্র ঘৃণা ও জিঘাংসা নিয়ে অবতীর্ণ। দ্রোণের আদেশে অশ্বত্থামা যখন তাদের নিরস্ত করে, তখন দু’জনেই পরস্পরের আঘাতে রক্তাক্ত, ক্রোধী ষণ্ডের মতো শ্বসমান। সেই পাবক-তাপ শমিত হওয়ার আগেই আবার উত্তাল হয়ে উঠল রঙ্গভূমি— যখন অদ্ভুতকর্মা অর্জুন তার অবিশ্বাস্য পারঙ্গমতা দিয়ে জনমন মোহিত করে দিয়েছে, এমত সময়ে গম্ভীর নাদে গর্জন ভেসে এল রঙ্গভূমির তোরণদ্বার থেকে!