ছবি: প্রসেনজিৎ নাথ।
পূর্বানুবৃত্তি: অভ্র স্বপ্ন দেখেছে যে, সে ক্যালিফোর্নিয়া গেছে। ঘুম থেকে ওঠার পর স্বপ্নের কথা মনে পড়ে তার মজাই লাগে। নির্মলের চায়ের দোকানে বসে সে যখন চা খাচ্ছে, তখন তার কাছে ফোন আসে বন্ধু মল্লারের। দুই বন্ধুই চাকরি খুঁজছে। কিন্তু এখনও কিছু জোটেনি। ফলে অভ্র ছেলেমেয়েদের পড়িয়ে আর মল্লার সিন্থেসাইজ়ার শিখিয়ে সামান্য কিছু রোজগার করে। এই মল্লার হঠাৎই ফোনে অভ্রকে আত্মহত্যার সহজ উপায় জিজ্ঞেস করে। অভ্র গম্ভীর হয়ে যায়। কারণ গত পরশু সে-ও আত্মহত্যাই করতে গিয়েছিল। শেষ মুহূর্তে মন সামলে নিয়ে সরে এসেছে। ও দিকে বেকারত্ব নিয়ে বাবার দেওয়া নিত্যনতুন খোঁটার জ্বালায় অতিষ্ঠ মল্লার আত্মহত্যাকেই সমাধানের একমাত্র উপায় বলে মনে করছে।
বাজারটা মেজাজে করে অভ্র, দরদাম বিশেষ করে না, ব্যাগ বাড়িয়ে দেয়। দু’কিলো আলু, পাঁচশো পেঁয়াজ, একশো আদা অর্ডার দিয়ে ব্যাগটা বাড়িয়ে দিল সে। উবু হয়ে বসে এক মহিলা প্রতিটি আলু পরখ করে দেখে ঝুড়িতে রাখছে। বোঝাই যাচ্ছে খুবই খুঁতখুঁতে মহিলা। মাথায় ওড়না, চেনা মনে হলেও নিশ্চিত হতে পারছে না অভ্র।
“দেড় কিলো দাও,” ঝুড়ি বাড়িয়ে দিল মহিলা।
গলার স্বর শুনেই অভ্র ভরসা পেল। রুমকি। হুম, এ বার সে নিশ্চিত হচ্ছে। চেহারার তেমন পরিবর্তন হয়নি, আগের মতোই আঁটোসাঁটো, গলায় হালকা মেদ, নাকের উপর তিলটাও স্পষ্ট।
“তুই এখানে?”
রুমকিকে খানিকটা অপ্রস্তুত দেখাল, “আরে, অভ্র যে!”
“ঠিক চিনেছি তা হলে। বাহ, তোর উন্নতি হয়েছে। ঘোর সাংসারিক হয়েছিস, বেছে বেছে ঘুরিয়ে দেখে আলু কিনছিস। এই গনগনে রোদে তুই বাজারে এসেছিস কেন?”
রুমকি ঝাঁঝিয়ে ওঠে, “বেলা করে বাজারে আসা চলবে না, এমন কোনও নিয়ম আছে না কি?”
“তা নেই,” অভ্র হাসে, “তবে চিপ্পুস এবং কম আয়ের লোকজনেরাই সাধারণত এত বেলায় বাজারে এন্ট্রি নেয়।”
“তুই কোন দলে পড়িস?”
“কম আয়ের দলে। হাফ-বেকার লোক, বাজারের পোকা-কাটা জিনিস কিনি। তা বলে তুই? তুই না হাইফাই ইঞ্জিনিয়ারের বৌ?”
রুমকি উত্তেজনায় ওড়না সরিয়ে বলল, “তাতে কী হয়েছে? বাজে বকিস না। ঘুম থেকে উঠতে বেলা হয়ে গেল। তাই এখন এসেছি।”
“সুখের জীবন। বেলায় ঘুম থেকে উঠছিস। ভগবান কিছু মানুষকে সুখের ঘুম দেয়।”
“বাজে বকিস না।”
“কোন বাড়িতে আছিস?”
“শ্বশুরবাড়িতে।”
“কেন? তোর তো এখন নাগপুরে থাকার কথা।”
রুমকি বলল, “ও নাগপুর থেকে কলকাতায় চলে এসেছে। ওখানে ফ্ল্যাট কিনেছি আমরা। মাঝেমধ্যে এখানে এসে ক’দিন থাকি।”
অভ্র ঘাড় দুলিয়ে বলে, “তোর শ্বশুর দেখছি সামান্য বাজারটাও করতে পারে না।”
“শ্বশুর অসুস্থ। সুগার-প্রেশার বেড়েছে। আপাতত তাই দেখভালের জন্য আছি।”
“হুম। তা তোর ছেলের বয়স কত হল?”
“সাত বছর।”
“বলিস কী! বেশ বড় হয়ে গেল তা হলে।”
রুমকি ব্যস্ততার ভঙ্গিতে বলল, “তাড়া আছে। বুঝতেই পারছিস। তোদের ছেলেদের আর কী কাজ বল! বাজার করেই খালাস। মেয়েদের কাজ তার পর শুরু হয়। হাত পুড়িয়ে রান্নাবান্না করতে তো হয় না তোদের।”
“তা হয় না। বলছিলাম যে, তোর ছেলেকে দেখতে যাব এক দিন।”
রুমকি জোরে দু’দিকে ঘাড় নাড়ে, “উঁহু, তোকে অ্যালাও করা যাবে না।”
“কেন শুনি?”
“কী পরিচয় দেব তোর?” রুমকি সরাসরি তার চোখের দিকে তাকাল, “আমার শ্বশুরবাড়ি খুব কনজ়ারভেটিভ। তোকে বন্ধু বলে পরিচয় দিতে পারি। শাশুড়িটি আমার একখানা যন্ত্র। চোখ নাচিয়ে জেরা করবে। কেমন বন্ধু? বিয়ের পরে তো এক বারও দেখিনি। অনেক ঝামেলা।”
“ঠিক আছে। তা হলে গিয়ে তোকে ঝামেলায় না ফেলাই ভাল,” অভ্র নিঃশ্বাস ফেলে বলল, “তোর ছেলেটাকে বছর তিনেক আগে দেখেছিলাম।”
রুমকি ব্যাগ হাতে নিয়ে উঠে দাঁড়াল, “করছিস কী এখন?”
“কিছুই করছি না। টুকটাক টিউশন করি, বলার মতো কিছু নয়। নেহাত ফ্যামিলি পেনশনটা আছে, তাই এখনও বিপিএল ক্যাটেগরিতে নামিনি। ভাবছি তেলেভাজার দোকান করব। বাংলার শিক্ষিত প্রজন্মের ভবিষ্যৎ তেলেভাজার কড়াই এবং তার ফুটন্ত গরম তেলের মধ্যে লুকিয়ে আছে শুনছি। হিস্ট্রিতে মাস্টার ডিগ্রি করা একটি ছেলে তেলেভাজার দোকান খুলেছে। কালকেই তো কাগজে পড়লাম। একটি মেয়ে বাংলায় এমএ পাশ, পেটের দায়ে ট্রেনের কামরায় জামাকাপড়, শাড়ি বেচে। ভাবছি ওখান থেকেই অনুপ্রেরণা নেব।”
“চাকরিবাকরির চেষ্টা করিসনি?”
অভ্র হাসে, “কোন জগতে থাকিস কে জানে! কেন্দ্র এবং রাজ্য কেউই চাকরি দেওয়ার মতো বাজে কাজে ইন্টারেস্টেড নয়। ওতে দেশ ও দশের কোনও বিকাশ হয় না। ভোটব্যাঙ্ক বাড়ে না। কেউ বছরে কয়েক লাখ কর্মসংস্থানের গল্প শোনায়, কেউ দেশবাসীকে আত্মনির্ভর হবার বাণী বিলোয়।”
রুমকি ঠোঁট বাঁকাল, “একটা চাকরি তুই পেয়েছিলি। নিজের দোষেই রাখতে পারিসনি। সব জানি। তা ছাড়া এমন বাহানা তুই ন’বছর আগেও দিতিস। তোর অজুহাত শুনতে-শুনতে কান গরম হয়ে যেত তখন।”
বুক মুচড়ে উঠলেও অভ্র মুখে এক চিলতে হাসি ঝুলিয়ে বলল, “কঠিন বাস্তবটাই বলছি। চাকরি পাওয়া এখন দুষ্কর। স্কুলের চাকরি নিয়ে কেলোর কীর্তি তো এখন সবাই জানে। এই সুযোগে কিছু মাল ফুলেফেঁপে ঢোল হয়ে গেল।”
রুমকি বলল, “জানি। তা তুই সরকারি চাকরির চেষ্টায় বসে না থেকে প্রাইভেট সেক্টরে ট্রাই করছিস না কেন?”
“করছি তো। চারখানা ইন্টারভিউ দিয়েছিলাম। কলকাতার এক ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে হয়েছিল। মাত্র সতেরো হাজার দেব বলল। কলকাতায় থাকা-খাওয়ার খরচ বাদ দিয়ে হাতে কিছুই থাকবে না। তাই জয়েন করলাম না। আমার কোনও প্রফেশনাল কোর্স করা নেই যার জোরে অন্য রকম জব পাব,” অভ্র বলল।
রুমকি বলল, “দেখ, কিছু একটা জুটে যাবে ঠিক। এখন আসছি। পরে দেখা হলে কথা হবে।”
“বোধহয় লাস্ট তিন বছরে এই প্রথম দেখা হল। আবার দেখা হওয়ার গ্যারান্টি নেই। তুই ব্যস্ত সংসারী, এখন আয়।”
রুমকি ঘ্রাণ ছড়িয়ে ছন্দ তুলে চলে গেল। ঘাড় ঘুরিয়ে আরও এক বার রুমকিকে, প্রাক্তন প্রেমিকাকে, দেখাই যেত। অভ্রর ইচ্ছেই হল না। কী লাভ ওতে! শুধু মনে হল, যৌবন সুপারফাস্ট ট্রেনের মতো চলে যাচ্ছে। বয়সটা লাফিয়ে ঝাঁপিয়ে বেড়ে যাচ্ছে। কেউ তার দিকে ফিরে তাকাবে না আর। বে-রোজগেরে পুরুষের কপালে অবজ্ঞা ছাড়া কিছুই জোটে না।
কিছু ক্ষণ পরেই দুঃখের জায়গা নিল চিনচিনে রাগ। মাছওয়ালাকে সে ধমকাল, “স্যর-স্যর করছ কেন? আজকাল এই এক সাহেবি চল হয়েছে। কোন স্কুলে কবে তোমাকে পড়ালাম যে, স্যর বলতে হবে? সবাই বিদেশি ঢং শিখেছ। বার-রেস্তরাঁ-হোটেল-এগরোলের দোকান, শপিং মল সর্বত্রই ‘স্যর’। দাদা, ভাই, কাকা— বাঙালির এই সম্বোধনগুলো কি একেবারেই ভুলে যাচ্ছ?”
বাড়িতে বাজারের ব্যাগ রেখে অভ্র বেরোল। মেজাজটা কেমন যেন বিগড়ে আছে। রুমকির সঙ্গে দেখা হওয়ার সাইড-এফেক্ট? দূর, রুমকির বিয়ে হয়ে গিয়েছে ন’বছর আগে, তা নিয়ে এখন কোনও শোক বা দুঃখ মনে অবশিষ্ট নেই। সে রুমকির ছেলেকে দেখতে চেয়েছিল, রুমকি তা মোক্ষম অজুহাতে এড়িয়ে গেল। রুমকির ছেলে তার ছেলেও হতে পারত। এ জীবনে বাবা হওয়া যে কী অনুভূতি, তা সে এখনও বুঝতেই পারল না। সেই সুযোগও আসবে বলে মনে হচ্ছে না। চৌত্রিশটা বসন্ত তো এমনিই কেটে গেল।
অভ্র দেখল, চকবাজার মোড়ে প্যান্ডেল বেঁধে ধর্না চলছে। কোনও এক নেতা জ্বালাময়ী ভাষণ দিচ্ছে। অর্ধাহারে মৃত্যুর থেকেও পেপারে বেশি গুরুত্ব পায় মিটিং-মিছিলের খবর। অমিয় ধর্নামঞ্চেই বসে আছে। নেতাদের ইউনিফর্ম পরেছে, সাদা পাঞ্জাবি ও কুর্তা, আজকাল সবুজ ও গেরুয়া পাঞ্জাবিও মার্কেটে চলছে। রোগাপটকা অমিয়র চেহারায় মেদ এবং জেল্লা এসেছে। অমিয় দলের যুব সংগঠনের উঁচু পদে আছে। ছেলে করিতকর্মা, মেন রোডের ধারে একটি ঝাঁ-চকচকে রেস্তরাঁ খুলেছে। রাজনীতি করলে ক্যাপিটাল জোগাড় হয়েই যায়, ও নিয়ে প্রশ্ন করতে নেই। জনগণ গণতন্ত্রে দুর্নীতিকে মেনেই নিয়েছে।
অভ্র অমিয়র লেটেস্ট বান্ধবীকে চিনে রেখেছে। প্যান্ডেলে একেবারে পিছনের সারিতে বসে রয়েছে। ঢলঢলে চেহারা, মুখেচোখে যৌবনের জেল্লা, বয়স চব্বিশ-পঁচিশ হবে। একে অমিয় কোন টোপে গেঁথেছে কে জানে! তবে ব্লু-মুন লজ থেকে ভরদুপুরে দু’জনকে এক সঙ্গে বেরোতে দেখেছে। দেখে সে হিংসায় জ্বলেপুড়ে গিয়েছিল কয়েক মিনিট। রাতের খাবার হজম হয়নি, সারা রাত চোঁয়া ঢেকুর জ্বালিয়ে মেরেছিল তাকে। মেয়েটা অমিয়র চার নম্বর বান্ধবী, ওয়েটিং লিস্টেও হয়তো অনেকে আছে। চিরকালের ব্যাকবেঞ্চার অমিয় টেনেটুনে গ্র্যাজুয়েট, তার উন্নতি দেখে হিংসে হয়। সে জীবনে করলটা কী? ঘটিভর জলে তার ডুবে মরা উচিত ছিল।
অমিয় অবিবাহিত। অবিবাহিত পুরুষদের লাম্পট্যের জন্য সমাজ অলিখিত লাইসেন্স দিয়েই রেখেছে। অমিয়কে এই ইস্যুতে ব্ল্যাকমেল করবে সে? নাহ, তেমন লাভ হবে না। ব্ল্যাকমেল করতে গেলে নার্ভ কঠিন হতে হয়। বিরোধী শিবিরের লোকেরাও এ সব নিয়ে মুখে কুলুপ আঁটে, তারাও রসের কারবারে কম যায় না। কেউ এই ইস্যুতে কাউকে চটায় না। বসুন্ধরা আর বীরভোগ্যা নেই, এখন শেয়াল এবং গন্ডারভোগ্যা হয়ে গেছে। অর্থ এবং ক্ষমতা থাকলে অতি কুদর্শন পুরুষও অনায়াসে একটার পর একটা ঘ্যামা সুন্দরীকে শয্যাসঙ্গিনী করতে পারে।
বাড়িতে বাজারের ব্যাগ নামিয়ে রেখে অভ্র বাইক স্টার্ট করল। কোতোয়ালি বাজারের দিকে যেতে হবে। মায়ের জন্য কিছু দরকারি জিনিস কিনতে হবে। কোতোয়ালি বাজারের পাশেই থানা। থানার কাছে সে সৌমাল্যকে দেখতে পেল। সৌমাল্য থানার পাঁচিলের পাশে তার বাইক রাখল। সৌমাল্য ‘দৈনিক জাগরণ’ পেপারে জেলার পেজটা কভার করে।
অভ্র জিজ্ঞেস করল, “কী কেস সৌমাল্য? থানার সামনে হঠাৎ এত ভিড় কেন?”
সৌমাল্য জানায়, “আমার মতো রিপোর্টাররা খবরের গন্ধে এসেছে।”
“খবর?”
“হ্যাঁ, এক ভুয়ো পুলিশ অফিসার ধরা পড়েছে। এক বছর ধরে পুলিশকর্মী সেজে অনেক কেসই করেছে। প্রথমে তা-ই শুনেছিলাম। এখন শুনছি লোকজনকে আইপিএস পরিচয় দিয়ে চমকাত। গাড়িতে নীল বাতি লাগিয়ে ঘুরত। নীল বাতিওলা গাড়ি নিয়েই মালটা দিনকয়েক আগে কোথাও একটা পাত্রী দেখতে গিয়েছিল। কোনও এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে দেড় লাখ ঝেড়েছে।”
“তা হলে তো কোনও সন্দেহ নেই যে ইন্টারেস্টিং খবর। চার দিকে এখন ভুয়োর রমরমা। তোমাদের কাছে এখন ভুয়ো টিচারও হল দু’হাজার বাইশ সালের হট টপিক।”
“ও নিয়ে বেশি লেখা যাবে না। কেন যাবে না তা নিশ্চয়ই তুমি বোঝো।”
অভ্র ঘাড় নাড়ে, “কিছুটা বুঝি। গণতন্ত্র আসলে একটা তামাশা। আমরা হলাম ভিক্টিম। যাও, তুমি তোমার কাজ করো।”
অশ্বত্থ গাছের ছায়ায় দাঁড়িয়ে অভ্র একটা বিড়ি ধরাল। রুমকির সঙ্গে তার সম্পর্কটা কি ভুয়ো ছিল? অতটা সৎ থাকা তার উচিত হয়নি, নিদেনপক্ষে লজে দু’-তিন বার যাওয়া যেত। চুমুর বেশি এগোতেই পারেনি সে। ভাবতে ভাবতে বিড়ির লেজ পুড়ে গেল, ঠোঁট জ্বলে গেল অভ্রর, সে তড়াক করে লাফিয়ে উঠল। জীবনে এই নিয়ে কত বার যে সে ছ্যাঁকা খেল!
বেলা পর্যন্ত ঘুমোয় বলে দুপুরে মল্লারের ঘুম আসে না। আজও এল না। দুপুরে সে খেতে বসে নাক সিঁটকেছিল। ভাত, ডাল, কুঁদরির তরকারি আর চুনোমাছের ঝাল।
“এটা খাবার?’’
“তোর বাবা যেমন এনেছে তেমনই করেছি,” প্রণতি বলেছিলেন।
“বাজার ঘুরে ঘুরে এই সব পচা মাল এনেছে?’’
কমল পাশের ঘরেই ছিলেন, শোনামাত্রই তিনি বিছানা থেকে প্রায় লাফিয়ে নেমে এলেন, “কে বলেছে পচা? বাজারের তুই কিছু বুঝিস? কখনও বাজার গিয়েছিস?”
“যেতে আর দিলে কই? আমি গেলে বাজার খাতে খরচা বেড়ে যাবে যে!”
কমল বললেন, “অবশ্যই! বিষয়বুদ্ধি যার নেই, বাজার করা তার কম্মো নয়। দরদাম করে ঘুরে ঘুরে কিনতে হয়। তা ছাড়া চুনোমাছ শরীরের পক্ষে ভাল, ওতে ক্যালশিয়াম আছে। ফ্রেশ পেলাম।”
“ফ্রেশ নয়, বলো যে সস্তায় পেলাম। সস্তায় কিছু পেলে তোমার এনার্জি বেড়ে যায়।”
কমল রেগে বলেছিলেন, “বাবার দোষ ধরা তোর স্বভাবে দাঁড়িয়েছে। এ দিকে আমি কিছু বললেই বাবুর সম্মানে লেগে যায়। রিটায়ার্ড মানুষ, পেনশন বাবদ এমন কিছু পাই না, মিতব্যয়ী হতেই হবে। প্রতিদিন ভালমন্দ জুটবে না।”
“দুঃখিত। বলতে বাধ্য হচ্ছি, মিতব্যয়ী আর কৃপণের মধ্যে আসমান-জমিন ফারাক।”
“অত ব্যাখ্যা শুনে আমার কাজ নেই। বাস্তব এখনও টের পাসনি।”
“হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি...” মল্লার মুখে ভাতের গ্রাস তুলেছিল। ভেবেছিল যে খেতে বসেই কথাটা তুলবে। খাবার পছন্দ নয় বলে নিজেই সে তর্কের মধ্যে জড়িয়ে পড়ল।
ক্রমশ