পর্ব ৩০
Bengali Serial Novel

খরস্রোত

কথাটা অমরেন্দ্রনাথের কানে পৌঁছল। তিনি কিছু বললেন না। কোনও ধারণা মাথার মধ্যে ঢুকে গেলে, তা বদলানো সহজ নয়।

Advertisement

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১০:৪৬
Share:

ছবি কুনাল বর্মণ।

পূর্বানুবৃত্তি: বিপ্লবী উল্লাসকর দত্তর জন্য কষ্ট অনুভব করেন অমরেন্দ্রনাথ। নিষ্ঠুর অত্যাচার দীর্ঘ দিন সহ্য করার ফলে আজ উল্লাসকরের মস্তিষ্ক কিছুটা বেসামাল। অথচ, বোমা তৈরির কাজে তাঁর মস্তিষ্ক ছিল খুরধার। দেশে ফিরে আসার পর বিপ্লবীদের ইতিকর্তব্য কী, তা স্থির করার জন্যই সভাটির পরিকল্পনা করেছেন উপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে সন্ন্যাসীর বেশে উপস্থিত হলেন নীলমণিও। সকলের কৌতূহলের উত্তরে তিনি জানান, তাঁর মনে হয়েছে অধ্যাত্মবাদই তাঁর পথ। তিনি সে পথ ছাড়বেন না। উপেন্দ্রনাথ সেই সভায় মনে মনে সিদ্ধান্ত নেন, তিনি বিপ্লবীদের সংগ্রামের কথা পরবর্তী প্রজন্মের জন্য লিপিবদ্ধ করে যাবেন। তাঁর বক্তব্যে তিনি বললেন, বিপ্লবীদের কাজ এখনও শেষ হয়নি। যে পথেই হোক, বিপ্লব চালিয়ে যেতেই হবে।

Advertisement

অমরেন্দ্রনাথ বলতে উঠলেন উপেন্দ্রনাথের পর। বললেন, বিপ্লবকে নতুন উদ্যমে উজ্জীবিত করার কথা। সভায় উপস্থিত মতিলাল রায়কে পন্ডিচেরি আশ্রমে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত ত্যাগ করতে বললেন। তিনি সকলকে কথা দিলেন, আগামী দিনের আন্দোলনে যাতে অরবিন্দকে শামিল করা যায়, তার জন্য তিনি চেষ্টা করবেন।

সভায় কেউ এক জন অস্ফুটে বলে উঠল, “পলাতক ঋষি।”

Advertisement

কথাটা অমরেন্দ্রনাথের কানে পৌঁছল। তিনি কিছু বললেন না। কোনও ধারণা মাথার মধ্যে ঢুকে গেলে, তা বদলানো সহজ নয়।

অরবিন্দ পন্ডিচেরি চলে গেলে অনেকের মতো তাঁরও আশা ছিল তিনি আবার মূল স্রোতে ফিরে আসবেন। সামনে থেকে নেতৃত্ব দেবেন, ‘বন্দে মাতরম্’ কাগজে ক্ষুরধার লেখনীতে আবার বিপ্লবের আগুন জ্বালিয়ে দেবেন। কে ভেবেছিল উত্তরপাড়া লাইব্রেরি মাঠে অমন একটা বক্তৃতা করবেন, যার মধ্যে রাজনীতির সামান্য ছোঁয়া নেই, আছে ধর্মের। সনাতন হিন্দুধর্মের। সনাতন ধর্মই নাকি জাতীয়তা। এর সঙ্গেই নাকি জাতি এগিয়ে চলবে, বিকাশলাভ করবে।

অরবিন্দ নিজেও জানেন, তার সম্পর্কে দেশবাসীর একটা অংশ কী ভেবে চলেছে। সন্ন্যাসীবেশে দেখা করতে গিয়ে অমরেন্দ্রনাথ তাঁর নেতাকে এটা জানিয়েছেন। অরবিন্দ ম্লান মুখে হেসেছেন। বলেছেন, “দেখ গোবিন, ১৯০৩ থেকে ১৯১০ সাল অবধি আমার রাজনৈতিক জীবনে আমি সব সময়ই চেষ্টা করে গেছি দেশের মানুষের মনে স্বাধীনতার সঙ্কল্প জাগিয়ে তোলার, এবং সেটা বোধহয় পেরেছি। যে ভারতবাসীকে মন-প্রাণ দিয়ে ভালবেসেছি, যার স্বাধীনতার জন্য দিবারাত্র চিন্তা করেছি, যার জন্য এত দুঃখ কষ্ট স্বীকার করলাম, যাকে আজও এক দিনের জন্য বিস্মৃত হইনি, সে আমাকে ভুল বুঝলে আমার কী করণীয়? তুমি বোধহয় জানো না গোবিন, আমার উপর এখনও পুলিশের নজর আছে। আমাকে এই আশ্রম থেকে বিতাড়িত করার জন্য ওরা ফরাসি সরকারের সঙ্গে কথা বলেছে। ওরা আমাকে দার্জিলিং অথবা লন্ডনের কোনও জায়গায় নিরাপদে থাকার ব্যবস্থা করে দেওয়ার প্রস্তাব পাঠিয়েছে। আমি তা প্রত্যাখ্যান করেছি। আমি এই দক্ষিণ ভারত থেকেই সারা ভারতকে দেখতে চাই। দেশ স্বাধীন হবেই। গান্ধীকে ব্রিটিশরা ভয় পেতে শুরু করেছে। তাঁর নেতৃত্বে আস্থা রেখো। তুমি ফিরে যাও। তোমাকে দেশের প্রয়োজন। আমার সম্বন্ধে যে যা ভাবার ভাবুক, আমি আমার পথে স্থির থাকব। আমার পথ আর রাজনৈতিক সীমারেখার মধ্যে নেই, গোবিন। অধ্যাত্মবাদের যে পথের সন্ধান আমি পেয়েছি, সেখান থেকে বেরিয়ে আসা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। এ পথেও দেশসেবা করা যায়, এ পথেও মানবসেবা করা যায়।

“আমি আবার বলছি গোবিন, ভারতবর্ষ স্বাধীনতা পাবেই। ব্রিটিশরা এ দেশ থেকে চলে যাবে। কিন্তু যাদের হাতে ক্ষমতা থাকবে, তারা সহনশীল হবে তো? ক্ষমতার ইতিহাস কিন্তু সে কথা বলে না। আত্মাকে উপলব্ধি করো গোবিন, তুমি কে, কী উদ্দেশ্যে তোমার আগমন এই পৃথিবীতে, এটা না জানলে তুমি দেশের সেবাও করতে পারবে না।”

কথাগুলো মনে করে অমরেন্দ্রনাথ দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। তার পর উল্লাসকরের উদ্দেশে বললেন, “উল্লাস, তুমি নাকি সেজদার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলে। দেখা হল?”

“হ্যাঁ, দেখা হয়েছে,” উল্লাসকর উত্তর দিলেন।

“কী কথা হল?”

“কোনও কথা তো হয়নি। আমি ঋষির মুখের দিকে খানিক তাকিয়ে চলে এলাম।”

“কোনও কথা বললে না?”

“উনিও তো কোনও কথা বললেন না।”

অমরেন্দ্রনাথ আর কথা না বাড়িয়ে সভাশেষ করলেন।

একে একে সবাই বিদায় নিল। শুধু বসে রইলেন যাদুগোপাল আর নীলমণি।

অমরেন্দ্রনাথ যাদুগোপালের দিকে তাকালেন। তিনিও উঠে দাঁড়িয়েছেন বিদায় নেওয়ার জন্য। বয়সে সামান্য বড় যাদুগোপাল অমরেন্দ্রনাথের থেকে। অমরেন্দ্রনাথের মতো তিনিও দীর্ঘকায় এবং সুপুরুষ। বিদায় নেওয়ার আগে, অমরেন্দ্রনাথের উদ্দেশে বললেন, “অমর, আসি তা হলে।”

অমরেন্দ্রনাথ বললেন, “হ্যাঁ, এসো।”

তার পর হঠাৎই প্রশ্ন করে বসলেন, “ক্ষীরোদদার কোনও খবর পেলে?”

যাদুগোপাল একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, “না, সন্ধান পাবও না। তিনি সন্ন্যাস গ্রহণ করে নিরুদ্দেশ হয়েছেন। তাঁকে সন্ধান করা নিরর্থক।”

ক্ষীরোদগোপাল যাদুগোপালের বড়দাদা। মূলত তাঁর হাতেই যাদুগোপাল ও ধনগোপালের বিপ্লবমন্ত্রে দীক্ষা। বাড়ি ফিরে সেই ক্ষীরোদগোপালের সন্ন্যাসী হয়ে নিরুদ্দেশ হয়ে যাওয়ার খবরে খুবই বিচলিত যাদুগোপাল। অমরেন্দ্রনাথ তাঁর পিঠে হাত রাখলেন। বললেন, “যাদু, এত ভেঙে পড়লে চলবে? তুমি তোমার কাজ করো। ডাক্তারি পড়াটা শেষ করো। দেশ এক দিন স্বাধীন হবে। স্বাধীন দেশে ভাল ডাক্তার তো লাগবে, তাই না?”

যাদুগোপাল মাথা নাড়লেন। কব্জি উলটে ঘড়িতে দেখলেন, সাতটা বেজে গেছে। তিনি অমরেন্দ্রনাথের কাছ থেকে বিদায় নিলেন।

অমরেন্দ্রনাথ এ বার নীলমণির দিকে দৃষ্টি দিলেন। কয়েক মুহূর্ত তাকিয়ে রইলেন সন্ন্যাসীবেশে নীলমণির দিকে। তার পর বললেন, “নীলমণি, তুমি কি তোমার সিদ্ধান্তে অবিচল?”

নীলমণি উত্তর দিলেন, “হ্যাঁ অমরদা, আমি আর এই পথ ত্যাগ করতে পারব না।”

অমরেন্দ্রনাথ বললেন, “আমি তোমাকে জোর করব না। আমি নিজে জানি, এই পথে যে যায়, তার এখান থেকে সরে আসাটা কত কঠিন। তুমি তোমার পথেই এগিয়ে চলো। এসো নীলমণি।”

নীলমণি তবু দাঁড়িয়ে থাকেন।

“কিছু বলবে, নীলমণি?” অমরেন্দ্রনাথ বলেন।

নীলমণি তার কাঁধে ঝোলানো ব্যাগ থেকে একটি কাগজে মোড়া জিনিস বার করেন।

“কী এটা?” প্রশ্ন করেন অমরেন্দ্রনাথ।

“মাউজ়ার পিস্তল, আপনার বন্ধু আমাকেদিয়ে গিয়েছিলেন।”

“কে... আদিত্যনাথ?”

“হ্যাঁ, আমার জেঠামশাই।”

“উনি ঠিক আমার বন্ধু ছিলেন না। ছিলেন আমার পথপ্রদর্শক। কত সময় যে ওঁর পরামর্শ নিয়েছি। তার পর কী যে হল আদিত্যনাথের! ঠিক আছে, তোমাকে আর আটকাব না। যথেষ্ট রাত হয়েছে। চলো, তোমাকে এগিয়ে দিয়ে আসি।”

নীলমণি আপত্তি করলেন না। পাশাপাশি হেঁটে চললেন সদর দরজা পর্যন্ত। বিপ্লবের গুরুর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে অন্ধকারে অন্তর্হিত হলেন। অমরেন্দ্রনাথ অপলক চেয়ে থাকলেন সেই দিকে।

৩২

খুব সকালে ঘুম থেকে ওঠা অভ্যাস শশিকান্তর। উঠে খানিক ক্ষণ ব্যায়াম করে পড়তে বসে ও। আজ ব্যায়াম সাঙ্গ করে জানালায় এসে দাঁড়িয়েছে সে। খুব ভাল লাগছে তার। শীত গিয়ে বসন্ত আসছে। একটা হিমেল হাওয়া গায়ে এসে লাগে এখনও। এই সময় অনেক পাখি এসে বসে তার ঘরের জানালার সামনে বকুল গাছে। কোন পাখির কী নাম তা জানে শশিকান্ত। কিন্তু আজ একটা পাখি এসে বসেছে বকুল গাছে, যার নাম সে জানে না। সে ভাল করে লক্ষ করছিল পাখিটাকে। গায়ের রং সবুজ, মাথাটা লাল, চোখের উপর কালো ডোরা। পিসি কাছাকাছি থাকলে, ঠিক বলে দিতে পারত পাখিটার নাম। আরও দুটো পাখি এসে বসেছে। দুটোই মাছরাঙা। পুকুরের মাছ খেতে এসে এই বকুল গাছেআশ্রয় নেয়।

পাখি পর্যবেক্ষণ শেষ করে, শশিকান্ত যখন পড়তে বসবে ভাবছে, এমন সময় শুনতে পেল পিসির সঙ্গে কাকার উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়। গুটিগুটি পায়ে সে চলে এল যেখানে পিসি ও কাকার মধ্যে কথা হচ্ছে। উদ্দেশ্য, আড়ালে দাঁড়িয়ে ওদের কথা শোনা। কারণ তার নামটাও উঠে আসছে ওদের কথায়। হঠাৎ পিসি তাকে দেখে ফেলায় যত বিপত্তি হল। পিসি দরজার বাইরে চোখ রেখে উমানাথকে বলে ওঠেন, “শশী তো কাছেই আছে, তুই আমাকে না বলে তাকেই জিজ্ঞেস করতে পারিস।”

এর পর পিসির ডাকে শশী কাকার সামনে এসে দাঁড়ায়। কাকার এমন উগ্রমূর্তি সে আগে কখনও দেখেনি। সে ভয় পেয়ে যায়। মনে হয়, পালিয়ে যায় ওখান থেকে। সেটা না পেরে চুপ করে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে।

উমানাথ বলে, “তুই কাল বড়বাজারেরগদিতে গিয়েছিলি?”

শশিকান্ত বুঝতে পারে, নিবারণ মারফত খবরটা তার কাকার কাছে চলে এসেছে। মনে সাহস এনে, খুব শান্ত ভাবে বলে, “হ্যাঁ, গেছিলাম। ঘনশ্যাম কাকার সঙ্গে দেখা করতে।”

উমানাথের রাগ চরমে ওঠে। চিৎকার করে বলে, “কেন... তাকে কী দরকার? অংশীদারি দাবি করতে? এত সাহস তোর? কে তোকে এ সব বুদ্ধি দিচ্ছে? নিশ্চয়ই তোর পিসি?”

শশিকান্ত মাথা নিচু করে দাঁড়িয়েছিল। খানিকটা মাথা তুলে বলল, “না, আমি নিজেই গিয়েছিলাম। কলেজ স্ট্রিটে দরকার ছিল। ওখান থেকে হাঁটতে হাঁটতে বড়বাজার গিয়েছিলাম। কোনও উদ্দেশ্যছিল না।”

“মিথ্যে কথা!” উমানাথ চেঁচিয়ে ওঠে, “সব কথাই আমার কানে এসেছে। আর এক দিন যদি ওখানে গেছিস, আমি জানতে পারি, তোর হাত পা ভেঙে, বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেব, এই বলে দিলাম।”

শশিকান্তর চোখে জল এসে গিয়েছিল। কোনও রকমে সেটা সংবরণ করে, তার ঘরে এসে তক্তপোশে বসে থাকল খানিক ক্ষণ। তার পর রাস্তায় বেরিয়ে পড়ল। বিক্ষিপ্ত ভাবে এ দিক-সে দিক ঘুরে বেড়িয়ে এক সময় ক্লান্ত হয়ে একটা বটগাছের ছায়ায় বসে পড়ল। মনে মনে ঠিক করল, কাউকে না জানিয়ে সে বাড়ি থেকে দূরে কোথাও চলে যাবে। কেনই বা থাকবে সে এই বাড়িতে! এই রকম অপমান হজম করে!

কত ক্ষণ এই ভাবে সে বসেছিল, তা তার জানা নেই। এক সময় অনুভব করল, তার খুব খিদে পেয়েছে। শশিকান্ত সব পারে, কিন্তু খিদে সহ্য করতে পারে না। সে ঠিক করল আপাতত বাড়িতেই ফিরে যাবে। তার পর ধীরেসুস্থে বাড়ি ত্যাগের বিষয়টা ভেবে দেখবে। ঠিক তখনই সে লোকটাকে দেখল। শীর্ণকায় বেঁটেখাটো গড়ন, মাথায় টাক। পরনে মলিন পোশাক দেখে বলে দিতে হয় না যে, লোকটা হতদরিদ্র গোছের।

লোকটাকে আগেও দেখেছে শশিকান্ত। কিন্তু কখনও তার সম্পর্কে কোনও কৌতূহল জাগেনি শশিকান্তর মনে। আজ জাগল। কে লোকটা? ও কোথায় চলেছে? একটু দৌড়ে তাকে ধরে ফেলল শশিকান্ত। বলল, “তুমি থালা হাতে নিয়ে কোথায় চলেছ ভাই?”

লোকটি হাঁটতে হাঁটতেই উত্তর দিল, “মতি শীলের বাগানে।”

“কেন?” বোকার মতো প্রশ্ন করে শশিকান্ত।

“ওখানে গেলে গরিবদের খেতে দেয় গো। দেখছ না আমার হাতে থালা!” বলেই হনহন করে এগিয়ে যায় লোকটি।

শশিকান্ত ধীরে ধীরে অনুসরণ করে লোকটিকে। মতি শীলের বাগানবাড়ির কথা শুনেছে শশিকান্ত। অন্য ধনী লোকেরা যখন বাগানবাড়িতে মদের ফোয়ারা ছোটায়, মেয়েমানুষ নিয়ে এসে ফুর্তি করে, শীলরা তাদের বাগানবাড়িতে কাঙালি খাওয়ায়।

শশিকান্ত দেখে, সামনের দিকে অন্তত জনা পঞ্চাশেক কাঙালি উবু হয়ে বসেছে, আর তাদের পাতে গরম গরম ভাত ও তরিতরকারি পরিবেশন করছে কিছু লোক।

ভাত দেখে শশিকান্তর খিদেটা আরও বেড়ে গেল। সামনে এগিয়ে কাঙালিদের সারে সে-ও বসে গেল। যে লোকটি খাবার পরিবেশন করছিল, সে শশিকান্তকে বলল, “তোমার থালা নেই?”

শশিকান্ত মাথা নাড়ল। বলল, “না, নেই।”

লোকটি দূরে দাঁড়িয়ে থাকা এক জনের উদ্দেশে বলল, “জগা, এই কাঙালি ছেলেটার জন্য একটা থালা নিয়ে আয়।”

জগা হেলতে দুলতে একটা থালা নিয়ে এলে, পরিবেশক লোকটি শশিকান্তর হাতে থালাটি ধরিয়ে দিয়ে বলে, “খাবার পর সামনের ওই পুকুরে থালা ধুয়ে, আবার জগার হাতে দিয়ে যাবে, বুঝেছ? আর, এ বার থেকে থালা নিয়ে আসবে।”

খাওয়ার পর থালা ধুয়ে জগার হাতে ফেরত দিয়ে মতি শীলের বাগানবাড়ি থেকে বেরোনোর মুখে, রঘুর সঙ্গে দেখা হয়ে গেল। রঘু তাদেরবাড়ির চাকর। ওড়িশার লোক। শশিকান্তর বাবা রমানাথই বছর পাঁচেক আগে তাকে বাড়ির কাজে বহাল করেছিলেন।

ক্রমশ

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement