মনস্বী: তরুণ বয়সে নীরদচন্দ্র চৌধুরী।
ফুলশয্যার রাতে বর নববধূকে জিজ্ঞেস করলেন, “বেঠোফেন-এর নাম শুনেছ?”
নববধূ নিরুত্তর। কয়েক মুহূর্ত চুপচাপ। নতুন বেনারসির খসখস, রজনীগন্ধার সুবাস।
বর কী ভেবে এবার শুধোলেন, “স্পেলিংটা বলো দেখি।”
বর কিশোরগঞ্জের ভিলেজ অ্যাটর্নি উপেন্দ্রনারায়ণ চৌধুরী-র ছেলে নীরদচন্দ্র। জন্ম ১৮৯৭ সালের ২৩ নভেম্বর। মা সুশীলাসুন্দরী। বরের বয়স ৩৫। উচ্চতা পাঁচ ফুট। রুগ্ণ শরীর। নববধূর নাম অমিয়া। উচ্চতা পাঁচ ফুট তিন ইঞ্চি। বরের চেয়ে অপেক্ষাকৃত সুস্বাস্থ্য।
তবে শরীর যেমনই হোক, বরের মস্তিষ্ক অসামান্য সতেজ। প্রখর স্মৃতিশক্তি, প্রবল মনের জোর, তেমনই অগাধ পাণ্ডিত্য। তার উপরে যুক্তি ও বিশ্লেষণের অনন্যতা। ইংরেজি ও সংস্কৃত ছাড়াও ফ্রেঞ্চ, ল্যাটিন ও গ্রিক ভাষায় দখল। খুব ছোট বয়সেই শেক্সপিয়র আয়ত্ত করে ফেলেছিলেন নীরদচন্দ্র।
কোনও স্থায়ী চাকরি ছিল না। এদিক ওদিক পত্র পত্রিকায় ছিটেফোঁটা লিখে সামান্য উপার্জন। প্রায় সবটাই চলে যেত পাশ্চাত্য সঙ্গীতের রেকর্ড আর বইপত্র কিনতে। সংসারে টানাটানি। হাত পড়েছে স্ত্রীর গয়নাতেও। পরে কখনও আর্মি অ্যাকাউন্টস বিভাগে, কখনও বা শরৎচন্দ্র বসুর সচিব রূপে, আবার কখনও অল ইন্ডিয়া রেডিয়োতে যুদ্ধের ভাষ্যকারের চাকরি করেছেন।
পারিবারিক ধর্ম ছিল ব্রাহ্ম। তবে তিনি মনে করতেন এদেশের ধর্ম একটা মাত্র নয়। উপাসনালয়ে বহু ঈশ্বরের অবস্থান। হিন্দু ধর্ম কোনও এক বিশেষ দর্শন তত্ত্বের নিগড়ে বদ্ধ নয়, তা আচরণের ধর্ম মাত্র।
ইতিহাস ছিল প্রিয় বিষয়। স্কটিশ চার্চ কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন। উচ্চশিক্ষার পাঠ সাঙ্গ করতে পারেননি। তাঁর ‘অটোবায়োগ্রাফি অব অ্যান আননোন ইন্ডিয়ান’ গ্রন্থে তাঁর ইতিহাস বোধের প্রমাণ মেলে।
সুভাষচন্দ্র বসুর প্রায় সমবয়সি। গভীর সম্ভ্রম ছিল বসু পরিবারের প্রতি। মনে করতেন শরৎচন্দ্র বসুই ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার যোগ্যতম মানুষ।
নীরদ সি চৌধুরী ছিলেন আপাদমস্তক ব্রিটিশ ভক্ত। ভারতীয়ত্ব সম্পর্কে একটা নাকউঁচু মনোভাব। আর বাঙালি! বাঙালি সম্পর্কে তিনি পরে লিখলেন ‘বাঙালী থাকিব নাকি মানুষ হইব’। তিনি জিন্সকে ভারতীয় পোশাক মনে করতেন না। জিন্স পরাও পছন্দ করতেন না। হার্ড কভার যুক্ত বই ছাড়া তিনি ছুঁতেন না। বলতেন পেপার ব্যাক হাতে ধরা ‘বেশ্যালয়ে গমনের ন্যায়’।
এক সময় ‘মর্ডান রিভিউ’ পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত হন। ‘শনিবারের চিঠি’-তে সজনীকান্ত দাসদের দলে ভিড়ে ‘বলাহক নন্দী’ ছদ্মনামে একে একে রবীন্দ্রনাথ নজরুল প্রমুখকে মুক্তকচ্ছ করতে লেগে গেলেন। প্রায় অনেক ব্যাপারে বাঙালিকে তিনি হেয় করে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁর ধারণা বাঙালি মদ খায় বটে, কিন্তু না জানে গ্লাস ধরতে, না জানে সিপ করতে। তাবড় তাবড় বঙ্গপুঙ্গবকে এই সব শিখিয়েছেন তিনি। যেমন বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়। যিনি রিপন কলেজে সহপাঠী ছিলেন তাঁর।
রবীন্দ্রনাথ জমে থাকা পারিবারিক ধুলো ঝেড়ে ফেলে রবীন্দ্রনাথ হয়ে উঠতে চাইতেন। কিন্তু পদে পদে বাধা তাঁর সর্বজনবিদিত বাবুয়ানি আর শৌখিনতা। রবীন্দ্রনাথের অনেক কিছুই তাঁর ভাল লাগত না। যেমন, রবীন্দ্রনাথ পারিষদ পরিবৃত হয়ে থাকা উপভোগ করতেন। জমিদারি আর সামন্ততান্ত্রিক শোণিতস্রোত তাঁর শিরা উপশিরায় প্রবাহিত কি না!
‘আত্মঘাতী রবীন্দ্রনাথ’ বইতে নীরদচন্দ্র বলছেন, রবীন্দ্রনাথ তাঁর এক কন্যার মৃত্যুশয্যায় গীতা পড়ে শোনাচ্ছেন। মেয়েটির বয়স সবেমাত্র ১৩! মৃত্যুযন্ত্রণার মধ্যে এটা কি তার কাছে পরিহাস নয়!
এক বার তিনি কোনও এক বাংলা পত্রিকার শারদীয়া সংখ্যার প্রবন্ধে লেখেন ‘তথাকথিত’ বাংলাদেশ। বাংলাদেশ যে তত দিনে স্বাধীন সার্বভৌম এবং স্বতন্ত্র একটি রাষ্ট্র এ সংবাদ তাঁর কাছে ছিল না, সম্ভবত প্রবাসে থাকার কারণেই। ক্ষুণ্ণ ক্ষুব্ধ বাংলাদেশের নাগরিকরা ঘোরতর বিরূপ হয়েছিলেন। প্রকাশককে সেই সংখ্যার প্রতিটি কপি বাজার থেকে তুলে নিতে হয়েছিল।
আর এক বার এক বাংলা দৈনিকে তিনি বিখ্যাত বাঙালি মনীষীদের একটি নামের তালিকা প্রস্তুত করেন। তাতে বিদ্যাসাগরের নাম নেই। স্বভাবতই বিতর্ক এবং প্রশ্নের ঝড়। নীরদচন্দ্রের যুক্তি, সে যুগে বিদ্যাসাগর নিজ বাসভবনে একটি পাঠাগার গড়ে ছিলেন। এটি বাঙালির চরিত্রসুলভ নয়। বিদ্যাসাগর এই শিক্ষা রপ্ত করেছিলেন ইংরেজের কাছ থেকে। ফলে বাঙালিসুলভ বৈশিষ্ট্য থেকে তিনি সরে গিয়েছিলেন, এখানেই তিনি আর বাঙালি রইলেন না।
প্রেম নামক বিশেষ আবেগ নীরদচন্দ্রের কাছে বিশেষ তাৎপর্য বহন করে না। এটি নিতান্তই স্বাভাবিক এবং জৈবিক। বরং বিরহের ক্ষমতা সুদূরপ্রসারী, তাঁর কাছে বিরহ শক্তি এবং অর্ন্তদৃষ্টির উৎস।
তাঁর বোধে মার্ক্সীয় দর্শন এ যুগের নিরিখে অপ্রাসঙ্গিক। তিনি পাশ্চাত্য সভ্যতার প্রশংসা করছেন এক দিকে, অন্য দিকে ভারতীয় সংস্কৃতির সঙ্গে তুলনা করে তা যে হীন, তা বলতেও ছাড়ছেন না। তাঁর কাছে রেনেসাঁ হল মোগলযুগের আচ্ছন্নতা কাটিয়ে পাশ্চাত্য সভ্যতার সংস্পর্শে এসে নতুন করে ভারতীয় আধ্যাত্মিকতার মহত্ত্বকে অনুভব করা। হিন্দুদের সুপ্রাচীন আধ্যাত্মিকতার গালভরা বড়াই নিতান্তই ভুয়ো অর্থহীন, নীরদচন্দ্র তাঁর ‘আত্মঘাতী বাঙালী’ গ্রন্থে দৃষ্টান্ত দিয়ে তা দেখিয়েছেন।
হাজার ব্যর্থতা সত্ত্বেও সততা ও দৃঢ় মানসিকতা থেকে এক চুলও সরেননি। ভারতীয় জাতীয়তাবাদী আন্দোলন সম্পর্কে তিনি সন্দিহান। নেতাদের যোগ্যতার উপরেও তাঁর আস্থা কম। তাঁর সতত স্পষ্টবাদিতার জন্য তাঁকে বিভিন্ন সময়ে মূল্যও দিতে হয়। তিনি তাঁর লেখা ‘দাই হ্যান্ড, গ্রেট অ্যানার্ক!’ বইটিতে ভারতীয় বরেণ্য ব্যক্তিবর্গের সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করায় রেডিয়োর চাকরি হারান। পেনশন থেকেও বঞ্চিত হয়েছিলেন।
১১ বছর বয়সে নীরদচন্দ্র ফরিদপুর ছেড়ে কলকাতায় আসেন। তাঁর মুখে পূর্ববঙ্গীয় ভাষা শুনে কলকাতাস্থ আত্মীয়-পরিজন, যাঁরা বয়সে অন্তত তাঁর চেয়ে তিন গুণ বড়, তাঁরাও টিটকিরি দিতে ছাড়েননি।
কলকাতায় এসে ওঠা পূর্ববঙ্গীয়দের ‘বাঙাল’ ভাষার জন্য কি না কে জানে, তখনকার দিনে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষার্থীদের শুদ্ধ বাংলা লেখার জন্য আলাদা একটা প্রশ্ন থাকত। নীরদচন্দ্রকেও রবীন্দ্রনাথের কবিতা থেকে শুদ্ধীকরণ করতে হয়েছিল। পরে যখন তিনি বাংলায় লেখালিখি শুরু করলেন, সব সময় সাধু ভাষাতেই লিখে গেলেন। তাঁর প্রথম বাংলা বই ‘বাঙালী জীবনে রমণী’-র জন্য প্রচুর টাকা আগাম পেয়েছিলেন নীরদচন্দ্র।
নীরদচন্দ্র চৌধুরী-র লেখা ‘অটোবায়োগ্রাফি অব অ্যান আননোন ইন্ডিয়ান’ এক জন ইতিহাসবিদের চোখে দেখা ব্রিটিশ ভারতের অবিভক্ত বাংলা। এক জন ভারতীয় বালকের বেড়ে ওঠার কাহিনি। সেটা গত শতকের গোড়ার দিককার কথা। যে জগতে ক্রমশ তিনি আর তাঁর নিজের পথ খুঁজে নিতে পারছেন না, ছটফট করছেন। সেই সঙ্গে ব্রিটিশ শাসনের বরাতের লেখা ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে উঠছে পরিণতির ইঙ্গিত দিয়ে। সেই সন্ধিক্ষণের কথা সমাজ ইতিহাসের পাতা থেকে নীরদ চৌধুরীর অটোবায়োগ্রাফির পাতায় উঠে আসছে সৎ স্বচ্ছ অবিকৃত বিবরণে। বইটির বিভিন্ন অংশে রয়েছে লেখকের পিতৃভূমি এবং মাতুলালয়ের গ্রামের কথা। বয়ঃসন্ধিকালে জাতীয়তাবাদী মনোভাবের জাগৃতি, কলকাতার মানুষ আর জীবনের কথা।
শেষাংশে লিখছেন তাঁর ‘আইডিয়াজ় অব অ্যান এপিটাফ’—‘হিয়ার লাইজ় দ্য হ্যাপি ম্যান হু ওয়াজ় অ্যান আইলেট অব সেন্সিবিলিটি সারাউন্ডেড বাই দ্য কুল সেন্স অব হিজ় ওয়াইফ, ফ্রেন্ডস অ্যান্ড চিলড্রেন’। ‘অটোবায়োগ্রাফি’ বইটি তিনি উৎসর্গ করলেন ‘টু দ্য মেমারি অব দ্য ব্রিটিশ/ এমপায়ার ইন ইন্ডিয়া,/ হুইচ কনফার্ড সাবজেক্টহুড/ আপঅন আস/ বাট উইথহেল্ড সিটিজ়েনশিপ।’ ‘অটোবায়োগ্রাফি’-র এই উৎসর্গ ক্রুদ্ধ করল কতিপয় ভারতীয় তথা বাঙালিকে। যারা বরাবরই নীরদ সি-র ভাব-ভাবনা অপছন্দ করে আসছেন। তাঁকে এর জন্য সাম্রাজ্যবাদীদের শেষ সমর্থক, ব্রিটিশভক্ত দালাল ইত্যাদি বাণ ছুড়তে কসুর করেননি তারা। তারা খেয়াল করল না ভারতীয়রা ইংরেজদের কাছ থেকে ‘সাবজেক্টহুড’ পেলেও ‘সিটিজ়েনশিপ’থেকে বঞ্চিত বলে নীরদচন্দ্র কী ভাবে ইংরেজদের শ্লেষবিদ্ধ করলেন।
‘অটোবায়োগ্রাফি’ পড়ে এ দেশের মানুষ অসন্তুষ্ট হলেও বিদেশিরা বইটির প্রশংসা করলেন। তাঁদের মধ্যে এমন দু’জন ছিলেন যাঁদের প্রশংসা পাওয়াটা বিরল ব্যাপার। এক জন বিদ্যাধর সুরজপ্রসাদ নায়পল, অন্য জন উইনস্টন চার্চিল। ভি এস নায়পল লিখলেন, ‘নো বেটার পেনিট্রেশন অব দ্য ইন্ডিয়ান মাইন্ড বাই দ্য ওয়েস্ট অ্যান্ড বাই দ্য এক্সটেনশন অব দ্য পেনিট্রেশন অব দ্য কালচার বাই অ্যানাদার উইল বি অ্যান্ড নাও ক্যান বি রিটন ইন ১৯৯৮, ইট ওয়াজ় ইনক্লুডেড, অ্যাজ় ওয়ান অব দ্য ইন্ডিয়ান কন্ট্রিবিউশনস।’ (দ্য নিউ অক্সফোর্ড বুক অব ইংলিশ প্রোজ়— ভি এস নায়পল)।
অটোবায়োগ্রাফির জন্য নীরদ সি-র বিলেত ভ্রমণের আমন্ত্রণ এল ব্রিটিশ দূতাবাসের মাধ্যমে। মাত্র ছ’সপ্তাহের জন্য। সেই প্রথমবার, তাঁর স্বপ্নের ‘স্বদেশযাত্রা’। তাঁর বিলেত ভ্রমণের অভিজ্ঞতা নিয়ে তিনি লিখলেন ‘আ প্যাসেজ টু ইংল্যান্ড’। তখন তাঁর বয়স ৬০ বছর।
রবীন্দ্রনাথের ‘নোবেল’ প্রাপ্তিতে কতিপয় খ্যাতনামা ইংরেজ তাঁর যোগ্যতা ও স্বচ্ছতা বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন। রুষ্ট নীরদচন্দ্র ইংরেজদের বুদ্ধিভ্রম সম্পর্কে নিঃসন্দেহ হন। এক সময়ের সভ্যতার ধারক বাহক আর্যদের উত্তরপুরুষ ব্রিটিশদের যে বৌদ্ধিক অবনমন ঘটেছে, সে কথা তাঁর ‘দ্য কন্টিনেন্ট অফ সার্স’ গ্রন্থে বিধৃত আছে।
ব্রিটিশরা অবশ্য নীরদচন্দ্রের যাবতীয় সমালোচনা সহজ ভাবেই গ্রহণ করেছেন। ম্যাক্স মুলার-এর জীবনী লেখার জন্য ব্রিটিশরা যে পাঠাগারগুলো তাঁর জন্য খুলে দিয়েছিলেন, সেটা তিনি বলেই সম্ভব হয়েছিল। তাঁর ইংরেজি লেখার প্রকার-প্রকরণের আর এক মুগ্ধ পাঠক কবি স্টিফেন স্পেনডার। তিনি বলতেন, ‘ওঁর ইংরেজিকে আমরাও ভয় পাই।’
নীরদচন্দ্র খুব জাঁক করে বলতেন, “এক বর্ণ ইংরেজিও আমি কোনও ইংরেজের কাছে শিখি নাই। যা শিখিয়াছি সবই গ্রামের পাঠশালার গুরুমশাইদের কাছ থেকে।” নবতিপর নীরদচন্দ্র ধুতি পাঞ্জাবি আর তালতলার চটি পরে খুরপি হাতে বাগান করতেন। অবসরে শুনতেন পছন্দের রবীন্দ্রসঙ্গীত। টেমস নদীতে বজরায় ভাসতে ভাসতে আবৃত্তি করছেন রবীন্দ্রনাথের ‘আশা’। স্পষ্ট ও নির্ভুল উচ্চারণ। ‘দূরদর্শন’-এ ভারতীয়দের কাছে তা এক দুর্লভ প্রাপ্তি। তখন অনেক দিনই তিনি সুদূর দ্বীপবাসী। ভারতের এক রাষ্ট্রদূত এক বার তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। আলাপের পর নীরদচন্দ্র তাঁর স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে জানান, লোকটা লেখাপড়া জানে বলেই মনে হল।
১৯৭০-এ দ্বিতীয় বারের জন্য বিলেত গেলেন। অক্সফোর্ড -এর ২০ লাথবেরি রোডের বাড়িতে সেই যে উঠলেন, আর ফিরলেন না। তাঁর সেখানকার বাসস্থানে লাগানো হয়েছিল সম্মাননার বিশেষ স্মারক ‘ব্লু প্লেক’। পেয়েছিলেন ডাফ কুপার মেমোরিয়াল অ্যাওয়ার্ড, অক্সফোর্ডের ডি লিট, রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ কর্তৃক কম্যান্ডার অব দ্য অর্ডার অব দ্য ব্রিটিশ এম্পায়ার (সিবিই) উপাধি, বিশ্বভারতীর দেশিকোত্তম, আনন্দ পুরস্কার, সাহিত্য অ্যাকাডেমি ও বিদ্যাসাগর পুরস্কার। ১৯৯৯ সালের ১ অগস্ট প্রায় ১০২ বছর বয়সে তিনি প্রয়াত হন।
৯৭ বছর বয়সে তুখোড় স্মৃতি নিয়ে লিখলেন ‘থ্রি হর্সমেন অব দ্য নিউ অ্যাপোক্যালিপ্স’ নামক বহুদর্শীর আলেখ্য। বাঙালির নৈতিক অবক্ষয় আর রাজনৈতিক ভ্রষ্টাচারের যে চিত্র সেখানে অঙ্কিত, তা আজকের প্রেক্ষাপটেরই যেন নির্ভুল পূর্বানুমান। আজীবন নীরদচন্দ্র যেমন বুঝেছেন, তেমন লিখেছেন। কী ব্রিটিশ কী ভারতীয়, কাউকেই কখনও রেয়াত করেননি। ফলে দু’দেশের কাছেই জুটেছে পুরস্কার ও তিরস্কার। ব্রিটেনের নাগরিকত্ব পেয়েছিলেন। নিজের সংগ্রহের সমূহ বইপত্র ইম্পিরিয়্যাল লাইব্রেরিকে দান করলেন না, দান করলেন ক্যালকাটা ক্লাবকে। সারাজীবন ভারতীয় পাসপোর্ট নিজের কাছেই রেখে দিলেন, ব্রিটিশদের কাছে আর জমা করেননি। কে বলতে পারে, হয়তো তাঁর নিজের মধ্যেও কোনও সূক্ষ্ম দ্বন্দ্ব আর দোলাচল ছিল আজীবন।