সঙ্গীতপ্রিয়: বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। তাঁর তাল-লয়ের জ্ঞান ছিল অসাধারণ।
দার্শনিক প্লেটোর মনে হয়েছিল, স্থির নক্ষত্রমণ্ডল আর অস্থির গ্রহদল নিয়ে তৈরি এই মহাবিশ্বলোক যেন এক সাঙ্গীতিক সুষমায় ভরা। আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানীদের ‘স্ট্রিং থিয়োরি’ অনুযায়ী, আমাদের এই বিশ্বলোকে রয়েছে অতি সূক্ষ্ম তার দিয়ে গড়া এক কেন্দ্রীয় বীণা। আর সমস্ত জীবজগতের সঙ্গে এই কেন্দ্রীয় বীণার সংযোগ চলেছে অজস্র কণার সৃষ্টি করা বিভিন্ন কম্পনে। সেই সংযোগের কথা অনুভব করেছেন কবি, দার্শনিকের দল। আর সুর তথা সঙ্গীত হল মানব-শরীরের সঙ্গে সমস্ত জগৎ, অধিজগতের সেতু।
এই বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব জানার সুযোগ হয়নি বঙ্কিমচন্দ্রের। কিন্তু সঙ্গীত যে মানুষের জীবনের অমোঘ সঙ্গী, দুঃখের উপশম, প্রণয়ে-বিরহে-আনন্দে, রণ-সঙ্কেতে অনিবার্য তার ভূমিকা, সে কথা তাঁর বিভিন্ন উপন্যাসে ভিন্ন-ভিন্ন সামাজিক অবস্থানে থাকা অজস্র নারীচরিত্রের মধ্যে বার বার এনেছেন। আর সেটা করেছেন তাঁর সমকালের রক্ষণশীল ভদ্রসমাজে নারীর জন্য এই কৃষ্টি নিষিদ্ধ জেনেও। এখানেই তিনি ব্যতিক্রমী।
আশৈশব পারিবারিক সঙ্গীতচর্চার আবহে থাকা বঙ্কিমচন্দ্র ছিলেন অসম্ভব সঙ্গীতপ্রিয়, বিশেষত রাগ-সঙ্গীতের অনুরাগী। ঈশ্বরদত্ত সুকণ্ঠের অধিকার না পেলেও ছাত্রসুলভ নিষ্ঠা নিয়ে কিছু কাল সঙ্গীতচর্চা করেছেন। সুন্দর হারমোনিয়াম বাজাতেন। লয়-তান জ্ঞান ছিল অসাধারণ। ত্রিশ বছর বয়সে বিষ্ণুপুর ঘরানার যদুভট্ট তানরাজের কাছে বঙ্কিম মাসে পঞ্চাশ টাকা, মতান্তরে সত্তর টাকা গুরুদক্ষিণার বিনিময়ে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের তালিম নিয়েছেন। ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটের ভ্রামণিক জীবনে, যেখানে যা গান-পদ ভাল লেগেছে, সংগ্রহ করেছেন। অভিজাত বৈষ্ণব পরিবারের সন্তান, আবাল্য বাংলার নিজস্ব ধ্রুপদী গান, কীর্তন, বৈঠকী গান শুনেছেন। এরই পরিণতিতে তাঁর উপন্যাসের নায়িকারাও স্বভাব-গায়িকা অথবা তালিমপ্রাপ্ত সঙ্গীতগুণী।
গানের ব্যাপারে নিজে খুবই খুঁতখুঁতে ছিলেন। এক বার কলকাতার এক পেশাদার রঙ্গমঞ্চে তাঁর ‘মৃণালিনী’ উপন্যাসের নাট্যরূপ পরিবেশন কালে গিরিজায়া-রূপী কলাকুশলীর গাওয়া ‘বিকচ নলিনে, যমুনা-পুলিনে’ গানটি বেসুরো মনে হওয়ায় বিরক্ত হয়ে স্থানত্যাগ করেন।
বস্তুত, সঙ্গীতপ্রিয়তাই বঙ্কিমচন্দ্রকে চালিত করেছে প্রথম উপন্যাস ‘দুর্গেশনন্দিনী’র বিমলা চরিত্রটিকে দরবারি সংস্কৃতিতে লালিত সুগায়িকা হিসেবে নির্মাণ করতে। বিমলা শিখেছে, বঙ্কিমের পছন্দ মতো রাগে নিবদ্ধ উচ্চাঙ্গ হিন্দুস্থানি গান। সম্ভবত এটি উপন্যাসের প্রক্ষিপ্ত ঘটনা নয়। কারণ, প্রাচীন কালে রাজপরিবারে বা সম্ভ্রান্ত অবরোধে নৃত্য-গীতকে যে অনুশীলনযোগ্য বিষয় হিসেবে গণ্য করা হত, তা অনেক পরে ‘সঙ্গীত’ প্রবন্ধে উল্লেখ করেছেন বঙ্কিমচন্দ্র।
বঙ্কিমের জীবনকালে সাধারণত গৃহস্থ পরিবারের মেয়েদের সঙ্গীতচর্চায় নিষেধের গণ্ডি টানা ছিল। সমকালে কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ির মেয়েদের মতো তাঁর পরিবারের কন্যা-বধূরা সঙ্গীতচর্চা করতেন কি না, সে তথ্য পাওয়া না গেলেও গৃহস্থ ঘরের নারীদের সঙ্গীতসাধনা সম্বন্ধে তাঁর খাঁটি এবং আন্তরিক অনুমোদন ছিল। ‘সঙ্গীত’ (‘বঙ্গদর্শন’, ১২৭৯) প্রবন্ধে তিনি লিখছেন, “যেমন রাজনীতি, ধর্ম্মনীতি, বিজ্ঞান, সাহিত্য প্রভৃতি সকল মনুষ্যের জানা উচিত, তেমনি শরীরার্থ স্বাস্থ্যকর ব্যায়াম, এবং চিত্তপ্রসাদার্থ মনোমোহিনী সঙ্গীত-বিদ্যাও সকল ভদ্রলোকের জানা কর্তব্য। শাস্ত্রে রাজকুমার-রাজকুমারীদিগের অভ্যাসোপযোগী বিদ্যার মধ্যে সঙ্গীত প্রধান স্থান পাইয়াছে। বাঙ্গালীর মধ্যে ভদ্র পৌরকন্যা দিগের সঙ্গীত শিক্ষা যে নিষিদ্ধ বা নিন্দনীয়, তাহা আমাদিগের অসভ্যতার চিহ্ন।” বঙ্কিম ওই প্রবন্ধে আরও যা লিখেছিলেন, তার সারকথা, ঘরের মেয়ে-বৌরা সঙ্গীতনিপুণা হলে ঘরে সুখ-আনন্দ উপচে পড়ে, সাঙ্গীতিক পরিবেশের অভাবে বাড়ির পুরুষ পতিতালয়গামী হয়!
যে বঙ্কিমচন্দ্র ‘বাঙ্গলার নব্য লেখকদের’ যশের জন্য না লিখে, মানুষের মঙ্গলের জন্য লেখার উপদেশ দিয়েছিলেন, সেই তিনি মানুষের কল্যাণে তাঁর সাহিত্যে নারীর সঙ্গীতচর্চা বা সঙ্গীতকে বার বার হাজির করেছেন। বিশ্বাস করেছেন, শরীরের সুস্থতা এবং শুশ্রূষার জন্যও গানের প্রয়োজন। সঙ্গীতের প্রয়োজন আছে অন্তঃপুরে বন্দি, ভদ্রঘরের নারীর জীবনে, বোষ্টমী-ভিখারিনি, বারাঙ্গনার জীবনেও। তাঁর উপন্যাসে সঙ্গীতের ব্যবহার কোনও প্রক্ষিপ্ত ঘটনা নয়, নারী-অন্তরের সহজ-স্বাভাবিক দাবিতে অথবা কাহিনির অভ্যন্তরের গোপন তথ্য উদ্ঘাটনের দায়েই তার প্রকাশ।
‘কপালকুণ্ডলা’ উপন্যাসে স্বেচ্ছাচারিণী, যথেচ্ছ গমনে অভ্যস্ত মতিবিবিকে চরিত্রের প্রয়োজনে নৃত্য-গীতের পাঠ দিয়েছেন আগ্রায়। ‘মৃণালিনী’ উপন্যাসে অশেষ সঙ্গীতপ্রিয় বঙ্কিমের নায়িকা মৃণালিনী মূলত গানের মুগ্ধ শ্রোতা আর সারা ক্ষণ গান গায় এক সঙ্গীতনিষ্ঠ ভিখারিনি গিরিজায়া। এলিটিস্ট ধ্রুপদী গান নয়, প্রাচীন পদাবলি, কীর্তন, তান-আলাপ বর্জিত বাংলার গ্রামীণ লোকগীতি। উপন্যাসে দশটি গানই গেয়েছে গিরিজায়া। আর স্বামী-পরিত্যক্তা বিরহতাপিত গৃহস্থ-কন্যা মৃণালিনীর কণ্ঠে মাত্র দু’টি গান। শরীর ও মনের শক্তি জোগায় সুর, এ তথ্য এখন আধুনিক বিজ্ঞান-মান্য। যুগের তুলনায় এগিয়ে থাকা বঙ্কিমের মনেও কি এমন ভাবনা ছিল না?
ষোলো বছর বয়সে ব্রজবুলি ভাষায় ‘ভানুসিংহ ঠাকুরের পদাবলী’ রচনা করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। এর অনেক আগেই বঙ্কিম ‘মৃণালিনী’-তে ব্রজবুলি ভাষায় গান লিখেছিলেন— বঙ্কিম-বিশেষজ্ঞদের মতে, জয়জয়ন্তী রাগে ‘মথুরাবাসিনি মধুরহাসিনি শ্যামবিলাসিনি রে’ গানটিতে ব্রজবুলি ভাষার ছায়া রয়েছে। এ উপন্যাসের ‘সাধের তরণী আমার কে দিল তরঙ্গে’ গানটিতে সুরারোপ করেন রবীন্দ্রনাথের ভাগনি, সঙ্গীতজ্ঞা সরলাদেবী চৌধুরাণী। সরলাদেবী ‘জীবনের ঝরাপাতা’ বইতে লিখেছেন, “এমন দিন ছিল যখন এই বাঙ্লায় ভদ্র পরিবারের মেয়েদের মধ্যে সঙ্গীত-চর্চা একেবারে নিষিদ্ধ ছিল, যখন নিজের বাড়ির মেয়েদের কণ্ঠেও প্রকাশ্যে গান শোনা নিতান্ত দুর্লভ ছিল।” সরলার জন্ম ১৮৭২-এ, যখন বঙ্কিম তাঁর ‘সঙ্গীত’ বিষয়ক প্রবন্ধটি প্রকাশ করেন। সে প্রবন্ধে বঙ্কিম যতই লিখুন, “বাঙ্গালীর মধ্যে ভদ্র পৌরকন্যাদিগের সঙ্গীত শিক্ষা যে নিষিদ্ধ বা নিন্দনীয়, তাহা আমাদিগের অসভ্যতার চিহ্ন,” নিজের লেখা উপন্যাসে সাহস করে সেই ভাবনার প্রয়োগ সব সময় করতে পারেননি। স্বাভাবিক অবস্থায় প্রকাশ্যে গৃহস্থ ঘরের কন্যা বা বধূদের গান গাইতে দেখাতে পারেননি তিনি। বাস্তবে তখন বাংলাদেশে প্রকাশ্যে গান গাইত বৈষ্ণবী, ভিখারিনি অথবা ‘কুলটা’ নারীরা।
তাই ‘বিষবৃক্ষ’ উপন্যাসে সূর্যমুখী, কমলমণি, কুন্দরা গান শুনতে ভালবাসলেও গান গায় না। তাদের সঙ্গীততৃষ্ণা মেটাত অন্দরমহলে অথবা বাসরঘরে মহিলা মজলিশের গান, হরিদাসী বোষ্টমীর গাওয়া অগভীর, এক বিশেষ যুগের কবিগান। পুরনারীদের সঙ্গীতরুচি ছিল। হরিদাসীর গাওয়া গান, ‘কাঁটাবনে তুলতে গেলাম কলঙ্কের ফুল’ শুনে সূর্যমুখী বলেছে, “ও সব গান আমার ভাল লাগেনা, গৃহস্থবাড়ির গান গাও।”
উপন্যাসের চরিত্রের ক্রমপরিচয় দেওয়ার তাগিদে বঙ্কিমচন্দ্র জাল-বৈষ্ণবীর গলায় প্রথমে উঁচু দরের কীর্তনাঙ্গের গান, পরে ঢপ ও সব শেষে বাগানবাড়ির গান বসিয়েছেন। বালবিধবা গৃহপরিচারিকা হীরাকেও সুপ্ত বাসনার প্রকাশের দায়ে খেমটা-গান গাইয়েছেন। চিত্তবিনোদন অথবা গুপ্ত বাসনার বহিঃপ্রকাশ ছাড়াও, গান নারীর দুঃখ-লাঞ্ছিত জীবনে উপশম হয়ে উঠেছে। তার প্রমাণ ‘ইন্দিরা’ উপন্যাসের গৃহস্থ ঘরের বধূ ইন্দিরা। সে নিজে গান করে না, কিন্তু জীবনে ঘোরতর দুর্যোগের সামনে দাঁড়িয়েও মনে করতে পেরেছে বাল্যে শোনা একটি প্রাচীন গান। দু’টি বালিকার কণ্ঠে মিষ্টি, সরল ভাষায় ‘মল বাজানোর গান’ বা ‘জোয়ারের জলের গান’ শুনে দস্যুদের কাছে সর্বস্বান্ত হওয়া স্বামী-বিচ্ছিন্না ভরা যুবতী ইন্দিরার মন শান্ত হয়েছে।
‘কৃষ্ণকান্তের উইল’-এ গৃহবধূ ভ্রমর গান করে না। করে ওস্তাদের কাছে তালিম নেওয়া কুলটা বিধবা পল্লিবালা রোহিণী। কুলটা বিধবার সঙ্গীতশিক্ষায় বঙ্কিমচন্দ্র সামাজিক বিধি বিচ্যুতির ভয় পাননি। এখানেই এক জন লেখকের ধর্মসঙ্কট।
কুলবধূদের মুখে প্রথমে সঙ্গীত না শোনালেও ‘চন্দ্রশেখর’ উপন্যাসে বঙ্কিম কিছুটা শিথিল। অন্ধকার রাতে পুকুরে সাঁতার কাটতে গিয়ে গৃহস্থ-কন্যা শৈবলিনী, সই সুন্দরীকে বলে, “চুপি চুপি, একটা গান গা না ভাই।” সুন্দরী বলে, “দূর হ পাপ। ঘরে চল।” অর্থাৎ গৃহস্থ-নারীকে চুপি চুপি গান গাইতে হয়, না হলে সে পাপীয়সী। ঝুমুর গানের ঢঙে সে গেয়েছে রসের গান, ‘ঘরে যাবনা লো সই/ আমার মদনমোহন আসছে ওই।’ আদিরসের হালকা গান শৈবলিনীর মুখে বসিয়ে বঙ্কিম দেখাতে চেয়েছেন চরিত্রটির তারল্য। উদাসীন স্বামীর সান্নিধ্যে তার তৃষ্ণার্ত মন, অবদমিত শরীর কোন এক না-দেখা মদনমোহনের প্রতীক্ষায় ক্লান্তিহীন। গান ও নাচ প্রসঙ্গে এই উপন্যাসে বঙ্কিম মন্তব্য করেছেন, “সে যুগে নৃত্য গীত গণিকাদের সংস্কৃতি এবং জীবন ধারণের উপায়, কুলরমণীদের জীবনচর্যায় এই সূক্ষ্ম শিল্পের স্থান নেই, বরং তাহা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ বিষয়।” তাই বুঝি হিন্দু নারী শৈবলিনীকে অন্ধকার রাতে জলাশয়ের মধ্যে অথবা এক বিশেষ অপ্রকৃতিস্থ অবস্থায় গান গাওয়ালেন! অথচ এই একই উপন্যাসে নবাব মীরকাশেমের স্ত্রী দলনী বেগমকে মুঙ্গেরের দুর্গে বীণা বাজিয়ে গান করার অনুমতি দিলেন।
‘রাজসিংহ’ উপন্যাসে এক দিকে হিন্দু রাজকন্যা চঞ্চলকুমারী স্থানিক বৈশিষ্ট্য মেনে হিন্দি গানের মাধ্যমে মনের কথা বলেছে, অন্য দিকে দুই ভিন্ন নারীর ঈর্ষা-কলহের কেন্দ্রে অবস্থান করছে সঙ্গীত। ঔরঙ্গজেব কন্যা জেবউন্নিসার আকুল প্রণয়প্রার্থী মবারকের উপেক্ষিত স্ত্রী ছিলেন সুকণ্ঠী-সঙ্গীতজ্ঞা দরিয়া বেগম। দরিদ্র দরিয়া-বিবিকে প্রতিনিয়ত ঈর্ষা করে সঙ্গীতশাস্ত্রে অধিকারহীন জেবউন্নিসা।
পরে ভদ্র নারী-চরিত্রের অনেকের কণ্ঠে সঙ্গীত পরিবেশন করিয়েছেন বঙ্কিমচন্দ্র। ‘আনন্দমঠ’-এর শান্তি দেশব্রতী স্বামীর অভিসারে বেরিয়ে গানকে সঙ্গী করেছে, কখনও গেয়েছে জয়দেবের দশাবতার-স্তোত্র। স্বামীর রণ-সঙ্গিনী হয়ে আনন্দে একযোগে গেয়েছে ‘এ যৌবন জলতরঙ্গ রোধিবে কে’। ‘দেবী চৌধুরাণী’-তে প্রফুল্লরূপী দেবী চৌধুরাণী রাগসঙ্গীতে দীক্ষিত। অজস্র রাগ-রাগিনীতে বীণা বাদনে দক্ষ সরস্বতী-স্বরূপিণী। কিন্তু তার কণ্ঠে কোনও গীতাভাস লেখক রাখেননি। দৃপ্ত রানির খোলসের আড়ালে স্বামী-সঙ্গ বঞ্চিত হতভাগ্য নারীটি বীণার মিড়-মূর্ছনায় তার প্রেম-কাঙাল হৃদয়টি প্রকাশ করেছে ভাষাহীন সঙ্গীতে।
শেষ উপন্যাস ‘সীতারাম’। সেখানেও সঙ্গীতপ্রিয় বঙ্কিমচন্দ্র ভয়ঙ্কর এক রণমুহূর্তে জ্ঞান ও ভক্তিরূপী জয়ন্তী ও শ্রী-র কণ্ঠে দিয়েছেন সুরে সমৃদ্ধ এক মহাগীতি।
ব্যক্তিগত জীবনে যেমন, তেমনই সাহিত্যেও সমাজের অহেতুক রুদ্ধতাকে অতিক্রম করতে সাহস লাগে এক জন লেখকের। কিন্তু হৃদয় দিয়ে তিনি যা অনুভব করেন, নিজস্ব জীবনযাপনে অথবা মেধাচর্চায় তার কিছু তো চিহ্ন থাকবেই। উনিশ শতকের সাহিত্যে নারীকণ্ঠে সঙ্গীত পরিবেশনের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ ভাবে না হলেও, বঙ্কিমচন্দ্র তাঁর যুগের রক্ষণশীল সমাজকে অনেকাংশে উপেক্ষা করেছেন। তাঁর মতো মানুষ কি আর
সমাজের কাছে নিজের মেধাবী রসজ্ঞ হৃদয়কে পুরোপুরি গচ্ছিত রাখতে পারেন?