ছবি: কুনাল বর্মণ।
সেটা ছিল সত্তর দশকের মাঝামাঝি, সম্ভবত ছিয়াত্তর সাল। ভারতীয় ব্যাটিংয়ের দুই প্রধান স্তম্ভ তখন গাওস্কর এবং বিশ্বনাথ। একটি ইংরেজি কাগজে (দৈনিক নয়) গাওস্করের এক সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হল। সেখানে তিনি বিশ্বনাথ সম্পর্কে জানালেন, “ভিশির সঙ্গে খেলতে গিয়ে অধিকাংশ ব্যাটসম্যানই তাড়াতাড়ি আউট হয়ে যায়, কারণ নন-স্ট্রাইকার এন্ডে দাঁড়িয়ে ভিশির ব্যাটিং দেখে তারা ভাবে যে, খুব প্লেয়েব্ল বল আসছে।” এর পরই তিনি নিজের সঙ্গে বিশ্বনাথের তুলনা প্রসঙ্গে জানান, “আমি যে বলটা আটকাতে পারলে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করব, ভিশি অনায়াসে সেই বলটা বাউন্ডারিতে পাঠাবে।”
এই বাক্যটি আমার কবিতা লেখার কাজে খুব বড় একটি শিক্ষা হিসাবে কাজ করে চলেছে সারা জীবন ধরেই। তার আগে বলা দরকার আমি কী ভাবে পড়তে পারলাম এই সাক্ষাৎকার। আমাদের রানাঘাটে দু’টি লাইব্রেরিতে আমি নিয়মিত যেতাম। পাবলিক লাইব্রেরি আর মহকুমা লাইব্রেরি। দ্বিতীয় লাইব্রেরিটির কর্ণধার অনাথদা ‘স্পোর্টস অ্যান্ড পাসটাইম’ এবং ‘ইলাসট্রেটেড উইকলি’ রাখতেন লাইব্রেরিতে। কোন কাগজে পড়েছিলাম মনে নেই। কিন্তু গাওস্করের ওই কথাটি আমি বার বার মনে করতে বাধ্য হয়েছি কেন না যত আমার জীবন এগিয়েছে, বয়স বেড়েছে, আমি কবিতাকে আঁকড়ে থাকার চেষ্টা করেছি— ততই আমাকে অন্যান্য কীর্তিমান এবং আমার অগ্রজ কবি লেখকদের সঙ্গে তুলনার মুখোমুখি হতে হয়েছে। গাওস্করের এই সাক্ষাৎকারটি পড়ার প্রায় কুড়ি বছর পরে আমি আমার চাকরিজীবনে বাংলার এমন এক চিরস্মরণীয় সাহিত্য ব্যক্তিত্বের সঙ্গে এক ঘরে বসে কাজ করতাম, যিনি প্রতি বছর চারটি উপন্যাস লিখতেন। একটি কিশোরদের জন্য, অন্য দু’টির একটি নিজনামে অন্যটি ছদ্মনামে— যে-নামটি ঘরে ঘরে পাঠক-সমাদৃত— এ ছাড়াও বাংলাদেশের কোনও একটি পত্রিকার ইদ সংখ্যায় তাঁর একটি উপন্যাস প্রকাশ পেত। এর পাশাপাশি তিনি অনায়াসেই লিখে চলতেন কবিতা, ছোটগল্প, ধারাবাহিক উপন্যাস, ভ্রমণ কাহিনি, বুক রিভিউ। সেই সঙ্গে সম্পাদনা করতেন বাংলা কবিতার মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া
একটি কাব্যপত্রিকা।
আমাকেও তখন বছরে একটি করে উপন্যাস পুজোসংখ্যায় লিখতে হত চাকরিসূত্রেই এবং একটি উপন্যাসও কারও ভাল লেগেছে বলে জানতে পারতাম না। বরং আমার প্রথম উপন্যাসটি থেকেই আমি বিরূপ সমালোচনার মুখে পড়তে পড়তে চলি। সবচেয়ে বড় সমালোচক আমার বাড়িতেই। কাবেরী। আমি মনে-মনে শুধু বলতাম: “আমি যে বলটা আটকাতে পারলে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করব, ভিশি অনায়াসে সেই বলটা বাউন্ডারিতে পাঠাবে।” অর্থাৎ আমি পুজোসংখ্যার জন্য প্রতিশ্রুত উপন্যাসটির কাজ দ্রুত সমাধা করেই আবার আমার কবিতা লেখার চেষ্টার মধ্যে ঢুকে পড়তাম। অন্যান্য কবির লেখার সঙ্গেও আমার অনেক তুলনা টানা হয়েছে। তাঁরা সকলেই যে অতুলনীয় কাব্যশক্তির অধিকারী, অগ্রজ বা সমসাময়িক সকলেই, সে বিষয়ে নিঃসন্দেহ থেকে আমি তাঁদের কবিতার গুণবাচক দিকগুলি পাঠকের কাছে তুলে ধরার জন্য বিশ্লেষণমূলক গদ্য রচনার চেষ্টা করেছি। উল্টো দিকে নিজের ভিতরে তাকিয়ে খুঁজতে চেয়েছি আমার মন কখন কী রকম কবিতার দিকে যেতে চাইছে তার দিকদিশা।
এক বার গাওস্করের সময়টা ভাল যাচ্ছে না। ভারতের জনগণ তাঁর কাছে তখন সব সময়ই শতরান প্রত্যাশা করে। কিন্তু তিনি ব্যাড প্যাচের কবলে পড়েছেন। এই সময় সাংবাদিক এম জে আকবর তাঁর একটি দীর্ঘ সাক্ষাৎকার নেন। অনাথদার লাইব্রেরিতে বসেই সেই সাক্ষাৎকার পড়ি। যখন গাওস্করকে প্রশ্ন করা হল যে, তাঁর এত বিরুদ্ধ সমালোচনা হচ্ছে সংবাদমাধ্যমে, এগুলোতে তাঁর কী প্রতিক্রিয়া হয়। তখন গাওস্কর একটি উত্তর দিয়েছিলেন যা পরবর্তী সময়ে আমাকে আমার নিজের কবিতার পথ নিজের মতো করে সন্ধান করবার চেষ্টায় সর্বদা একটা অব্যর্থ উপদেশ হিসেবে কাজ করেছে। গাওস্কর বলেছিলেন, “তুমি যে-কাজই করো তার বিরূপ সমালোচনা হবেই। যখন আমি রান পাই না তখন বিরুদ্ধতাকে স্বাভাবিক বলেই মেনে নিই। কিন্তু যখন আমি রান পাই, অর্থাৎ কোনও শতরান বা দ্বিশতরানের পরও আমি নিজেকে ছেড়ে দিই না। ড্রেসিংরুমে ফিরে এসে একটা টেবিলের উপর উপুড় হয়ে শুয়ে, তোয়ালে জড়িয়ে, যখন ম্যাসিয়োরের কাছে মাসাজ নিই, তখন সেই এক ঘণ্টা সময়ের মধ্যে আমি মনে মনে প্রত্যেকটা বল কী ভাবে খেলেছি, সেটা রিপ্লে করে দেখি। ভাবি, যে শটটা খেলেছি তাতে বলটা এক্সট্রা কভারে না গিয়ে পয়েন্টের দিকে গেল কেন? আমার কী ভুল ছিল? প্রত্যেকটা স্কোরিং এবং নন-স্কোরিং শট আমি মনে মনে দেখতে থাকি। এক সময় উঠে পড়ি ম্যাসিয়োরের টেবিল থেকে। কিন্তু তত ক্ষণে আমার নিজের পুরো ইনিংসটার রিভিউ আমার নিজের করা হয়ে গেছে। তাই সাংবাদিকরা যখন আমার ব্যাটিং নিয়ে কোনও বিরূপ সমালোচনা করেন, তার কোনও প্রত্যুত্তর আমি দিতে
যাই না। কারণ আমি তো নিজেই নিজের রিভিউ নিয়ে নিয়েছি।”
১৯৮৩ সালে এই সাক্ষাৎকার পড়েছিলাম। তখন গাওস্করের সংগ্রহে আছে ২৮টি টেস্ট সেঞ্চুরি। আর ২০১২ সালের ডিসেম্বরে প্রকাশিত পঙ্কজ রায়ের জীবনী ‘পঙ্কজ’ নামক বইয়ের ১৫৭-১৫৮ পৃষ্ঠায় পাওয়া যায় এই বিবরণ: ১৯৭৮ সালে মার্চেন্ট দেখা করতে গেছেন গাওস্করের সঙ্গে, ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে। তার আগের দিনই গাওস্কর একটি অবিস্মরণীয় দ্বিশতরান করেছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের বিরুদ্ধে। সেই ২০৫-এর আগের দু’টি ইনিংসে তাঁর রান ছিল যথাক্রমে ১১১ ও ১৩৭, পাকিস্তানের মাটিতে। বইয়ে পাওয়া যায়, ‘মার্চেন্ট যখন বলছেন, “তুমি ওই সবুজ পিচে যেসব শর্ট খেলেছ হোল্ডারদের, দেখে আমি হাঁ হয়ে গিয়েছি।” তখন গাওস্কর বিনম্র ভাবে তাঁকে থামান, বলেন, “আমার একটাই জিজ্ঞাস্য আছে। আমি যখন ১৯৭ রানে, তখন একটা হুক মারি। ওটা স্কোয়ার লেগ দিয়ে না গিয়ে ফাইন লেগ দিয়ে বাউন্ডারিতে যায়। কেন হল এটা? আপনার কী মনে হয়? ভুলটা কোথায় করেছিলাম?”
মার্চেন্ট বাকরুদ্ধ হয়ে যান কার্যত। কারণ পারফেকশনের জন্য এই আকুতি ক্রিকেটের প্রবাদপ্রতিম ব্যাটসম্যানদের মধ্যেও মার্চেন্ট দেখেননি। এই কথা জানার পর গত এক দশক কবিতাচর্চায় আমি নিজের ক্ষেত্রে নির্মম ভাবে পারফেকশনিস্ট হওয়ার চেষ্টা করে চলেছি।
’৮৩ সালে গাওস্কর যা বলেছেন, তারই প্রমাণ পর পর তিন ইনিংসে ১১১, ১৩৭, ২০৫ করার সময়ও তাঁর মনে কাজ করেছে। ’৮৩ সালেই আমি বুঝি যে, আমাকে সকলের কাছ থেকে শিখতে হবে, কিন্তু সবচেয়ে বেশি শিখতে হবে নিজের ত্রুটিগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকার একাগ্রতা থেকে।
এ বার ১৯৯৬ সালে চলে আসি। ১৯৮৭ সালে অবসর নিয়েছেন গাওস্কর। এক তরুণ ক্রীড়াসাংবাদিকের সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠ পরিচয় ছিল, এখনও আছে। দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে গেছে ভারত, গেছে সেই তরুণ ক্রীড়াসাংবাদিকও, সিরিজ় কভার করতে। ফিরে আসার পর তার কাছে শুনলাম এক আশ্চর্য গল্প, অফিসের করিডরে দাঁড়িয়ে। কেননা সেই তরুণ বসে একই অফিসের চার তলায়, আমি বসি তিন তলায়। মাঝে মাঝেই করিডরে দাঁড়িয়ে কফি খাই আমরা। তরুণটি তখন ভাল কবিতা লেখে, তাই আমার সঙ্গে সংযোগ। একটি ম্যাচের কথা জানলাম তার কাছে। সে প্রেস বক্সে বসে আছে অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা এই সব দেশের ক্রীড়াসাংবাদিকদের সঙ্গে। সকলেই ম্যাচ রিপোর্ট করার কাজে উপস্থিত। ভারত এই খেলায় প্রথম ইনিংসে ৬৬ এবং দ্বিতীয় ইনিংসে ১০০ রান করে অল আউট হয়ে যায়। স্বভাবতই ইনিংসে পরাজয় ঘটে ভারতের। ভারতের এই দুর্দশার পিছনে কে? অ্যালান ডোনাল্ড নামের এক ফাস্ট বোলার, যাঁকে তখন বলা হচ্ছে পৃথিবীর দ্রুততম। ভারতের প্রথম ইনিংসের আরম্ভে যখন পর পর উইকেট পড়ছে, তখন দক্ষিণ আফ্রিকার সাংবাদিকরা খুবই ঠাট্টা-তামাশা করছেন ভারতীয়দের পেস বোলিং খেলার দুর্বলতা নিয়ে। অন্য দেশের সাংবাদিকরাও তাঁদের সঙ্গে যোগ দিচ্ছেন। বলা দরকার এখানে, এই সব সাংবাদিক কোন প্রজন্মের? আমি যে তরুণটির কথা বলছি, সে ক্রীড়াসাংবাদিকতা শুরু করেছে ১৯৯৩-এ। অন্য সাংবাদিকরা সব ওই কাছাকাছি প্রজন্মের। দক্ষিণ আফ্রিকার সাংবাদিকরা একটু বেশি উৎসাহী। তাঁরা বলছেন, “তোমাদের সানি গাওস্কর এই ডোনাল্ডের সামনে পড়লে কী করত?” এবং সকলেই একমত হচ্ছেন যে, গাওস্করও এই ডোনাল্ডের সামনে থেকে ব্যাট হাতে পালিয়ে যেতেন।
কেউ খেয়াল করেনি, ওই একই প্রেস বক্সে একেবারে সামনে, সম্পূর্ণ নিঃশব্দে বসে আছেন দীর্ঘদেহী এক মধ্যবয়সি ভারতীয়। তিনি এ সব আলোচনায় কোনও অংশ নিচ্ছেন না। ভারতীয় বলেই হয়তো। আমার অনুজ বন্ধু তাঁকে চিনতে পেরেছেন প্রথমেই। তিনি দিলীপ বেঙ্গসরকার। তিনিও ম্যাচ রিপোর্ট করতেই এসেছেন। ভারত চার উইকেটে ৩৭। দক্ষিণ আফ্রিকার সাংবাদিকদের ফুর্তি চরমে উঠেছে; গাওস্করের নামও তিন-চার বার উঠল। মাঠে ঢুকল জলের গাড়ি। জলপানের বিরতি।
এই বার পিছন দিকে ঘুরে তাকালেন ওই মধ্যবয়সি ভারতীয়। তিনি বললেন, “তোমরা যার নাম করছ, সানি গাওস্কর, টেস্টে তার রান দশ হাজার একশো বাইশ। তার মধ্যে সাড়ে চার হাজার থেকে পাঁচ হাজার রান আমি নন-স্ট্রাইকার এন্ডে দাঁড়িয়ে তাকে করতে দেখেছি। তখন ক্রিকেট জগতে যার বলের গতি সবচেয়ে বেশি, তার নাম ম্যালকম মার্শাল। মার্শালের একটা বাউন্সার সানির কপালে লেগে উঁচুতে উঠল। এত জোরে বলটা লাগল যে, আওয়াজ শোনা গেল একটা। ক্লাইভ লয়েড স্লিপ থেকে এগিয়ে এসে হাত ঝাঁকাল মার্শালের। মার্শাল যখন বোলিং মার্কে ফিরে যাচ্ছে, কভার থেকে এগিয়ে এসে মার্শালের পিঠ চাপড়ে দিল ভিভ রিচার্ডস। আর সমস্ত দর্শক পাগলের মতো চিৎকার করছে উল্লাসে। তখন সানি কী করছিল? আমি দৌড়ে এগিয়ে গেলাম ওর দিকে— ও হাত তুলে আমাকে থামাল। ইন্ডিয়া টিমের ফিজ়িয়ো ফার্স্ট-এড-বক্স হাতে বাউন্ডারি পেরিয়ে ঢুকে পড়েছে, সানির দিকে দৌড়চ্ছে, সানি হাতের ইশারা করে মাঠের বাইরে চলে যেতে বলল তাকে। আধ মিনিট চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে রইল। তার পর আর এক বার নতুন করে গার্ড নিল আম্পায়ারের কাছ থেকে।”
এই পর্যন্ত বলেছিলেন বেঙ্গসরকার। তিনি চুপ করে গেলেন, কারণ খেলা আবার আরম্ভ হয়েছে। আমি সেই তরুণ সাংবাদিককে জিজ্ঞেস করলাম, “আচ্ছা, বেঙ্গসরকার যখন ঘুরে বললেন, উনি নন স্ট্রাইকার’স এন্ডে দাঁড়িয়ে সাড়ে চার হাজার থেকে পাঁচ হাজার রান সানিকে করতে দেখেছেন, তখন প্রেস বক্সে বাকি সবাই চুপ করে গিয়েছিল কি?”
তরুণটি অবাক হয়ে আমাকে প্রশ্ন করে, “হ্যাঁ তাই তো! কিন্তু আপনি কী করে বুঝলেন?”
আমি বললাম, “বেঙ্গসরকারের বাক্যটি থেকে বাকি সকলের মনে পড়ল, এই লোকটি একশোটিরও বেশি টেস্ট ম্যাচ খেলেছে এবং ৬৮৬৮ টেস্ট রান আছে এই ব্যক্তির, যা নিশ্চয়ই ওই প্রেস বক্সে উপস্থিত আর কারও ছিল না। এবং এটাও নিশ্চয়ই কারও কারও মনে পড়ল যে, এই লোকটি ভারতের অধিনায়কত্বও করেছে, তাই সকলেই চুপ করে যাবে এটা আমি অনুমান করে নিতে পারছি।”
আমরা কাগজের কাপে আর এক বার করে কফি নিলাম। তরুণটিকে তার চার তলার ডেস্কে পৌঁছতে হবে, আমাকেও যেতে হবে নিজের দফতরের নির্ধারিত আসনে। তবুও আমরা গল্পটা ছাড়তে পারছি না। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, “তুমি কি জানো, গাওস্কর সেই ইনিংসে কতরান করেছিলেন?”
ছেলেটি বলল, “না, সেটা তো আর সে দিন বেঙ্গসরকার বলেননি।”
আমি জানি, ওই ইনিংসে গাওস্করের রান কত ছিল। ১৪৭ নট আউট। জানি, কারণ ১৯৮৩ সালের মার্চে জর্জটাউনে এই ম্যাচ খেলা হয়। ফলে দর্শকরা ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান। আর আমি, ১৯৭১-এ গাওস্করের আবির্ভাবের সময় থেকে তাঁর প্রতিটি স্কোর টুকে রাখতাম। গাওস্কর ১৪৭ নট আউট থাকা অবস্থায় ভারত ইনিংস ডিক্লেয়ার করে দেয়। অর্থাৎ ওই ইনিংসে গাওস্করকে আউট করা যায়নি। পরে একটি পুরনো ইংরেজি পত্রিকায় (দৈনিক নয়) মার্শালের ওই আঘাতের পর গাওস্করের খেলার বিবরণও পেয়েছিলাম। তিনটি বল ওই ওভারে তখনও বাকি ছিল। তিনটি বলই ব্লক করেছিলেন গাওস্কর। অর্থাৎ আহত হওয়ার পরও, বোলারকে তাৎক্ষণিক উপযুক্ত শিক্ষা দেওয়ার প্রবৃত্তি বর্জন করে তিনি মনঃসংযোগ করেছিলেন তাঁর ব্যাটিংয়ের ভিত্তি দৃঢ় করবার জন্য। এবং তা পেরেওছিলেন। ১৪৭ নট আউট তার প্রমাণ। শরীরে আঘাত করে সতীর্থদের বাহবা পেয়েছিলেন মার্শাল, কিন্তু ওই ইনিংসে গাওস্করকে আউট করা যায়নি। সাহিত্যজগতে ব্যক্তিগত আক্রমণের প্রত্যুত্তর না দেওয়ার শিক্ষা গাওস্করের ওই ইনিংসটিথেকে পেয়েছিলাম।
*****
এসে পড়ল গাওস্করের শেষ টেস্ট ইনিংস। সেই ইনিংসের পরদিন আনন্দবাজারে মতি নন্দী লিখলেন, “তিনি পাহাড়ের মতোই দাঁড়িয়েছিলেন ইমরান খানের স্বপ্নকে আড়াল করে। একে একে সাত জন সঙ্গীকে বিদায় নিতে দেখলেন।... গাওস্কর তৃতীয় দিন একটা কুড়ি থেকে চতুর্থ দিন একটা দশ পর্যন্ত ব্যাটিংয়ে একবার মাত্র মনঃসংযোগ হারিয়েছেন, যখন ইকবাল কাশিমের প্রচণ্ডভাবে ঘোরানো ও লাফিয়ে ওঠা বলের গতিপথ থেকে ব্যাট সরাতে এক সেকেন্ডের ভগ্নাংশ দেরি করেছিলেন। স্লিপে রিজ়ওয়ান ক্যাচটা নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পাকিস্তান জেনে যায়, তারা জিতে গেছে।” এই লেখাতেই মতি নন্দী জানিয়েছেন, “পিচে কয়েক মেগাটন স্পিন ভরে রাখা আছে, বল লাফাবে এবং নিচু হবে।” এর প্রমাণ, পাকিস্তান প্রথম ইনিংসে ১৪৫ করে, ভারত ১১৬। সেই পিচে ৩২৩ মিনিট খেলে ২৬৬ বলে ৯৬ রান করে গাওস্কর যখন ফিরছেন, তার রিপোর্ট এই রকম, “নিজের উপর রাগ আর হতাশায় মাথা নাড়াতে নাড়াতে গাওস্কর ফিরে আসছেন, তখন উপরের গ্যালারি থেকে রাশি রাশি গাঁদা ফুল ঝরে পড়ল তাঁর মাথায়।”
প্রবাদপ্রতিম: গুন্ডাপ্পা বিশ্বনাথ এবং (ডান দিকে) দিলীপ বেঙ্গসরকার। ছবি: গেটি ইমেজেস।
এই রিপোর্ট ১৯৮৭ সালের মার্চে লেখা। তার ৩৫ বছর পর আর এক বাঙালি সাংবাদিক প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে লিখেছেন, তার পরবর্তী মুহূর্তে ড্রেসিংরুমে বসে থাকা গাওস্করের স্তব্ধ অবস্থার কথা। পাকিস্তান ১৬ রানে জিতে গেছে ম্যাচ ও সেই সঙ্গে সিরিজ়ও। গাওস্কর একটা প্যাড খুলে রেখেছেন, দ্বিতীয়টি খুলছেন মাথা নিচু করে। ঢুকলেন জাভেদ মিয়াঁদাদ। বললেন, “সানিভাই, মুঝে মাফ কর দেনা।”
গাওস্কর তাঁর বিস্মিত মুখ তুললেন, “মাফ করে দেঙ্গে? তুমকো? কিস লিয়ে?”
মিয়াঁদাদ বলছেন, “ম্যায়নে তুমকো ফিল্ড মে বহোত সারা গালি দিয়া। ফিল্ড মে তো অ্যায়সাহি করনা পড়তা হ্যায়। ম্যায় মাফি মাংতা হুঁ সানিভাই।”
গাওস্করের উত্তর, “তুমনে গালি দিয়া মুঝে? ম্যায় তো কুছ সুনা নেহি!”
যে পিচে কয়েক মেগাটন স্পিন ভরে রাখা আছে, সেখানে ৩২৩ মিনিট দাঁড়িয়ে থেকে দলকে জয়ের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে গেলে যে প্রচণ্ড মনোনিবেশ দরকার, সেখানে স্লিপ থেকে বলা কারও গালিগালাজ কানে ঢোকার কথা নয়। আমি শিখলাম, যদি সত্যিই একাগ্র মনে লেখার চেষ্টা করি, তবে সেই চেষ্টার মনঃসংযোগই যেন আমাকে ঘিরে থাকে। তা হলে বাইরের অপ্রয়োজনীয় কথা আর আমার কানে ঢুকবে না।
১৯৮৭ সালের মার্চে মতি নন্দীর উক্ত রিপোর্ট থেকে আরও দু’-এক লাইন বলি, “উইকেটে ১৯ মিনিট কাটিয়ে প্রথম, ৪৭ মিনিট পর দ্বিতীয় রান নিলেন গাওস্কর। খবরটা দিলাম, শুধু উইকেট এবং বোলিং কেমন ছিল তা অনুমান করার জন্য। আর কী পরিমাণ ধৈর্য তখন গাওস্করের ব্যাটিংয়ে কাজ করছে, সে কথাও বোঝাতে। বল মারার থেকেও বেশি গুরুত্ব দিচ্ছিলেন বল ছাড়ায়।”
এই ম্যাচের চার বছর দু’মাস আগে, ফয়সলাবাদে পাকিস্তান-ভারত মুখোমুখি। আগের টেস্টে ইনিংস ও ৩৬ রানে হেরেছে ভারত। পরের টেস্টেও ইনিংস ও ১১৯ রানে হারবে। এই টেস্টে যখন ভারতের প্রথম ইনিংস শুরু হয়েছে, আমি তখন একটা সাদা-কালো টিভির সামনে বসে আছি। নিজেদের টিভি নেই। পাশের বাড়ির বাবু-মিলুদের সঙ্গে আমাদের দুই ভাইকেও নিজের সন্তানের মতোই দেখতেন ওদের মা। আমি যখন খুশি খেলা দেখতে ওদের টিভির সামনে গিয়ে বসে পড়তাম। মাসিমা চালিয়ে দিতেন। এখন চা-বিরতি। দু’জন কমেন্টেটর একটি বিশেষ বল বার বার রিপ্লে করে দেখাচ্ছিলেন আর আলোচনা করছিলেন তাই নিয়ে। দু’জনের একজন আসিফ ইকবাল, অন্য জন মনসুর আলি খান পটৌডী। যে ডেলিভারির রিপ্লে তাঁরা বার বার দেখাচ্ছেন, সে-বলে কোনও উইকেট পড়েনি, কোনও ক্যাচও ওঠেনি। বোলারের নাম সরফরাজ় নওয়াজ়। তাঁর একটি দেরিতে-ভাঙা- আউটগোয়িং বল তাঁরা দেখাচ্ছিলেন বিস্ময়াভিভূত ভাবে। বিস্ময় ও রিপ্লে দেখানোর কারণ হল, যিনি ব্যাট করছিলেন, তিনি কী ভাবে ওই বলটি থেকে ব্যাট সরিয়ে নিচ্ছেন! তিনটি স্লিপ লাফিয়ে উঠল, উইকেটকিপার ওয়াসিম বারি-সহ। কিন্তু এটাকে ‘বিট’ করা বলতে রাজি নন ভারত ও পাকিস্তানের দুই প্রাক্তন অধিনায়ক। আসিফ ও পটৌডীর মতে এটা ব্যাটসম্যানের দেওয়া ‘জাজমেন্ট’। এ রকম ভাবে বল ছাড়াটা নতুন ক্রিকেটারদের শেখা দরকার, বলছিলেন আসিফ। অথচ এই ব্যাটসম্যান কিন্তু মাত্র ১২ রানে তার আগেই আউট হয়ে গেছেন। হ্যাঁ, এই ব্যাটসম্যান গাওস্কর। বল মারার থেকে বল ছাড়ার গুরুত্ব যে ব্যাটসম্যানের কাছে অত্যন্ত প্রয়োজনীয়, তা গাওস্কর জানতেন। ১৯৮৩ সালের এই টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে তিনি প্রথম বল থেকে খেলতে শুরু করে ১২৭ নট আউট থেকে যান ও ভারতকে আরও একটি ইনিংস-ডিফিটের লজ্জা থেকে রক্ষা করেন। ‘ক্যারিয়িং দ্য ব্যাট’ যেন নয়, ‘ক্যারিয়িং দ্য লাইফ’ মনে হয়েছিল আমার! সাত ঘণ্টা তেরো মিনিট ক্রিজে দাঁড়িয়ে। শেষ ৩৮ মিনিট সঙ্গী একাদশ ব্যাটসম্যান মনিন্দর সিংহকে নিয়ে গাওস্কর ৮৯ থেকে ১২৭-এ পৌঁছেছিলেন। যেখানে মনিন্দরের অবদান মাত্র ২।
জীবনের ক্ষেত্রেও এবং লেখার ক্ষেত্রেও কখনও কখনও ছেড়ে দেওয়াটা বেশি জরুরি হয়ে পড়ে গ্রহণ করার চেয়ে। এটি গাওস্করের কাছ থেকেই শিখেছি সেই ১৯৮৩ সালে। ওই বছরেই গাওস্করের দেওয়া যে সাক্ষাৎকারের কথা পূর্বে বলেছি, সেখানে তিনি এ কথাও বলেছিলেন, “আমার বারো বছর টেস্ট খেলা হয়ে গেল। এখন রিফ্লেক্স আগের থেকে কমেছে।” (একই কথা গাওস্কর বলেছিলেন তাঁর ঊনত্রিশ নম্বর সেঞ্চুরি পাওয়ার পর টেলিভিশন ইন্টারভিউয়ে, ‘এখন আমার অফ স্টাম্পটা কোথায় বুঝতে মাঝে মাঝে সমস্যা হয়।’)
বলেছিলেন, “আগে সেশন ভাগ করে করে ইনিংস তৈরি করতাম। লাঞ্চ পর্যন্ত একটা সেশন। লাঞ্চ থেকে টি-টাইম আর একটা সেশন। টি-এর পর আর একটা। এখন ১০ ওভার, ১০ ওভার, টার্গেট রেখে খেলি। প্রথম ১০ ওভার হয়ে যাওয়ার পর পরের ১০ ওভারের জন্য মনঃসংযোগ করি।”
এটা বলেছেন ১৯৮৩-তে। তার পরও তিনি আরও পাঁচটি শত রান ও একটি দ্বিশতরান পাবেন। ১২১ ও ২৩৬ নট আউট (ওয়েস্ট ইন্ডিজ়), ১৬৬ নট আউট, ১৭২ ও ১০৩ (অস্ট্রেলিয়া), ১৭৬ (শ্রীলঙ্কা)। এ ছাড়াও জীবনের শেষ টেস্ট ইনিংসে ৯৬, যা কোনও দ্বিশতরানের চেয়েও কঠিন কাজ। বলা দরকার, এর মধ্যে ১২১ রানের ইনিংসটি দশ ওভারেরটার্গেট রেখে তৈরি করা নয়। এখানে শতরান এসেছিল ৯৪ বলে।
এই দশ ওভারের পর দশ ওভার টার্গেট রেখে ইনিংস তৈরি করার বিষয়টি আমি কী ভাবে গ্রহণ করেছি? আগে আমার প্রতি বছর একটি করে পূর্ণাঙ্গ কাব্যগ্রন্থ বেরোত। তাতে অভ্যস্ত ছিলাম তিরিশ বছরেরও বেশি। আমার বয়স যখন সত্তরের কাছে এসে পৌঁছোল, তখন গত দু’বছর ধরে আমি প্রকাশ করে চললাম ছোট ছোট কবিতাপুস্তিকা। বিভিন্ন লিটল ম্যাগের সম্পাদকরাই এ সব প্রকাশ করতে লাগলেন। এগুলির পৃষ্ঠাসংখ্যা কখনও আট, কখনও কুড়ি, কখনও চব্বিশ, বত্রিশ কখনও বা। অর্থাৎ বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে অপেক্ষাকৃত ছোট পরিসরের বাঁধনে নিয়ন্ত্রিত রাখার চেষ্টায় পুস্তিকার আশ্রয় নেওয়া। এই শিক্ষাও গাওস্করের কাছথেকেই পেয়েছিলাম।
*****
গাওস্কর নিজে লিখতেও পারেন। তাঁর সব বই আছে আমার কাছে। ১৯৮৩ সালে প্রকাশিত ‘আইডল’ নামক বইটি অবশ্য তিনি নিজে লেখেননি। তাঁর বলা কথা লিখেছেন অন্য সাংবাদিক। সে-বইয়ে গাওস্কর, অন্যান্য ক্রিকেটারের গুণবাচকদিকগুলি তুলে ধরেছেন সপ্রশংস ভাবে। যাঁরা টেস্ট খেলেননি, তাঁদের কথাও বলেছেন অত্যন্ত শ্রদ্ধার সঙ্গে। যেমন পি শিভালকার। তারও সাত বছর আগে, ১৯৭৬ সালে বিশ্বনাথের একটিইনিংসের প্রতি তাঁর প্রাণভরা মুগ্ধতা জানিয়েছিলেন গাওস্কর। নন-স্ট্রাইকার হিসেবে সেখানে তিনি দেখেছেন কী ভাবে জন স্নো ও ডেরেক আন্ডারউডকে ইংল্যান্ডের কুয়াশাভরা আবহাওয়ায় খেলেছেন বিশ্বনাথ। তার উচ্ছ্বসিত বর্ণনা পাওয়া যায় গাওস্করের লেখায়। বিশ্বনাথ ৫৮ করেছিলেন। সে ম্যাচে নিজের স্কোর এক বারও বলেননি গাওস্কর। তিনি করেন ১০১।
কবিতা বিষয়ে আলোচনা লেখার আহ্বান একটি চিঠির মাধ্যমে ১৯৯৩ সালে আমাকে জানালেন ‘দেশ’-সম্পাদক সাগরময় ঘোষ— লিখলেন একটি ‘তারিফি আলোচনা’ তিনি আশা করছেন আমার কাছে, আমার পঠিত কোনও কাব্যগ্রন্থ বিষয়ে। আমার মনে পড়ল ‘আইডল’ বইটির কথা। সেই ১৯৯৩ থেকে ‘দেশ’ পত্রিকায় আরম্ভ করলাম বাংলা কবিতার স্রষ্টাদের নিয়ে তাঁদের বিষয়ে গুণবাচক আলোচনা। না, সমালোচক আমি হতে চাইনি। চেয়েছি বাঙালি কবিদের লেখার আশ্চর্য কাব্যগুণ সাধারণ ভাষায় সাধারণ পাঠকের কাছে তুলে ধরতে। ১৯৯৩ থেকে ২০২৩, এই ৩০ বছর আমি সে কাজ করেছি, প্রথমে ‘দেশ’-এ, পরে অন্য কাগজে, শেষে ওয়েব ম্যাগাজ়িনে। গাওস্করের ‘আইডল’ বইয়ের পিছনে যে গুণপনা স্বীকারের মানসিকতা, সেইটিই আমাকে পথ দেখিয়েছে। আমার চেয়ে ৩০-৪০ বছর পরে যাঁরা লিখতে এসেছেন, তাঁদের কবিতা নিয়েও আমি সশ্রদ্ধ আলোচনা করেছি। ঘটনাচক্রে, আমি ২০-২৫ বছর আগে জন্মে গেছি বলে, পরে জন্মানো কবি-লেখকদের শ্রদ্ধা করতে পারব না, শুধু পিঠ চাপড়ে দিলেই চলবে, এই বিশ্বাসে কখনও ভর রাখিনি। আমার দুই দশক পরের কবি যশোধরা রায়চৌধুরীকে নিয়ে আমি স্বতন্ত্র বই লিখেছি ‘কবিতা: যশোধরা’ নামে। এ বিষয়েও আমি উদ্দীপনা পেয়েছি ক্রিকেট থেকেই। গাওস্কর নন, এ ক্ষেত্রে আমার শিক্ষাগুরু ট্রেভর বেইলি। ইংল্যান্ডের অলরাউন্ডার বেইলি টেস্টে ১০০০-এর বেশি রান এবং ১০০-র বেশি উইকেটের মালিক। বেইলি যে-সিরিজ়ে অবসর নিতে বাধ্য হন, সেই সিরিজ়ে টেস্ট অভিষেক ঘটে এক তরুণের। তার নাম গারফিল্ড সোবার্স। তিনি পরে ‘স্যর’ উপাধি পান। বেইলি পাননি। কিন্তু তিনি একটি বই লিখেছেন, যার নাম ‘স্যর গ্যারি’— সোবার্সের ক্রীড়াসৌকর্যের প্রশংসায় ভরা। বইটির ভূমিকা লেখেন রিচি বেনো। কবিতা ও কবিতা আলোচনা বিষয়ে যে-মন তৈরি করা দরকার, তার অনেকটাই আমি ক্রিকেট থেকে শিখতে চেষ্টা করেছি।
আমার যখন ২৫ বছর বয়স, তখন গাওস্কর এক বার বলেছিলেন, “লোকে মনে রাখে না, ওপেনার যখন ক্রিজ়ে যায় তখন স্কোর বোর্ডে দলের রান থাকে শূন্য। শূন্য থেকে আরম্ভ করতে হয় তাকে।” সেই কথা থেকে আমি শিখেছিলাম, একটি নতুন কাব্যগ্রন্থ লেখা শুরু করতে হয় শূন্য থেকেই। সেই শিক্ষা প্রয়োগ করার চেষ্টা করেছি আজীবন, ঠিকই, তবু আজ বুঝি সেই চেষ্টা সার্থক হতে পারেনি।