Bengali Feature

পাত্রপক্ষের পণের দাবি শুনে বিরক্ত মেয়ের মা

সে যুগে এ ঘটনা বিরল। মেয়ের নাম বেলা, মা রবীন্দ্রপত্নী মৃণালিনী দেবী। ভালবাসতেন মার্ক টোয়েনের লেখা। অনুবাদ শুরু করেছিলেন মহাভারতের শান্তিপর্ব, ঈশোপনিষদ-এর। শান্তিনিকেতনের জন্য সব গয়না তুলে দেন স্বামীর হাতে। আশ্রমের ছেলেদের সন্তানের মতো দেখতেন। গত বুধবার সার্ধশতবর্ষের সূচনা হল কবির ‘ভাই ছুটি’-র।

Advertisement

দীপঙ্কর ভট্টাচার্য

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ মার্চ ২০২৩ ০৯:১৩
Share:

যুগল: মৃণালিনী ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। কবি প্রথমে ‘ভাই ছোট গিন্নি’ বলে সম্বোধন করতেন তাঁকে ।

ন’বছর ন’মাসের একরত্তি মেয়ে ফুলি। শরীর স্বাস্থ্যে বেশ দুর্বল। যশোর থেকে কলকাতায় আনা হয়েছে তাকে, বিয়ে দিতে। ৯ ডিসেম্বর ১৮৮৩। পাত্রের বয়স বাইশ বছর সাত মাস। তত দিনে তিনি বিখ্যাত। কবি, লেখক। জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির রবীন্দ্রনাথ। ছোট্ট ফুলি সে সবের কতটুকু জানে! রসিকতা করে বন্ধুদের নিমন্ত্রণের কার্ড নিজে লিখেছিলেন পাত্র— ‘আমার পরমাত্মীয় শ্রীমান রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শুভ বিবাহ হইবেক।…’ বাসরঘরে স্বামীর কাণ্ডকারখানা দেখে ফুলি তো তটস্থ! একটু আগে নিজেরই বাড়ির পশ্চিম বারান্দা ঘুরে সুদর্শন বর এসেছেন বিয়ের বাসরে। ভাঁড়কুলো খেলার স্ত্রী-আচারে উল্টোপাল্টা শুরু করলেন তিনি। তার পর কচি বৌয়ের দিকে তাকিয়ে গান ধরলেন— ‘আ মরি লাবণ্যময়ী / কে ও স্থির সৌদামিনী…’

Advertisement

যশোরের দক্ষিণডিহির ফুলতলা গ্রামের বেণীমাধব রায়চৌধুরী জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির সেরেস্তার কর্মী। দাক্ষায়ণী তাঁর স্ত্রী। তাঁদের প্রথম সন্তান ফুলির জন্ম ১২৮০ বঙ্গাব্দের ফাল্গুনে (১ মার্চ ১৮৭৪, মতান্তরে ১৮৭৩)। ফুলির ভাল নাম ভবতারিণী। বিয়ের পর তাঁর নাম বদলে হল মৃণালিনী। সম্ভবত রবীন্দ্রনাথের প্রিয় নলিনী নামের প্রতিশব্দ থেকে কিংবা ‘যৌতুক কি কৌতুক’ কাব্যে দ্বিজেন্দ্রনাথের ‘স্বর্ণ-মৃণালিনী হোক’ আর্শীবাণী থেকে নামকরণ। মৈত্রেয়ী দেবীকে রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, “আমার বিয়ের কোনও গল্প নেই। বৌঠানরা যখন বড় বেশি পীড়াপীড়ি শুরু করলেন, আমি বললুম, তোমরা যা হয় কর, আমার কোনও মতামত নেই।… জানো, একবার আমার একটি বিদেশি অর্থাৎ অন্য Province-এর মেয়ের সঙ্গে বিয়ের কথা হয়েছিল। সে এক পয়সাওয়ালা লোকের মেয়ে, জমিদার আর কি, বড় গোছের। সাত লক্ষ টাকার উত্তরাধিকারিণী সে।”

বিয়ের আগে রবীন্দ্রনাথ কারোয়ার ভ্রমণে যান। কারোয়ার থেকে তিনি কলকাতায় ফিরে এলেন নভেম্বরের শেষ দিকে । ডিসেম্বরের ৯ তারিখ হল বিয়ে। বাসর রাতের সেই ‘লাবণ্যময়ী’ আস্তে আস্তে রবির কল্যাণী হয়ে ওঠেন, যথার্থ সহধর্মিণীও। ফুলতলার ভবতারিণীকে ক্রমে তৈরি করে নেন রবীন্দ্রনাথ। মহর্ষিও তাঁর এই ছোট পুত্রবধূকে বিশেষ স্নেহ করতেন। তাঁর জন্য আয়োজন হল ইংরেজি শিক্ষার। ১৮৮৪-র ১ মার্চ মৃণালিনী ইংরেজি শিক্ষার জন্য লোরেটো স্কুলে ভর্তি হন। ইংরেজি শিক্ষার পর পণ্ডিত হেমচন্দ্র বিদ্যারত্নের কাছে তাঁর সংস্কৃত শিক্ষারও ব্যবস্থা হয়। লোরেটোতে পড়ার সময় মৃণালিনী থাকতেন ২৩৭ লোয়ার সার্কুলার রোডে জ্ঞানদানন্দিনীর কাছে। সমীর সেনগুপ্ত তাঁর ‘রবীন্দ্রনাথের আত্মীয়স্বজন’ বইয়ে জানাচ্ছেন, “এখানেই (জ্ঞানদানন্দিনীর বাড়িতে) তিনি এ সময় বেশ কিছুদিন থেকেছেন। মাঝে মাঝে জোড়াসাঁকোর বাড়িতে এসেছেন, কিন্তু স্থায়ীভাবে বাস করতে আরম্ভ করলেন আরও পরে— বাস্তবিক, কাদম্বরী দেবীর মৃত্যুর (২১ এপ্রিল ১৮৮৪) পর থেকে।” লোরেটো স্কুলে অন্য ছাত্রীদের সঙ্গে নয়, তাঁর পড়ার আলাদা ব্যবস্থা করা হয়েছিল। ছিল সঙ্গীত শিক্ষার আয়োজন। মার্ক টোয়েনের লেখা খুব প্রিয় ছিল।

Advertisement

একটু একটু করে নারী হয়ে উঠেছেন ছোট্ট ফুলি। পরিবারের প্রত্যেকের সঙ্গে বেড়েছে আত্মীয়তার টান। পারিবারিক স্মৃতিকথা জানাচ্ছে সে সব প্রসঙ্গ। রবীন্দ্রনাথের ভ্রাতুষ্পুত্র সুধীন্দ্রনাথের স্ত্রী চারুবালা দেবীকে লেখা একটি চিঠিতে সেই সরস আন্তরিকতা ধরা পড়ে— “তোমার সুন্দর মেয়ে হয়েছে বলে বুঝি আমাকে ভয়ে খবর দাওনি পাছে আমি হিংসে করি! তার মাথায় চুল হয়েছে শুনে পর্য্যন্ত কুন্তলীন মাখতে আরম্ভ করেছি তোমার মেয়ে মাথাভরা চুল নিয়ে আমার ন্যাড়া মাথা দেখে হাসবে সে আমার কিছুতেই সহ্য হবে না।”

ব্যক্তিত্বেও অটল ছিলেন তিনি। শান্তিনিকেতন প্রতিষ্ঠাকালে নীরবে নিজের সমস্ত গয়না তুলে দিয়েছিলেন স্বামীর হাতে। বড় মেয়ে বেলার বিয়েতে পাত্রপক্ষের পণ চাওয়া নিয়ে বিরক্ত হয়েছিলেন মৃণালিনী। রবীন্দ্রনাথ একটি চিঠিতে প্রিয়নাথ সেনকে লিখেছিলেন— “তিনি কন্যার মাতা হইয়াও এ বিবাহে যথেষ্ট উৎসাহী হন নাই।” রান্নায় পটু ছিলেন। আশ্রমের ছেলেদের নিজের সন্তানের মতো দেখতেন। তাদের রেঁধে খাওয়াতেন।

বিয়ের তিন বছরের মাথায়, বছর সাড়ে বারোর মৃণালিনী মা হলেন। ১৮৮৬-র ২৫ অক্টোবর রবীন্দ্রনাথ-মৃণালিনীর প্রথম সন্তান বেলা, অর্থাৎ মাধুরীলতার জন্ম। রবীন্দ্রনাথ তখন পঁচিশে। দু’বছরের মাথায় ১৮৮৮-র বসন্তে রবীন্দ্রনাথ-মৃণালিনী প্রথম সুযোগ পেলেন একান্ত-ভ্রমণের। ছোট্ট বেলাকে নিয়ে তাঁরা গেলেন গাজিপুরে। এর আগে ’৮৭-র সেপ্টেম্বরে দার্জিলিং এবং ’৮৫-র শরতে সোলাপুর ভ্রমণকালে পরিবারের অন্যরাও ছিলেন। সোলাপুর বিয়ের পর তাঁদের প্রথম ভ্রমণ। সঙ্গী ছিলেন জ্ঞানদানন্দিনী, ইন্দিরা দেবী-সহ অনেকে। ’৮৫-র শরতেই লেখা ‘কড়ি ও কোমল’-এর কবিতাগুলি, যেখানে দেহজ- অনুষঙ্গের নানা সংরাগ ব্যক্ত। কবিতাগুলির শিরোনামে বিধৃত ‘স্তন’, ‘চুম্বন’,’বিবসনা’, ‘দেহের মিলন’ প্রভৃতি শব্দ। আর গাজিপুর দিল দু’জনের নিভৃত সংসার, সঙ্গে আদরের ছোট্ট বেলা। মাস সাতেক গাজিপুরে নিভৃত সংসার-যাপন শেষে তাঁরা ফিরলেন সেপ্টেম্বরে। আর নভেম্বরে জন্ম হল রথীন্দ্রনাথের। গাজিপুর দিল ‘মানসী’-র কবিতাগুলি। পরের বছর দুই সন্তান নিয়ে তাঁদের শিলাইদহ যাত্রা। শিলাইদহের বোটের জীবন আরও নিবিড় করে তুলল তাঁদের দাম্পত্য। ‘ছিন্নপত্র’-এ আছে এখানেই এক সন্ধ্যায় মৃণালিনীর হারিয়ে যাওয়া, ভয়, শেষ পর্যন্ত স্বস্তির কথা। ১৮৮৯-এর শরতে, শিলাইদহ যাত্রার ঠিক আগেই সদ্য প্রকাশিত ‘রাজা ও রাণী’ মঞ্চস্থ হল সত্যেন্দ্রনাথের বির্জিতলার বাড়িতে। এই নাটকে ‘নারায়ণী’ চরিত্রে অসাধারণ অভিনয় করেন মৃণালিনী। পদ্মা বোটে মাসখানেক কাটিয়ে রবীন্দ্রনাথ ফিরে এলেন কলকাতায়। সেখান থেকে তাঁর বিলেত যাত্রা। বম্বে থেকে ‘শ্যাম’ নামক জাহাজ ছাড়ল বিলেতের পথে, ১৮৯০-এর ২২ অগস্ট। এ বারের বিলেত যাত্রা প্রকাশ্যে আনল রবি আর তাঁর ‘ছুটি’র গভীর প্রেম। দু’জনের বুকের কথা প্রকাশ পেল চিঠিতে। আমরা নতুন করে পেলাম রক্তমাংসের মানুষ রবীন্দ্রনাথকে।

জাহাজ থেকে লেখা প্রথম চিঠি ২৯ অগস্ট,১৮৯০— জাহাজ যাত্রায় অসুস্থ হয়ে কবি একেবারে কাহিল। এরই মধ্যে তাঁর মনে হল— “আমার আত্মাটা শরীর ছেড়ে বেরিয়ে যোড়াসাঁকোয় গেছে। একটা বড়ো খাটে একধারে তুমি শুয়ে রয়েছ আর তোমার পাশে বেলি খোকা শুয়ে। আমি তোমাকে একটু আধটু আদর করলুম আর বল্লুম ছোট বৌ মনে রেখো আজ রবিবার রাত্তিরে শরীর ছেড়ে বেরিয়ে তোমার সঙ্গে দেখা করে গেলুম— বিলেত থেকে ফিরে গিয়ে জিজ্ঞাসা করব তুমি আমাকে দেখতে পেয়ে ছিলে কি না!” চিঠির শেষে আছে— “বাচ্চাদের আমার হয়ে অনেক হামি দিয়ো—আর তুমিও নিও।” ৬ সেপ্টেম্বর ম্যাসালিয়া জাহাজ থেকে লেখা চিঠিটিতে সমুদ্রপথের আশ্চর্য বর্ণনা দিয়ে লিখেছেন, “আমাদের জাহাজটা এখন ডানদিকে গ্রীস আর বাঁদিকে একটা দ্বীপের মাঝখান দিয়ে চলেছে।… তোমার দেখতে ইচ্ছে করচে না ছুট্‌কি? তোমাকেও একদিন এই পথ দিয়ে আসতে হবে তা জান?” চিঠি শুরু হয়েছিল ‘ভাই ছোট গিন্নি’ সম্বোধনে। আবেগে কখন তা ‘ছুট্‌কি’ হয়ে গেছে! এ চিঠির শেষেও আছে, সকলকে ‘হামি’দেওয়ার কথা।

বিলেতে মন টিকল না তাঁর। ৯ অক্টোবর ১৮৯০ তারিখে টেমস জাহাজে উঠলেন। ২ নভেম্বর পৌঁছলেন বম্বে। পরদিন কলকাতামুখী গাড়িতে উঠলেন। ১৮৯১-এর একটি চিঠিতে আছে, সাজাদপুরে এক গণতকারের কথা। গণতকার তাঁর আয়ু মেরেকেটে ৬০-৬২ বছর বলে নিদান দিয়েছেন। ‘ভাই ছুটি’কে তাঁর রসিক স্বামী রবি এ বিষয়ে লিখেছেন— “যা হোক তুমি তাই নিয়ে যেন বেশি ভেবো না। এখনো কিছু না হোক ত্রিশ চল্লিশ বৎসর আমার সংসর্গ পেতে পারবে। ততদিনে সম্পূর্ণ বিরক্ত ধরে না গেলে বাঁচি।” আবার কোনও চিঠিতে আছে অভিমান— “আজ থেকে নিয়ম করলুম চিঠির উত্তর না পেলে আমি চিঠি লিখব না।” তখন কি আর জানতেন, অকালেই জীবন থেকে ছুটি নিয়ে নেবেন তাঁর ‘ভাই ছুটি’!

২৩ নভেম্বর ১৯০২ (৭ অগ্রহায়ণ ১৩০৯)। জোড়াসাঁকো মহর্ষি ভবনে দোতলার পশ্চিমের ঘর। রাত নেমেছে। তিনি চলে যাচ্ছেন। পাশে তাঁর স্বামী, রবীন্দ্রনাথ। চোখে রাত-জাগা ক্লান্তি, হাতে তালপাতার পাখা। শেষ সময়ে যে বাতাস কমে আসে চার পাশে, বড় অস্থিরতা নামে শরীরে! স্বামী তাই ক্লান্তিহীন, পাখা হাতে। নিষ্ঠুর সে রাত। রবীন্দ্রনাথ বুঝলেন। বন্ধ হল হাতপাখা। খানিক নিঃস্তব্ধ তিনি। তার পর চলে গেলেন ছাদে, একলা। আপন নিভৃতি খুঁজে নিতে। পরদিন, রথীন্দ্রনাথের হাতে মায়ের সর্বদা-ব্যবহৃত চটিজুতো দিয়ে বললেন, “এটা তোর কাছে রেখে দিস।”

ছাব্বিশ দিন পর রবীন্দ্রনাথ লিখলেন— “তোমার সকল কথা বল নাই, পারনি বলিতে/ আপনারে খর্ব করি রেখেছিলে তুমি, হে লজ্জিতে…” কবিতাটি ঠাঁই পায় ‘স্মরণ’ কাব্যগ্রন্থে। ২৭টি কবিতা নিয়ে যে বইয়ের লেখাগুলি তৈরি হতে শুরু করেছিল ছোট বৌয়ের প্রয়াণের রাত থেকে। তাই বইটির উৎসর্গপত্রে লেখা রইল শুধু ওই মৃত্যুদিনটি— ৭ অগ্রহায়ণ ১৩০৯। রবীন্দ্রনাথ তখন একচল্লিশ। তাঁর আক্ষেপ— “হে কল্যাণী, গেলে যদি, গেলে মোর আগে,/ মোর লাগি কোথাও কি দুটি স্নিগ্ধ করে/ রাখিবে পাতিয়া শয্যা চিরসন্ধ্যা-তরে?”

কমবেশি উনিশ বছরের দাম্পত্য-জীবন। ফুলতলার ফুলি কলকাতায় এসেছিলেন অগ্রহায়ণের শীতে। তখন তাঁর বয়স দশ বছরও নয়। ঊনত্রিশ বছর বয়সে যখন চলে যাচ্ছেন, কলকাতায় তখনও শীত। রেখে গেলেন শান্তিনিকেতন ঘিরে স্বপ্ন। থাকল বেলা-রথী-রাণী-মীরা-শমী। ওদের নিঃসঙ্গ বাবা। পড়ে থাকল ভরা সংসার। শিলাইদহে থাকাকালীন স্বামীর আগ্রহে অনেক রূপকথা সংগ্রহ করেছিলেন মৃণালিনী দেবী। শুরু করেছিলেন মহাভারতের শান্তিপর্ব, ঈশোপনিষদ-এর অনুবাদ। পড়ে রইল সে সবও।

কী ভাবে মৃত্যু হল তাঁর? হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় ‘কবির কথা’ (১৩৬১)-য় লিখেছেন, শান্তিনিকেতন প্রতিষ্ঠাপর্বে প্রবল পরিশ্রমে তাঁর স্বাস্থ্য ভেঙে পড়ে। তাতেই কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়ে তাঁর মৃত্যু হয়। রথীন্দ্রনাথ ‘পিতৃস্মৃতি’-তে জানিয়েছেন, “আমার এখন সন্দেহ হয় তাঁর অ্যাপেন্ডিসাইটিস হয়েছিল। তখন এ বিষয়ে বিশেষ কিছু জানা ছিল না, অপারেশনের প্রণালীও আবিষ্কৃত হয়নি।” ১২ সেপ্টেম্বর চিকিৎসার জন্য বোলপুর থেকে তাঁকে কলকাতায় আনা হয়। ডাক্তাররা রোগ ধরতে না পারায় কবি হোমিয়োপ্যাথিও করলেন। কিছুতেই সাড়া দিল না রোগীর শরীর!

স্বামীর মতোই শান্তিনিকেতন ছিল তাঁর প্রাণের অংশ। স্ত্রীর মৃত্যুর এক সপ্তাহের মাথায়, হীরেন্দ্রনাথ দত্তকে একটি চিঠিতে রবীন্দ্রনাথ শান্তিনিকেতনে একটি ছাত্রের পড়া-থাকার ভার গ্রহণের অনুরোধ জানান। এক জনের মাসিক খাই-খরচ ১৫ টাকা, বছরে ১৮০ টাকা— “প্রতি বর্ষে অগ্রহায়ণ মাসে এই ১৮০ টাকা বার্ষিক দান পাইবার জন্য আমি সুহৃদ্গণের দ্বারে সমাগত। আপনাকে বলিতে সঙ্কোচ করিব না আমার পরলোকগত পত্নীর কল্যাণ কামনার সঙ্গে আমি এই ভিক্ষাব্রত জড়িত করিয়াছি।” তিনি বিশ্বাস করতেন, ঈশ্বর তাঁকে ‘এই শোকের দ্বার দিয়া মঙ্গলের পথে উত্তীর্ণ করিয়া দিবেন’। ‘স্মরণ’-এর কবিতা তাই অনিবার্য-অকপট হয়ে ওঠে অন্তর্যামীর উদ্দেশে— “তার কাছে যত করেছিনু দোষ,/ যত ঘটেছিল ত্রুটি,/ তোমা-কাছে তার মাগি লব ক্ষমা/ চরণের তলে লুটি।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement