Swadeshi Movement

Swadeshi Movement: পাবনায় স্বদেশি আন্দোলনের উৎস ছিল শক্তিমন্দির

আশুতোষ তখন রডা অস্ত্র আইনে দোষী সাব্যস্ত ফেরারি আসামি। সেই আশুতোষ পুলিশ আর টিকটিকির চোখে ধুলো দিতে গাঁয়েরই কোঠাবাড়ির জঙ্গলে গা ঢাকা দিল।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৫ অগস্ট ২০২১ ০৯:০২
Share:

অগ্নিসাধক: ‘শক্তিমন্দির’-এর প্রাঙ্গণে শরীরচর্চায় ব্যস্ত যুবকরা।

পাবনা জেলার হিমায়েৎপুর গ্রাম। পঞ্চদশ শতকের কাছাকাছি রাজা মানসিংহ এখানে ছাউনি বসিয়েছিলেন। এ অঞ্চলের নাম দিয়েছিলেন হিম্মৎপুর। সেই হিম্মৎপুর আজ লোকমুখে হিমায়েৎপুর। গ্রামের পশ্চিমে বয়ে চলেছে সর্বনাশী পদ্মা। তার গর্ভে অনেকটাই বিলুপ্ত রাজা মানসিংহের কোঠাবাড়ি। গ্রামের মানুষ বলে কোঠাবাড়ির জঙ্গল। ঝোপে-ঝাড়ে ঘেরা এই অজগাঁয়ের ছেলে আশুতোষ রায়কে গ্রামের মানুষ প্রায় ভুলতে বসেছিল। মাঝে মাঝে কেউ কেউ ফিসফাস করে বলাবলি করে, ‘ছেলেটা কী বাউন্ডুলে গো, স্বদেশিদের দলে নাম লেখাল!’ কিন্তু ওই পর্যন্তই। এ নিয়ে কারও খুব বিশেষ মাথাব্যথা নেই। তবে কথাটা মিথ্যে নয়। আশুতোষ তখন রডা অস্ত্র আইনে দোষী সাব্যস্ত ফেরারি আসামি। সেই আশুতোষ পুলিশ আর টিকটিকির চোখে ধুলো দিতে গাঁয়েরই কোঠাবাড়ির জঙ্গলে গা ঢাকা দিল।

Advertisement

নিশাচরের জীবন। চোখে স্বপ্ন, বুকে আগুন। তবু নির্বাসিত জীবনে জুটে গেল দু’জন সঙ্গীও। উজ্জ্বল চনমনে যতীন্দ্রনাথ সাহা আর হরিভূষণ দাশ। তারা আশুতোষের কাছে বুক চিরে রক্ত দিয়ে স্বদেশমন্ত্রে দীক্ষা নিল। চুপিচুপি নেমে পড়ল গ্রাম গড়ার কাজে। দেশপ্রেমের বোধ জাগিয়ে তোলবার জন্য গোপালকৃষ্ণ গোখেল লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা করে গ্রামের তরুণ সমাজকে কাছাকাছি নিয়ে এলেন। আশুতোষ বিপ্লবীদের পুরনো ডেরায় ঘুরে সংগ্রহ করে আনলেন নানা বই। দেশ-বিদেশের বিপ্লবী গ্রন্থ, সংবাদপত্র, ব্রিটিশের বাজেয়াপ্ত করা নিষিদ্ধ বই দিয়ে ভরিয়ে তুলতে শুরু করলেন সেই লাইব্রেরি। গ্রামবাসীরা আরও উদ্দীপ্ত হয়ে উঠতে শুরু করল।

খবর চাপা রইল না। গণ্ডগ্রামে লাইব্রেরি? গোয়েন্দাদের সন্দেহের রিপোর্ট গেল পাবনা থানায়। সেখান থেকে কলকাতার লালবাজার। নড়েচড়ে বসল পুলিশ। লালবাজার থেকে ছুটে এসে পুলিশের বড়কর্তা টেগার্ট সাহেব এক রাতে ঘিরে ফেললেন গোটা গ্রাম। পুলিশের জালে ধরা পড়লেন আশুতোষ। মারাও গেলেন। কিন্তু হিমায়েৎপুর গ্রামে একটা অশান্তির ঢেউ তুলে দিয়ে গেলেন।

Advertisement

দ্বিজেন্দ্রনাথ দাস

আশুতোষের মৃত্যু হলেও, হিমায়েৎপুর গ্রামে যে জাগরণের পালা শুরু হয়েছিল, তা বন্ধ হল না। ভিড় বাড়তে লাগল লাইব্রেরি চত্বরে। প্রতি দিন বিকেলে চলে আসে শিশু-কিশোর-যুবক, এমনকি প্রৌঢ়রাও। এখানে আসতে আসতেই সবাই জেনেছে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের কথা। ‘আনন্দমঠ’-এর মন্ত্রও তাদের কানে এসে পৌঁছেছে। বিবেকানন্দের মন্ত্রে দীক্ষা নিয়েছে তারা। গ্রামের বৃদ্ধরা অবাক বিস্ময়ে দেখলেন, গ্রামের তরুণদের মনে স্বাধীনতার দীপ জ্বলতে শুরু করেছে একটু একটু করে।

এক দিন হিমায়েৎপুরের অন্ধকার গ্রামে আলো হাতে এসেছিলেন আশুতোষ রায়। যতীন্দ্রনাথরা তাঁর হাত থেকে সেই আলোর মশাল নিয়ে তুলে দিয়েছিল শচীন্দ্রনাথ চৌধুরীদের হাতে। শচীন তখন ১৯ বছরের তরতাজা ছাত্রনেতা। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইএসসি-র ছাত্র। তাঁর নেতৃত্বে লাইব্রেরি চত্বরে জোট বাঁধল ছাত্র-যুবরা। শরীরচর্চার গুরু তিনি। কোঠাবাড়ির জঙ্গল সাফ করে শুরু হল ব্যায়াম, লাঠিখেলা, ছোরাখেলা, কুস্তি। সবারই লক্ষ্য স্বাধীনতার সৈনিকরূপে নিজেকে গড়ে তোলা। এই শচীন চৌধুরীর সঙ্গে হাত মেলালেন হিমায়েৎপুর গ্রামের আর এক বিপ্লবী সন্তান, দ্বিজেন্দ্রনাথ দাস। দ্বিজেন্দ্রনাথও মেধাবী ছাত্র। ফরিদপুর বোমার মামলায় জেল খেটে ফিরেছেন গ্রামে। শচীনরা বিপ্লবের মাটি তৈরি করেই রেখেছিলেন, দ্বিজেন ছড়িয়ে দিলেন বিপ্লবের স্ফুলিঙ্গ। তত দিনে গোখেল লাইব্রেরির পাশে দশ কাঠা জমিতে গড়ে উঠেছে স্থায়ী ব্যায়ামাগার। শচীনদের অনুরোধে দ্বিজেন্দ্রনাথ ব্যায়ামাগারের নাম রাখলেন ‘শক্তিমন্দির’।

আত্মগঠনের প্রস্তুতিপর্ব শেষ। এ বারে বৃহত্তর কর্মযজ্ঞেও পা দেওয়ার সময়। ১৯২৮-এ পার্ক সার্কাস ময়দানে কংগ্রেসের সর্বভারতীয় অধিবেশনে সুভাষচন্দ্রের নেতৃত্বে দ্বিজেন্দ্রনাথ দাস, শচীন চৌধুরী, নরেন সরকাররা ‘বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স’ বাহিনীতে যোগ দিলেন। শুধু তাই নয়, সুভাষচন্দ্র বসুকে তাঁরা নিয়ে এলেন ‘শক্তিমন্দির’-এ। অনেকেরই সে দিন মনে পড়েছিল, আলো হাতে যে মানুষটা প্রথম এই অজগ্রামে এসে প্রদীপ জ্বালিয়েছিলেন, সেই আশুতোষ রায়ের কথা।

ইতিমধ্যে মাস্টারদার নেতৃত্বে সশস্ত্র বিপ্লবের আগুনে লাল হয়ে গেল চট্টগ্রামের রাতের আকাশ। এ ঘটনা পাবনার তরুণদের মনে ঝড় তুলল। তাঁরাও সশস্ত্র বিপ্লব ঘটাতে উন্মুখ হয়ে উঠলেন। কিন্তু অস্ত্রের অভাবে থমকে রইল সব। ‘যুগান্তর’ দলের সঙ্গে যোগাযোগ করলেন শচীন আর নরেন। লাভ হল না। কিন্তু বীরমন্ত্রে দীক্ষিত শক্তিসাধকরা পিছিয়ে এলেন না। অস্ত্র কেড়ে নিয়ে, রাজনৈতিক ডাকাতির মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করে, অস্ত্র কিনে তাঁরা অস্ত্রভান্ডার গড়ে তোলার পরিকল্পনা করলেন। শচীন চৌধুরীর নেতৃত্বে বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক ডাকাতি পুলিশের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলল। চিকিৎসাবিদ্যার ছাত্র শচীনের সুনিপুণ পরিকল্পনা পুলিশকে বোকা বানিয়েছে বার বার। কিন্তু ‘শক্তিমন্দির’-ই যে এই রাজনৈতিক ডাকাতির মূল উৎস, তা বুঝতে তাদের অসুবিধে হয়নি। ফলে ১৯৩৩ থেকে ১৯৩৮, এই পাঁচ বছরের জন্য ‘শক্তিমন্দির’ বেআইনি প্রতিষ্ঠান বলে ঘোষিত হল। ‘শক্তিমন্দির’-এর দরজায় লোহার তালা ঝুলিয়ে তারা চলে গেল। কিন্তু বিপ্লব স্তব্ধ হল না। পাঁচ বছর পর নতুন প্রজন্মের নতুন নেতৃত্ব এসে ‘শক্তিমন্দির’-এর দরজা খুলে দিল। দ্বিজেন্দ্রনাথ, শচীন, নরেন তখন কংগ্রেসের প্রাদেশিক সভার সদস্য। বিস্মিত হিমায়েৎপুরবাসী দেখলেন, তাঁদের গ্রামের সন্তান আজ ভারতবাসীকে নেতৃত্ব দিতে এগিয়ে চলেছে।

শচীন্দ্রনাথ চৌধুরী।

১৯৪৬ সালে বন্দিমুক্তি আন্দোলনের সুফল বুকে নিয়ে গ্রামে ফিরে এলেন হিমায়েৎপুর গ্রামের বিপ্লবী তরুণরা। সে সময় নরেনের মতো কেউ কেউ সঙ্গে নিয়ে এলেন ডিনামাইট ও জিলাটিন। এগুলো পেয়ে ব্রিটিশ সামরিক বাহিনীর অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে শচীন তৈরি করে ফেললেন দশ ইঞ্চি ব্যাসের ১২টি কামান। পরিত্যক্ত এক আশ্রমে ওয়ার্কশপ করে তৈরি করে ফেললেন প্রচুর পাইপগান। ‘শক্তিমন্দির’-ই হয়ে উঠল একটা ছোটখাটো অস্ত্রাগার। অস্ত্রের অভাব মিটতেই দ্রুত প্রশিক্ষণ নিয়ে গড়ে তুললেন আস্ত একটা সামরিক বাহিনী। সর্বাধিনায়ক হলেন ডক্টর শচীন চৌধুরী।

প্রত্যক্ষ সংগ্রাম তবু অধরাই রয়ে গেল। ইংরেজদের বিরুদ্ধে গর্জে ওঠার আগেই শুরু হল সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা। পাবনাকে এই আগুন থেকে বাঁচাতে হবে। এই সঙ্কল্প বুকে নিয়ে নরেন সরকারের নেতৃত্বে সামরিক বাহিনী পথে নেমে পড়ল। অতিমাত্রায় সজাগ দৃষ্টির ফলে দাঙ্গার হাত থেকে বেঁচে গেল পাবনা। ১৯৪৭-এর দরজায় এসে দাঁড়াল ভারত। কিন্তু দাঙ্গার দিনগুলোয় হিমায়েৎপুরের মানুষ বুঝেছিলেন, পাবনায় থাকলে স্বাধীনতার স্বাদ তাঁরা কখনও পাবেন না। নতুন বসতি গড়ে তুলতে হবে ভারতে। মাসখানেক ধরে চলল এই নিয়ে মতভেদ, মতপার্থক্য, আলাপ-আলোচনা। অবশেষে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নিয়ে শচীন চৌধুরী, নরেন সরকারেরা এ পার বাংলায় চলে এলেন নতুন বাসভূমির সন্ধানে। কাটোয়া, বর্ধমান, দেওঘর ঘুরে পৌঁছলেন নদিয়া। জঙ্গলাকীর্ণ শ্রীবন-এ একশো বিঘে জমি নদিয়ার মহারানি সসম্মানে দান করলেন এই স্বাধীনতা সংগ্রামীদের।

১৯৪৭ সালের ১৪ অগস্ট পাবনায় মুসলিম লীগের বিশাল মিছিল বেরোল। উত্তেজনায় কাঁপছে পাবনা। ‘শক্তিমন্দির’-এর সুইসাইড স্কোয়াডও তখন প্রস্তুত। প্রয়োজনে আত্মাহুতি দেবেন। ‘শক্তিমন্দির’ চত্বর ভরে যাচ্ছে মানুষে মানুষে। হিমায়েৎপুর গ্রামবাসী ও ‘শক্তিমন্দির’-এর সদস্যরা এসে দাঁড়ালেন বেদিমূলে। রাত বারোটায় এত দিনের সাধের জাতীয় কংগ্রেসের তেরঙ্গা পতাকা নামিয়ে সেখানে তুলে দেওয়া হবে স্বাধীন পাকিস্তানের সবুজ পতাকা। রাত ১২টা বাজল। সামরিক কায়দায় সশস্ত্র অবস্থায় গার্ড অব অনার দিয়ে পতাকা অবনমিত হল। সবার চোখে তখন অশ্রুর প্লাবন। অন্য দিকে শক্তিসেনাদের চোখে তখন আগুনের ফুলকি। শক্তিসাধকেরা সে পতাকার অমর্যাদা হতে দেননি। ভারতে আসার সময় বুকে করে নিয়ে এসেছিলেন সেই পতাকা, আর দোতলা উঁচু বাঁশ। স্বাধীন ভারতের শক্তিনগরে ফের উড়েছিল সেই পতাকা।

হিমায়েৎপুরের গ্রামবাসীরা তখন শরণার্থী। উদ্বাস্তু মানুষকে পুনর্বাসন দেওয়ার শপথ নিয়েছেন শক্তিসাধকরা। তাঁরা সীমান্তরেখা পার হয়ে উদ্বাস্তু দলগুলিকে পৌঁছে দিতেন রানাঘাটে। কৃষ্ণনগর থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মীরা তাঁদের নিয়ে যেতেন বাদকুল্লার বেঙ্গল ফার্ম, কৃষ্ণনগর রাজবাড়ির রাজারচক এবং কৃষ্ণনগর কুইন্স স্কুলে। তার পর ’৪৭-এর সেপ্টেম্বর মাসের আগেই তাঁরা পৌঁছে গিয়েছিলেন তাঁদের নতুন বাসভূমিতে। পুরো কাজটি সুসম্পন্ন করেছিলেন শক্তিমন্দিরের কর্ণধার শচীন চৌধুরী, নরেন সরকার, অনুকূল সাহা প্রমুখ।

অনুশীলন সমিতি বা যুগান্তর দলের মতো ‘শক্তিমন্দির’ কিন্তু শুধু একটি বিপ্লবী সঙ্ঘমাত্র নয়। স্বাধীনতা আন্দোলনেই সে শুধু অংশ নেয়নি, পরাধীন ভারতবর্ষে দেশ গঠনেও সুনির্দিষ্ট ভূমিকা নিয়েছিল। আবার স্বাধীন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সে অন্যান্য সংগঠনের মতো ফুরিয়ে যায়নি। স্বাধীনতা-উত্তরকালে উদ্বাস্তু মানুষকে পুনর্বাসন দিয়ে কী ভাবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে হয়, তার পথনির্দেশও দিয়েছে সে। মানুষের পাশে থেকে, তাকে সঙ্গে নিয়েই শক্তিমন্দিরের জন্ম, তার বেড়ে ওঠা, বিস্তার। প্রতিটি পরিবারের মুষ্টিভিক্ষা দিয়ে এই আন্দোলনের জন্ম হয়েছিল এক দিন। কিন্তু সে দিনই এই সংগঠনের সঙ্গে মানুষের আত্মিক মিলন ঘটে গিয়েছিল। তাই চরম বিপর্যয়ের দিনেও হিমায়েৎপুর গ্রামের মানুষেরা একযোগে একটি নির্দিষ্ট স্থানে নতুন উপনিবেশ গড়ে তুলেছিলেন। এই গণসংযোগ অন্যান্য বিপ্লবী দলের ছিল না। তাই যথার্থ অর্থেই স্বাধীনতা সংগ্রামে ‘শক্তিমন্দির’-এর মুক্তিসেনাদের আন্দোলন হয়ে উঠেছিল জনগণতান্ত্রিক আন্দোলন।

শক্তিমন্দিরে দীক্ষিত হিমায়েৎপুরের মানুষ নদিয়া জেলার কৃষ্ণনগরে নতুন উপনিবেশ গড়ে তুললেন। কিন্তু তাঁরা ভোলেননি ফেলে আসা পাবনাকে, ভোলেননি নিজেদের অতীত। তাই শক্তিমন্দির চত্বরে এক দিন যে ত্রিবর্ণরঞ্জিত পতাকা তাঁরা উড়িয়েছিলেন, এ পার বাংলায় পৌঁছে নয়া বাসভূমি শক্তিনগরে সেই পতাকা উত্তোলিত করে অভিবাদন জানিয়েছে তাঁরা। মনে রেখেছেন ‘শক্তিমন্দির’-এর পুরোধা আশুতোষ রায়কেও। শক্তিনগরের বুক চিরে চলে গেছে তাঁরই নামাঙ্কিত আশুতোষ রায় রোড।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement