ছোটগল্প
Short story

প্রয়োজনে প্রিয়জন

নারীদের প্রতি আকাশের হৃদয় বরাবরই দুর্বল। কিন্তু ওর হৃদযন্ত্রে কোনও গড়বড় নেই। ডাক্তার দেখানোর বাহানায় এক রাত নিশ্চিন্তে অদিতির সঙ্গে কাটানো যাবে।

বিক্রম অধিকারী

শেষ আপডেট: ১২ মার্চ ২০২৩ ০৬:৫৯
Share:

পরিচিত নম্বর থেকে মিসড কল। আকাশ এই নম্বরটা ফোনে নয়, মনে সেভ করে রেখেছে। মিসড কল মানেই অদিতি বাড়িতে একা। আকাশ কল ব্যাক করে। ও-প্রান্তে অদিতির গলায় ক্ষোভ, “সুহাস তাইল্যান্ডে। বন্ধুর সঙ্গে তাইল্যান্ড আর বৌকে নিয়ে দিঘা-দার্জিলিং।”

আকাশ হাসে, “আরে পাগলি, ভাল হয়েছে তো! সুহাস তাইল্যান্ড-সিঙ্গাপুর যায় বলেই না আমরা...”

অদিতির গলায় আবদার, “চলো, আমরাও বেরিয়ে পড়ি।”

ক’দিন পরে আকাশের মেয়ে দিঘির পরীক্ষা। মেয়ের পরীক্ষা মানেই মেয়ের মা, তোর্সারও পরীক্ষা। আকাশ তোর্সাকে ফোন করে, “কাল শিলিগুড়িতে হার্ট স্পেশালিস্ট ডা. টমাস আসবে। দেখাতে অনেক রাত হবে। চলো, দিনে লাটপাঞ্চার ঘুরে আসি। ডাক্তার দেখিয়ে রাতটা হোটেলে থেকে যাব।”

তোর্সা স্বভাবতই অরাজি, “দিঘির পরীক্ষা। তুমি একাই যাও।”

নারীদের প্রতি আকাশের হৃদয় বরাবরই দুর্বল। কিন্তু ওর হৃদযন্ত্রে কোনও গড়বড় নেই। ডাক্তার দেখানোর বাহানায় এক রাত নিশ্চিন্তে অদিতির সঙ্গে কাটানো যাবে।

তোর্সা সব আবেগ শিকেয় তুলে মেয়েতেই মগ্ন। এখন আকাশ যেন সংসারের প্রয়োজনীয় আসবাব। একঘেয়েমি কাটাতে আকাশ ভার্চুয়াল জগতে বিচরণ শুরু করেছিল। ফেসবুক-বান্ধবী অদিতির সৌজন্যে আকাশের ঘুমন্ত কবিতারা ফের জেগে ওঠে। ধীরে ধীরে ওদের ভার্চুয়াল মেলামেশা বাস্তবে চলে আসে।

*****

বিবর্ণ-ঘিঞ্জি জয়গাঁ পিছনে ফেলে বর্ণিল ভুটান গেট পেরোলেই ছবির মতো শহর, ফুন্টসিলিং। পাশেই বয়ে চলেছে তোর্সা নদী। ফুন্টসিলিং-এ পা রাখতেই আকাশ-অদিতির সংস্কারের মেকআপ উঠে যায়। ফুন্টসিলিং যেতে পাসপোর্ট-ভিসার লাগে না। ভোটার কার্ড থাকলেই হল। সুযোগ পেলেই ওরা সঙ্গোপনে ফুন্টসিলিং চলে আসে। প্রতিবারই ওরা ‘তাশি নামগে’ রিসর্টে ওঠে। রিসর্টের কর্মচারীরা ওদের স্বামী-স্ত্রী হিসেবেই চেনে।

প্রতি বার এখানে যেন নতুন করে অদিতিকে পায় আকাশ। অদিতির চোখ দুটো যেন দিগন্তের উড়ন্ত গাঙচিল। জলপ্রপাতের মতো নেমে আসা চুল। সরস কমলা কোয়ার মতো ঠোঁট। আকাশ ভাবে, জলবতী অদিতি যেন খরস্রোতা পাহাড়ি নদী। অন্য দিকে তোর্সার শরীরের পরতে-পরতে চর্বির পলি। বেঢপ তোর্সা এখন নিস্তরঙ্গ ঝিল।

আকাশ থইথই অদিতিতে হাবুডুবু খেতে থাকে। একটা সময়ে আকাশ অভ্যস্ত সুরক্ষার আড়াল নিতে যায়। বাধা দেয় অদিতি। বলে, “থাক না, আমি তো ইনফার্টাইল। এসো...”

*****

ফুন্টসিলিং মানেই দিগন্ত জুড়ে পাহাড়ের সারি। নির্জন পাহাড়ের কোলে কার্বান্ডি মনাস্ট্রি। গুম্ফার আশেপাশে অসংখ্য ‘তাহশিং’— লম্বা বাঁশের মাথায় ধর্মীয় বাণী লেখা রং-বেরঙের পতাকা। ফুন্টসিলিং-এ এলে অদিতি কার্বান্ডি মনাস্ট্রিতে যাবেই। এই গুম্ফার টানে অদিতি বার বার ফুন্টসিলিং-এ ছুটে আসে।

কুয়াশার মতো ফিনফিনে বৃষ্টি শুরু হয়। আকাশ ছাতা ধরে, “ভাগ্যিস সঙ্গে এনেছিলাম!”

অদিতি বলে, “ছাতা লাগবে না। এ রকম বৃষ্টিতে ভিজতে বেশ লাগে।”

তোর্সা নরম কমলা রোদেও ছাতা ব্যবহার করে। এ দিকে অদিতি বৃষ্টিতেও ছাতা নেবে না। আকাশ বলে, “তুমি ঠিক যেন গ্রিক পুরাণের দেবী আফ্রোদিতি।”

অদিতির লাজুক গলা, “আমি আফ্রোদিতি। তুমি আমার অ্যারিস। কাঠখোট্টা সুহাস ঠিক যেন হেফাস্টাস। সেই জন্যই না আফ্রোদিতি অভিসারে আসে অ্যারিসের সঙ্গে!”

আকাশ গলা মেলায়, “মন সুযোগ পেলে সংস্কারের শেকল ছিঁড়বেই। প্রেম সংস্কার মানে না।”

অদিতি আকাশের পাশে এসে দাঁড়ায়, “যুগে যুগে আফ্রোদিতি ফিরে আসে। কখনও ক্লিয়োপেট্রা, কখনও লেডি চ্যাটার্লি, কখনও ডায়না।”

আকাশ দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে, “লাইফ ইজ় মিটিং রাইট পার্সন ইন দ্য রং টাইম।”

অদিতির বেপরোয়া গলা, “জীবন ক্ষণস্থায়ী। শিশিরে একটু সিক্ত হলে মোটেও বৃষ্টিকে ঠকানো হয় না।”

আকাশ অদিতিকে কাছে টানে, “মনের মানুষকে খুঁজে নিতে প্রেমের কাছে পাপও পুণ্য। কে বলে প্রেম অন্ধ? প্রেম তো তৃতীয় নয়ন।”

“সতী-সাধ্বী ব্যাপারটা পতিদের জন্য রম্যরচনা। অ্যাফেয়ার ছাড়া সঙ্গী খুব রেয়ার।”

আকাশের অহঙ্কারী গলা, “আমার ঘরেই আছে সেই রেয়ার জিনিস। তোর্সার নেই কোনও অ্যাফেয়ার। আছে শুধু পরিবার। ভারতে তোর্সাদের সংখ্যাই বেশি। সেই জন্যই ডিভোর্সের সংখ্যার দিক থেকে দুনিয়াতে ভারতের স্থান তলানিতে!”

অদিতি মুচকি হাসে, “জেল পালানো কয়েদির সংখ্যাও নগণ্য। অনিচ্ছা সত্ত্বেও এক ছাদের নীচে থাকা যদি সফল দাম্পত্য হয়, তবে তো বলতে হয় কয়েদিরা জেলেই খুশি!”

বিকেল সন্ধের ঝাঁপ খুলতেই গোধূলি মিশে যায় আঁধারে। পাহাড়-জঙ্গলে অন্ধকারের পোঁচ পড়তেই হু হু করে রাত নামে। আকাশ তাড়া দেয়, “চলো, রাত হয়ে এল।”

অদিতির সুরেলা কণ্ঠ, “রাত্রি আমার সঙ্গে জেগে থাকে/ রাত্রি আমার গোপন মগ্ন প্রিয়া/ রাত্রি আমার সব দুঃখই জানে/ রাতের সঙ্গে আমার পরকীয়া।”

*****

রিসর্টের জানলা দিয়ে আকাশ চাঁদ দেখায়, “ওই দেখো, বাউন্ডুলে চাঁদ মেঘবালিকার সঙ্গে ছোঁয়াছুঁয়ি খেলছে।”

অদিতির অনুরোধ, “কবি, আজ মদ্য নয়, পদ্য হোক।”

“জানো, তোর্সা আমার কবিতা পড়ে বলেছিল, ‘কবিতা না তো সুইসাইড নোট!’”

অদিতি হাসে, “উপযুক্ত পরিবেশে কথাও কবিতা হয়ে যায়।”

আকাশ একটা সুদৃশ্য ক্যারিব্যাগ অদিতির হাতে দেয়, দিয়ে বলে, “এগুলো তোমার জন্যে এনেছি। পরে এসো প্লিজ়।”

ক্যারিব্যাগে শিফন শাড়ি ও অন্তর্বাস। অদিতি আহ্লাদিত, “আমার প্রিয় রঙের শিফন। উফ, এত কস্টলি ইনারওয়্যার!”

বাথরুমে গিয়ে অদিতি পোশাক বদলে আসে। জ্যোৎস্না রাঙা শিফনে সে যেন রহস্যে মোড়া এক মায়াবী নারী। প্রবন্ধের মতো জীবনটা অদিতির কাছে এলেই কবিতা হয়ে যায়। বিভোর আকাশ আপ্লুত কণ্ঠে আওড়ায়, “আগুনও ঋণী হবে টিমটিমে প্রদীপের মতো/ জ্যামিতিক আলপনার গনগনে ভিসুভিয়াসে।/ বার বার পড়েও মুখস্থ হল না ওই শরীর কাব্য/ মাধুকরী ইচ্ছেগুলো নির্ঘুম তারা তোমার আকাশে…”

অদিতির সঙ্গে থাকলে ঘণ্টার কাঁটা দৌড়ে সেকেন্ডের কাঁটার সঙ্গে পাল্লা দেয়। ভুটান গেট পেরিয়ে জয়গাঁয় এলেই ঘিরে ধরে গুমোট দৈনন্দিনতা। আকাশ বিষণ্ণ গলায় বলে, “কিছু সম্পর্ক শুধুই সামাজিক বন্ধন। সংস্কারের চাপে সেঁটে থাকে। আর কিছু সম্পর্ক চুম্বকীয় আকর্ষণের মতো। আবেশে জুড়ে থাকে।”

“একদম। কিছু সম্পর্কের কোনও নাম হয় না। কিন্তু সে সম্পর্ক শুধু নামের সম্পর্ক থেকে অনেক বেশি তৃপ্তি দেয়।”

আকাশের আফসোস, “আবার সেই একঘেয়ে রুটি আর রুটিন।”

অদিতি কপাল চাপড়ায়, বলে, “ইস! দেখেছ কাণ্ড! তোমার দেওয়া শিফন আর ইনারওয়্যারগুলো কাবার্ডে ফেলে এসেছি।”

আকাশের আশ্বাস, “চিন্তা কোরো না। ওরা ঠিক রেখে দেবে। আবার যখন আসব, তখন কালেক্ট করে নিয়ো।”

*****

“এই, গুড নিউজ় আছে! বাড়িতে নতুন গেস্ট আসছে!”

সুহাস বিরক্তিতে ভ্রু কোঁচকায়, “তোমার মা-বাবা এ বার সঙ্গে আবার কাকে নিয়ে আসছেন?” অদিতির কথায় পরিতৃপ্তি ঝরে, “আমার মা-বাবা নয় গো! আমরা মা-বাবা হতে চলেছি! আর আমাকে ‘বাঁজা’ বলতে পারবে না।”

“বাঁজা অপবাদ ঘুচল তা হলে,” সুহাস উদ্বেলিত, “ডা. সেনগুপ্ত তো গুরুদেব লোক।”

অদিতির মিসড কল। আকাশ কল ব্যাক করে, “অদিতি, চলো। কার্বান্ডি মনাস্ট্রি ডাকছে।” অদিতির গলায় উচ্ছ্বাস, “আর যাব না গো। আমি মা হতে চলেছি! জানো তো, সবাই ঠিকই বলে। কার্বান্ডি মনাস্ট্রি খুব জাগ্রত। ওখানে প্রার্থনা করলে সত্যিই সন্তান লাভ হয়। রাখছি, বাই!”

অদিতি ফোন কেটে দেয়। পরকীয়া প্রেম আসলে ভালবাসা নয়— ক্ষণিকের ভাল লাগা। কোনও জিনিসই চিরনতুন থাকে না। অদিতি অধ্যায়টা ছোটগল্পের মতো অতৃপ্তিতেই শেষ হয় আকাশের। অদিতি কবিতা, আর তোর্সা যেন আকাশের উপন্যাস। তোর্সা আকাশের ফিক্সড ডিপোজিট। বয়সকালের জন্য আগলে রাখা সম্পদ। আকাশের অনুশোচনা হয়, নিষ্পাপ তোর্সাকে ঠকানোর জন্য। মনে হয়, সে বিশ্বাসভঙ্গ করেছে। প্রখর রোদে তোর্সা যেন শীতল ঝিলের প্রশান্তি।

*****

সুহাস বাড়ি ফিরে অদিতির গায়ে কয়েকটা প্যাথোলজিক্যাল রিপোর্ট ছুড়ে মারে, “ঠিকই সন্দেহ করেছিলাম। রিপোর্টগুলো দেখ। ডাঃ সেনগুপ্ত বলেছে, এখনও আমার অ্যাজ়োস্পার্মিয়া কিয়োর হয়নি। আমি ইনফার্টাইল। শয়তান মেয়েছেলে, তোর পেটে অন্যের সন্তান…” অশ্রাব্য গালিগালাজ শুনে অদিতি ঝলসে ওঠে, “তুমি প্রতারক, তুমি ছোটলোক। নিজে অক্ষম, আর তোমার জন্য বাঁজা বদনাম শুনতে হবে আমাকে!” সুহাস দাঁত-মুখ খিঁচিয়ে ওঠে, “পেটে কোকিলের বাচ্চা রেখে, আমাকে কাক সাজানোর ধান্দা? চল, এখনই আপদ খালাস করিয়ে আনব।”

“খবরদার!” অদিতির সুদৃঢ় গলা, “আমার প্রাণ থাকতে এই বাচ্চার কোনও ক্ষতি হতে দেব না।” নিষ্ফল আক্রোশে সুহাস গর্জায়, “এই মুহূর্তে বেরিয়ে যা আমার বাড়ি থেকে।”

অদিতির ফোন। আজ মিসড কল নয়, মোবাইল বেজেই যাচ্ছে। আকাশ একটু অবাক হয়ে ফোন ধরে। অন্য প্রান্ত থেকে অদিতির আকুল গলা ভেসে আসে, “আকাশ, আমার পেটে তোমার সন্তান।”

আকাশের বুকে জোর ধাক্কা লাগে। এ কী কাণ্ড! এবার ফুন্টসিলিং-এ তো সুরক্ষা ছাড়াই দু’বার... তাতেই কি অদিতি প্রেগন্যান্ট? কিন্তু ও যে বলেছিল...

আকাশ গম্ভীর গলায় বলে, “কী সব আজেবাজে কথা বলছ? কে বলল, ওটা আমার?”

অদিতি জোর দিয়ে বলে, “হ্যাঁ, এই সন্তান তোমারই।”

আকাশ ফুঁসে ওঠে, “কেন, তোমার সুহাস কি অক্ষম?”

অদিতির উত্তেজিত গলা, “হ্যাঁ, অক্ষমই তো। ও আমাকে ওর মেডিক্যাল রিপোর্ট দেখিয়েছে।”

আকাশের পৃথিবীতে প্রবল ভূমিকম্প শুরু হয়। ত্রস্ত আকাশ বিধ্বস্ত স্বরে বলে, “অদিতি, এই অবৈধ সন্তান...”

অদিতি ফোঁস করে, “জানি, তুমিও অ্যাবর্ট করতে বলবে। প্রেম ও যুদ্ধে সব বৈধ হলে প্রেমের বাচ্চা অবৈধ হবে কেন? হেফাস্টাস, মানে সুহাসের ডেরা ছেড়ে আমি বাবার বাড়ি চলে এসেছি। দোহাই, অ্যাবরশনের কথা বোলো না। তুমি আমার পরকীয়া পুরাণে অ্যারিস হয়েই থেকো। আমাদের মেয়ে হলে নাম রাখব, হারমোনিয়া। ছেলে হলে, কিউপিড।”

আকাশের মাথা ভোঁ-ভোঁ করে। দরদর করে ঘামতে থাকে।

দিঘি এখন স্কুলে। তোর্সা এই মন্থর দুপুরে ঠিক কোনও টিভি সিরিয়ালে ডুবে আছে। ঠা-ঠা দুপুরে আকাশ নিজেকে জুড়োতে অফিস থেকে বেরোয়। স্নিগ্ধ তোর্সার টানে ছুটে যায় বাড়ির দিকে। বাড়ির গেটে গাড়ি থামায়। বারান্দায় হেলান দেওয়া একটা সাইকেল। এই অসময়ে বাড়িতে কে? আকাশ ডোরবেল বাজায়। কিছু ক্ষণ পর দিঘির প্রাইভেট টিউটর দরজা খোলে। আকাশকে দেখে অপ্রস্তুত ছেলেটা দ্রুত সাইকেল নিয়ে কেটে পড়ে। পরকীয়া লোভী পুরুষরা অ্যারিস হয়ে ঘুরঘুর করছে। হেফাস্টাস-স্বামীর বন্ধন থেকে ক্ষণিক মুক্তির লোভে কত অদিতি সঙ্গোপনে আফ্রোদিতি হয়ে যাচ্ছে। নিজে অন্যের স্ত্রীর সঙ্গে মেলামেশা করলে পাপবোধ, অপরাধবোধ হয় বই কী। কিন্তু নিজের স্ত্রীর পরকীয়ায় স্বামীর অধিকারবোধ প্রখর হয়ে ওঠে।

সংসার মানে স্বার্থের সিমেন্ট দিয়ে গড়া সম্পর্কের গাঁথনি। সংস্কার-সংসার-পরিবার সবই বুঝি রঙ্গমঞ্চ। তোর্সা এত দিন বিশুদ্ধ অভিনয় করে আসছিল! সবাই প্রয়োজনে প্রিয়জন। তোর্সার ওপর আকাশের সব বিশ্বাস তছনছ হয়ে যায়।

আকাশ হুঙ্কার ছোড়ে, “ছিঃ! দু’নম্বরি-ক্যারেক্টারলেস। তোকে স্ত্রী ভাবতে লজ্জা হয়।”

তোর্সা ফোঁস করে, “আমি ক্যারেক্টারলেস হলে তুই কী?”

তোর্সা আলমারি খুলে একটা প্যাকেট আকাশের গায়ে ছুড়ে মারে। অদিতিকে উপহার দেওয়া শিফনের শাড়ি ও অন্তর্বাসগুলো প্যাকেট থেকে মেঝেতে ছড়িয়ে পড়ে। তোর্সার কণ্ঠে শ্লেষ, “এই দ্যাখ, ফুন্টসিলিং থেকে তোর ক্যারেক্টার সার্টিফিকেট এসেছে। রিসর্টে ফোন করে জেনেছি, তুই সখী নিয়ে মাঝে-মাঝেই ওখানে যাস। আমকে ‘দু’নম্বরি’ বলে! কী এক নম্বরি সাধুপুরুষ এলেন রে!”

তোর্সার তীব্র স্রোতে আকাশ খড়কুটোর মতো ভেসে যায়।

ছবি: বৈশালী সরকার

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন