ছোটগল্প

পৌরুষ

চারপাশের লোকজন উদাসীন হয়ে বসে। অমিত নিজেও তাই করত। এত দিন সে নির্ঝঞ্ঝাটে কাটিয়েছে। দশ বছরের বিবাহিত জীবনে এই প্রথম এমন একটা ঘটনা ঘটল!

Advertisement

দেবাশিস গঙ্গোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০১৮ ০০:০০
Share:

ছবি: পিয়ালী বালা

ছেলেটা গলা চড়াচ্ছে। আসতে-আসতে ছেলেটার গাল-দুটো আরও ছুঁচলো হয়ে উঠল। মেজাজে ফুটছে মারমুখী ভাব। একটা বাজে গালাগাল ওর মুখ থেকে ছিটকে এল।

Advertisement

অমিত মাথা নিচু করে। তার কী করা উচিত সে জানে। প্রতিবাদ করাই উচিত তার। সকলেই তাই করে। কিন্তু ভাবা আর করে দেখানো এক জিনিস নয়। ভয়টাকে সে অস্বীকার করবে কী করে? প্রচণ্ড ভয়ে সে কাঁপুনি টের পাচ্ছে। যারা প্রতিবাদ করে আর যারা করে না, তাদের মধ্যে কীসের পার্থক্য আছে সে জানে না।

চারপাশের লোকজন উদাসীন হয়ে বসে। অমিত নিজেও তাই করত। এত দিন সে নির্ঝঞ্ঝাটে কাটিয়েছে। দশ বছরের বিবাহিত জীবনে এই প্রথম এমন একটা ঘটনা ঘটল!

Advertisement

ছেলেটার চেহারা দেখছিল অমিত। সমাজের খারাপ আঁচ-লাগা চেহারা। আগ্রাসী চোখমুখ। এদের কী ভাবে ট্যাকল করতে হয় তার জানা নেই। সে অস্থির চোখে রঙ্গনার দিকে তাকাল। রঙ্গনা প্রথম দিকে হইচই বাঁধিয়েছিল। মৃদুস্বরে প্রতিবাদ করেছিল। এখন চুপ করে ভীত চোখে বসে আছে।

ছেলেটা আরও দু-চারটে গালাগাল দিয়ে ট্রেনের দরজায় দাঁড়াল। সেখান থেকে মাঝেমধ্যে তীব্র চোখে তাদের দেখতে লাগল। অমিত চোখ সরিয়ে নিল। ঝাঁ-ঝাঁ রোদের মতো চোখ। তাকালে বোধহয় সে অন্ধ হয়ে যাবে।

আজ তারা গিয়েছিল দিদির বাড়ি। বিকেলের পর থেকেই জামাইবাবু তাড়া দিচ্ছিলেন। বলছিলেন, ‘‘তোমরা কী ফিরবে না থাকবে?’’

‘‘ফিরব।’’

‘‘তা হলে তাড়াতাড়ি ফেরো। আলো থাকতে থাকতে।’’

ঘরে অস্বস্তিকর নীরবতা নেমে এসেছিল। জামাইবাবু কীসের ইঙ্গিত দিচ্ছেন অমিত জানে। রাতে এ অঞ্চল বদলে যায়। কিছু দিন আগে এখানে একটি মেয়েকে রেপ করা হয়েছে। সেই থেকে একটা ভয় জামাইবাবুদের মনে ঢুকে গিয়েছে। তিনি বলছিলেন, ‘‘পরিবেশ যে কী ভাবে বদলে গিয়েছে অমিত, ভাবতে পারবে না! সন্ধের পর এলাকা ফাঁকা। উন্মাদের মতো রাতে কারা গাড়ি চালায় বলতে পারব না। তোমার দিদিকে বলেছি, রাতে খবরদার বাইরে যাবে না।’’

‘‘মেয়েটার কী হয়েছিল?’’

‘‘যা শুনছি। মেয়েটারও দোষ আছে। রাতে দুম করে বেরনোরই বা কী আছে? পরিবেশ যখন খারাপ!’’

‘‘তাই তো।’’

‘‘দেখো বাপু, নিজেদের সতর্ক থাকতে হয়। যতই বলো, মেয়েরা নিজেদের না সামলালে সব শেষ। মেয়েটারও একটু উড়ু-উড়ু বাতিক ছিল।’’

অমিত বেশি ঝুঁকি নেয়নি। আলো থাকতে থাকতে সে স্টেশন চলে এসেছিল। সময় মতো একটা কম-ভিড় ট্রেনে উঠে নির্ভার শ্বাস ফেলেছিল। টেনশন তার একদম সহ্য হয় না। রঙ্গনাকে সঙ্গে নিয়ে বেরলে টেনশন আরও বেড়ে যায়। আঁটোসাঁটো গম্ভীর মুখোশটা সে পরে ফেলে। এটা তার কবচকুণ্ডল। ভয়ের হাত থেকে রক্ষা করবে। রঙ্গনা বলেছিল, ‘‘জামাইবাবুরা
খুব চালাক। রাতের খাবারটা বুদ্ধি করে কেমন কাটিয়ে দিল!’’

‘‘অ্যাঁ!’’

‘‘না তো কী! লোকে আর রাতবিরেতে বেরোয় না। তোমার রিলেটিভগুলোই এমন!’’

তর্ক নিষ্প্রয়োজন। জামাইবাবু হিসেবি লোক। এ রকম ভাবতেই পারেন। অমিতের মন হালকা হয়ে আসছিল। জামাইবাবু পরিবেশ সম্পর্কে যেমন ভয় পাইয়ে দিয়েছিলেন সে রকম কিছু নয়, তা ভেবে সে আশ্বস্ত বোধ করেছিল। আসলে যা ঘটছে তা সত্যিই বিচ্ছিন্ন ঘটনা। তা নিয়ে ভেবে লাভ নেই।

কামরার শেষ সারিতে কয়েকটা সিট ফাঁকা ছিল। অমিত তাড়াতাড়ি উঠে সিট দখল করেছিল। রঙ্গনার হাঁটার গতি শ্লথ। অমিত ব্যাজার হয়ে ওর দিকে তাকিয়েছিল। সে সময়ে একটা ঘটনা ঘটল।

অমিত যেখানে বসেছিল, সেই সারি থেকে একটা ছেলে উঠে দাঁড়িয়েছিল। লাইনটার মধ্যে সে রঙ্গনাকে ধীরেসুস্থে ক্রস করছিল। পাশাপাশি ক্রস করার সময়েই ঘটনাটা ঘটল। অমিত স্পষ্ট দেখল যাওয়ার সময় ছেলেটা ইচ্ছাকৃত রঙ্গনার বুকের উপর হাত বুলিয়ে গেল। ঘটনার অভিঘাতে রঙ্গনা বিপর্যস্ত। চোখে অবিশ্বাস্য চাহনি। অমিতের দিকে তাকিয়ে রঙ্গনা থরথর করে কেঁপে উঠল।

অমিতের উচিত ছিল ছেলেটার উপর ঝাঁপিয়ে পড়া। ওর গালে সপাটে চড় মারা। কিন্তু তার মাথা কাজ করল না। পিঁপড়ের সারির মতো ভয় মাথায় ঢুকে গেল। ছেলেটার সঙ্গে রঙ্গনা তত ক্ষণে বাগযুদ্ধে জড়িয়েছিল। ছেলেটি রোয়াব মেরে বলছিল, সে গায়ে হাত দেয়নি। রঙ্গনা বলছিল, দিয়েছে। বলতে বলতে ছেলেটির ভাষা বদলাতে শুরু করল। অমিত এক বার বিড়বিড় করে বলেছিল, ‘‘ছাড়ো।’’

তাদের স্বস্তি দিয়ে ছেলেটি পরের স্টেশনে নেমে গেল। যাওয়ার আগে রঙ্গনার দিকে মারাত্মক চোখে তাকাচ্ছিল। এখন হাঁপ ছেড়ে অমিত কো-প্যাসেঞ্জারদের দিকে চোখ মেলল। এরা বাড়ি গিয়ে নিশ্চয়ই ঘটনাটি বলবে। তার সম্পর্কে হয়তো বলতে পারে, স্বামীটা ভেড়া। বউটার গায়ে হাত দিল ছেলেটা, লোকটা হাঁদার মতো বসে রইল!

নিজের উপর অমিতের করুণা হয়। সে ভাবে, কখন সে ঘরে ঢুকবে। রঙ্গনাকে ঢুকিয়ে রাখবে ঘরে। আর বেরতে দেবে না। এত দিন রাতে বিভীষিকা ছিল, এখন দিনও রাতের চেয়ে অন্ধকার। রঙ্গনার মুখের দিকে এক ঝলক তাকাল সে। অপমানে, লজ্জায় মুখটা শুকিয়ে গিয়েছে। সঙ্কোচে চোখ সরাল অমিত। স্টেশন এলে উঠে দাঁড়াল। রঙ্গনার পাশে পাশে থাকল। ওর নিরাপত্তার প্রয়োজন।

******

অমিতের কয়েকটা দিন খারাপ কাটল। রঙ্গনা উচ্চবাচ্য করেনি। কিন্তু ভিতরে-ভিতরে তার উপর নিশ্চয়ই রাগ হচ্ছে। ছেলেটাকে কিছু বলার সাহস অমিতের হল না। স্বামী হিসেবে সে এক রকম ব্যর্থ। অফিসের কাজেও সে মন লাগাতে পারল না। সহকর্মী সুজনের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা আছে। সুজন অন্তরঙ্গ সুরে এক দিন জানতে চাইল, ‘‘কী হয়েছে অমিতদা? ক’দিন দেখছি চুপচাপ?’’

অমিত বলতে গিয়েও সামলে নিল। কাপুরুষত্বের কথা বলা যায় না। অমিত কোনও দিন শোনেনি কেউ ভয়ের কথা বলছে। সবাই ফলাও করে বীরত্বের কথা বলে। সে মনে মনে ভাবল, রঙ্গনার কাছে তার ক্ষমা চাওয়া উচিত। সে স্বীকার করবে, নিজেকে বাঁচানোর কথা ছাড়া সে দিন তার কিছু মনে পড়ে নি। সে বলল, ‘‘নাহ্‌। সে রকম কিছু না।’’

চেয়ারে হেলান দিয়ে সুজন বলল, ‘‘দিনকাল খুব খারাপ দাদা।’’

‘‘কেন? কী হল?’’

‘‘দ্বিজেনদাকে চেনেন তো?’’

অমিতের মনে পড়ল। তাদের সঙ্গেই দ্বিজেনদা কাজ করত। দ্বিজেনদার গানের গলা খুব ভাল ছিল। সে বলল, ‘‘কী হয়েছে? শরীর খারাপ?’’

‘‘না, না। ওর মেয়ের ব্যাপার। আমাদের পাড়াতেই তো থাকে দ্বিজেনদা।’’

‘‘মেয়ে কী করল?’’

‘‘আর বলবেন না। যাচ্ছেতাই কাণ্ড। মেয়েটা ফিরছিল, একটা ছেলে অ্যাসল্ট করেছে। একদম দিনের বেলায়, বুঝলেন!’’

অমিতের বুক ছমছম করল। সে বলল, ‘‘এ বাবা! পাবলিক কিছু বলেনি?’’

‘‘পাবলিক? দ্বিজেনদাই কিছু বলেনি।’’

অমিতের চোরা কৌতূহল হল। শুধু সে একা নয়, দ্বিজেনদাও আছে। খুঁজলে হয়তো তার মতো কাপুরুষ আরও অনেক পাওয়া যাবে। সে বলল, ‘‘এ মা! দ্বিজেনদা কিছু বলল না?’’

‘‘লোকটার চেহারাটাই যা বড় দাদা। আসলে ও গাড়ল!’’

‘‘কী করবে বল? বাবা তো, ভয় পেয়েছে।’’ অমিত নির্ভার গলায় বলল।

‘‘ভয় পেয়েছে মানে? মেয়ের হাত ধরে কেউ যদি টানে, আমি-আপনি কেউ ছেড়ে দেব? জুতিয়ে মুখ ছিঁড়ে দেব! ধরুন বউদিকে যদি কেউ কিছু বলে, আপনি ছেড়ে দেবেন?’’

প্রশ্নটা তার দিকে ধেয়ে আসবে, অমিত ভাবেনি। সে খাবি খেয়ে গেল। ঢোক গিলে বলল, ‘‘তাই তো! ছাড়ার প্রশ্নও নেই।’’

সুজন গলা নামিয়ে বলল, ‘‘ভয়টয় নয় অমিতদা। আসল কথা চেপে গিয়েছে। মেয়েটা একটু ইয়ে প্রকৃতির। এক হাতে কি আর তালি বাজে? কিছু না কিছু গড়বড় আছে দাদা।’’

রেপড মেয়েটাকে নিয়েও জামাইবাবু কথাটা বলেছিলেন। মেয়েটার কিছু দোষ আছে। আচ্ছা, রঙ্গনার কি সে দিন কোনও দোষ ছিল? মুখে-চোখে, চেহারায়, হাবভাবে রঙ্গনা এমন কিছু করেনি তো যে ছেলেটা প্রলুব্ধ হয়ে গিয়েছিল? ভাবতে ভাবতে অমিত হঠাৎ থমকে গেল। ছেলেটা সত্যিই কি ওই কাজ করেছিল? এক-দু’মিনিটের ব্যাপার। তার চোখে কোনও বিভ্রম ঘটেনি তো? অমিত ভাবে।

******

দু’সপ্তাহ কাটবার পর অমিত সহজ হয়ে এসেছে। রঙ্গনাও এখন ঠিক আছে। অমিত ভেবে দেখেছে, রঙ্গনা চুপ করে থাকলে সমস্যা হত না। তারও কোনও দায় থাকত না। মেয়েরা কেন যে হঠাৎ ওভার-সেনসিটিভ হয়!

দু’দিন পর অমিত অবশ্য চুপ থাকতে পারল না। তার অস্বস্তি ফিরে এল। জামাইবাবু ফোন করে সে দিনের কথা জানতে চাইলেন। রাগে অমিতের মাথা ঝাঁঝাঁ করতে শুরু করেছিল। সে ভাবেনি রঙ্গনা কথাটা জানাবে। এ কথা কি কাউকে বলা যায়? বিশেষত জামাইবাবুর মতো লোককে! তিনি খুঁটিয়ে-খুঁটিয়ে উকিলের মতো জেরা করেন। অমিত ফাঁদে পা দেয়নি। ঠান্ডা মাথায় জামাইবাবুকে সামলেছিল।

রাতে খাওয়ার পর অমিত কথাটা তুলল, ‘‘জামাইবাবুদের কী বলেছ তুমি?’’

‘‘কেন?’’

‘‘আজ জিজ্ঞেস করছিল।’’

‘‘সে দিন যা ঘটেছিল তা-ই বললাম।’’

‘‘বাহ! এটা বলার মতো কথা? জানো না জামাইবাবু কেমন রসিয়ে রসিয়ে কথা বলেন?’’ অমিত চটে গিয়ে বলল।

‘‘আমি দিদিকে বলেছি। জামাইবাবুকে নয়।’’

অমিত আরও থম মেরে গেল। মুখ ভেংচে বলল, ‘‘তুমি পারো।’’

‘‘আশ্চর্য! যা হয়েছে তা বলব না!’’

অমিত তীক্ষ্ণ চোখে রঙ্গনার দিকে তাকাল। তার বিরক্ত লাগে। পুরনো ঘটনা টেনে আনার কী কারণ আছে কে জানে? রঙ্গনা অনায়াসে চেপে যেতে পারত। তাকে বিড়ম্বনায় ফেলার জন্যই ও বলেছে। সে উড়িয়ে দেওয়ার ভঙ্গিতে বলে, ‘‘ও! এ সব তো অনেক দিন আগের ব্যাপার।’’

‘‘ঘটনাটা তো সত্যি।’’

‘‘ঘটনা আবার কী? তোমার সঙ্গে একটা ছেলের ঝগড়া হয়েছিল। মিটে গিয়েছে।’’

‘‘ঝগড়া!’’

অমিত কাঁধ নাচিয়ে বলল, ‘‘হ্যাঁ।’’

‘‘দাঁড়াও। দাঁড়াও। বুঝছি না! সে দিন আর কিছু ঘটেনি, তুমি বলতে চাও?’’ গলায় বিস্ময় ফুটিয়ে রঙ্গনা জিজ্ঞেস করল।

‘‘আর কী ঘটবে? ক্রস করার সময় বোধহয় তোমার সঙ্গে ছেলেটির ঠেলাঠেলি হয়েছিল। তুমি চিৎকার করতে শুরু করলে। ছেলেটাও... ব্যস। এটুকু।’’

‘‘তাই!’’

‘‘হ্যাঁ।’’

রঙ্গনা এক নিশ্বাসে বলল, ‘‘ছেলেটা আমার বুকে হাত দিয়েছিল অমিত।’’

‘‘বুকে?’’

‘‘হ্যাঁ।’’

ভুলে যাওয়ার চেয়ে পরম স্বস্তি আর কিছুতে নেই। অমিত স্থির গলায় বলল, ‘‘বুকে হাত! তোমার কি মাথা খারাপ? আমিও তো সামনে ছিলাম। অত লোকের সামনে গায়ে হাত তোলার সাহস হবে ছেলেটার?’’

‘‘মানে? হাত দেয়নি?’’ রঙ্গনার বিধ্বস্ত গলা।

‘‘কোথায়? আমি তো দেখিনি!’’

‘‘তুমি দেখোনি?’’

পঞ্চপাণ্ডবও সে দিন দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণ দেখেনি। দৃষ্টি থাকলেও তাঁরা অন্ধ ছিলেন। তাঁরা মহাপুরুষ। সে সাধারণ। সে-ও দেখেনি। দেখলে তার শরীরেও রক্ত ছুটত। অমিত জোরগলায় বলল, ‘‘ধুর! বানিয়ো না। ছাড়ো।’’

‘‘আ...আমি বানাচ্ছি!’’

‘‘না তো কী?’’

রঙ্গনা হতবাক। সে অদ্ভুত চোখে অমিতকে দেখল। এ তার স্বামী! সে দিন থেকে আজ যেন একটা বৃত্ত শেষ হল। শ্লীলতাহানির বৃত্ত! ঘৃণায় কাঁপতে কাঁপতে রঙ্গনা বলল, ‘‘জানোয়ার!’’

কথাটা অমিত গায়ে মাখল না। সে তার হারানো পৌরুষ ফিরে পেয়েছে!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement