ধারাবাহিক উপন্যাস: পর্ব ২৭

শেষ নাহি যে

মোবাইল পেয়ে খুশি দরিয়া। বিহানকে ফোন লাগাল। আজ বিহান তার কাছে খুব বকুনি খাবে। এক বার দেখতে আসা উচিত ছিল।

Advertisement

ইন্দ্রনীল সান্যাল

শেষ আপডেট: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০০:০১
Share:

ছবি: শুভম দে সরকার

পূর্বানুবৃত্তি: এত সমস্যার মধ্যে মেয়ে হয় দরিয়ার। নাতনির জন্মের খবর শুনে চলে আসেন দরিয়ার মা। সুদাম মেয়ের নাম দেয় ‘ফুল’। সব রাগ ভুলে নাতনিকে কোলে তুলে নেন বিহানের মা শ্রীরূপা। কিন্তু এ সব কিছুতে অনুপস্থিত বিহান। সনৎ ও তার দলবলের হাত থেকে তাকে রক্ষা করে সেনারা।

Advertisement

শ্রীরূপা বললেন, “এত দিনে বুঝলাম, আসলের চেয়ে সুদ মিষ্টি। সব রাগ, অভিমান গঙ্গায় বিসর্জন দিয়েছি। তুই ফুলকে নিয়ে লিলুয়া থেকে হাওড়া ময়দানে চলে আয়। এখানেই টিউশনি কর। একা একা থাকতে আর ভাল লাগছে না রে!”

Advertisement

ফুলকে দুধ খাওয়াতে খাওয়াতে দরিয়া বলল, “শুধু আমি আর ফুল যাব? বিহান যাবে না?”

শ্রীরূপা কাঁদছেন।

দরিয়া জিজ্ঞেস করল, “বিহান কোথায়?”

শ্রীরূপা মাথা নিচু করে ওয়ার্ড থেকে বেরিয়ে যাচ্ছেন। আবার ঘুম আসছে দরিয়ার।

রাত ন’টা নাগাদ ঘুম ভাঙল দরিয়ার। এখন মাথা একদম পরিষ্কার। আয়াকে জিজ্ঞাসা করল, “আমার বাবা এসেছে?”

আয়া বলল, “তোমার বাবা আর সুদাম একটু আগে এখানেই ছিল। এখন তো ভিজিটিং আওয়ার নয়। তাই বাইরে আছে।”

“সুদাম কে?”

“যে লোকটা গান গায়! সে তো কাল থেকে তোমার বাবার সঙ্গেই আছে।”

আয়ার কোলে ফুলকে দিয়ে বিছানা ছেড়ে উঠল দরিয়া। একটু হাঁটতে ইচ্ছে করছে। আয়া তার দিকে একটা মোবাইল এগিয়ে দিয়ে বলল, “তোমার বাবা তোমার মায়ের মোবাইলটা দিয়ে গেছেন। তোমারটা হারিয়ে গেছে তো।”

মোবাইল পেয়ে খুশি দরিয়া। বিহানকে ফোন লাগাল। আজ বিহান তার কাছে খুব বকুনি খাবে। এক বার দেখতে আসা উচিত ছিল। অবশ্য এ কথাও ঠিক যে অপারেশনের পরের চব্বিশটি ঘণ্টা ঘুমের ওষুধের ঘোরে কেটে গিয়েছে। বিহান হয়তো এসেছিল। সে জানতে পারেনি। কিন্তু মোবাইলের মধ্যে যে যন্ত্রমানবী বসে থাকে, সে বলল, “আপনি যাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছেন, তিনি এখন পরিষেবা সীমার বাইরে!” এ বার সাম্যব্রতর মোবাইলে ফোন করেছে দরিয়া। যন্ত্রমানবী এখানেও চলে এসেছে। সে জানিয়ে দিল, সাম্যব্রতও পরিষেবা সীমার বাইরে।

বিরক্ত হয়ে মোবাইল হাতে নিয়ে সিস্টারদের ঘরের দরজার সামনে দাঁড়াল দরিয়া। সিস্টাররা পোশাক বদলাচ্ছে। টিফিন করার ফাঁকে খবর শুনে নিচ্ছে। স্কুপ নিউজ় চ্যানেলের পরিমল বলছে, “মাননীয় রাজ্যপালের আবেদনে কাজ হয়েছে। গত চব্বিশ ঘণ্টায় রাজ্য জুড়ে যে হিংসা এবং অশান্তি ছড়িয়ে পড়েছিল তা বন্ধ হয়েছে। নতুন করে কোনও হতাহতের খবর নেই। এ বার আমরা চলে যাচ্ছি গণতান্ত্রিক মোর্চার প্রধান মনোজ বসুর কাছে।”

মনোজ শ্মশানে দাঁড়িয়ে বলছেন, “আমার স্ত্রীর অস্বাভাবিক মৃত্যুর তদন্ত করছে কলকাতা পুলিশ। তদন্তে বিঘ্ন ঘটুক এমন কোনও কথা আমি বলব না। শুধু এইটুকু বলতে চাই, এই হত্যার পিছনে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা নেই। হত্যার মোটিভ কী, কারা হত্যাকারী— সব কথাই খুব তাড়াতাড়ি জানা যাবে। তত দিন সবাই শান্ত হয়ে অপেক্ষা করুন।”

ক্যামেরা আবার পরিমলের দিকে, “এ বার আমরা চলে যাচ্ছি খরাজ পার্টির সুপ্রিমো সুধাকর ঘোষের কাছে। চব্বিশ ঘণ্টা ব্যাপী বাংলা জুড়ে যে গন্ডগোল চলল, যে তীব্র হিংসা ছড়িয়ে পড়ল, তা নিয়ে ওঁর কী অভিমত, আমরা জেনে নেব।”

ফাঁকা পার্টি অফিসে বসে সুধাকর বললেন, “আমার কিছু বলার নেই। যা বলার, দিল্লি থেকে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বলবেন।”

পরিমল বলল, “আমরা এ বার চলে যাচ্ছি মাননীয় মুখ্যমন্ত্রীর কাছে। তিনি আজ সারা দিন সর্বদলীয় বৈঠক করেছেন, হেঁটেছেন কলকাতার রাজপথে, রাস্তায়, গলিতে, মহল্লায়। আগামীকাল মহামিছিলের ডাক দিয়েছেন। শুনে নেব তাঁর কথা।”

রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে মুখ্যমন্ত্রী বললেন, “‘মুক্তবেণীর গঙ্গা যেথায় মুক্তি বিতরে রঙ্গে/আমরা বাঙালী বাস করি সেই তীর্থে—বরদ বঙ্গে;—/.../ বাঘের সঙ্গে যুদ্ধ করিয়া আমরা বাঁচিয়া আছি,/ আমরা হেলায় নাগেরে খেলাই, নাগেরি মাথায় নাচি।/.... মন্বন্তরে মরিনি আমরা মারী নিয়ে ঘর করি।/ বাঁচিয়া গিয়াছি বিধির আশীষে অমৃতের টিকা পরি...’ বুঝলেন পরিমল, এই রাজ্যটার নাম বাংলা। আমরা, বাঙালিরা, শান্তিপ্রিয় শান্ত ছেলে। কিন্তু শত্রু এলে অস্ত্র হাতে ধরতে জানি। কিছু দুষ্টু লোক রাজ্যে অস্থিরতা তৈরির চেষ্টা করেছিল। ব্যর্থ হয়েছে। এই নিয়ে মাথা ঘামানোর কিছু নেই। আইন আইনের পথে চলবে। যারা অন্যায় করেছে তারা শাস্তি পাবে। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বলি হয়েছেন কয়েকজন মানুষ। আমি নিজে তাঁদের পরিবারের সঙ্গে আগামীকাল যোগাযোগ করব। এককালীন ক্ষতিপূরণ তো দেওয়া হবেই। তার সঙ্গে চেষ্টা করছি, যদি পরিবারপিছু এক জনকে চাকরি দেওয়া যায়।”

মুখ্যমন্ত্রীর সাক্ষাৎকার শেষ। পরিমল বলছে, “গতকাল রাজনৈতিক হিংসার বলি হয়েছেন, কোচবিহারের শশধর মণ্ডল, বালুরঘাটের অনিন্দ্য রায়, এগরার মনোজ জানা...”

মন খারাপ হয়ে গেল দরিয়ার। সে দরজার কাছ থেকে সরে এল। করিডর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে সে শুনছে মৃত মানুষদের নামের তালিকা, “বেলিলিয়াস রোডের রাজু শর্মা, হাওড়া ময়দানের বিহান চট্টোপাধ্যায়...” থমকে দাঁড়াল দরিয়া। তার মাথা ঘুরছে। পায়ের নীচে মেঝে ঘুরছে, সেলাইয়ের ব্যথা পেট থেকে উঠে সারা শরীর চিরে দিয়ে উঠে যাচ্ছে আকাশের দিকে। পেট থেকে যন্ত্রণা নীচের দিকে নেমে ধরণীকে দু’ভাগ করে দিচ্ছে।

দরিয়া পেটের সেলাইয়ের জায়গাটা দু’হাত দিয়ে ধরে দৌড়চ্ছে সিস্টারদের বিশ্রামঘরের দিকে। তার চিৎকারে বিদীর্ণ হয়ে যাচ্ছে এই ওয়ার্ড, এই বিল্ডিং, এই হাসপাতাল, এই শহর। খাটে শুয়ে থাকা মায়েরা যে যার শিশুকে ভয়ের চোটে জাপটে ধরছে। আয়ারা ছুটে আসছে দরিয়ার দিকে।

সিস্টারদের বিশ্রামঘরের দরজা ধরে দরিয়া দাঁড়িয়েছে। সে দেখতে পাচ্ছে, টিভির পর্দায় বিহানের ছবি। রাস্তায় উপুড় হয়ে পড়ে রয়েছে সে। তাকে কাঁধে তুলে নিচ্ছে সেনারা। দৌড় দিচ্ছে মিলিটারি ভ্যানের দিকে। দরিয়া মেঝেয় বসে পড়েছে। পাশ ফিরে শুয়ে নিজের হাঁটু জড়িয়ে হাউহাউ করে কাঁদছে। মেঝেতে ঘুসি মারছে। মাথা ঠুকছে ঠকঠক করে।

আয়ারা দৌড়ে এসে তাকে জড়িয়ে ধরছে। আত্মধ্বংসী মানুষ পৃথিবীতে সবচেয়ে শক্তিশালী। তিন জন আয়া মিলেও সামলাতে পারছে না দরিয়াকে। সামলানো গেলেও চিৎকার বন্ধ করা যাচ্ছে না। দৌড়ে আসছেন সিস্টার আর জুনিয়র ডাক্তাররা। উঁকি মারছেন সিনিয়র চিকিৎসকবৃন্দ।

এক আয়া দরিয়ার মুখে হাত চাপা দিয়ে বলল, “আজ দুকুরে কতাটা শোনার পর থেকে চেপে রেকেচি। তোমরা যে টিভি চালিয়ে খাওনদাওন করো কেন কে ঝানে! খারাপ ছাড়া কিচু তো দেকায় না।”

সিস্টার রিমোট টিপে টিভি বন্ধ করে দিল। আয়ার হাত ছাড়িয়ে দরিয়া চিৎকার করে বলল, “আমি বিহানের কাছে যাব।” তার পর হাতের মোবাইল ছুড়ে মারল আয়ার দিকে তাক করে। আয়া কোনও রকমে মাথা সরিয়ে নিয়েছে। মোবাইল মেঝেতে ঠক করে পড়ে গেল।

আয়া দরিয়ার গালে ঠাস করে চড় মেরে বলল, “বরকে খেয়েচিস! এ বার আমায় খাবি?”

গালে হাত দিয়ে দরিয়া কাঁদছে। কেঁদেই যাচ্ছে। তার হৃদয় বদলে যাচ্ছে বেদনার হিমবাহে। সেই হিমবাহ থেকে ঝরে পড়ছে অশ্রুনদী। দু’কূলপ্লাবী সেই জলধারা কোনও দিনও শেষ হবে না।

দরিয়া জ্ঞান হারাল। সেই সুযোগে আয়ারা তাকে কোলে করে বিছানায় শুইয়ে দিল। ফুলকে রাখা হল সিস্টারের জিম্মায়।

বিছানায় শোওয়ানো মাত্র জ্ঞান ফিরেছে দরিয়ার। সে উঠে বসেছে। চিৎকার করে বলছে, “আমি বেরোব। তোমরা আমাকে ছেড়ে দাও!” গলার আওয়াজ তো নয়! যেন বাঘিনীর গর্জন! আয়া বা সিস্টারের অনুরোধ, জুনিয়র ডাক্তারের মৃদু ধমক— কিছুতে কাজ হচ্ছে না। বিভাগীয় প্রধান খবর পেয়ে চলে এসেছেন। তিনি সিস্টারকে বলছেন, “এক্ষুনি একে ঘুমের ইঞ্জেকশন দিন। চিৎকারের জন্যে পেটে চাপ পড়ছে। স্টিচ না খুলে যায়!”

দরিয়ার দুই হাত আর দুই পা ধরে বিছানায় পেড়ে ফেলেছে চার সিস্টার। মুখ চেপে ধরেছে আর এক সিস্টার। অন্য এক সিস্টার দরিয়ার হাতে ঘুমের ইঞ্জেকশন দিচ্ছে। ঘুমের ওষুধ রক্তে প্রবেশ করা মাত্র দরিয়ার বাধাদানের ক্ষমতা কমে আসছে। হাত পা শিথিল হতে শুরু করেছে। সিস্টাররা তাকে ছেড়ে দিয়ে নিজের কাজ করতে চলে যাচ্ছে।

যে আয়া দরিয়ার গালে চড় মেরেছিল, সে হঠাৎ ফিসফিস করে সিস্টারকে বলল, “মেয়েটার মোবাইলে ফোন এয়েচে। কী করব?”

“তুমিই ফোনটা ধরো। বাড়ির লোক ফোন করেছে বোধহয়।”

মোবাইল নিয়ে আয়া বলল, “হ্যালো! কে?”

ও প্রান্তের পুরুষকণ্ঠ বলল, “দরিয়াকে ফোন দিন।”

“কে বলচেন আপনি?”

“আমি ওর বাবা বলছি। প্লিজ় ওকে ফোন দিন।”

আয়া ঝাঁঝিয়ে উঠে বলল, “ফোন দেব কী করে? সে মেয়ে তো খপর শুনে ব্যাপক ক্যাজড়া শুরু করেচে। আমাকে থাবড়েচে! মেয়েকে ছুটি করার সময় এর মাশুল গুনতে হবে কিন্তু!” তার পর দরিয়ার কানে ফোন গুঁজে বলল, “তোর বাপ ফোন করেচে! কতা বল।”

দরিয়ার ঘুম পাচ্ছে। চোখের পাতাদুটোর কত ওজন রে বাবা! চোখ খুলে রাখার জন্য পরিশ্রম করতে হচ্ছে। জিভ জড়িয়ে যাচ্ছে। সে কোনও রকমে বলল, “হ্যা-লো... বা-বা...”

ও প্রান্ত থেকে সাম্যব্রত চেঁচাচ্ছেন, “টিভিতে ভুল খবর দেখিয়েছে। বিহান বেঁচে আছে। মারা গেছে বিধান চট্টোপাধ্যায় নামের এক জন। ওই লোকটার বডি নিয়ে হাওড়া স্টেশনে বিক্ষোভ দেখানো হয়েছিল। বিহান আহত হয়েছে। মিলিটারিরা ওকে আর্মি হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছে। বেঁচে আছে বিহান। চিন্তা করিস না। আমি এখন বিহানের সামনেই আছি।”

“বি-হা-ন-কে... ফো-ন... দা-ও...” ঘুমের অতলে তলিয়ে যাওয়ার আগে বলল দরিয়া।

“এই নে! ধর।”

আয়া এত ক্ষণ দরিয়ার গালে গাল ঠেকিয়ে বাপ-মেয়ের কথোপকথন শুনছিল। সে এ বার চেঁচিয়ে বলল, “টিভির খবরের ক্যাঁতায় আগুন। এই মেয়েটার বর মরেনি। চালাও তো দেকি টিভি।”

এক সিস্টার লাফিয়ে উঠে রিমোট টিপেছে। স্কুপ চ্যানেলের সঞ্চালক পরিমল গম্ভীর মুখে ঘোষণা করছে, “এইমাত্র পাওয়া খবরের সূত্র অনুসারে হাওড়া ময়দানের বিহান চ্যাটার্জি মারা যাননি। মারা গিয়েছেন হাওড়া ময়দানের বিধান চ্যাটার্জি। গতকাল এঁর মৃতদেহই লাইনের উপরে ফেলে রেখে দীর্ঘ ক্ষণ হাওড়া লাইনে অবরোধ করা হয়। হাওড়া ময়দানের বাসিন্দা বিহান চ্যাটার্জি গুরুতর আহত হয়েছেন। সেনা হাসপাতালে ঠিক সময়ে ভর্তি না হলে তাঁর প্রাণসংশয় হতে পারত।”

আয়া ভুরু কুঁচকে বলল, “ঝাক বাবা! সব ভাল যার শেষ ভাল! ভকোপান আচেন। তিনি সবার ভাল করেন।”

সিস্টার এসে ফুলকে দরিয়ার পাশে শুইয়ে দিয়েছে। মেয়েকে জড়িয়ে ধরে দরিয়া মোবাইলে বলল, “বি-হা-ন!”

ও দিকে কোনও আওয়াজ নেই। দরিয়া আবার বলল, “বিহান!”

“বলো,” অবশেষে উত্তর এসেছে। পৃথিবী থেকে অনেক আলোকবর্ষ দূরে নতুন কোনও নক্ষত্র জন্ম নেওয়ার পরে তার আলো পৃথিবীতে এসে পৌঁছতে যেমন অনেক দিন, অনেক সপ্তাহ, অনেক মাস, অনেক বছর সময় নেয়, ঠিক তেমনই আর্মি হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে থাকা বিহানের মুখ থেকে উচ্চারিত শব্দটি ইথার তরঙ্গ বাহিত হয়ে দরিয়ার কাছে পৌঁছল অনেক শতক পরে। অথবা কিছু সেকেন্ড পরে।

দরিয়া ফিক করে হেসে বলল, “তুম হামকো ভাল বাসতা হ্যায়?”

বিহান বলল, “বাসতা হ্যায়। বহুত ভাল বাসতা হ্যায়। কিন্তু তুমি আমাকে ভাল নেহি বাসতা হ্যায়।”

ইউরোপ আর আফ্রিকা থেকে, অস্ট্রেলিয়া আর এশিয়া থেকে, উত্তর আর দক্ষিণ মেরু থেকে, উত্তর আর দক্ষিণ আমেরিকা থেকে সমস্ত প্রেমিকারা একসঙ্গে বলে উঠল, “আমি তোমাকেই ভালবাসি। তুমি ছাড়া আমার জীবনে কেউ নেই। তুমি ছাড়া আমি অসম্পূর্ণ!”

চিন আর জাপান থেকে, ভারত আর বাংলাদেশ থেকে, পাকিস্তান আর সুইডেন থেকে, কোস্টারিকা আর কেম্যান আইল্যান্ড থেকে সমস্ত প্রেমিক বলে উঠল, “ভালবাসা অত সহজ নয়, জানো তো! ক’দিন বাদেই রূপ আর যৌবনের মোহ কেটে যাবে। তখন হাড়ভাঙা পরিশ্রম করতে হবে সংসার চালানোর জন্য। কিন্তু আমরা সেটাই করব। কেন না আমি তোমার সঙ্গে আমার এই তুচ্ছ জীবনটা কাটাতে চাই। প্রতিটি সেকেন্ড, মিনিট, ঘণ্টা; প্রতিটি দিন, রাত, সপ্তাহ; প্রতিটি মাস, বছর আর দশক তোমার সঙ্গেই কাটাতে চাই! যত দিন বেঁচে আছি, তত দিন তোমার হাত ধরে থাকতে চাই।”

ঠিক এই ভাষাতেই কি দরিয়া আর বিহান কথা বলল? বোধ হয় না। তা ছাড়া দরিয়া ঘুমিয়ে পড়েছে। এক হাতে জড়িয়ে ধরেছে ফুলকে। অন্য হাতে মোবাইল। ফোনে এখন শোনা যাচ্ছে সুদামের গান, “শেষ নাহি যে শেষ কথা কে বলবে...”

ও প্রান্তে মোবাইলে কান দিয়ে বিহান শুনছে দরিয়ার শ্বাসপ্রশ্বাসের শব্দ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement