পানামা খাল। এশিয়া থেকে আমেরিকা পর্যন্ত পণ্য আমদানি-রফতানির অন্যতম প্রধান সমুদ্রপথ।
যুগ যুগ ধরে এই জলপথে দুই মহাদেশের মধ্যে পণ্য বিনিময় হয়ে চলেছে। কিন্তু সেই পানামা খালই এখন সমস্যার মুখে।
জলবায়ু পরিবর্তন এবং বিভিন্ন দেশের নীতিগত পরিবর্তনের জন্য বিশ্ব বাণিজ্যের অন্যতম প্রতীক হিসাবে পরিচিত পানামা খালের দু’ধারে এখন শুধু অপেক্ষমাণ জাহাজের ভিড়।
মনে করা হচ্ছে, পানামা খালের এই দুরবস্থা এর আগে কখনও দেখা যায়নি।
বিভিন্ন সংবাদপত্রের প্রতিবেদন অনুযায়ী, পানামা খালের উভয় পাশে এক এক সময়ে ২০০টিরও বেশি জাহাজ অপেক্ষমাণ। পানামা খাল পেরোতে গড়ে প্রায় চার দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হচ্ছে জাহাজগুলিকে।
সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গের প্রতিবেদন অনুযায়ী, অনেক সময় এমনও হয়েছে, যেখানে কয়েকটি জাহাজকে ২০ দিনেরও বেশি অপেক্ষা করতে হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, পানামা খালের দু’পাশে জাহাজের ‘মেলা’ বসার অন্যতম কারণ খালের জলস্তর কমে যাওয়া। জলবায়ু পরিবর্তন এবং দীর্ঘ খরার কারণেই পানামা খাল সংলগ্ন জলস্তর ধীরে ধীরে কমছে।
খাল সংলগ্ন গাতুন হ্রদ পানামার জল সরবরাহের অন্যতম উত্স। সেই হ্রদের জলের স্তর গত সাত বছরে উল্লেখযোগ্য ভাবে হ্রাস পেয়েছে। ফলে কমে গিয়েছে পানামার জলস্তরও।
পানামা সংরক্ষণের লক্ষ্যে, পানামা খাল কর্তৃপক্ষ (এসিপি) বিভিন্ন ধরনের বিধিনিষেধ এনেছে। কিন্তু তাতেও খুব লাভ হচ্ছে না বলে মনে করছেন কর্তৃপক্ষ।
এসিপির নতুন নিয়ম অনুযায়ী, পানামা খাল দিয়ে দৈনিক ৩২টির বেশি জাহাজ যাতায়াতের অনুমতি নেই।
মধ্য আমেরিকার দেশ পানামার আশপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে প্রায় ১৪০০টি দ্বীপ। যার বেশির ভাগ দ্বীপেই মানুষ বসবাস করে। কিন্তু বিগত ৭০ বছরের মধ্যে এত বিপজ্জনক খরার মুখে পড়তে হয়নি দ্বীপগুলিকে।
অনুমান করা হচ্ছে, এই খরার কারণে প্রায় ২০ কোটি ডলারের ক্ষতি হয়েছে।
বর্তমানে জলের স্তর কমে যাওয়ার কারণে পণ্যবাহী জাহাজগুলি কম পরিমাণে পণ্য পরিবহণ করছে।
সংবাদমাধ্যম ‘ইয়াহু নিউজ়’-এ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, পণ্য আমদানি-রফতানির জন্য পানামা ব্যস্ততম দেশ। প্রতি বছর গড়ে আমেরিকার প্রায় ৪০ শতাংশ পণ্যবাহী জাহাজ পানামা খাল দিয়ে যাতায়াত করে।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে পানামা খালে যে ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে, তা ভবিষ্যতে আরও বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। যার প্রভাব সরাসরি বিভিন্ন দেশের অর্থনীতির উপরেও পড়তে পারে।
বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, যদি পানামা খালের জলস্তর কমতে থাকে, তা হলে আমেরিকায় মুদ্রাস্ফীতি বাড়তে পারে। আমদানি করা বিভিন্ন পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পেতে পারে সে দেশে।
আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের প্রসার এবং ই-ব্যবসার আবির্ভাবের কারণে সাম্প্রতিক বছরগুলিতে পানামা খালের মধ্য দিয়ে পণ্য আমদানি-রফতানি বেড়েছে। তার মধ্যেই এই সঙ্কট বিভিন্ন দেশের, বিশেষত আমেরিকার কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে।
তবে এসিপির বিশ্বাস, খুব শীঘ্রই পানামা খালের সমস্যার সমাধান হবে। সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে দিনরাত কাজ চলছে বলেও জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।