রুট-৩৬। স্প্যানিশ ভাষায়, ‘রুটা ত্রিয়েন্তা ওয়াই সেয়িস’। বলিভিয়ার লা পাজের এই বারই বিশ্বের প্রথম কোকেন বার।
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩,৫০০ মিটারেরও বেশি উপরে আন্দিজের মাঝখানে একটি বিস্তৃত উপত্যকায় লা পাজ শহরের অবস্থান। সেখানেই রয়েছে এই কোকেন বার।
সুরাসক্ত মানুষদের তৃষ্ণা নিবারণের অন্যতম প্রিয় জায়গা পানশালা। প্রতি দিনের যাতায়াতের পথে আমরা অনেক পানশালাই রাস্তার ধারে দেখতে পাই। কিন্তু যে সব মানুষ আরও নেশাগ্রস্ত, অর্থাৎ মাদকের নেশায় আসক্ত, তাঁদের জন্যও নাকি বিশেষ কয়েকটি জায়গা রয়েছে। এই মাদকের বারগুলি মাদকাসক্তদের জন্য অন্যতম আকর্ষণের জায়গা। এ রকমই একটি হল বিশ্বের প্রথম কোকেন বার রুট-৩৬।
বলিভিয়া দেশ জুড়েই কোকেন নিষিদ্ধ। তাই স্বাভাবিক ভাবেই রুট-৩৬ বারের কোনও বৈধ কাগজপত্র নেই। পুলিশের নজর এড়িয়ে অবৈধ ভাবেই চালানো হয় এই কোকেন বার।
রুট-৩৬ একটি অস্থায়ী কোকেন বার। আশ্চর্যের বিষয় হল প্রায় প্রতি দিনই জায়গা পরিবর্তন হয় বিশ্বের প্রথম অস্থায়ী কোকেন বারের।
আশপাশের ব্যবসায়ী বা স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ এড়াতেই বার বার জায়গা পরিবর্তন করে রুট-৩৬। একই জায়গায় নাকি তিন-চার সপ্তাহের বেশি এই কোকেন বার দেখা যায় না।
কিন্তু কী ভাবে মাদকাসক্তদের নিজেদের নতুন আস্তানার জানান দেন এই বারের মালিকরা? গ্রাহকদের খবর দেওয়ার কাজ করেন এই বারের মালিকদের নিয়োগ করা কয়েক জন চর। মুখে মুখে ছড়িয়ে দেওয়া হয় রুট-৩৬-এর নয়া ঠিকানা।
মনে করা হয়, কোকেন বার চলার পাশাপাশি কুখ্যাত রুট-৩৬-এ আরও অনেক গোপন এবং অবৈধ কাজকর্ম চলে। এই বারের মালিকরা লা পেজের কয়েক জন দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারি আধিকারিকদের হাত করে রমরমিয়ে এই অবৈধ ব্যবসা চালাচ্ছেন বলেও অনেকের মত।
পাশাপাশি এই কোকেন বারে বলিভিয়ার কোনও নাগরিকদের প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ। কেবল মাত্র বিদেশিদেরই রুট-৩৬-এ ঢোকার অনুমতি দেওয়া হয়। আর সেই কারণেই এই অবৈধ বার কোন সময় কোন ঠিকানা থেকে পরিচালিত হচ্ছে, তার অনুমান করতে পারেন না স্থানীয়রা।
বাইরে থেকে আগতদেরও লা পেজে ঢুকে এই বারের ঠিকানা খুঁজে পেতে বেশ অসুবিধা হয়। বার খুঁজে পেতে বিদেশিদের নির্ভর করতে হয় ট্যাক্সিচালকদের উপর।
রুট-৩৬ খুঁজে দেবে এ রকম এক জন ট্যাক্সিচালককে খুঁজে বের করতেও অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয় বিদেশিদের।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, রুট-৩৬-এ এক গ্রাম কোকেনের দাম ১৫০ বোলিভিয়ানোস (বলিভিয়ার মুদ্রা) অর্থাৎ ১৬৮৭ টাকা। পাশাপাশি এই বারে এক গ্লাস পানীয় খেতে খরচ হয় ২০০-৩০০ টাকা।
অনেকের মতে, এই বারে গ্রাহকদের কোকেন পরিবেশন করা একটি প্লাস্টিকের প্লেটের উপর রাখা কাগজের মোড়কে।
স্থানীয় বাসিন্দা এবং পুলিশের নজর এড়াতে রুট-৩৬-এর ভিতরে বেশি হইচই করায় বারণ।
কোকেন বারের ভিতরে নাকি রয়েছে কয়েকটি মাত্র কালো চামড়ায় মোড়া সোফা এবং কফি টেবিল।
পাশাপাশি রুট-৩৬-এ নাকি সারা ক্ষণ প্রজেক্টর পর্দার মাধ্যমে নব্বই দশকের মিউজিক মৃদু স্বরে বাজতে থাকে।
এক জন প্রত্যক্ষদর্শীর দাবি, এই বারের ভিতরে এতই অন্ধকার যে অন্যান্য গ্রাহকদের মুখ দেখা তো দূরের কথা নিজের হাতও ঠিক করে দেখা যায় না।
তাঁর দাবি, বারের মধ্যে বেয়ারাদের ডাক দিয়ে অর্ডার দেওয়ার কিছু ক্ষণের মধ্যে তাঁরা একটি পাত্রের মধ্যে কোকেন এবং পানীয় নিয়ে উপস্থিত হন।
কোকেন বারের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিয়ে ওই ব্যক্তি আরও জানান, রুট-৩৬-এর ভিতর সময় কী ভাবে কেটে যায়, তা বুঝতে পারা যায় না। এটি তাঁর দেখা সব থেকে উদ্ভট বার বলেও তিনি উল্লেখ করেন। এ রকম ও শোনা যায়, এই বারে উদ্দাম যৌনতায় মাতারও সুযোগ থাকে।
আরও আশ্চর্যের বিষয় হল, শুধু মাত্র ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমেই এই বারে বিল মেটাতে হয়। নগদ টাকা নিয়ে কোনও গ্রাহক রুট-৩৬-এ প্রবেশ করতেই পারেন। তবে তা খরচ করার কোনও অবকাশ পাবেন না।
মনে করা হয়, বলিভিয়ায় কোকেন অবৈধ হলেও রাজনৈতিক দুর্নীতি এবং স্থানীয়ভাবে উত্পাদিত কোকেনের কম দামের কারণে প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় গন্তব্য হয়ে উঠেছে রুট-৩৬।
২০২০ সালের তথ্য অনুযায়ী, কোকেন উৎপাদনে কলম্বিয়া এবং পেরুর পরই স্থান ছিল বলিভিয়ার। কোকেন পাওয়া যায় কোকো গাছ থেকে। বলিভিয়াতে সারা বিশ্বের প্রায় সাড়ে ১২ শতাংশ কোকো চাষ হয়।
বলিভিয়ার বেশির ভাগ কোকো কোচাবাম্বা এবং সান্তা ক্রুজের আশপাশের এলাকাগুলিতে উত্পাদিত হয়। (আনন্দবাজার অনলাইন কোনও ভাবেই মাদকসেবন সমর্থন করে না। বিদেশি সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে তথ্য নিয়ে এই প্রতিবেদনটি লেখা হয়েছে।)