খনিতে নেমে বিলাসবহুল রাত্রিযাপন! এ-ও হয় নাকি! এই অসম্ভবকে সম্ভব করেছে একটি পর্যটন সংস্থা। হাজার হাজার টাকা খরচ করে সেই খনিতে রাত কাটাচ্ছেন বহু মানুষ।
খনিতে দুর্ঘটনা লেগেই থাকে। সারা দুনিয়ায় খনিতে কাজ করতে নেমে দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন হাজার হাজার মানুষ। পেটের টানেই এই ঝুঁকিপূর্ণ পেশাকে সাধারণত মানুষ বেছে নেন। তার পর সেখানে ধস নেমে বা জল ঢুকে অনেক সময়ই প্রাণ যায় শ্রমিকদের। এখন সেই খনিতে নেমেই রাত্রিযাপন!
ব্রিটেনের নর্থ ওয়েলসে এক খনিতে এই রাত্রিযাপনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এরাইরি ন্যাশনাল পার্কের স্নোডোনিয়া পর্বতের নীচে রয়েছে সেই খনি।
ভিক্টোরিয়া আমলের এই খনিতে ৪১৯ মিটার (১,৩৭৫ ফুট) গভীরে রয়েছে রাত্রিযাপনের ব্যবস্থা। হোটেলের নাম ‘ডিপ স্লিপ’।
এই হোটেলে চারটি দু’জন থাকার ঘর রয়েছে। আর একটি গুহা রয়েছে। সেখানেও দু’জনের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে।
সপ্তাহে কেবল এক দিনই খনিতে গিয়ে এই হোটেলে রাত্রিবাস করা যাবে। শনিবার গিয়ে রাতে থেকে রবিবার সকালে আবার ফিরে আসতে হয়। এমনটাই দস্তুর।
তবে সে হোটেলে থাকা কিন্তু খুব সহজ কাজ নয়। প্রথমে ট্রেক করে খনির নীচে নামতে হবে। প্রায় এক ঘণ্টার পথ। পথ দেখাবেন এক জন গাইড।
খনির গভীরে যাওয়ার পথে রয়েছে একের পর এক খাড়া ধাপ, পুরনো সেতু। সে সব নিয়ে তথ্যও পর্যটকদের দেবেন গাইড বা প্রশিক্ষক।
খনিতে চলাচলের উপযুক্ত বুট, হেলমেট, টর্চলাইটও দেওয়া হবে পর্যটকদের। দীর্ঘ খনিপথের শেষে রয়েছে স্টিলের দরজা। সেই দরজা খুলেই ঢোকা যাবে হোটেলে।
হোটেল সংস্থার তরফে ওয়েবসাইটে জানানো হয়েছে, গন্তব্যে পৌঁছনোর পর পর্যটকদের পানীয় দেওয়া হবে। তার পর খনির বিষয়ে কিছু তথ্য দেওয়া হবে।
বাকি সন্ধ্যা নিজের ঘরে বসে আরাম করতে পারবেন পর্যটকেরা। কোনও অভিযানে যে রকম খাবার দেওয়া হয়, সে রকমই পরিবেশন করা হবে পর্যটকদের। আমিষ, নিরামিষ, ভিগান— সব ধরনের খাবারই থাকবে।
খাবার জন্য হোটেল কক্ষের বাইরে রাখা রয়েছে বিশাল এক টেবিল। সেই টেবিলে বসে খাওয়াদাওয়ার পর যে যার ঘরে গিয়ে বিশ্রাম করতে পারবেন পর্যটকেরা।
দু’জনের অভিযান এবং এক রাতে থাকা, খাওয়ার খরচ ৩৫০ পাউন্ড। ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৩৬ হাজার টাকার কাছাকাছি।
কেউ গুহায় রাত্রিবাস করতে চাইলে তার খরচ একটু বেশি। অভিযান-সহ গুহায় রাত্রিবাসের খরচ ৫৫০ পাউন্ড। ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৫৬ হাজার প্রায়।
সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, পরের দিন সকালে নরম পানীয় এবং হালকা জলখাবারের পর ফের খনি দিয়ে ভূপৃষ্ঠে পৌঁছনোর যাত্রা শুরু হবে।
সকালে ১০টা থেকে সাড়ে ১০টার মধ্যে ভূপৃষ্ঠে পৌঁছে যাবেন পর্যটকেরা। সেখান থেকে গাড়িতে চেপে নিজেদের গন্তব্যে পৌঁছে যেতে পারবেন।
২০২৩ সালের এপ্রিল মাস থেকে এই খনি-সফর শুরু হয়েছে। সংস্থার এক কর্তা সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, অভিযানে গিয়ে পর্যটকেরা দারুণ খুশি। তাঁরা জানিয়েছেন, খনিতে রাতে যে ভাবে স্বস্তিতে ঘুমিয়েছেন, নিজের বাড়িতেও কখনও ঘুমোননি।