‘বিশ্বের সর্বাধিক উন্নত এবং বিধ্বংসী ডুবোজাহাজ’ অ্যানসনকে নিজেদের নৌবাহিনীতে সামিল করল ব্রিটেন। সে দেশের নৌবাহিনী রয়্যাল নেভির একটি অনুষ্ঠানে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের উপস্থিতিতে বুধবার এই ডুবোজাহাজটি আনুষ্ঠানিক ভাবে কাজ শুরু করল।
এইচএমএস অ্যানসন নামক এই ডুবোজাহাজটি ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা দিয়ে নির্মিত হয়েছে। তৈরি করতে সময় লেগেছে ১১ বছর। ডুবোজাহাজটির ওজন ৭৮০০ টন। দৈর্ঘ্য ৩১৮ ফুট (৯৭ মিটার)।
ব্রিটেনের রয়্যাল নেভির দাবি, অ্যানসন ৩৮টি টর্পেডো এবং ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে সজ্জিত থাকবে। এই ডুবোজাহাজ থেকে স্থলভাগের ১৬০০ কিমির মধ্যে যে কোনও লক্ষ্যবস্তুতে নিখুঁত আক্রমণ করতে সক্ষম এই ডুবোজাহাজ।
শুধু তা-ই নয়, যে কোনও শত্রুদেশের জাহাজ কিংবা ডুবোজাহাজকে মুহূর্তের মধ্যে ধ্বংস করতে সক্ষম এই অ্যানসন ডুবোজাহাজ। গোপন খবর সংগ্রহ থেকে রয়্যাল নেভির অন্যান্য যুদ্ধজাহাজকে রক্ষা করা, একাধিক কাজে সক্ষম অ্যানসন।
অ্যানসন অ্যাসটিউট শ্রেণির ডুবোজাহাজ। বিশ্বের যুদ্ধজাহাজগুলির মধ্যে এটি সর্ববৃহৎ এবং সর্বাধিক উন্নত।
অষ্টাদশ শতাব্দীর নৌ-আধিকারিক জর্জ অ্যানসনের নামানুসারে ডুবোজাহাজটির নামকরণ করা হয়েছে। অ্যানসন জাহাজপথে চার বছরে বিশ্ব পরিভ্রমণ করেছিলেন এবং ১৭৪৭ সালে ফিনিস্তারে অন্তরীপে ফরাসি নৌবাহিনীকে পরাস্ত করেছিলেন।
অ্যানসনের ভিতরে শ’খানেক মানুষ থাকতে পারবেন। পরিস্থিতি অনুসারে প্রায় ৩০ নট অবধি গতিবেগে জলের ভিতর এগোতে পারবে এই ডুবোজাহাজ।
অ্যানসনের ভিতরে থাকছে একটি পারমাণবিক চুল্লি। এই চুল্লি থেকেই প্রয়োজনীয় শক্তি সংগ্রহ করবে ডুবোজাহাজটি। ফলে ২৫ বছরের কার্যকালের মেয়াদে এক বারের জন্য জ্বালানি ভরার প্রয়োজন পড়বে না অ্যানসনের।
নৌবাহিনীর অন্যতম আধিকারিক ডেভিড ক্রসবি প্রথম বারের জন্য ডুবোজাহাজটিকে পরিচালনায় দায়িত্বে থাকছেন। তাঁর মতে, এটিই অ্যাসটিউট শ্রেণির মধ্যে সেরা ডুবোজাহাজ।
ক্রসবির কথায়, ‘কঠিন প্রতিযোগিতার মধ্যেও আমি অ্যানসনের উপর পূর্ণ আস্থা রাখছি। দীর্ঘ দিন ধরে এই যুদ্ধজাহাজটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নৌবাহিনীর তুলনায় ব্রিটেনের নৌবাহিনীকে কয়েক কদম এগিয়ে রাখবে।’
অ্যানসন ডুবোজাহাজটি জলের নীচেও জল এবং বায়ু পরিশুদ্ধ করতে সক্ষম। অর্থাৎ, জলের উপর ভেসে না উঠেও গোটা বিশ্ব পরিভ্রমণ করতে সক্ষম এই ডুবোজাহাজ।
ব্রিটিশ নৌবাহিনীর দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রযুক্তিবিদদের মতে, ১১ বছর ধরে প্রায় দু’কোটি ঘণ্টা সময় ব্যয় করে অ্যানসনকে তৈরি করা হয়েছে। এর প্রযুক্তিকৌশল আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশন তৈরির থেকেও জটিল বলে দাবি করা হয়েছে রয়্যাল নেভির তরফে।
সমুদ্রে মহড়া দেওয়ার আগে আরও কিছু দিন অ্যানসনকে নানা পরীক্ষানিরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। প্রযুক্তিবিদরা ডুবোজাহাজটির খুঁটিনাটি শেষ বারের জন্য পরীক্ষা করে দেখবেন।
২০২১ সালের এপ্রিল মাসে ব্রিটেনের ডিভোনশায়ার বন্দরে প্রথম আনা হয় ডুবোজাহাজটিকে। তার পর ডুবোজাহাজটি জলের তলায় রেখে প্রযুক্তিগত নানা দিক খুঁটিয়ে দেখেন প্রযুক্তিবিদরা।
ব্রিটিশ নৌবাহিনীর অন্যতম শীর্ষ আধিকারিক বেন কি জানান, অ্যানসন দেশীয় প্রযুক্তির শ্রেষ্ঠ এক নিদর্শন। তাঁর দাবি, অদৃশ্য এবং নিঃশব্দ থেকে অ্যানসনের আক্রমণ চালানোর ক্ষমতা ব্রিটেনের প্রতি গোটা বিশ্বের সম্ভ্রম আদায় করে নেবে।